মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৩

বোরকা বনাম বিকিনি

সামনের দেয়ালেএকটা ছবি আছে একজন মুসলিম নারীর, যার সমগ্র দেহ বোরখায়আবৃত। পাশাপাশিই আরেকটা ছবিযেখানে একজন আমেরিকান সুন্দরী প্রতিযোগী, যার পরনে রয়েছে বিকিনি। একজন সম্পূর্ণভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে, যাকে চেনার কোনো উপায়ই নাই। আরেকজন বলতে গেলে পুরোপুরি নগ্ন। ‘সভ্যতার সংঘাত’ বলে যদি কিছু থাকে, এই দুই ছবি তা অনেকটুকু পরিষ্কার করে তুলে।
যেকোন সভ্যতার সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে নারীর ভুমিকা মুখ্য। আফগানিস্তান এবং ইরাকে পরিচালিত যুদ্ধ কেবল তেল চুরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তা আরো বিস্তৃতহয়ে মুসলিমদের ধর্ম আর সংস্কৃতির উপরও হাত দিতে শুরু করেছে, যার অন্যতম লক্ষ্য হল বোরখা উৎখাত করে বিকিনি আমদানি করা।
আমি মুসলিম নারীদের বর্তমানঅবস্থার উপর কোন বিশেষজ্ঞ নই। আমি বোরকা’র পক্ষেও কথা বলছিনা। কিন্তু বোরকা কিছু মূল্যবোধকে তুলে ধরে, যেগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনোউপায় নেই। আমার মতে, বোরকা একজন মেয়ের তার স্বামী এবং পরিবারের প্রতি গুরুত্বকে স্পষ্ট করে তুলে। একজন মুসলিম নারীর কাছে সবচেয়ে প্রাধান্য পায় তার পরিবার। যেখানে তার সন্তানরা নিশ্চিন্তে বড় হয়ে উঠে। যেখানে তার স্বামী বাইরের সংঘাতপূর্ণ জীবন থেকে ফিরে এসে আশ্রয় নিতে পারে।
অন্যদিকে স্টেজে হাজার লোকের সামনে হেঁটে চলা একজন বিকিনি পরিহিতা পশ্চিমা নারী মূলত নিজের দেহকে প্রতিনিয়ত নিলামে বিক্রি করে চলছে। পাশ্চাত্যের সংস্কৃতিতে একজন নারীকে বিচার করার মূল মাপকাঠি তার দৈহিক সৌন্দর্য। যতদিন সৌন্দর্য আছে, ততদিন সে তাকেপুঁজি করে নিজের দাম বাড়িয়ে চলে। পাশ্চাত্যের নারীদের এই সৌন্দর্য পূজাকে কেন্দ্রকরেই গড়ে উঠেছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিউটি পার্লার, কসমেটিক্স আর ডায়েট কন্ট্রোল ব্যবসা।পাশ্চাত্যে একজন কিশোরীর আদর্শ থাকে ব্রিটনিস্পিয়ার্সের মত তারকা যার কাছ থেকে সে অল্প বয়সেই নিজের যৌন আবেদনময় শরীরকে পুঁজি করে আশেপাশের সবার দৃষ্টি আকর্ষন করা শিখে। এসব ছলাকলা শিখতে শিখতে সে তার সরল এবং নিষ্পাপ মনটাকে হারায় যা তার সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ।অসংযমী জীবন যাপন করতে করতে সে তার স্বামীর কাছে প্রকাশিত হওয়ার পুর্বেই প্রকাশিত হয়ে পড়ে ডজনখানেক পুরুষের কাছে।
পাশ্চাত্যের নারীবাদ নারীদের এই ধোঁকায় ফেলে রাখতে চায় যে নারীত্ব নারীদের জন্য অপমানজনক; তাই তাদেরকে নারীত্ব বাদ দিয়ে পুরুষালী আচার-আচরণ গ্রহণ করতে হবে তাদের মুক্তির স্বার্থেই। নারীরা তাই পুরুষ হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রভাব পরছে পারিবারিক ব্যবস্থা’র উপর। ভেংগে যাচ্ছে ঘর-সংসার। নতুন বিশ্বব্যবস্থায় নারীরা আর মা, বোন অথবা স্ত্রী নন, তারাশুধুই নারী, যার দেহ ভোগের সামগ্রী।
আফগানিস্তানের উপর চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের অযুহাত হিসেবেপ্রায়শই নারীদের স্বাধীন করার কথা বলা হয়। কিন্তু এই স্বাধীনতা কিসের স্বাধীনতা?ব্রিটনি স্পিয়ার্সকে অনুসরণকরার স্বাধীনতা? ছোট আঁটসাটকাপড় পরার স্বাধীনতা? পুরো সমাজকে একটা পতিতালয় বানানোর যৌন স্বাধীনতা? পাশ্চাত্য আমাদের সামনে এমনএকটা সমাজ ব্যবস্থাকে মডেল করে তুলছে যেখানে পর্ণোগ্রাফি হচ্ছে বিয়ের বিকল্প। প্রতিটা মানুষ যেখানে মানসিকভাবে নিঃসঙ্গ,যৌনবুভুক্ষ আর আত্মমগ্ন। প্রত্যেকেই নিজ স্বার্থ চিন্তায় মগ্ন। যা বিশেষ করে নারীর জন্যে চরম ধ্বংসাত্নক। কারন যতদিন তারযৌন আবেদন আছে, ততদিন তার কদর আছে। কিন্তু সৌন্দর্য, বিশেষ করে যৌন আবেদন ক্ষনিকের সম্পদ। যা খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। নারী তাইএই সম্পদকে পুঁজি করে সমাজে নিজের অবস্থান গড়ে নেয়ার অর্থ সৌন্দর্য ফুরিয়ে গেলে তার অবস্থানের মূল্যায়নও ফুরিয়ে যাওয়া।আমি বোরকার পক্ষপাতিত্ব করছিনা। বোরকা এবং বিকিনি-দু’টোই চরম প্রান্তিক দুই অবস্থানের প্রতিনিধিত্ব করে। সমস্যার সমাধান এই দুইয়ের মাঝখানে কোথাও, যা আমাদেরকেই খুঁজে নিতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ