বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০১৩

তোমার 'ঈদের' অপেক্ষায় থাকে কিছু মানুষ....তুমি কি জানো বন্ধু??

বেতনের টাকা হাতে পেয়েই উৎ্ফুল্ল শা্হেদ পা বাড়ালো শপিংয়ের জন্য।
বাসা থেকে বের হয়ে তিন রাস্তার মাথায় এসে দাড়ালো।
রিকসার কোনো খবর নেই।
অনেক্ষন অপেক্ষার পর দূরে একটা রিকসা দেখে ইশারা করলো।
কাছে আসতেই দেখল বয়স্ক চালক।
শাহেদ বললো: চাচা আপনি পারবেননা। লাগবেনা চলে যান।
বৃদ্ধ চালক খুব মন খারাপ করে বললো: বাজান আমি বুড়া দেইখা আপনারা যদি আমার রিকশায় কেউ না উঠেন তাইলে আমি প্যাট চালামু ক্যমনে
কথাটা শাহেদের অন্তরে গিয়ে লাগলো………………. ইফতারির সময় ও ঘনিয়ে আসছে।ভাড়া ঠিক না করেই উঠে পড়লো শাহেদ।

চলতে শুরু করল……..রিকশার চাকা ঘুরছে, সাথে সাথে শাহেদের মাথায় ও বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা ঘুরপাক খাচেছ। কার জন্য কী কেনা যায়। বরাবরের চেয়ে একটু আলাদা হতে হবে এবার। ঈদের শপিং - একটু চমক থাকা চাই। ইত্যাদি ইত্যাদি ………..


রিকশা এগিয়ে চললো

গোধূলির আলো ছড়িয়ে ধীরে ধীরে আকাশের আডালে চলে যাচেছ দিনের সূর্য।আগত সন্ধ্যার মগ্নতায় নীরব হবে যাচেছ দিগন্ত বিস্তারী প্রকৃতি।
অন্যদিকে ছোট্ট একটা দৃশ্যপট শাহেদের মনটাকে অফুরন্ত ভালোলগায় ভরিয়ে দিচ্ছে মূহুর্মহু……পরিবারের সবাই তার দেওয়া উপহারে সজ্জিত। সবার মুখে অনাবিল হাসি।
মগ্ন শাহেদের হৃদয় উপছে উঠছে আননদ শিহরনে।

হঠাৎ খটখট আওয়াজে মগ্নতা ভাংলো শা্হেদের। দেখলো বৃদ্ধ চালক রিকশা থেকে নেমে ঠেলে ব্রীজের উপরে উঠানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ব্রীজটা বেশ উচু হওয়ায় অনেক চেষ্টা করেও পেরে উঠছেনা। অগত্যা শাহেদ নেমে পড়লো। পিছন দিক থেকে সে ও ঠেলে ঠেলে রিকসা ব্রীজের উপরে উঠালো।

বেশ হাপিয়ে উঠেছে চাচা বোঝা যাচ্ছে, বুক বড় করে ঘন ঘন দম নিচেছ।
গলায় প্যাচানো গামছা দিয়ে ঘর্মাক্ত মুখমন্ডল মুছল।

গভীরভাবে শাহেদ দেখলো রিকশাওয়ালাকে।

খেয়াল করলো….সাদা দাড়ি
চোখ দুটো গর্তে ঢোকানো
শরীরের চামড়া ঝুলে গেছে
রিকসায় যখন পেডেল মারছে বুক ভেংগে শ্বাস বের হচ্ছে তার…..বুঝি এখনি পিঠ আর পেট এক হয়ে যাবে। সম্ভবত মারাত্নক হাপানীতে আক্রান্ত। নি:শেষিত শরীরে কখানা হাড় কোনরকমে দেহের কাঠামো ধরে রেখেছে।
দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত রিকশাওয়ালার সাক্ষাৎ হয়। কে কার খবর রাখে তার…..গভীরভাবে তো দূরে তো থাক, কখনো দ্বিতীয়বার ফিরে দেখার প্রয়োজন মনে করেনি শাহেদ….যদি না ২/১ টাকা ভাড়া কমবেশি নিয়ে বাতচিৎ হয়। অথচ অতি সাধারন এই ঘটনা আজকে অজানা কারনে শাহেদের হৃদয়তন্ত্রীতে এক গভীর রেখা টেনে দিল।

রিকসা ছুটৈ চলল আবার

শাহেদের চোখে বিস্ময়ের অন্ত নেই। এই লোক এই বয়সে
এই শরীরে বাইরে আসার সাহস করলো কি করে?

-চাচা আপনার বাড়ি কোথায়?

-ক্যন্টনমেন্টের পশ্চিমপার্শ্বে
-আপনার ছেলেমেয়ে নাই?
-আল্লায় ছেলে দেয়নাই বাজান, খালি তিনডা মাইয়া।
-আপনারে দেখলেতো অসুস্হ মনে হয়…..এই অবস্হায় আপনি রিক্সা নিয়ে বের হলেন যে?
-হ বাজান শরীলডা ভালানা, তিনদিন জ্বরে পইডা আছিলাম, মালিক আইসা কইলো “তিনদিনের ভাড়া জমছে আইজ ভাড়া দিবার না পারলে রিক্সা লইয়া যামু।" অবস্হা ভালানা, খাওন দাওনের অভাব,……..উপাই অন্তর না দেইখা আইজ বাইর হইলাম।

শাহেদ খেয়াল করলো লোকটা কথা বলছে আর গলায় গরগর আওয়াজ হচ্ছে। এই বুঝি মানুষের নিয়তি!

একটা বৃদ্ধ যার কোন ছেলে নেই …..শুধু তিনটা মেয়ে
সংগ্রাম করছে নিরন্তর…..গাড়ি,বাড়ি ব্যবসা, বউয়ের জন্য ইন্ডিয়ান শাড়ি, ঈদের শপিং, বাহারি খাওয়া-দাওয়া এসবের জন্য নয়
শুধু একবেলা ভাত,
অথবা নিদেন পক্ষে মালিক এসে রিক্সাটা যেন নিয়ে না যায় শুধু সেই টাকাটা যোগাড় করা
অথবা আরেকটা দিন কোনরকমে একটু বেচে থাকার জন্য।
কিন্তু কীভাবে বাচবে এই বৃদ্ধ?
হয়ত কোন একদিন রিক্সা ঠেলতে ঠেলতে রাস্তার পাশে মরে পড়ে থাকবে জানতেও পারবেনা কেউ।

বাজারের মধ্যে ঢুকছে রিক্সা

-চাচ ভাড়া কতো পেলেন আজকে?
-বিকাল থাইক্যা অ্হন পর্যন্ত ৩০ টাহা পাইছি
-এত অল্প কেন?
-কি কমু বাজান বুড়া মানুষ দেইখলে আর কেই উঠবার চায়না।

ঠনক নড়লো শাহেদের। কারনটা খুবই স্পষ্ট …..প্রথমে সে নিজে ও উঠতে চায়নি।

প্রত্যেকটা বৃদ্ধ রিক্সা চালকের এই বয়সে রিক্সা চালানোর পিছনে হয়তো একটা করে মর্মান্তিক গল্প আছে।নাহলে এই বয়সে কারো রিক্সা নিয়ে বের হওয়ার কথা না।
গল্পটা তখন আরো ব্যাথাতুরা হয়ে উঠে যখন বয়সের ভারে নুয়ে আসা চালকের শরীর দেখে কেউ তার রিক্সায় উঠতে চায়না। সবাই এড়িয়ে চলে।
শাহেদ ভাবলো…. কিছু করতে পারি বা না পারি এখন থেকে অন্তত বৃদ্ধ চালকদের রিক্সাই উঠবো।

চাচা রিক্সার পেডেল মারে , শাহেদ চেয়ে থাকে অপলক।

-চাচা হোটেল আলামিনের সামনে নিয়ে যান।
রিক্সা থেকে নামলো শাহেদ…ঈফতারির সময় হয়ে আসলো।
- চাচা চলেন একসাথে ইফতারি করব।
-না বাবা আমি রোজা আছিলামনা, দেহি দুই একটা খ্প্যা পাওন যায় নাকি।
-রোজা রাখেননি তাতে কি? চলেন একসাথে ইফতারি করবো্। - - -জোর করেই চাচাকে সাথে নিয়ে পাশে বসালো। রকমারি ইফতারি সাজানো সামনে। সময় হল।
শাহেদ খেয়াল করলো চাচা ইফতারির ফাকে ফাকে কিছু ইফতারি পকেটে ঢুকাচ্ছে। কারণটা বুঝতে পেরে বড় একটা প্যাকেট ভরে ইফতারি দিয়ে দিল চাচাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য।

শাহেদের ঈদ শপিংয়ে ছেদ ঘটালো অন্যরকম কিছু ভাবনা।

কত মানুষ আছে আমাদের চারপাশে………ঈদের অপেক্ষা করেনা তারা।বরং ঈদ কত তাড়তাড়ি চলে যাবে সেই প্রহর গুনে ক্ষনে ক্ষনে।
ঈদ তাদের কাছে সূখের নয় যণ্ত্রনার
আনন্দের নয় আহাজারির
ঈদ থেকে পালিয়ে বাচতে চায় তারা কিন্তু সচ্ছল মানুষেরা চারিদিকে ঈদ আনন্দের তুফান বইয়ে দেয় আর সে আনন্দে খড় কুটোর মতো হাওয়ায় হাওয়ায় উড়তে থাকে ওইসব সর্বহারা মানুষের দল।আমরা কেউ তা আর তলিয়ে দেখিনা ভয়ে…………………….

ইফতারি শেষ। আজ শপিংয়ে আর মন নেই শাহেদের। চাচাকে বললো রিক্সা ঘুরান।

আবার রিক্সা ছোটে..।
চাচার দিকে তাকিয়ে অকৃত্রিম শ্রদ্ধায়, ভালবাসায় নুয়ে আসে শাহেদের মাথা
এই বয়সে যে অভাবী মানুষটার ভিক্ষের থালা নিয়ে রাস্তায় বসার কথা, সে তা না করে রিক্সার পেডেল মারে সর্বশক্তি দিয়ে। মাঝে মাঝে চাচার দু পায়ের শিরা স্টিলের তারের মত টান টান হয়ে যায়। মনে হয় এইবুঝি ঠাস করে ছিড়ে যাবে।কদমবুচি করতে ইচ্ছা করে শাশ্বত জীবন সংগ্রামে বিপ্লবী ঐ পা দুটি ছুয়ে।
জট পাকিয়ে যায় শাহেদের চিন্তা-ভাবনা। ক্রোধের আগুনে জলে যেতে চায় শরীর মন সবকিছু।সভ্যতার এই নির্মোহ নির্মান শ্রমিকেরা পুড়ে পুড়ে কাঠকয়লা হবে আর আমরা সেই কয়লায় আমাদের অফুরন্ত ক্ষুধা আর সীমাহীন বিলাসিতাকে শাণিত করবো অহর্নিশ। জগৎ জুড়ে এ কী এক মহা সার্কাস! এটাই নাকি জীবনের বৈচিত্র?
রিক্সা এসে পড়ল বাসার কাছাকাছি
শাহেদ নেমে রিক্সার হ্যান্ডেলে হাত রেখে চাচার মুখের দিকে তাকিয়ে অপলক জীবনের মানচিত্র পাঠ করে খুটেখুটে।
অস্ফুট স্বরে বলে উঠে “গাহি তোমাদের গান”।
শা্হেদ পকেটে হাত দিয়ে যা আছে সবই দিয়ে দিল।
শুধু রইল জীবনের একখানা দর্পন আর
হৃদয় ভাংগার কিছু শব্দ। তাই নিয়ে শাহেদ পা বাড়ালো বাসার পথে……………

মধ্য প্রদেশে সব মাদ্রাসায় গীতা পাঠা বাধ্যতামূলক করলো ইন্ডিয়ান সরকার

ভারতের মধ্য প্রদেশের সব ইসলামিক স্কুল-মাদ্রাসায় এবার হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ‘গীতা’ পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ওইসব স্কুল বা মাদ্রাসার সকল শিক্ষার্থীদের জন্য গীতাপাঠ করতে হবে। মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তে অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
মধ্যপ্রদেশ সরকারের নির্দেশ অনুয়ায়ী, প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর উর্দু পাঠ্যবইতে এবার থেকে থাকবে গীতার শ্লোক। উর্দুতেই পড়তে হবে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুনকে দেওয়া শ্রীকৃষ্ণের বাণী। এই নির্দেশের কারণে সৃষ্টি হয়েছে বির্তক। কারণ এই নির্দেশের কড়াকড়ি বেশি করা হয়েছে রাজ্যের মাদ্রাসা বা ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে। যেখানে উর্দু ভাষায় পাঠ্যবই বাধ্যতামূলক।
গত মাসে মধ্য প্রদেশের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্পেশাল হিন্দি এবং দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর স্পেশাল ইংরেজি বইতে গীতার অংশ যোগ করা হয়েছে।
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বলছেন,“এর ফলে কোনও বিতর্ক হবে না। একে শিক্ষার গেরুয়াকরণ বলা যাবে না। কারণ অন্য ধর্মের পাঠও থাকছে পাঠ্যক্রমে”।
তবে মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের চার মাস আগে এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে সংখ্যালঘু মুসলিম ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ। এ ঘটনায় তারা আদালতে যাওয়ার কথাও ভাবছেন।

শীঘ্রই ফিরছেন ইলিয়াস আলী!!

নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী শীঘ্রই ফিরছেন। দলের নেতা-কর্মীদের এমন আশ্বাস দিয়ে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা বলেছেন, ধৈর্য ও শৃঙ্খলার সাথে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করুন। আপনাদের প্রাণ প্রিয় নেতা এম ইলিয়াস আলী আপনাদের মাঝে ফিরবেন এমন বিশ্বাস আমার আছে।

তিনি মঙ্গলবার গ্রামের বাড়ি বিশ্বনাথের অলংকারি ইউনিয়নের রামধানায় তাঁর মা সূর্যবান বিবি ও পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ উৎযাপন করতে বিশ্বনাথে আসেন। এ খবর পেয়ে বিশ্বনাথ-বালগঞ্জ-ওসমানীনগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ইলিয়াস আলীর বাড়িতে আসলে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে একথা বলেন।


এসময় তারা ইলিয়াস আলীর বাড়িতে এসে তাঁর মা সূর্যবান বিবি ও স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনার সাথে সাক্ষাৎ করেন।


উপজেলা বিএনপির সভাপতি জালাল উদ্দিন চেয়ারম্যান জানান, বুধবার বাড়িটি ছিল লোকে লোকারণ্য। দল বেঁধে মানুষ তাঁর বাড়িতে আসছেন।


এতে বেশিরভাগ লোকজন ছিল বিএনপির ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও ইলিয়াস সমর্থনকারী।


এসময় তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও ইলিয়াস সমর্থনকারীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করেন। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারদের নেতা আপনাদের মাঝে ফিরে আসবেন। ধৈর্য ধরে থাকার আহবান জানান। আপনারা মনোবল হারাবেন না। ধৈর্য ও শৃঙ্খলার সাথে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে যান। ইনশাআল্লাহ আপনাদের প্রাণপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী আবারো আপনাদের মাঝে ফিরে আসবেন।


ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা জানান, ইলিয়াস আলী মাটি ও মানুষের নেতা। তিনি কোন দিন কারো ক্ষতি করেননি। তিনি সব সময় মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছেন।


এই মানুষটিকে কেন গুম করা হলো ? এর উত্তর জনগণ জানতে চায়। আমরা ক্ষমতা প্রতিপত্তি কিছু চাই না। যে কোন মূল্যে আমার স্বামী ও তাঁর গাড়ী চালক আনসার আলীকে অক্ষত এবং সুস্থ অবস্থায় আমাদের মাঝে ফিরে পেতে চাই।


এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, উনার প্রশাসন যন্ত্র, দেশের সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং দেশের সকল বিবেকবান মানুষের কাছে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আকুল আবেদন, উনাদের ঐকান্তিক ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় ইলিয়াস আলী এবং তাঁর গাড়ী চালক আনছার আলীকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। আমরা দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।


তিনি বলেন, বাড়িতে ঈদ করার জন্য এসেছি। ইলিয়াস আলীর প্রসঙ্গে বলেন, তিনি দেশের জন্য রাজনীতি করছেন। তাকে এভাবে গুম করা হবে কখনও ভাবিনি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস তিনি এখনও জীবিত আছেন এবং দেশের জনগণের মাঝে ফিরে আসবেন। দেশবাসীর কাছে তিনি দোয়া কামনা করেন।

বাংলাদেশের পুলিশ-র‍্যাব, শামীম ওসমানরা আর জনগণ

একবার নিউইয়র্ক, লন্ডন ও ঢাকা শহরের পুলিশের প্রধান কর্মকর্তারা এক বৈঠকে বসেন। তাঁরা প্রত্যেকেই দাবি করেন যে তাদের পুলিশ সবচেয়ে দক্ষ। তাদের দাবির পক্ষে প্রমাণ পেশ করতে বলা হল।

নিউইয়র্ক শহরের পুলিশ প্রধান দাবি করলেন যে, তাঁর পুলিশ বাহিনীর কাছে সর্বাধুনিক কম্পিউটারে আসামীদের সম্পর্কে সর্বশেষ উপাত্ত রয়েছে। কাজেই কোন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাঁরা শতকরা ৯৯ ভাগ আসামী ধরে ফেলতে পারে। সুতরাং, নিউইয়র্কের পুলিশ বিশ্বের সেরা।


লন্ডনের পুলিশ প্রধান স্বীকার করলেন যে, তাঁর পুলিশ বাহিনীর এত যন্ত্রপাতি নেই, তবু তাদের এলাকার জনগণের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তাই ২৪ ঘন্টাতে না হলেও ৭ দিনের মধ্যে ৯৯.৯৯ শতাংশ অপরাধী তাঁরা ধরে ফেলতে পারেন।


ঢাকার পুলিশ প্রধান বললেন যে, তাঁর কম্পিউটার নেই; তাঁর পুলিশ বাহিনীর সাথে জনগণের যোগযোগ নেই এবং তারা প্রায় ৯০ ভাগ আসামী ধরে না। তবু ঢাকার পুলিশ বিশ্বের সেরা কেননা অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কমপক্ষে ৭ দিন আগেই তারা জানে কোথায় কি অপরাধ সংঘটিত হতে যাচ্ছে। সর্বাধুনিক কম্পিউটার নিয়েও পৃথিবীর কোন পুলিশ বাহিনী এ ধরনের রেকর্ড সৃষ্টি করতে পারেনি।


নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান কখন কিভাবে রফিউর রাব্বির ছেলে ত্বকীকে হত্যা করেছে পুলিশ র‍্যাব আলবৎ জানে। জনগণের আন্দোলন যত শক্তিশালী হবে গর্তের ভেতর থেকে ততো ধীরে ধীরে কেঁচো সাপ বের হতে থাকবে। শুধু আন্দোলনটা ধরে রাখা দরকার। ত্বকী মঞ্চের মধ্য দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন সহ সকল প্রগতিশীলদের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই।


আচ্ছা কেউ কি বলতে পারেন, বিএনপি-জামাত কেনো ত্বকী হত্যা নিয়ে কোনো আন্দোলন করছে না?

মন্ত্রী এবং তার ছেলে

মন্ত্রীর ছেলের নাম সোহান। সোহানের সাথে আমার বন্ধুর মত সম্পর্ক। সোহান খুবই ভালো ছেলে। দেখতে হলিউডের নায়কের মত। বিদেশ থেকে লেখা-পড়া শেষ করে এসেছে। তার বাবা তেল জ্বালানী মন্ত্রী আবদুর রব।আবদুর রব সব সরকারের আমলেই কোনো না কোনো মন্ত্রী থাকেন। কঠিন লোক। এই আবদুর রবের অতীত ইতিহাস খুব ভালো নয়। আবদুর রবের বাবা সেকান্দর আলী কাঁধে করে গামছা-লুঙ্গি বিক্রি করতেন।এখন আবদুর রবের চার শো কোটি টাকা আছে। দুই টা টিভি চ্যানেল আছে। একটা দৈনিক পত্রিকা আছে। আবদুর রবের কোনো দোষ নেই, মন্ত্রী মানেই অনেক, গাড়ি -বাড়ি ব্যাংক ব্যালেন্স থাকবেই। মন্ত্রীর কি আছে, না আছে সেটা আমার লেখার বিষয় নয়। আজ আমি বলব- মন্ত্রীর ছেলে সোহানের কথা। যদিও আপনারা জানেন কান টানলে মাথা আসবেই। তাই তেল ও জ্বালানী মন্ত্রী আবদুর রব এর কথা এই গল্পে বার বার চলে আসলে খুব দোষনীয় মনে করার কোনো কারন নেই।

আবদুর রব মন্ত্রী হওয়ার আগেই সোহানের সাথে আমার পরিচয় হয়। আমরা একই সাথে লেখা-পড়া করতাম। সোহানের বাবা মন্ত্রী হওয়ার পর- মনে হলো- সারা বাংলাদেশটাই যেন আমাদের। হাতে অনেক ক্ষমতা। গাড়ি করে আমরা কোথাও যাচ্ছি- হঠাত রাস্তায় কোনো সার্জেন গাড়ি থামালে- সোহান বলত, এই সার্জেন কে নেমে দুই টা থাপ্পড় দিয়ে আয়। সাথে সাথে সোহানের চামচা মুহিত গাড়ি থেকে নেমে সার্জেন কে সত্যি সত্যি দু'টা থাপ্পড় দিয়ে দিত। যেখানে যেতাম- সবাই অতি মাত্রায় ভদ্রতা দেখাতো। সোহানের গাড়ি ছিল দুইটা। গাড়িতে সব সময় টিভি চ্যানেলের স্টিকার লাগানো থাকতো। কোথাও বের হলে সোহান পানিত মত টাকা খরচ করতো। মুহূর্তের মধ্যে আশি হাজার, নব্বই হাজার টাকা খরচ করে ফেলত। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। বন্ধু হিসেবে সোহান আমাকে খুব বেশী পছন্দ করতো। টানা চার বছর সোহানের সাথে ঘুরা-ঘুরি করে আমি ক্লান্ত। আমি বুঝতে পারলাম- এই ধরনের জীবন আমার জন্য নয়।


এরপর থেকে আমি সোহানকে এড়িয়ে যেতে শুরু করলাম। ফোন করলে ফোন ধরতাম না। বাসায় লোক পাঠালে- আমি বলে দিতাম, আমার কাজ আছে, খুব ব্যস্ত এখন আমি। অবসর পেলে দেখা করবো। এইভাবে দেখা না করে এক বছর পার হয়ে গেল। আমি আমার মতন চলতে শুরু করলাম। বিলাসিতা আমার কখনই ভালো লাগে না। নিজে টুকটাক কাজ করে চলি- তাতে অনেক শান্তি। কারণ আমি জানি, সুখের থেকে স্বস্তিতে থাকা ভালো।তবে আমি সব সময়ই সোহানের খোঁজ খবর রাখতাম। ছেলে হিসেবে সোহান অনেক ভালো। দরিদ্র মানুষের প্রতি অন্য রকম একটা ভালোবাসা আছে। তাদের জন্য অনেক কিছুই করেছে। একদিন সন্ধ্যায় সোহান হঠাত করে আমাকে ফোন দিয়ে বলল- দোস্ত, মহাখালী জাকারিয়া বারে আয়। তোকে খুব দরকার। কি মনে করে যেন আমি- জাকারিয়া বারে গেলাম। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল, সেই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আমি বারে গেলাম। গিয়ে দেখি- দশ-পনের টা ছেলে গোল একটা টেবিলে বসে আছে।--


সেদিন ছিল সোহানের জন্মদিন। সোহান আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, দোস্ত তুমি এসেছো আমি অনেক খুশি হয়েছি। সোহানের চোখের এক ইশারাতে বারের বয় এসে সবাইকে একটা করে বড় মদের বোতল দিল। আমাকে একটা দিল। বোতলের গায়ে বড় করে লেখা ব্লাক ডগ। সোহানের মদের বোতলের গায়ে লেখা- ওল্ড স্মাগলার। বারের বয় সবাইকে পেগ সাজিয়ে দিচ্ছে। সাথে সাথে আছে পরোটা -গ্রীল চিকেন আর ঝাল ছোলা। সোহানকে খুশি করার জন্য পটাপট তিন-চার পেগ শেষ করলাম। ( মদ কখনই আমার ভালো লাগেনি, যে ক'বার খেয়েছি- বন্ধুকে খুশি করার জন্যই খেয়েছি। ) সন্ধ্যা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত আমরা সবাই তরল পানীয় খেয়ে চললাম। এর মধ্যে তিনজন বমি করে সারা শরীর মাখা-মাখি করে ফেলেছে। দুই জন কাঁদছে। চার জন মেয়েদের কোন অঙ্গ বেশী সুন্দর তা নিয়ে তর্ক করছে। আমি সোহানের দিকে তাকিয়ে বললাম, দোস্ত আমি যাই। পরে আবার দেখা হবে। সোহানের চামচা মুহিত খুব ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল- আর এক পর্ব বাকি আছে দাদা।


মদের বিল দিয়ে টাকা শেষ। সোহান, মুহিতকে বাসায় টাকা আনতে পাঠিয়েছে। পরের পর্বের জন্য অনেক টাকা লাগবে। মদের পর্বে টাকা খরচ হয়েছে বাহাত্তর হাজার টাকা। আমাদের এগারো জনের জন্য এগারোটা মেয়ে এসেছে। এই মেয়ে গুলো আজকের রাতটা আমাদের জন্য এক আকাশ আনন্দ এনে দিবে। মেয়ে গুলো কোনো সাধারন মেয়ে নয়। মডেল কন্যা আছে, অভিনেত্রী আছে, সিনেমার নায়িকা আছে- ইডেন এবং আহছান উল্লাহ ভার্সিটির চারজন মেয়ে আছে। সত্যি কথা বলি- প্রতিটা মেয়ে দেখতে অসাধারন সুন্দরী। এরপর মধ্যেই মডেল কন্যা- এক ছেলের কোলে বসে আদর নিচ্ছে-সবার সামনেই। মেয়েটির মধ্যে কোনো সংকোচ বোধ দেখলাম না। আমার আর সোহানের জন্য যে দু'টি স্পেশাল মেয়ে আসছে- মেয়ে দু'টি বাংলাদেশ বিমানের বিমানবালা । কিন্তু দু'জন বিমানবালাকেই আমার কাছে খাটো বলে মনে হলো। যাইহোক, আমি সোহানকে বললাম- মেয়ে সঙ্গ আমি পছন্দ করি না। আমাকে বিদায় দাও। মদ তো প্রচুর খেলাম, দেখছো না, ঠিক ভাবে দাঁড়াতে পারছি না। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। টাল মাতাল অবস্থা আমি পথে নামলাম।


রাত দুইটায় বাসায় ফিরে গোছল করলাম। তারপর ঘুম। সকাল দশ টায় ঘুম থেকে উঠার পর পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে গেল।আমার অপরাধ- আমি বিমানবালাকে ধর্ষণ করার পর খুন করেছি। থানা থেকে আমাকে নিয়ে গেল জজ কোর্টে, জজ কোর্ট থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে। কারাগারে আমাকে দেখতে এলেন তেল ও জ্বলানী প্রতিমন্ত্রী আবদুর রব । মন্ত্রী আবদুর রব আমাকে বললেন- আমি জানি, সে রাতে তুমি জাকারিয়া হোটেলে ছিলে না। বিমানবালাকে তুমি ধর্ষণ বা খুন করনি। কিন্তু তুমি সব স্বীকার করবে যে, তুমি বিমানবালাকে ধর্ষণ করার পর, নেশাগস্ত থাকার কারণে খুন করেছো। আমি তোমাকে কথা দিলাম- তোমার ফাঁসি হবে না এবং আমি তোমাকে এক বছরের মধ্যে বের করে নিয়ে আসবো। তুমি তো জানো আমার ঘরে সব সময় পনের-বিশটা টাকার বস্তা থাকে- আমি তোমার বাসায় দু'টা টাকার বস্তা পাঠিয়ে দিব। তুমি আমার ছেলের বন্ধু।খুব ভালো বন্ধু, তুমি আমার ছেলেকে বাঁচাও। আমি আমার ছেলেকে অনেক ভালোবাসি।


এরপর কি হলো- আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। হয়তো অন্য কোনো লেখায় এ বিষয়ে আবার লিখব। কোথায় যেন ইংলিশ গান বাজছে। অ্যাভরিল ল্যাভিনের গান ।গানের কথা এবং সুরটাও খুব সুন্দর- " I'm giving up, on everything

Because you messed me up
Don't know how much you screwed it up
You never listen, that's just too bad

I know I wanna runaway, I know I wanna runaway

Runaway
If only I could runaway, if only I could runaway
Runaway
I told you what I wanted, I told you what I wanted
What I wanted
But I was forgotten, I won't be forgotten
Never again

( এই গল্পের ঘটনা প্রবাহ , প্রতিটি শব্দ , প্রতিটি বাক্য, গল্পের চরিত্র গুলো এবং তাদের সংলাপ শতভাগ সত্য ! তাই গল্পের কারণে আমি ব্যাতীত অন্য কারো অনূভুতিতে আঘাত লাগলে সেটার জন্য আমি দায়ী এন্ড আই ডোন্ট কেয়ার এবাউট ইট !!!! )

কান্না

গতকাল রাতে ঘুমাতে যাচ্ছিলাম বাতি নিভিয়ে,
হঠাত কোথা থেকে যেন কান্নার শব্দ,
কান পেতে শুনতে চেষ্টা করলাম, না পরিচিত কেউ না।
চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, না সেই একই শব্দ।
পাশে ছোট ভাই শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছে,
ওর ভেতর কোন রিআ্যাকশান দেখলাম না,
বুঝলাম, আমি একাই শুনছি।
এমন কে কাদছে যে আমি একাই শুনছি, আর কেউ শুনছেনা।
হেডফোন টা কানে দিয়ে ঘুম দিলাম।
সকালে উঠে অনেক গবেষনার পর আবিষ্কার করলাম,
আর কেউ না, আমার সাইকেল টা কাদছিল গত রাতে।
গতকালই বাসার সবার ঈদ শপিং শেষ হল,
কিন্তু আমার সাইকেলটার জন্যে কিছ্ছু কেনা হয়নি।
এই দূ:খে বেচারা কাদছিল..
প্রত্যেকদিন এটা ওটা শপিং করে কেউ না কেউ সিড়িতে ওর সামনে দিয়ে বাসায় ঢুকে, আর ও ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
শেষ আর সহ্য করতে না পেরে কেদেই দিল.. :"(
সকালে গিয়ে ওকে সান্তনা দিয়ে আসলাম।
আজকে ওকে ঈদের গোসল টা দিয়ে একদম সাজিয়ে দিব।
আর বললাম, কালকে ঈদের নামাজ শেষে বাসায় এসে
সবার আগে ওর সাথেই কোলাকুলি করব।
শুনতেই ক্যামন খিলখিল করে হেসে উঠল আমার জানটুস টা।

শামীম ওসমানের হাস্যকর প্রতিক্রিয়া



৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসের বরপুত্র হাজী সাহেব খ্যাত আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব-১১। এ সময় সেখান থেকে রক্ত মাখা প্যান্ট, লাঠি, হকি স্টিকসহ বেশ কিছু আলামত জব্দ ও ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। র‌্যাবের অভিযানে অংশ নেয়া সাংবাদিকরা জানিয়েছে, ওই টর্চার সেলের দেয়ালে অসংখ্য বুলেটের দাগ রয়েছে। এ সম্বন্ধে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আজমেরীর চাচা , সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, এটা সাজানো। আর আজমেরীর মা পারভীন ওসমান বলেছেন, এটা ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের সুনাম নষ্টের প্রয়াস। আজমেরীর বাবা নারায়ণগঞ্জ - ৫ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসিম ওসমান ভারতে থাকায় কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

আমি শামীম ওসমানের প্রতিক্রিয়ার জবাবে তাকে প্রশ্ন করব, একন ক্ষমতায় কারা। আপনার কথা শুনে মনে হয় বিএনপি বা জামায়াত শিবির ক্ষমতায় আছে। আপনি ভুলে গেছেন রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। আপনি আওয়ামীলীগ করেন আর আপনার বড় ভাই নাসিম ওসমান মহাজোটের প্রধান শরীক জাতীয় পার্টি করেন। এ অবস্থায় আপনাদের বিরুদ্ধে সাজানো অভিযান কি সম্ভব ?
শামীম ওসমান আপনি যথেষ্ট যোগ্যতাবান এ কথা স্বীকার করতে আমার কোন আপত্তি নেই। তবে আপনার কিছু বদ গুন আছে। যেমন আপনি সব কিছু নিয়ে অতি নাটক করেন। আপনার চারপাশের কিছু লোক লুটেপুটে খেলেও তাদের পক্ষেই সাফাই গান। সন্ত্রাসী লালন করে সারা দেশে গড ফাদার উপাধি পেয়েছেন আপনি। নারায়ণগঞ্জ- ঢাকা রুটের গাড়ি ভাড়া নিয়ে গাড়ি মালিকদের পক্ষে আপনার নগ্ন অবস্থান আপনার রাজনীতি কলুষিত করেছে।


শামীম ওসমান এবার যতটা না আপনি দোষ করেছেন তার চেয়ে বেশী আপনার ভাতিজা করেছে। আজমেরী গোটা নারায়ণগঞ্জে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়। একটার পর একটা হত্যা করে সে অমানুষ হয়ে গেছে। নিজেকে আজমেরী শয়তান বলে আখ্যা দেয়।
আর পারভীন ওসমানের প্রতিক্রিয়ায় আমি কিছু বলব না। কারন আমি একজন নারায়ণগঞ্জবাসী হিসেবে জানি, এই মহিলার আস্কারায়ই আজমেরী এতটা খারাপ হয়েছে। এই মহিলাও একজন বদমেজাজী।

জামায়াত হেফাজত মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র প্রসঙ্গ

প্রতিটি রাজনৈতিক দল বা জোটের উদ্দেশ্য থাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আরোহণ এবং ঘোষিত নীতি, আদর্শ ও দর্শন অনুসরণে জনমানুষের কল্যাণ সাধন। সুতরাং একটি রাজনৈতিক দলের জন্য ক্ষমতায় যাওয়া বা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাজনৈতিকভাবে প্রচেষ্টা চালানো কোনো দোষের নয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্যতম মূলমন্ত্রে বলা হয়েছে, ক্ষমতা আরোহণের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে মৌলিক জাতীয় ইস্যুগুলোর ওপর ঐকমত্য থাকা প্রয়োজন এবং পরস্পরের প্রতি নূ্যনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকা আবশ্যক। একইসঙ্গে ধর্মকর্মের সব ক্ষেত্রে সব মানুষের সমঅধিকার নিশ্চিত থাকতে হবে, শুধু কথার ফুলঝুরিতে নয়, রাষ্ট্রের সংবিধানে এবং রাষ্ট্রীয় কার্যকরণের সব ক্ষেত্রে। কিন্তু যে দুটি রাজনৈতিক দল বা জোট বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং ক্ষমতায় যাওয়া বা থাকার জন্য লড়াইয়ে রত, তাদের মধ্যে কি উপরোক্ত আবশ্যিক মৌলিক বিষয়ের ওপর নূ্যনতম কোনো মিল আছে? উত্তর, না।

বিশ্বের যে সব রাষ্ট্র গণতন্ত্রের পথ ধরে উন্নয়নের শিখরে উঠেছে, তাদের দিকে তাকালে দেখা যায় তারা দীর্ঘ সংগ্রাম ও স্বাধীনতা অর্জনের অব্যবহিত পর রাষ্ট্রের মূলমন্ত্র হিসেবে যে দর্শনগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার পালাবদলে ওইসব মূলমন্ত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সব রাজনৈতিক দলই ওই মূলমন্ত্রকে শিকড় বা ভিত্তিমূল ধরে দলীয় কর্মসূচি ও চিন্তাচেতনার প্রতি জনগণের সমর্থন আদায়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের সংগ্রাম এবং একাত্তরের যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধ ও বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মৌলিকত্ব বা মূলমন্ত্র, যা সনি্নবেশিত হয় বাহাত্তরের সংবিধানে। প্রতিষ্ঠিত হয় গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ। এই মূলমন্ত্রগুলোর সাংবিধানিক ব্যাখ্যায় বলা হয়, বাংলাদেশে একটি উদার প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা থাকবে, যেখানে ধর্ম ও নারী পুরুষভেদে কোনোরকম বৈষম্য করা হবে না। ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। রাষ্ট্রের সব অঙ্গনে বাঙালি সংস্কৃতির লালনপালন করা হবে এবং কিছুতেই তা কোনো ধর্ম বা বর্ণের মতাদর্শের ভিত্তিতে সংকুচিত করা যাবে না।


পঁচাত্তরের মর্মান্তিক ঘটনার কারণে আওয়ামী লীগ বা ১৪-দলীয় জোট ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পর ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে পঁচাত্তরের পর বিনষ্ট হওয়া রাষ্ট্রীয় মূলমন্ত্রগুলোকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালিয়েছে। অনেকটা সফল হয়েছে, তবে পরিপূর্ণ সফল হতে পারেনি। অন্যদিকে পঁচাত্তরের পর দুই সামরিক শাসকের পথ ধরে বিএনপি, পরে বিএনপি-জামায়াত, অধুনা এখন হেফাজত একসঙ্গে ওই রাষ্ট্রীয় মূলমন্ত্র বা ফান্ডামেন্টালগুলোর বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। ফলে অদ্ভুত এক অভিধা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজমান, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি, যা বিশ্বের কোথাও নেই। আমাদের রাজনীতির মূল সমস্যাটি এখানে। এই সমস্যার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত চলতি কোনো সমস্যার সাময়িক কোনো সমাধানের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে আমরা সংঘাত-সাংঘর্ষিক রাজনীতি থেকে বের হতে পারব না। দুর্নীতিমুক্ত সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য অধরাই থেকে যাবে। বিশ্বের ইতিহাসের দিকে তাকালে এ কথার যথার্থতা পাওয়া যায়। যেহেতু একটা নির্বাচনী সংস্কৃতি মোটামুটি আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি বলা যায়। তাই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ক্ষমতাসীনদের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে হয়তো একবার আওয়ামী লীগ, আরেকবার বিএনপি, এভাবে ক্ষমতার পেন্ডুলাম ঘোরাতে পারে; কিন্তু মানুষ যা চায়, গত ২০ বছরের ক্ষমতার পালাবদলে সে আশা তো পূর্ণ হয়নি।


বিএনপি নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক ইসলামী জোট এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক জোটের বাইরে আছে এরশাদের জাতীয় পার্টি। জিয়াউর রহমানের ধারাবাহিকতায় এরশাদ এ দেশের রাজনীতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে ক্ষতি করেছে, সে কথা বলে আর শেষ করা যাবে না। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবারের পরিবর্তে শুক্রবার করে এরশাদ রাষ্ট্রের যে অপূরণীয় ক্ষতি করেছে তা থেকে রাষ্ট্র এখনো বের হতে পারেনি। সবাই বলে এরশাদের মতিগতির কোনো ঠিক নেই। তবে এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়া এরশাদের পক্ষে আর সম্ভব নয় এ কথা যেমন সঠিক, তেমনি এ কথাও ঠিক যে ভোটের রাজনীতিতে জোট গঠনে এরশাদের মূল্য এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আরও একটি গ্রুপ আছে, তারা হলেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কিছু দলছুট নেতা। এরা বেশ কেতাদুরস্ত। ঢাকা নগরীর সিভিল সমাজে এদের একটি গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং সাজিয়ে গুছিয়ে ভালো ভালো কথা বলতে পারে। তাদের কার্যক্রম ঢাকার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সেমিনার কক্ষে এবং টেলিভিশনের টকশোর মধ্যে সীমাবদ্ধ। এরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে একই পাল্লায় মাপে। জনগণের কাছে এবং ভোটের রাজনীতিতে এদের খাতা এখনো শূন্য। অদূরভবিষ্যতে তা পূর্ণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সুতরাং ঘুরে ফিরে সেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এই দুই দল বা জোটই মানুষের কাছে থাকল। একদল উদার প্রগতিশীল এবং বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের পক্ষে। আরেক দল মানুষকে আস্তিক-নাস্তিক দুই ভাগে ভাগ করে নারীদের আবদ্ধ করার পক্ষে।


ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তাদের চলতি মেয়াদের প্রায় শেষ প্রান্তে। নৈরাশ্যবাদীদের কথা বাদ দিলে বলা যায়, আগামী জানুয়ারি মাসে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের রায় সবাই মেনে নেবে সেটাই প্রত্যাশিত। এ বিষয়ে সম্প্রতি পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল পরাজিতরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নিয়ে একটা ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। পাঁচটি সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিগত দিনের পারফরম্যান্স এবং ব্যক্তিগত ট্র্যাক রেকর্ড সবদিক থেকে তুলনামূলকভাবে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের থেকে ভালো ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত কথা হলো, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা ভোটে হেরেছে। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে জনগণের রায় শিরোধার্য হিসেবে মেনে নিতে হবে। তবে জনগণের ভোটই যে সবক্ষেত্রে ও সব সময় চূড়ান্ত বিচারে ভালোর নির্দেশক তা বলা যাবে না। বিশ শতকের প্রথমভাগে জার্মানির হিটলার এবং ইতালির মুসলিনিকে সে দেশের মানুষ বিপুল ভোটে জয়ী করে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। তার খেসারত হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পৃথিবীর দুই কোটি মানুষকে প্রাণ দিতে হলো। হিটলার ও মুসলিনি উভয়ই ধ্বংস হলো, তাদের সব রাজনৈতিক দল চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ হলো। কিন্তু ইতোমধ্যে যে প্রাণপাত হলো এবং পৃথিবীর সম্পদ ধ্বংস হলো, তা তো আর ফিরে পাওয়া গেল না। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং একই অভিযোগে আদালতে দণ্ডায়মান মতিউর রহমান নিজামী ভোটে জিতে বিএনপির সহায়তায় ২০০১-২০০৬ মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। তার ভয়ানক কুফল এ দেশের মানুষ দেখেছে। যদিও মানুষই আবার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভোটের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করেছে। কিন্তু ইতোমধ্যে রাষ্ট্রের জীবন থেকে পাঁচটি বছর যে ঝরে গেল তা তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তাও সহজে পূরণ হওয়ার নয়। সিটি নির্বাচনের ফলে বিএনপি শিবির উল্লসিত এবং আওয়ামী লীগ শিবির কিছুটা ম্রিয়মাণ। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, রাজনৈতিক পোলারাইজেশন তত স্পষ্ট হচ্ছে। রোজার সময় ইফতার রাজনীতির চিত্র দেখে তা আরও পরিষ্কার হচ্ছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর বিএনপি ভোটের ফলে উৎসাহিত হয়ে তাদের জোটের পাঁচটি ইসলামী দলসহ জামায়াত-হেফাজতকে আরও আপন করে শক্তভাবে অাঁকড়ে ধরেছে। এখন আগামী নির্বাচনের ভোটের ফল দেখার অপেক্ষায়।


হেফাজতে ইসলাম সম্প্রতি নব্য রাজনৈতিক ইসলামের ঝাণ্ডা নিয়ে হাজির হয়েছে। গত সিটি নির্বাচনে তারা ব্যাপকভাবে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে। হেফাজতে ইসলাম মন্ত্রী-রাষ্ট্রপতি হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ভোগের জন্য যে উদগ্রীব হয়ে আছে তা তাদের ৬ মে-এর কর্মকাণ্ড থেকে স্পষ্ট। ওইদিন তাদের আশা ছিল আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হবে। সেই আশায় তারা বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে মিলে কে কোন মন্ত্রী হবে তার ভাগবাটোয়ারাও করে রেখেছিল। এটা হলো সেই অন্ধকারে আবদ্ধ ষাড়কে হঠাৎ বাইরে ছেড়ে দিলে যা হয় আর কি, সে রকম অবস্থা। সুতরাং ২০০১-২০০৬ মেয়াদে জামায়াতের নেতারা যেমন বিএনপির কাঁধে চড়ে মন্ত্রী হয়েছিল, ঠিক একইভাবে যদি এবার হেফাজতও মন্ত্রিত্ব পায় তাহলে গণতন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোথায় যাবে তা তো হেফাজতের ১৩ দফা এবং সম্প্রতি আহমদ শফীর নারী নীতি সম্পর্কিত বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়েছে।


নারীদের লেখাপড়া বন্ধ করে ঘরের মধ্যে পুরুষদের দাসী বানানোর যে ফতোয়া হেফাজতের নেতা দিয়েছেন তার সমর্থনে বিএনপির সদস্যরা পার্লামেন্টে বক্তৃতা দিয়েছেন। তাহলে দাঁড়ালটা কি? দাঁড়াল এই_ বিএনপি ক্ষমতায় এলে হয় হেফাজতের ১৩ দফা ও আহমদ শফীর নারী নীতি বাস্তবায়ন করবে, আর নয়তো বুঝতে হবে বিএনপি এখন রাজনৈতিক কৌশলের নামে প্রবঞ্চকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। প্রবঞ্চনার আশ্রয় নিয়ে অথবা নারীদের অন্ধ কূপে নিক্ষেপ করে, দুটোর কোনোটার দ্বারাই শুভ কিছু অর্জন করা কোনো দিন সম্ভব হয়নি, আগামীতেও হবে না। জামায়াত ও তাদের রাজনীতি সম্পর্কে এ দেশের মানুষ এখন সবই জানে। এদের নিয়ে বেশি কিছু লিখে প্রবন্ধের স্পেস নষ্ট করতে চাই না। জামায়াতের মতে গণতন্ত্র হলো কুফরি মতবাদ। আর মুক্তিযুদ্ধ তো তারা স্বীকারই করে না। তারা বলে ওটা ছিল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এর থেকে বড় অপমান আর কিছু হতে পারে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৬৮ বছর পর নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে যারা এখনো বেঁচে আছে, তাদের বিচার করার লক্ষ্যে ওদেরকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সম্প্রতি জার্মানি একটা গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যার নাম দিয়েছে,‘Operation Last Chance|’ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই নাৎসি যুদ্ধাপরাধীরা যে অপরাধ করেছে তা সব কালের সীমা ভেদ করে এখনো দগদগে। তাই মানবতার কল্যাণের জন্য তাদের বিচার অপরিহার্য। আর বাংলাদেশে মাত্র ৪২ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে জামায়াত-বিএনপি যা বলছে, তাকে বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কী বলা যায়।


যুদ্ধাপরাধের জন্য গঠিত বিচারিক আদালত রায়ে উল্লেখ করেছে_ জামায়াতে ইসলামী যে একটা সন্ত্রাসী সংগঠন তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ সংগঠনের সদস্যদের রাষ্ট্রীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে না রাখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আদালত। এহেন জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা অনুমান করাও ভয়ঙ্কর বিষয়। এই জামায়াতের সঙ্গে গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ কি একই কাতারে অবস্থান করতে পারবে? লেবাসধারী ধার্মিকরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্বাদ পেলে ধর্ম ও ন্যায় বিচার দুটোই যে ভূলুণ্ঠিত হয়, তার উদাহরণ মধ্যযুগ থেকে চলে আসছে, এখনো চলছে। এ সম্পর্কে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক প্রয়াত শওকত ওসমানের 'ক্রীতদাসের হাসি' উপন্যাসে একটি সরস উদাহরণ আছে। বাগদাদের সিংহাসনে তখন আব্বাসীয় খলিফা হারুন অর রশিদ। বাদশার হেরেমখানায় তো বেগম ও বাদীর সংখ্যার কোনো লেখাজোখা ছিল না। তারপরও 'মেহেরজান' নামের এক আরমানীয় বিবাহিত বাদীর ওপর নজর পড়ে বাদশার। মেহেরজানকে শাদি করার ইচ্ছা প্রকাশ করে বাদশা তার রাজকবির মতামত জানতে চান। রাজকবি ইসহাক বলেন, 'মেহেরজান বিবাহিত স্ত্রী, আর কারও জন্য সে হারাম।' প্রত্যুত্তরে বাদশা হারুন রাজদরবারের আলেম মাওলানা আবদুল কুদ্দুসের লিখিত ফতোয়া দেখান কবিকে। ফতোয়ায় মাওলানা লিখেছেন, 'মেহেরজান কেনা বাদী, মালিকের হুকুম ছাড়া তার কোনো শাদি হতে পারে না, যদি হয়, তা না-জায়েজ।' কবি ইসহাকের উত্তর, ' জাহাপনা, আলেম আবদুল কুদ্দুস আল্লাহর কালাম বিক্রি করেছেন।' বাদশা হারুনের সর্বশেষ উত্তর ছিল, 'দুনিয়া তো কেনাবেচার জায়গা, দোকানদার-খরিদ্দারে এ রকম সম্পর্ক না থাকলে দুনিয়া চলে (ক্রীতদাসের হাসি, পৃঃ ৩৯-৪০)।


প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. কাজী মোতাহার হোসেন তার লিখিত 'বাংলা ভাষার নতুন বিন্যাস, তৃতীয় খণ্ডে উল্লেখ করেছেন, "সচরাচর আমাদের ধর্ম মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে স্বার্থসিদ্ধির ব্যাপারে। অজ্ঞদের মধ্যে ধর্ম উন্মত্ততা সৃষ্টি করে তার সুযোগে মতলব হাসিল করে নেওয়ার জন্য, ভোট সংগ্রহ বা পার্টি গঠন দ্বারা প্রভুত্ব ও প্রতিপত্তি লাভ করার উদ্দেশ্যে।


আজকাল তাই দেখা যায়, ধর্ম হয়ে উঠেছে রাজনীতির প্রধান অস্ত্র। কিন্তু প্রকৃত ধর্ম যে এর থেকে স্বতন্ত্র বস্তু, এ কথা যেন আজকাল আমরা বুঝেও বুঝতে চাচ্ছি না।" ধর্মকে ব্যবহার করে সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে মানুষকে যত সহজে উত্তেজিত করা যায় এবং অন্ধের মতো অনুসরণে উদ্বুব্ধ করা যায়, কাজ করে মানুষের সন্তুষ্টিকে সম্বল করে জনগণের সমর্থন আদায় করা বহুগুণে বেশি কঠিন কাজ। তাই যারা নিজেদের কাজ বা পারফরম্যান্সের ওপর আস্থা পায় না, তারা ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করে মানুষের সমর্থন আদায় করতে চায়। এতে তাদের দুই দিক থেকেই সুবিধা, সহজে ভোট পাওয়া যায় আর কাজ না করে, বরং লুটপাট করে নিজেদের ভাগ্য গড়া সহজ হয়। মুক্তিযুদ্ধের কথা একটু জোরেশোরে বললেই বিএনপি তাকে আওয়ামী লীগার বলে অভিহিত করে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে কেউ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ দল বলে না। সুতরাং আওয়ামী লীগের বাইরেও রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তি আছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে এখনো আপসহীন। এদের লড়াকু ভূমিকার ফলেই আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। কেউ ভোলেনি ১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা এবং পঁচাত্তরের পর থেকে আজ পর্যন্ত জামায়াতকে পুনর্বাসিত করতে বিএনপির আমরণ চেষ্টার কথা। সুতরাং মুখে শেখ ফরিদ বগলে ইট, এমন ভাব প্রকাশের জন্য দু-একজন পদস্খলিত মুক্তিযোদ্ধাকে জামায়াতের সঙ্গে একই মঞ্চে বসিয়ে মানুষকে আর বিভ্রান্ত করা যাবে না।

পৃষ্ঠাসমূহ