বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩

 সবাই তো সুখী হতে চায়,

কেউ সুখী হয় কেউ হয়না!
শেষ জীবনটা কেমন কেটেছিল মান্নাদে'র ?
মুম্বাই ছেড়ে যাবার সময় মান্না দে বলেছিলেন,' ছোট মেয়ে সুমিতা বেঙ্গালুরুতে কিছু কাজ-টাজ করতে চায়। তাই আমরাও চলে যাচ্ছি। ওকে তো আমরা একা ছেড়ে দিতে পারিনা'।
তারপর ?
আরতি মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন 'দিনের পর দিন ফোন করেছি। বেজে গেছে শুধু। কেউ ফোন ধরতো না। একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় গায়িকা শুনলাম মান্নাদার জন্মদিনে ওর বাড়িতে দেখা করতে গিয়ে শেষমেশ বাড়িতে ঢুকতে না পেরে জানালা থেকে শুভেচ্ছা আর প্রণাম জানিয়ে চলে আসেন'। কেন ??
যে মান্না দে ভোরবেলা রেওয়াজ ছাড়া ভাবতেই পারতেন না শেষ জীবনে তার কাছে একটা হারমোনিয়াম পর্যন্ত ছিলনা !!!!
মান্না দের বহু গানের মিউজিক আরেঞ্জার হিসেবে কাজ করেছেন শান্তনু বসু। স্ত্রী সুলোচনার মৃত্যুর পর মান্না দে একদিন ফোন করলেন তাকে,' সুলুকে উৎসর্গ করে কয়েকটা গান করব ঠিক করেছি। তোমার হেল্প চাই'। তারপরেই বললেন,' দেখো,এই সময় আমার গানতো খরচা করে কেউ করবেনা। তুমি আমাকে বলো,আমি যদি আঁটটা গান করি,কত খরচ হতে পারে'?
ভাবা যায় ?
শেষ পর্যন্ত অবশ্য মহুয়া লাহিড়ী এগিয়ে এসেছিলেন সেই রেকর্ড করার জন্য। এই রেকর্ডের কাজেই বেঙ্গালুরু পৌঁছে শান্তনু বসু ফোন করলেন মান্নাদেকে, তিনি জিজ্ঞেস করলেন,'কাল তুমি কখন আসবে?' একটু অবাক হয়ে শান্তনু বসু বললেন,'দাদা আমি তো আজই আপনার সঙ্গে গান নিয়ে বসবো বলেই দুপুরে চলে এলাম। আমি যদি পাঁচটা-ছটা নাগাদ যাই'। একটু ইতস্তত হয়ে মান্না দে জবাব দিলেন,'আজ তো চুমু (ছোট মেয়ে সুমিতা) কাজে চলে যাবে। তুমি কাল এসো'।
শান্তনু বসু বললেন,'কাউকে লাগবেনা দাদা। আমি আর আপনি হলেইতো হবে'। তিনি তাও বললেন 'অসুবিধে আছে'। শান্তনু বসু নিশ্চুপ। এবার তিনি নিজেই অস্বস্তির সঙ্গে বললেন 'আমাকে তো তালাবন্ধ করে চাবি নিয়ে ও কাজে চলে যায়। আবার রাত বারোটা সাড়ে বারোটা নাগাদ আসে'। স্তম্ভিত শান্তনু বসু বললেন 'দাদা, এভাবে'!! 'আর বোলো না,আর বোলো না। আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেল, আর বাঁচতে ইচ্ছে করেনা '। বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন মান্না দে।
ইনি সেই মান্না দে যিনি নিজের সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন আমাদের গান শোনাতে। ইনি সেই মান্না দে যিনি উপমহাদেশের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ গায়কদের একজন!! আমরাও কি চোখের জল ধরে রাখতে পারছি ?



ইন্দিরা দেবীর বয়স যখন ছাব্বিশ বছর তখন আইনজীবী, প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

''ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী:

ঠাকুরবাড়ির নব জাগরণের নাম।''

--ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের মধ্যে তিনিই প্রথম বি.এ পাশ করেন। ইংরেজি ও ফরাসী ভাষায় বি.এ পড়েছিলেন তিনি। ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী; সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং জ্ঞানদানন্দিনীর মেয়ে। ২৯ ডিসেম্বর, ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে ইন্দিরা দেবীর জন্ম। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই সন্তান সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী দুজনেই ছিলেন কৃতি ব্যক্তিত্ব। ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী ছিলেন একজন বিশিষ্ট সংগীতবিদ। রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্পর্কে তার অগাধ জ্ঞান ছিল।


১৮৭৭ সালে মা জ্ঞানদানন্দিনীর সাথে ভাই সুরেন্দ্রনাথ সহ তিনি পারি জমান ইংল্যান্ডে। বছরখানেক পর রবীন্দ্রনাথও ইংল্যান্ডে চলে গেলে কবিগুরুর নিবিড় সান্নিধ্যে বেড়ে ঊঠেন তারা দুই ভাইবোন। সুরেন্দ্রনাথ এবং ইন্দিরা দেবীকে বিশেষভাবে পছন্দ করতেন কবিগুরু। ছোটবেলা থেকেই তিনি পাশ্চাত্য এবং ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত এর উপর তালিম নেন। কবিগুরুর অসংখ্য গানের নোটেশন লিখেছেন তিনি। এছাড়াও তিনি কিছু ব্রহ্ম সঙ্গীত রচনা করেছিলেন।
ইন্দিরা দেবীর বয়স যখন ছাব্বিশ বছর তখন আইনজীবী, প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ইন্দিরা দেবী’র সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন অনুবাদক। ‘সাধনা’ পত্রিকায় তিনি পিয়ের লোতির গল্প ও ভ্রমণবৃত্তান্তের অনুবাদ প্রকাশ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথে গীতাঞ্জলির ভূমিকা ফরাসী অনুবাদ থেকে অনুবাদ করেন ইন্দিরা দেবী।অনুবাদ প্রকাশিত হয়, প্রমথ চৌধুরী সাদিত ‘সবুজপত্র’ পত্রিকাতে। রেনে গ্রুসে-লিখিত L’Inde এর বাংলা সঙ্কলনও এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য। এটি প্রকাশিত হয় ‘পরিচয়’ পত্রিকায়।
রবীন্দ্রনাথের বহু কবিতার ও রচনার তিনি ছিলেন দক্ষ অনুবাদক। রবীন্দ্রনাথও তার অনুবাদ পড়ে সবসময় সন্তোষ প্রকাশ করতেন। ইন্দিরাই প্রথম তার ‘জাপানযাত্রী’ গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন। ইন্দিরা দেবী অনেক গুণে গুণান্বিত ছিলেন। সঙ্গীত বিষয়েও তার জ্ঞান ছিল অগাধ। তিনি বেশ কিছু সংগীত বিষয়ক বই লিখেছেন। তার মধ্যে প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে একযোগে লিখিত ‘হিন্দু সংগীত’ গ্রন্থের (১৩৫২ বঙ্গাব্দ) ‘সংগীত পরিচয়’ নামক প্রাথমিক অংশ উল্লেখযোগ্য। তিনি রবীন্দ্র সঙ্গীত এর তথ্য এবং তত্ব দুটিকেই সমৃদ্ধ করেছেন সমান হারে।
সঙ্গীত বিশারদ,অনুবাদক হবার পাশাপাশি তিনি নিজেকে সামাজিক উন্নয়নেরও অংশীদার করেছেন। বাবার পথ ধরেই মহিলা শিক্ষা লিগ, সর্ব ভারতীয় মহিলা সম্মেলন, সঙ্গীত সংঘ, সঙ্গীত সম্মেলন সহ আরো নানান কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন।
১৯৪১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ফিরে আসেন এবং বিশ্ব ভারতীর ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নেন।
১৯৬০ সালের ১২ আগস্ট ঠাকুর পরিবারের নবজাগরণের অংশীদার এই মহীয়সী সাহিত্যিক এবং সঙ্গীত বিশারদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ছবি: ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীর স্টুডিও ফোটো।

"যেন কেউ পা দিয়ে মাড়িয়ে না যায় তাই ...."

প্রতি বছর ষোলই ডিসেম্বর এর পরের দিন পাগলটাকে দেখা যায় এ গলিতে ও গলিতে , এ রাস্তায় ও রাস্তায় , এ মোড়ে ও মোড়ে , ডাস্টবিনের পাশে ,নর্দমার ধারে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চষে বেড়ায় শহরের এ কানা থেকে সে কানা, কাঁধে বস্তা নিয়ে ।



সকালবেলা কৌতুহল বশে জিজ্ঞাসা করেছিলাম,
"তোমার নাম কী?"
বলেছিল , "ক্ষুদিরাম" ।
দুপুরে দেখলাম পোষ্ট অফিসের সামনে , ডাস্টবিনে হাত ঢুকিয়ে কী সব খুঁজছে , বললাম ,
"কী খুঁজছ ক্ষুদিরাম?"
উত্তর দিল, "আমি ক্ষুদিরাম নই , প্রফুল্ল চাকী।"
অবাক হলাম ।
বিকালে আবার দেখা , বললাম,
"প্রফুল্ল চাকী চা খাবে?"
ও বলল , "আমার নাম কানাইলাল" ।
এবার বিস্ময়।
সন্ধের মুখে বড় রাস্তার মোড়ে জটলা দেখে থমকে দাঁড়ালাম। জিজ্ঞাসা করলাম ,
"কী হয়েছে?"
ভীড়ের থেকে একজন বলল, "একটা চোর ধরা পড়েছে।"
ভীড় ঠেলে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম , ল্যাম্প পোষ্টে বাঁধা সকালের ক্ষুদিরাম দুপুরের প্রফুল্ল চাকী বিকালের কানাইলাল।
পাশে মাল বোঝাই বস্তা, যা ছিল সকালে খালি।
একজন বলল ,ঐ বস্তায় আছে চুরি করা জিনিস ।
খটকা লাগল ,জিজ্ঞাসা করলাম ,
"চুরি করেছ?"
ও নির্বিকার, কোনো উত্তর দিল না।
আমি বস্তার মুখের বাঁধন খুলে মাটিতে ঢেলে দিলাম , বেরোল ছেঁড়া , ফাটা ,দুমড়ানো ,মোচড়ানো, প্লাস্টিকের ও কাগজের যত জাতীয় পতাকা । রাস্তা , ডাস্টবিন , নর্দমা থেকে কুড়িয়ে ভরেছে বস্তায় ।
মুহূর্তে ভীড় হল অদৃশ্য, .চোখ ভরা জল নিয়ে বাঁধন খুলে দিলাম পাগলের। আমার মুখের দিকে তাকাল একবার, তারপর মৃদুস্বরে বলল,
"যেন কেউ পা দিয়ে মাড়িয়ে না যায় তাই ...."
তারপর আবার পতাকা গুলো বস্তায় ভরে নিয়ে চলে গেল দূর থেকে দূরে ।
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম স্থানুর মতো অপার বিস্ময় আর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে ।

প্রমথনাথ বিশী'র মধ্যে ভবিষ্যতের প্রতিভাবান লেখকটি সুপ্ত ছিল রবীন্দ্রনাথের জহুরী দৃষ্টিতে ধরা পড়েছিল৷

 রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য প্রমথনাথ বিশী অঙ্ক পরীক্ষার খাতায় শুধু কবিতা লিখে থামলেন না,

শিক্ষকের উদ্দেশ্যে লিখলেন—দয়া করে তিনি যেন কিছু নম্বর তাঁকে দেন। গোটা ঘটনায় কার্যত স্নেহধন্য বিশী'র পক্ষ নিলেন রবি কবি, বলেছিলেন যা লিখেছে,ঠিকই লিখেছে...ঠিক উত্তর দিলে তো সে আর পা ধরাধরি করে নম্বর চাইত না৷

প্রমথনাথ বিশী'র মধ্যে ভবিষ্যতের প্রতিভাবান লেখকটি সুপ্ত ছিল রবীন্দ্রনাথের জহুরী দৃষ্টিতে ধরা পড়েছিল৷ তিনি প্রমথনাথ কে একটু বেশি স্নেহ করতেন৷ সেই প্রমথনাথ একবার বেশ অবাক করা এক কাণ্ড করে বসলেন৷ অঙ্কের পরীক্ষায় প্রশ্নের সঠিক উত্তর না লিখে অথবা ভুল উত্তর দিয়ে নিজের কাজের সমর্থনে লিখে এসেছিলেন—
'তোমার শরণাগত নহি সতত
শুধু পরীক্ষার সময়—
দয়া করি কিছু মার্ক দিও গো আমায়
ওগো মাস্টার মশায়,
পরীক্ষার সময় পড়ি তোমার পায়'৷
শুধু কবিতা তিনি লিখে ক্ষান্ত দেন নি, নিঃসঙ্কোচে অঙ্ক পরীক্ষার সেই খাতা জমা দিয়েছিলেন পরীক্ষকের কাছে৷
প্রমথনাথের কবিতা কাণ্ডে প্রথম বিপদে যিনি পড়লেন তিনি সুধাকান্ত রায়চৌধুরী ৷ ছিলেন গৃহাধ্যক্ষ,প্রমথনাথ সেই ঘরে থাকতেন৷ পরীক্ষক মহাশয়ের ক্রোধ কার্যত বর্ষিত হল সুধাকান্তর ওপর৷ কারণ তিনি তখনও যুবক,সেই বয়সে যুববয়সোচিত অনেক দুঃসাহসিক কাজ করার সুখ্যাতি,কুখ্যাতি অর্জন করেছেন৷ বকলমে বলতে চেয়েছেন প্রমথনাথ এহেন কাজ করার সাহস পেয়েছেন সুধাকান্ত কে দেখে৷ বিনা তর্কে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সহ্য করলেন সুধাকান্ত, কারণ যিনি পরোক্ষ তাঁর দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন তিনিও কিছুদিন সুধাকান্তর মাস্টারমশায় ছিলেন৷
প্রমথনাথের অঙ্কের পরীক্ষার খাতায় কবিতা লেখার ঘটনায় সত্যি-সত্যি বিড়ম্বনা বেড়ে যাচ্ছিল সুধাকান্তর৷
তখন তিনি ১৫টাকা বেতন পান সঙ্গে বিনা ব্যয়ে খাওয়া-দাওয়া৷ আরামের সেই চাকরি যাবার ভয়ে সোজা রবীন্দ্রনাথের শরণাপন্ন হলেন৷কবিগুরুকে বললেন নিজের সম্ভাব্য বিপদের কথা৷
রবীন্দ্রনাথ সুধাকান্তর কাছে দীর্ঘ সেই কবিতার পুরোটা শুনে বেশ মজাই উপভোগ করলেন৷ সুধাকান্ত কে অভয় দিয়ে বললেন ভয় নেই বিশী যা লিখেছে,ঠিকই লিখেছে৷ তিনি নগেনকে (নগেন্দ্রনাথ আইচ) কে বুঝিয়ে বলবেন৷
গুরুদেবের কথায় নিশ্চিন্ত হলেন বটে তবে নগেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ কে কি বলেন সেকথা শোনার জন্য উদগ্রীব৷ নিজেই গেলেন তাঁর কাছে -বললেন মাস্টারমশায়,গুরুদেবের সঙ্গে একবার দেখা করবেন৷ বিশীর সেই কবিতার কথা গুরুদেব কে বলেছি৷
রবীন্দ্রনাথের কাছে নগেন্দ্রনাথ গেলে কবি বললেন -প্রমথ অঙ্কের জবাব দেয় নি৷ পারেনি বলে দেয় নি৷ কিন্তু যা লিখেছে তাতে ওর সত্যনিষ্ঠা ও প্রয়োজনীয় নম্রতার প্রমাণ আছে৷ রাগ করো না,ক্ষমা করো৷ ঠিক উত্তর দিলে তো পা ধরাধরি করে নম্বর চাইত না৷
নগেন্দ্রনাথ আর উচ্চবাচ্য করেন নি,কারণ ডাকাবুকো ছেলেদের ওপর স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের সস্নেহ প্রশ্রয় যখন আছে তখন তিনি আর কি বলবেন!

রবীন্দ্রনাথ 'বাঁদর' বলতেই ঘরের সকলে চমকে উঠলেন...

 


জীবনের শেষ দিকে এসে রবীন্দ্রনাথ সামনের দিকে ঝুঁকে লিখতেন। একদিন তাঁকে ওইভাবে লিখতে দেখে তাঁকে একজন বললেন, আপনার নিশ্চয় ওভাবে লিখতে কষ্ট হচ্ছে। হেলান দিয়ে লিখতে পারেন এরকম একটা চেয়ারের ব্যবস্থা করলে তো লিখতে সুবিধা হবে। বক্তার দিকে তাকিয়ে রসিক রবীন্দ্রনাথ জবাব দিলেন, কী জানো, এখন উপুড় হয়ে না লিখলে কি আর লেখা বেরোয়! কুঁজোর জল কমে তলায় ঠেকলে একটু উপুড় তো করতেই হয়।
রবীন্দ্রনাথ একবার এক ভদ্রলোককে বললেন, 'আপনাকে আমি দণ্ড দেব।' ভদ্রলোক তো ভীষণ বিব্রত। কী অপরাধ হয়েছে তার! বললেন 'কেন, আমি কী অপরাধ করেছি?' রবীন্দ্রনাথ বললেন, 'গতকাল আপনার লাঠি মানে দণ্ডটি আমার এখানে ফেলে গিয়েছিলেন। এই নিন আপনার দণ্ড।' বলে তাঁর দিকে লাঠিটি বাড়িয়ে ধরলেন।
একবার এক ঘরোয়া আসর জমেছে। সবাই হাসি-গল্পে মশগুল। রবীন্দ্রনাথ বললেন, 'এ ঘরে একটা বাঁ দোর আছে।' সবাই এ-ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছে। গুরুদেব কাকে আবার 'বাঁদর' বললেন? রবীন্দ্রনাথ বুঝতেই পারছিলেন, তিনি সকলকে চমকে দিয়েছেন। তখন বুঝিয়ে দিলেন, 'এ ঘরে দুটো দরজা বা দোর। একটা ডান দিকে, অন্যটা বাম দিকে। সেই দরজাটিকেই বলছিলাম বাঁ-দোর!'
একবার এক দোলপূর্ণিমার দিনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাক্ষাৎ। পরস্পর নমস্কার বিনিময়ের পর হঠাৎই দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর জামার পকেট থেকে আবির বের করে রবীন্দ্রনাথের গায়ে রং দিলেন। আবিরে রঞ্জিত রবীন্দ্রনাথ সহাস্যে বলে উঠলেন, এতদিন জানতাম দ্বিজেনবাবু হাসির গান ও নাটক লিখে সকলের মনোরঞ্জন করে থাকেন, আজ দেখছি শুধু মনোরঞ্জন নয়, দেহরঞ্জনেও তিনি ওস্তাদ!
একবার রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজি একসঙ্গে বসে খাচ্ছেন। সেদিন কবি লুচি খাচ্ছিলেন। গান্ধীজি লুচি পছন্দ করতেন না, তাই তাঁকে ওটসের পরিজ খেতে দেওয়া হয়েছিল। তবে কবিকে গরম গরম লুচি খেতে দেখে গান্ধীজি বলে উঠলেন, গুরুদেব, তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছ। কবিগুরু বললেন, বিষই হবে; তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে। কারণ, আমি বিগত ষাট বছর যাবৎ এই বিষই খাচ্ছি।
নৃত্যপ্রেমী রবীন্দ্রনাথ। নৃত্য নিয়ে তিনি বিপুল ভাবনাচিন্তা করেছেন। তবে অনেকেই হয়তো জানে না, কবি স্বয়ং চমৎকার বল ডান্স করতে পারতেন। শিখেছিলেন খুড়তুতো দিদি সত্যেন্দ্রবালা ঠাকুরের কাছে। যদিও রবীন্দ্রনাথ নিজে তাঁর নৃত্যশৈলীকে বলতেন ভাবনৃত্য। জাভা দেশের নৃত্যের স্বতঃস্ফূর্ত ভাবাবেগ থেকে এই শৈলীর জন্ম। পরে তাতে মেশে মণিপুরী, কথাকলি, শ্রীলঙ্কার নাচ, ইত্যাদ আরও নানা স্থানিক নৃত্যভঙ্গি।
রবীন্দ্রনাথ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় দক্ষ ছিলেন। নিজের জমিদারির প্রজাদের তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন বলে জানা যায়। নিজেও হোমিওপ্যাথি পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিতে পছন্দ করতেন।

শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩

ডালিমের স্ত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল কে❓

 ডালিমের স্ত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল কে❓


আচ্ছা বছরের পর বছর যার বউকে তুলে নিয়ে যাবার গল্প আমাদের শোনানো হয়, সেই মেজর ডালিমের এ বিষয়ে বক্তব্য কি? 


নিজের লেখা "যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি" বইয়ে ডালিম বলেছে-


"... ১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি ঘটে এক বর্বরোচিত অকল্পনীয় ঘটনা। আমার খালাতো বোন তাহ্‌মিনার বিয়ে ঠিক হল কর্নেল রেজার সাথে। বিয়ের দু’দিন আগে ঢাকায় এলাম কুমিল্লা থেকে। ঢাকা লেডিস ক্লাবে বিয়ের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। পুরো অনুষ্ঠানটাই তদারক করতে হচ্ছিল নিম্মী এবং আমাকেই। আমার শ্যালক বাপ্পি ছুটিতে এসেছে ক্যানাডা থেকে। বিয়েতে সেও উপস্থিত। রেডক্রস চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফার পরিবারও উপস্থিত রয়েছেন অভ্যাগতদের মধ্যে। বাইরের হলে পুরুষদের বসার জায়গায় বাপ্পি বসেছিল। তার ঠিক পেছনের সারিতে বসেছিল গাজীর ছেলেরা। বয়সে ওরা সবাই কমবয়সী ছেলে-ছোকরা। হঠাৎ করে গাজীর ছেলেরা পেছন থেকে কৌতুকচ্ছলে বাপ্পির মাথার চুল টানে, বাপ্পি পেছনে তাকালে ওরা নির্বাক বসে থাকে। এভাবে দু’/তিনবার চুলে টান পড়ার পর বাপ্পি রাগান্বিত হয়ে ওদের জিজ্ঞেস করে- চুল টানছে কে?


'আমরা পরখ করে দেখছিলাম আপনার চুল আসল না পরচুলা' জবাব দিল একজন। পুচঁকে ছেলেদের রসিকতায় বাপ্পি যুক্তিসঙ্গত কারণেই ভীষণ ক্ষেপে যায় ও বাপ্পিকে যে ছেলেটি চুলে টান দিয়েছিল তাকে ধরে ঘর থেকে বের করে দেয় । এ ঘটনার কিছুই তখন আমি জানতাম না। বিয়ের আনুষ্ঠিকতার প্রায় সবকিছুই সুষ্ঠভাবেই হয়ে যায়। হঠাৎ দু’টো মাইক্রোবাস এবং একটা কার এসে ঢুকল লেডিস ক্লাবে। কার থেকে নামলেন স্বয়ং গাজী গোলাম মোস্তফা আর মাইক্রোবাস দু’টো থেকে নামল প্রায় ১০-১২ জন অস্ত্রধারী বেসামরিক ব্যক্তি। গাড়ি থেকেই প্রায় চিৎকার করতে করতে বেরুলেন গাজী গোলাম মোস্তফা।


'কোথায় মেজর ডালিম? বেশি বার বেড়েছে। তাকে আজ আমি শায়েস্তা করব। কোথায় সে?' ঘটনার আকস্মিকতায় আমিতো হতবাক! আমি অত্যন্ত ভদ্রভাবে তাকে জিজ্ঞেস করলাম- 'ব্যাপার কি? এ সমস্ত কিছুর মানেই বা কি?' তিনি তখন ভীষণভাবে ক্ষীপ্ত। একনাগাড়ে শুধু বলে চলেছেন- 'গাজীরে চেন না। আইজ আমি তোরে মজা দেখামু। তুই নিজেরে কি মনে করছস?'


তার ইশারায় অস্ত্রধারীরা সবাই তখন আমাকে টানা-হেচড়া করে মাইক্রোবাসের দিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে বাইরে হৈ চৈ শুনে নিম্মী এবং খালাম্মা বেরিয়ে এসেছেন অন্দরমহল থেকে।আমাকে জোর করে ঠেলে উঠান হল মাইক্রোবাসে।আমাকে গাড়িতে তুলতেই খালাম্মা এবং নিম্মী দু’জনেই গাজীকে বলল, ওদের সাথে আমাদেরকেও নিতে হবে আপনাকে। ওদের একা নিয়ে যেতে দেব না আমরা। 'ঠিক আছে; তবে তাই হবে' বললেন গাজী। 


গাড়ি চলছে সেকেন্ড ক্যাপিটালের দিকে। আমি তাকে বললাম- 'গাজী সাহেব আপনি আমাদের নিয়ে যাই চিন্তা করে থাকেন না কেন; লেডিস ক্লাব থেকে আমাদের উঠিয়ে আনতে কিন্তু সবাই আপনাকে দেখেছে। তাই কোন কিছু করে সেটাকে বেমালুম হজম করে যাওয়া আপনার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব হবে না'। 


আমার কথা শুনে কি যেন ভেবে নিয়ে তিনি আবার তার গাড়িতে গিয়ে উঠলেন। কাফেলা আবার চলা শুরু করল। তবে এবার রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্পের দিকে নয়, গাড়ি ঘুরিয়ে তিনি চললেন ৩২নং ধানমন্ডি প্রধানমন্ত্রীর বাসার দিকে। আমরা হাফ ছেড়ে বাচলাম। 


কলাবাগান দিয়ে ৩২নং রোডে ঢুকে আমাদের মাইক্রোবাসটা শেখ সাহেবের বাসার গেট থেকে একটু দূরে একটা গাছের ছায়ায় থামতে ইশারা করে জনাব গাজী তার গাড়ি নিয়ে সোজা গেট দিয়ে ঢুকে গেলেন ৩২নং এর ভিতরে। সেকেন্ড ফিল্ড রেজিমেন্ট তখন শেখ সাহেবের বাড়ি পাহারা দিচ্ছে। একবার ভাবলাম ওদের ডাকি, আবার ভাবলাম এর ফলে যদি গোলাগুলি শুরু হয়ে যায় তবে ক্রস-ফায়ারে বিপদের ঝুঁকি বেশি। এ সমস্তই চিন্তা করছিলাম হঠাৎ দেখি লিটুর ঢাকা ক-৩১৫ সাদা টয়োটা কারটা পাশ দিয়ে হুস্‌ করে এগিয়ে গিয়ে শেখ সাহেবের বাসার গেটে গিয়ে থামল। লিটুই চালাচ্ছিল গাড়ি। গাড়ি থেকে নামল এসপি মাহবুব। নেমেই প্রায় দৌড়ে ভিতরে চলে গেল সে। লিটু একটু এগিয়ে গিয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষায় রইলো সম্ভবত মাহ্বুবের ফিরে আসার প্রতীক্ষায়। লিটু এবং মাহ্বুবকে দেখে আমরা সবাই আস্বস্ত হলাম। র্নিঘাত বিপদের হাত থেকে পরম করুণাময় আল্লাহ্‌’তায়ালা আমাদের বাচিঁয়ে দিলেন।


লিটু যখন মাহ্‌বুবের বাসায় গিয়ে পৌঁছে মাহবুব তখন মানিকগঞ্জ থেকে সবেমাত্র ফিরে বিয়েতে আসার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। হঠাৎ লিটুকে হন্তদন্ত হয়ে উপরে আসতে দেখে তার দিকে চাইতেই লিটু বলে উঠল- 'মাহবুব ভাই সর্বনাশ হয়ে গেছে। বিয়ে বাড়ি থেকে গাজী বিনা কারণে ডালিম-নিম্মীকে জবরদস্তি গান পয়েন্টে উঠিয়ে নিয়ে গেছে'।


একথা শুনে মাহবুব স্তম্ভিত হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীকেই খবরটা সবচেয়ে আগে দেওয়া দরকার কোন অঘটন ঘটে যাবার আগে। গাজীর কোন বিশ্বাস নাই; ওর দ্বারা সবকিছুই সম্ভব। মাহবুব টেলিফোনের দিকে এগিয়ে যায়। হঠাৎ টেলিফোনটাই বেজে উঠে। রেড টেলিফোন। মাহবুব ত্রস্তে উঠিয়ে নেয় রিসিভার। 


প্রধানমন্ত্রী অপর প্রান্তে-

'মাহবুব তুই জলদি চলে আয় আমার বাসায়। গাজী এক মেজর আর তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের ধইরা আনছে এক বিয়ার অনুষ্ঠান থ্যাইকা। ঐ মেজর গাজীর বউ-এর সাথে ইয়ার্কি মারার চেষ্টা করছিল। উপযুক্ত শিক্ষা দিতে হবে। বেশি বাড় বাড়ছে সেনাবাহিনীর অফিসারগুলির'।


সব শুনে মাহবুব জানতে চাইলো- 'স্যার গাজী সাহেবকে জিজ্ঞেস করুন মেজর ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের কোথায় রেখেছেন তিনি?'


'ওদের সাথে কইরা লইয়া আইছে গাজী। গেইটের বাইরেই গাড়িতে রাখা হইছে বদমাইশগুলারে' -জানালেন প্রধানমন্ত্রী।


'স্যার গাজী সাহেব ডালিম আর নিম্মীকেই তুলে এনেছে লেডিস ক্লাব থেকে। ওখানে ডালিমের খালাতো বোনের বিয়ে হচ্ছিল আজ।' -জানাল মাহবুব।


'কছ কি তুই!' প্রধানমন্ত্রী অবাক হলেন।


'আমি সত্যিই বলছি স্যার। আপনি ওদের খবর নেন আমি এক্ষুণি আসছি।'


এই কথোপকথনের পরই মাহবুব লিটুকে সঙ্গে করে চলে আসে ৩২নং ধানমন্ডিতে। মাহ্‌বুবের ভিতরে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই রেহানা, কামাল ছুটে বাইরে এসে আমাদের ভিতরে নিয়ে যায়। আলম ও চুল্লুর রক্তক্ষরণ দেখে শেখ সাহেব ও অন্যান্য সবাই শংকিত হয়ে উঠেন।


'হারামজাদা, এইডা কি করছস তুই?' গাজীকে উদ্দেশ্য করে গর্জে উঠলেন শেখ মুজিব- 'ডালিম আর নিম্মীর কাছে মাফ চা' । আর আমারে উদ্দেশ্য কইরা শেখ মুজিব বললেন- 'তুই গাজীরে মাফ কইরা দে। আর গাজী তুই নিজে খোদ উপস্থিত থাকবি কন্যা সম্প্রদানের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত'।


অনেকটা মোড়লী কায়দায় একটা আপোষরফা করার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী। চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে নিম্মী এবং আমাকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। খালাম্মা ঠিকমত হাটতে পারছিলেন না। কামাল, রেহানা ওরা সবাই ধরাধরি করে ওদের উপরে নিয়ে গেল। শেখ সাহেবের কামরায় তখন আমি, নিম্মী আর গাজী ছাড়া অন্য কেউ ছিল না। নিম্মী দুঃখে-গ্ল্যানিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। শেখ সাহেব ওকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিতে চেষ্টা করছিলেন। অদূরে গাজী ভেজা বেড়ালের মত কুকড়ে দাড়িয়ে কাঁপছিল।


সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসছিলাম ঠিক সেই সময় শেখ সাহেব বললেন- 

'আমার গাড়ি তোদের পৌঁছে দেবে'।

'তার প্রয়োজন হবে না চাচা। বাইরে লিটু-স্বপনরা রয়েছে তাদের সাথেই চলে যেতে পারব। ..."


এবার বলুন এই গল্পে শেখ কামালের ভূমিকা কি?


গোয়েবলসীয় তত্ত্বে বিশ্বাসী গুজববাজদের অন্যতম একটি টপিক - শেখ কামাল মেজর ডালিমের বৌকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। বছরের পর বছর এমন এক রূপকথার ডুগডুগি বাজিয়ে চলেছে তারা, বলাই বাহুল্য - এদের কথায় অনেকেই বিভ্রান্ত হয়, এমনকি এই তালিকায় 'হাইব্রিড' ও 'কাউয়া'র সংখ্যাটাও নিতান্ত কম নয়!

আপনার মন্তব্য জানাবেন। 

বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০২৩

শপিং করতে গিয়ে অন্যদের বিরক্ত করছেন না তো

 সকাল থেকে রাত—দোকানগুলোতে নাগাড়ে চলতে থাকে কেনাবেচা। ছোট দোকান হোক কিংবা বড় মল—ক্রেতারা সেরা সেবাটাই চান বিক্রেতার কাছে। ব্যবহার ভালো পেলে অনেকে বাড়তি জিনিসও কিনে ফেলেন। দোকানের কর্মচারীরাও কিন্তু ক্রেতার কাছ থেকে যথাযথ সহযোগিতা আশা করেন। কেনাকাটা করার সময়ও মানা উচিত কিছু আচরণ। অযথা অস্থিরতা, খারাপ আচরণ করার সময় ক্রেতা হিসেবে অনেকে ভুলে যান যে তার জন্য হয়তো এটা শুধুই কেনাকাটা বা অবসর বিনোদন, কিন্তু আরেকজনের জন্য তাঁর কর্মক্ষেত্র। তাই শপিং করতে গিয়ে যে বিষয়গুলো মনে রাখা জরুরি—

ফোনে কথা বলা

মুঠোফোন তো এখন আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী। দোকানের ভেতর ফোন এলে ধরতে সমস্যা নেই। কিন্তু তারপর কী করছেন, সেটাই দেখার বিষয়। জোরে চিৎকার করে কথা বলা, অযথা আরেকজনের সময় নষ্ট করে গল্প করা থেকে বিরত থাকুন। একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করে দেখতে পারেন। জিনিস কেনার জন্য যখন টাকা পরিশোধ করতে যান বা কর্মচারীদের অনুরোধ করেন কোনো একটি পণ্য খুঁজে দেওয়ার জন্য, তখন তারা এভাবে ফোনে কথা বললে আপনার কেমন লাগত? যদি অনেকক্ষণ ধরে কথা বলার প্রয়োজন হয়, একটি কোনা খুঁজে নিন অথবা দোকানের বাইরে গিয়ে কথা বলুন। কেনাকাটা করার সময়ও কথা বলতে পারেন, তবে গলার স্বর নিচু রাখার চেষ্টা করুন। ফোনে কথা বলতে বলতে পোশাক নাড়াচাড়া না করে, এক পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলুন। এতে অন্য ক্রেতারাও বিরক্ত হবেন না।


ভেতরে খাওয়া নিষেধ

অনেক দোকানের দরজার বাইরে লেখা থাকে, ভেতরে খাবার নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই অনেক ক্রেতা হাতে কফির মগ নিয়ে ঢুকে পড়েন। কখনোবা হাতে থাকে খাবার। হাতে যদি পানির বোতলও থাকে, সেটা ব্যাগে রেখে দিন। অসাবধানতায় কফি পড়ে যেতে পারে পোশাক বা অন্য কোনো পণ্যের ওপর। যদি দাগ না ওঠে, না চাইলেও এটি তখন আপনাকে কিনতে হবে। সিল্কের কাপড়ের ওপর কিংবা সুয়েডের জুতার ওপর পানি পড়ে গেলে সহজে সেই দাগ যায় না। অসাবধানতায় ফ্লোরের ওপর পানি পড়ে গেলে কেউ পা পিছলেও পড়ে যেতে পারেন। খাবার গাড়িতে রেখে আসুন বা দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে খেয়ে নিন। বিশেষ করে দোকানের ভেতর শিশুকে নিয়ে গেলে তার হাতে যেন কোনো ধরনের খাবার বা পানীয় না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।


সাজতে শুরু করবেন না

প্রসাধনীর দোকানে অনেক সময় স্যাম্পল থাকে। দেশের বাইরে গেলে এটি বেশি দেখা যায়। সরাসরি স্যাম্পল থেকে মেকআপ তুলে ত্বকে লাগানোর অভ্যাস থাকলে আজই বন্ধ করুন। অনেকে লিপস্টিকের স্যাম্পল তুলে নিয়ে ঠোঁটে ঘষতে শুরু করেন। বিষয়টি অনুচিত। হাতের ত্বকে অথবা তুলির সহায়তায় নিজের ঠোঁটে লাগাতে পারেন। অনেক দোকানে কর্মচারীরাই এগিয়ে আসেন, কাজটি করার জন্য। তাঁদেরকেই করতে দিন। করোনার পর থেকে এক প্রসাধনী সবার ত্বকে ব্যবহার না করার জন্যই বলা হচ্ছে। একই কথা পারফিউম কিংবা ক্রিম বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যদি ক্রিম স্যাম্পলের বাক্স থেকে বের করে গায়ে মেখে দেখতে চান, তবে কর্মচারীদের বলুন। তাঁরাই ব্যবস্থা করে দেবেন।


না কিনলে ছবি তুলবেন না

অনেক সময় দোকানে গিয়ে ক্রেতারা পণ্যের ছবি তুলে আরেকজনকে পাঠাতে চান। উদ্দেশ্য অপর পক্ষের মতামত জানা। এসব ক্ষেত্রে কর্মচারীদের জিজ্ঞেস করে নিন ছবি তোলা যাবে কি না। কেনার ইচ্ছা না থাকলেও অনেকে ছবি তুলতে থাকেন। এতে করে দোকানের কর্মচারীর সময় নষ্ট হয়। কারণ, ক্রেতাকে সহায়তা করার জন্য তাঁকে এগিয়ে আসতে হয়। অনেকে পোশাক পরে ছবি তুলতে থাকেন, সামাজিক মাধ্যমে দেওয়ার জন্য। তারপর পোশাকটি খুলে রেখে চলে যান। এটিও অনুচিত ও অভদ্রতা।


টাকা দেওয়ার সময়

বিল দেওয়ার সময় অনেকেই কার্ড ব্যবহার করেন। আবার অনেকে টাকার নোট দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। টাকার নোট দিতে চাইলে গুছিয়ে দিন, এলোমেলো করে কাউন্টারে টাকা দিলে কর্মী এবং পেছনে থাকা ব্যক্তি দুজনেরই সময়ক্ষেপণ হবে। টেবিলের ওপর কয়েন, খুচরা নোট ঢেলে দিলেই আপনার দায়িত্ব শেষ নয়। বিল জমা দেওয়ার আগেই সব পণ্য গুছিয়ে কাউন্টারে দিন। অনেক ক্রেতা বিল জমা দেওয়ার সময়ও পণ্য বাছতে থাকেন। আপনার পেছনে থাকা অন্যরা এতে বিরক্ত হবেন।


পোষা প্রাণী নিয়ে যাওয়া

সুপারমার্কেটে বা দোকানে সাধারণত পোষা প্রাণী নিয়ে না আসাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। অনেক ক্রেতার প্রাণীতে অ্যালার্জি থাকতে পারে। আপনার পোষা প্রাণীটি হয়তো ভালো আচরণ করে, শান্ত থাকে। কিন্তু হঠাৎ কোনো কারণে কাউকে আঁচড়ে বা কামড়ে দিলে বিপত্তিতে পড়বেন। কারণ, এ দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো পোষা কুকুর, বিড়ালে অভ্যস্ত নন। খুব কাছাকাছি চলে এলে অনেকে নেতিবাচক ব্যবহার করে থাকেন।


পেছনে দেখে আসুন

‘স্টক শেষ, এটি আর নেই’ ক্রেতাদের সবচেয়ে অপছন্দের বাক্য। দোকানে গিয়ে একটি জিনিস পছন্দ হওয়ার পর যদি কিনতে না পারেন, এর চেয়ে মন খারাপ করা অনুভূতি আর নেই। কর্মচারীদের কাছ থেকে এ কথাটি শোনার পরও অনেকে বিক্রেতার পেছনে ঘুরতেই থাকেন, ‘আরেকবার দেখে আসুন না, কোথাও আছে কি না।’ ক্রেতারা ভুলে যান, কর্মচারীরা যত বেশি পণ্য বিক্রি করতে পারবেন, তত লাভ। বরং একজন ভদ্র ক্রেতা হিসেবে যখন এ কথাটি শুনবেন, বিশ্বাস করুন। পাশাপাশি তাঁদেরকে আপনার ফোন নম্বর দিয়ে আসতে পারেন, পরে যখন পণ্যটি আসবে আপনাকে জানানোর জন্য।


পণ্যটি জায়গামতো রাখুন

অনেক সময় একটি পণ্য পছন্দ করার পর আর কিনতে ইচ্ছে করে না। কাউন্টার পর্যন্ত যাওয়ার আগেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন, এটি কিনবেন কি না। এতে করে আপনার এবং আশপাশের সবার সময় বাঁচবে। কোনো পণ্য না নিলে যথাযথভাবে আবার সেটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন। একটি পণ্য আরেকটি পণ্যের জায়গায় রেখে দিলে বিরক্ত হন কর্মচারীরা। তাঁদেরই আবার এটা গোছাতে হয়। একদম শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিলে কাউন্টারেই অবস্থানরত কর্মচারীকে দিয়ে দিন। প্রয়োজনে তাঁরাই আবার যথাস্থানে রেখে দেবেন।


ব্যবহৃত পণ্য ফেরত

পোশাক, অন্দরসজ্জার জিনিস কিংবা সাজগোজের পণ্য ক্রেতারা বদলাতে চাইতেই পারেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিয়ে এলে সমস্যা নেই। প্রতিটি দোকানের নিজস্ব কিছু নিয়ম থাকে। কোনো দোকান এক মাস সময় দেয়, কোনোটি এক সপ্তাহ। জিনিস কেনার সময়ই সেটি জিজ্ঞেস করে নিন। পাশাপাশি নির্ধারিত কিছু পণ্য থাকে, যা ফেরত নেওয়া হয় না। এ কারণে কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন। প্রসাধন সামগ্রী কিংবা খাবারের ঢাকনা খুলে ফেলার পর সাধারণত সেটা ফেরত দেওয়া যায় না। তবে পণ্যে যদি কোনো ত্রুটি থাকে, অবশ্যই সেটা আপনি ফেরত দেবেন।

ভালো শাশুড়ি হবেন কীভাবে

 ফারজানা সুলতানাদের শ্বশুরবাড়িতে একটা অলিখিত নিয়ম ছিল।

ঈদের দিন নামাজ পড়ে এসে সবার আগে শ্বশুর খাবে। এরপর অন্যরা।

শ্বশুরের খাওয়ার আগে কেউ দানাপানি স্পর্শ করতে পারবে না। দীর্ঘদিন ধরে এমনটাই চলে আসছিল। বিয়ের পর প্রথম ঈদে বাড়ির বড় বউ ফারজানা সকালবেলা উঠেই যথারীতি শাশুড়ির সঙ্গে মিলে সেমাই, পায়েস, খিচুড়ি, মাংস রান্না করলেন। টেবিলে শ্বশুরের খাবার রেডি করে রাখলেন। ততক্ষণে বেশ ক্ষুধা পেয়েছে। ফারজানার আবার লো প্রেশার। সকালে ঘুম থেকে উঠেই কিছু খেতে হয়। অবস্থা এমন দাঁড়াল যে ক্ষুধায় প্রেশার নেমে হাত-পা কাঁপতে লাগল। শ্বশুরসহ বাড়ির ছেলেরা ঈদের নামাজে গেছেন। ফিরতে কতক্ষণ কে জানে! এমন পরিস্থিতিতে একফাঁকে শাশুড়ি এসে ফারজানাকে মুখে তুলে খাইয়ে গেলেন। আর বললেন, ‘তুমি কিন্তু নিজে খাও নাই। আমি খাওয়ায়ে দিছি। বুঝলা?’ একঝটকায় দীর্ঘদিনের প্রথা গেল ভেঙে। মহামারিতে ফারজানার স্বামী মারা গেলেন। পোস্ট–কোভিডে মারা গেলেন শ্বশুর। দুই পুত্রের মা ফারজানা আর তাঁর শাশুড়ি দুজনে এখন সময় পেলেই ঘুরে বেড়ান। ছুটির দিনে রুফটপ রেস্তোরাঁয় নুডলস আর ফালুদা খেতে খেতে আড্ডা দেন বন্ধুর মতো। বউ-শাশুড়ি দুজন দুজনের ওপর ভর করে এলোমেলো হয়ে যাওয়া জীবনের দুঃখ–সুখ ভাগাভাগি করে যাপন করছেন।

তবে এমনটা সব বউ-শাশুড়ির ক্ষেত্রে ঘটে না।

আমরা সব সময় একটা মেয়েকে শেখাই, কীভাবে ভালো বউ হতে হবে, শ্বশুরবাড়ি গিয়ে নতুন পরিবেশে সবার সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে।

নতুন বউকে এ বিষয়ে উপদেশ দেওয়ার লোকের অভাব নেই।

অন্যদিকে ‘রাতারাতি’ যিনি শাশুড়ি বনে যাচ্ছেন, তাঁকে কেউ বলে না, কীভাবে ভালো শাশুড়ি হতে হবে, কীভাবে বউয়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে, কীভাবে নতুন বউকে পরিবারের কর্ত্রী হিসেবে আপন করে নিতে হবে। অথচ নতুন মেয়েটিকে সর্বোচ্চ ইতিবাচক মনোভাব দিয়ে আপন করে নিতে পারার কথা তো এই শাশুড়িরই।

বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করি। কলেজশিক্ষক হালিমা আক্তার দুই ছেলের মা। বড় ছেলের জন্য বউ খুঁজছেন। তাঁর কাছে জানতে চাইলাম তিনি কীভাবে তাঁর ছেলেবউকে আপন করে নেবেন। বললেন, ‘আমি কোনো উচ্চাশা রাখি না। আমার ছেলে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘুমালে যদি অসুবিধা না হয়, তাহলে ছেলেবউ দেরি করে উঠলে কেন দোষ খুঁজব? ভুল আমরা প্রত্যেকে করি। দোষ-গুণ নিয়েই মানুষ। সেগুলোকে নিজের সন্তানের মতোই সহজ করে দেখতে চাই।’ স্কুলশিক্ষক আর্জিনা জলিও মনে করেন এই বাংলায় আবহমানকাল থেকে চলে আসা বউ-শাশুড়ির চিরন্তন সম্পর্কে শাশুড়ির ভূমিকাই মুখ্য। বললেন, ‘মান-অভিমান কি মা-সন্তানের মাঝে হয় না? সব সম্পর্কে হয়। মিটমাট করতে অগ্রজকেই এগিয়ে আসতে হবে।’ জানতে চাইলাম, ছেলের বউকে কি আসলেই মেয়ের মতো করে দেখা সম্ভব? বললেন, ‘শতভাগ হয়তো সম্ভব না। কিন্তু ৮০ ভাগ তো সম্ভব। আন্তরিকতা নিয়ে চেষ্টা করে দেখতে দোষ কোথায়?’

পেশায় চিকিৎসক লামিয়া জান্নাতের তিন বছরের সংসার। স্বামীও চিকিৎসক। প্রেমের বিয়ে। মেডিকেল কলেজে পড়ার দিনগুলো থেকেই প্রেম। শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্ক অম্লমধুর। তবে সময়ের সঙ্গে অম্লের পরিমাণ কমেছে। বেড়েছে মধুর ভাগ। কীভাবে? জানতে চাইলে একটা মজার কথোপকথনের গল্প বললেন লামিয়া। জানালেন, শুরুতে খানিকটা নাকানিচুবানিই খেতে হয়েছে। কেননা, কমবেশি সব মা–ই ছেলেকে নিয়ে কিঞ্চিৎ ‘ইনসিকিউরিটি’তে ভোগেন। লামিয়াই উদ্যোগী হয়ে শাশুড়িকে নিয়ে মাঝেমধ্যে কেনাকাটা করতে যান। পেশাগত দায়িত্ব সামলে সময় পেলেই শাশুড়িকে ডেকে চা নিয়ে নাটক দেখতে বসেন। একদিন গল্পগুজবের একফাঁকে লামিয়া তাঁর শাশুড়িকে সাহস করে কথাটা বলেই ফেললেন।

‘শুধু প্রেম করব, বিয়ে না’

 প্রশ্ন: আমরা দুই বিপরীত ধর্ম ও জাতের মানুষ।

দুজনই অনার্স পাস এবং চাকরিপ্রত্যাশী।

ষষ্ঠ–আষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমরা এক স্কুলে পড়াশোনা করি, সে হিসেবে চেনাজানা ছিল।

তবে স্কুলজীবনে কখনো কথা হয়নি। পরে ২০২১ সালে ফেসবুকে বন্ধু হই, তখন টুকটাক কথা হতো।

আর গত বছরের জুন মাস থেকে ঘনিষ্ঠ হতে থাকি।

আমরা দুজনই আমাদের মধ্যকার ধর্মীয় বাধার বিষয়টি খুব ভালো করে জানতাম।

তাই প্রেমে না জড়াতে দুজনই সতর্ক ছিলাম।

এভাবে চলতে চলতে একসময় আরও ঘনিষ্ঠ হতে থাকি।

একদিন আমি ওকে প্রেমের প্রস্তাব দিই।

সে প্রথমে না করলেও ধীরে ধীরে আমাদের প্রেম হয়ে যায়।

তখন আমরা ঠিক করি, শুধু প্রেম করব, বিয়ে না।

কেননা সমাজ আমাদের বিয়ে মেনে নেবে না।

দিনে দিনে প্রেম গভীর হতে শুরু করে, আমরা বিয়ের বিষয়ে ভাবতে থাকি।

নানা রকম স্বপ্ন সাজাই। কে কীভাবে পরিবারকে বলব, পরামর্শ করি।


কিন্তু এখন আমি মেয়েটির কাছ থেকে নিজেকে সরাতে চাই।

কেননা আমরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে আমাদের সমাজ, ধর্ম এসব মেনে নেবে না।

মেয়েটি খ্রিষ্টান, বিয়ে করতে হলে তাঁকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্মে আসতে হবে।

তাঁর পরিবার এটা মানবে না।

আর আমাদের পরিবারও যে ধর্ম পরিবর্তন করলেই মেয়েটিকে মেনে নেবে, এমন না। কারণ, মেয়েটি গারো। আমার পরিবার অনেক রক্ষণশীল। উচ্চশিক্ষিত হয়েও নিজেদের আবেগ আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি, প্রেম করেছি। এখনো দুজনে আলোচনা করি, আমরা ভুল করছি, কিন্তু এরপরও কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারছি না। কথা না হলে সারা দিনের কাজকর্ম আমাদের কিছুই ঠিক চলে না। আর আমি এক দিন কথা না বললেই মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়ে, আত্মহত্যার কথা ভাবে, খাওয়া ছেড়ে দেয়। এমন অবস্থায় আমরা কী করতে পারি?



উত্তর: এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে তোমরা দুজন খুব সুন্দর মন নিয়ে বন্ধুত্ব শুরু করে ধীরে ধীরে অজান্তেই রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে গেছ। দুজনই মনের যৌক্তিক স্বত্বা দিয়ে বুঝতে পেরেছিলে যে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী পরস্পরের জীবনসঙ্গী হওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বাধা আছে। এরপরও আবেগের কাছে দুজনই হেরে গেছ এবং পরিণতি জেনেও এগিয়ে গেছ।

শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে কিন্তু আবেগ মোকাবিলার ক্ষমতা নির্ভর করে না। লেখাপড়া শেখার ফলে জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ হয়, তাতে বুদ্ধিমত্তার বিকাশও ঘটে। তবে তার সঙ্গে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তাও যে একইভাবে বাড়বে, তেমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, আবেগ এবং যুক্তি দিয়ে চিন্তা করার কাজটা মস্তিষ্কের দুটি আলাদা কেন্দ্রের মাধ্যমে ঘটে থাকে। আর এ কারণেই অনেক সতর্ক থাকা সত্ত্বেও কখন যে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছ, বুঝতেও পারোনি। তবে প্রেমের প্রস্তাবটি কিন্তু প্রথমে তুমিই ওকে দিয়েছিলে এবং মেয়েটি প্রথমে মানাও করেছিল। সেই সময়ে আবেগের কাছে পরাজিত না হয়ে তোমরা যদি পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করতে, তাহলে খুব ভালো হতো। বদলে তোমরা এমন একটি সিদ্ধান্ত নিলে, বাস্তবে যা মেনে চলাটা খুব কঠিন। অর্থাৎ দুজনে শুধু প্রেম করবে কিন্তু বিয়ে করবে না। খুব সম্ভবত এরপর তোমরা শারীরিক সম্পর্কেও জড়িয়েছ, যা তোমাদের বিবাহিত জীবনযাপ‌নের স্বপ্ন দেখার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এরপর তোমরা নিজেদের পরিবারকে কীভাবে ম্যানেজ করবে, সেই পরিকল্পনাও করতে শুরু করো।

এই পর্যায়ে এসে তোমার কাছে বিষয়টি হয়তো খুব কঠিন মনে হতে শুরু করে। বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে তোমার মনে হয়, নিজেকে ওর কাছ থেকে সরিয়ে ফেলাই ভালো। কারণ, মেয়েটি ধর্মান্তরিত হলে পরিবার ওর সঙ্গে অত্যন্ত নেতিবাচক আচরণ করবে। এ ছাড়া তোমার ক্ষেত্রে যা ঘটতে পারে, তা হলো মেয়েটি শুধু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেই হবে না। ওর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারটিও তোমার পরিবার না–ও মেনে নিতে পারে। তুমি কি ভালো করে ভেবে দেখেছ, দুজনের মধ্যে কে বেশি বিপদে পড়বে? মেয়েটি প্রথম পর্যায়েই এই সম্পর্কটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়নি, হয়তো এই মনে করে যে তোমাদের পরিবারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে গিয়ে ও হয়তো বিপদে পড়তে হতে পারে। এটির পূর্বাভাস সে আগেই পেয়েছিল। এই সব কটি বিষয় উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও সম্পর্কটি ধীরে ধীরে আরও নিবিড় হয়েছে।

পরিবারের কথা বাদ দাও, তোমার কথা বলো। ওর ধর্ম পরিচয়, নাকি ওর জাতি পরিচয়—কোনটা তোমাকে বেশি বিচলিত করছে? যদি সে ধর্মান্তরিত হয়ও, তাহলে কি স্ত্রী হিসেবে ওকে মর্যাদা দিতে এবং তোমার পরিবারে ওর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করতে তুমি সব রকম উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে পারবে? যেহেতু আমরা একটি পুরুষশাসিত সমাজে বাস করছি, তাই মেয়েদের কাছে প্রত্যাশা করা হয় যে সে তার শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করবে এবং সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় বিয়ের পর সবার মন জয় করবে। তার ওপরে সে যদি ধর্মান্তরিত হয়ে আসে এবং একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের সদস্য হয়, তাহলে তার অগ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সমাজের একজন সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষ হিসেবে বিয়ের মতো বড় পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই তুমি যদি নিজের পরিবারে তার জন্য যথেষ্ট শ্রদ্ধা তৈরিতে পদক্ষেপ নিতে অক্ষম হও এবং এতটা মানসিক চাপ নিতে অপারগ হও, তাহলে মেয়েটি কষ্ট পেলেও ওকে খুব সুন্দরভাবে নিজের অক্ষমতার বিষয়টি তুলে ধরো।

সে যদি নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার মতো ভয়ংকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা চিন্তা করে, তাহলে জিজ্ঞেস করো, ও কোনো মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারীর কাছে কিছুদিন ধারাবাহিকভাবে সেবা গ্রহণ করে নিজের মনের শক্তি বাড়াতে চায় কি না। যদি সে আগ্রহী থাকে, তাহলে জাতীয় ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টারে গিয়ে বিনা মূল্যে সেবা গ্রহণ করতে পারে। এ ছাড়া প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার রয়েছে, সেখানে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা (কাউন্সেলিং) দেওয়ার জন্য ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরা কাজ করছেন। মেয়েটি যদি একেবারেই আগ্রহী না হয়, তাহলে ওর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাও। কারণ, তোমাদের এই সম্পর্ক গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তোমার অগ্রণী ভূমিকা ছিল।

স্থাপত্য অধিদপ্তর ৫ পদে নেবে ৩০ জন

 সম্প্রতি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে স্থাপত্য অধিদপ্তর। ৫টি পদে মোট ৩০ জনকে নিয়োগের জন্য এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে পদগুলোয় যোগ্যতা পূরণ সাপেক্ষে যোগ দিতে পারেন আপনিও।

অনলাইনে পদগুলোর জন্য আবেদন শুরু ১০ আগস্ট থেকে।

আগ্রহী প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।

১.
পদের নাম: লাইব্রেরিয়ান
পদ সংখ্যা: ০১
বেতন স্কেল: ১১,৩০০-২৭,৩০০ টাকা (গ্রেড-১২)

পদের নাম: সহকারী টেলিফোন অপারেটর
পদ সংখ্যা: ০১
বেতন স্কেল: ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকা (গ্রেড-১৬)
৩.
পদের নাম: গাড়িচালক
পদ সংখ্যা: ০১
বেতন স্কেল: ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকা (গ্রেড-১৬)
৪.
পদের নাম: সহকারী মডেল মেকার
পদ সংখ্যা: ০৩
বেতন স্কেল: ৮,৮০০-২১,৩১০ টাকা (গ্রেড-১৮)
৫.
পদের নাম: অফিস সহায়ক
পদ সংখ্যা: ২৪
বেতন স্কেল: ৮,২৫০-২০,০১০ টাকা (গ্রেড-২০)


বয়সসীমা

এ বছরের ১০ আগস্টে প্রার্থীর ন্যূনতম ও সর্বোচ্চ বয়স হবে ১৮ থেকে ৩০ বছর। শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধা/ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩২ (বত্রিশ) বৎসর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য।


আবেদন যেভাবে

http://architecture.teletalk.com.bd/docs/circular.pdf এর মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন আগ্রহী প্রার্থী। আবেদনের সঙ্গে ৩০০-৩০০ সাইজের ছবি ও ৩০০-৮০ সাইজের স্বাক্ষর স্ক্যান করে যুক্ত করতে হবে।

মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০২৩

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালে চাকরি, বেতন ১ লাখ ৮৩ হাজার

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি ঢাকায় বিজনেস ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট পদে কর্মী নিয়োগ দেবে। আগ্রহী প্রার্থীদের অনলাইনে আবেদন করতে হবে।


  • পদের নাম: বিজনেস ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট


  • পদসংখ্যা:


  • যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা: স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সমাজবিজ্ঞান বা এ ধরনের বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অন্তত তিন বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। গ্র্যান্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে অভিজ্ঞ হতে হবে। কক্সবাজার বা রিফিউজি রেসপন্স প্রোগ্রামে কোনো প্রকল্পে ফান্ড মোবিলাইজেশন বিষয়ে ভালো জানাশোনা থাকতে হবে। উপস্থাপনা ও লেখালেখিতে দক্ষ হতে হবে। ফিল্ড ভিজিট, বিভাগীয় অফিস ও বিদেশভ্রমণের মানসিকতা থাকতে হবে।


চাকরির ধরন: চুক্তিভিত্তিক

কর্মস্থল: বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিস, ঢাকা

বেতন ও সুযোগ-সুবিধা: মাসিক বেতন ১,৪৭,১০৬ থেকে ১,৮৩,৮৮৩ টাকা (অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে)। এ ছাড়া জীবনবিমা, মেডিকেল বিমাসহ অন্যান্য সুবিধা আছে।

যেভাবে আবেদন
আগ্রহী প্রার্থীদের প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের চাকরিসংক্রান্ত ওয়েবসাইটের এই লিংকে গিয়ে নিয়োগ ও আবেদনের বিস্তারিত প্রক্রিয়া জেনে নিতে হবে। এরপর একই লিংকের Apply Now-এ ক্লিক করে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।

আবেদনের শেষ তারিখ: ১১ আগস্ট ২০২৩।

আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরি, বেতন ১ লাখ ৯০ হাজার

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি বাংলাদেশে ফিন্যান্স ম্যানেজার পদে কর্মী নিয়োগ দেবে। আগ্রহী প্রার্থীদের অনলাইনে আবেদন করতে হবে।

  • পদের নাম: ফিন্যান্স ম্যানেজার


  • পদসংখ্যা:


  • যোগ্যতা: এসিসিএ/সিআইএমএ/এসিএ বা সমমানের প্রফেশনাল কোয়ালিফিকেশন থাকতে হবে। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো উন্নয়ন সংস্থায় ফিন্যান্স বা বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে অন্তত সাত বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এর মধ্যে সাড়ে তিন বছর ম্যানেজমেন্ট লেভেলে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। নেতৃত্বের সক্ষমতা থাকতে হবে। বাজেট ও পরিকল্পনার দক্ষতা থাকতে হবে। রিপোর্ট রাইটিং, অ্যানালিটিক্যাল, নেটওয়ার্কিং ও যোগাযোগে দক্ষ হতে হবে। ভ্রমণ করার মানসিকতা থাকতে হবে।


  • চাকরির ধরন: দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক


  • কর্মস্থল: ঢাকা


  • বেতন: মাসিক বেতন ১,৬০,০০০–১,৯০,০০০ টাকা (অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে)।


  • আবেদন যেভাবে
    আগ্রহী প্রার্থীদের এই লিংক থেকে নিয়োগসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জেনে Apply Online-এ ক্লিক করে আবেদন করতে হবে।

    আবেদনের শেষ সময়: ২২ আগস্ট ২০২৩।



একশনএইডে কক্সবাজারে চাকরি, বেতন ৭১ হাজার

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি কক্সবাজারে সেফগার্ডিং ইউনিটে কর্মী নিয়োগ দেবে। আগ্রহী প্রার্থীদের অনলাইনে আবেদন করতে হবে।

  • পদের নাম: অফিসার—সেফগার্ডিং অ্যান্ড অ্যাস্যুরেন্স

    পদসংখ্যা:


  • যোগ্যতা: আইন, হিউম্যান রাইটস, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস, পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বা এ ধরনের বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। সেফগার্ডিং ইনভেস্টিগেশন, চাইল্ড সেফগার্ডিং/প্রোটেকশন বা কেস ম্যানেজমেন্টে প্রফেশনাল প্রশিক্ষণ থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কোনো আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা/মানবাধিকার সংস্থা/এজেন্সিতে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় যোগাযোগে সাবলীল হতে হবে। রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, অ্যাডভোকেসি, যোগাযোগ ও ড্রাফটিংয়ে দক্ষ হতে হবে। প্রশিক্ষণ প্রদানে দক্ষ হতে হবে। এমএস অফিস অ্যাপ্লিকেশনের কাজ জানতে হবে। ফিল্ড ভিজিটের মানসিকতা থাকতে হবে।


  • চাকরির ধরন: দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক


  • কর্মস্থল: কক্সবাজার


  • বেতন: মাসিক মোট বেতন ৭১,৪৩১ টাকা। এর সঙ্গে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, উৎসব বোনাস, কর্মী, কর্মীর স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানের স্বাস্থ্যসুবিধা, গ্রুপ লাইফ ইনস্যুরেন্স এবং মুঠোফোন ও ইন্টারনেট বিল দেওয়া হবে।

  • আবেদন যেভাবে
    আগ্রহী প্রার্থীদের অনলাইনে একশনএইড বাংলাদেশের ওয়েবসাইটের এ লিংকে রেজিস্ট্রার বা লগইন করে আবেদন করতে হবে। নিয়োগ, আবেদনপ্রক্রিয়া ও পদসংশ্লিষ্ট বিস্তারিত তথ্য এই লিংক থেকে জেনে নিতে হবে।

    আবেদনের শেষ তারিখ: ১৬ আগস্ট ২০২৩।



পৃষ্ঠাসমূহ