বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০২৩

ভালো শাশুড়ি হবেন কীভাবে

 ফারজানা সুলতানাদের শ্বশুরবাড়িতে একটা অলিখিত নিয়ম ছিল।

ঈদের দিন নামাজ পড়ে এসে সবার আগে শ্বশুর খাবে। এরপর অন্যরা।

শ্বশুরের খাওয়ার আগে কেউ দানাপানি স্পর্শ করতে পারবে না। দীর্ঘদিন ধরে এমনটাই চলে আসছিল। বিয়ের পর প্রথম ঈদে বাড়ির বড় বউ ফারজানা সকালবেলা উঠেই যথারীতি শাশুড়ির সঙ্গে মিলে সেমাই, পায়েস, খিচুড়ি, মাংস রান্না করলেন। টেবিলে শ্বশুরের খাবার রেডি করে রাখলেন। ততক্ষণে বেশ ক্ষুধা পেয়েছে। ফারজানার আবার লো প্রেশার। সকালে ঘুম থেকে উঠেই কিছু খেতে হয়। অবস্থা এমন দাঁড়াল যে ক্ষুধায় প্রেশার নেমে হাত-পা কাঁপতে লাগল। শ্বশুরসহ বাড়ির ছেলেরা ঈদের নামাজে গেছেন। ফিরতে কতক্ষণ কে জানে! এমন পরিস্থিতিতে একফাঁকে শাশুড়ি এসে ফারজানাকে মুখে তুলে খাইয়ে গেলেন। আর বললেন, ‘তুমি কিন্তু নিজে খাও নাই। আমি খাওয়ায়ে দিছি। বুঝলা?’ একঝটকায় দীর্ঘদিনের প্রথা গেল ভেঙে। মহামারিতে ফারজানার স্বামী মারা গেলেন। পোস্ট–কোভিডে মারা গেলেন শ্বশুর। দুই পুত্রের মা ফারজানা আর তাঁর শাশুড়ি দুজনে এখন সময় পেলেই ঘুরে বেড়ান। ছুটির দিনে রুফটপ রেস্তোরাঁয় নুডলস আর ফালুদা খেতে খেতে আড্ডা দেন বন্ধুর মতো। বউ-শাশুড়ি দুজন দুজনের ওপর ভর করে এলোমেলো হয়ে যাওয়া জীবনের দুঃখ–সুখ ভাগাভাগি করে যাপন করছেন।

তবে এমনটা সব বউ-শাশুড়ির ক্ষেত্রে ঘটে না।

আমরা সব সময় একটা মেয়েকে শেখাই, কীভাবে ভালো বউ হতে হবে, শ্বশুরবাড়ি গিয়ে নতুন পরিবেশে সবার সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে।

নতুন বউকে এ বিষয়ে উপদেশ দেওয়ার লোকের অভাব নেই।

অন্যদিকে ‘রাতারাতি’ যিনি শাশুড়ি বনে যাচ্ছেন, তাঁকে কেউ বলে না, কীভাবে ভালো শাশুড়ি হতে হবে, কীভাবে বউয়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে, কীভাবে নতুন বউকে পরিবারের কর্ত্রী হিসেবে আপন করে নিতে হবে। অথচ নতুন মেয়েটিকে সর্বোচ্চ ইতিবাচক মনোভাব দিয়ে আপন করে নিতে পারার কথা তো এই শাশুড়িরই।

বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করি। কলেজশিক্ষক হালিমা আক্তার দুই ছেলের মা। বড় ছেলের জন্য বউ খুঁজছেন। তাঁর কাছে জানতে চাইলাম তিনি কীভাবে তাঁর ছেলেবউকে আপন করে নেবেন। বললেন, ‘আমি কোনো উচ্চাশা রাখি না। আমার ছেলে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘুমালে যদি অসুবিধা না হয়, তাহলে ছেলেবউ দেরি করে উঠলে কেন দোষ খুঁজব? ভুল আমরা প্রত্যেকে করি। দোষ-গুণ নিয়েই মানুষ। সেগুলোকে নিজের সন্তানের মতোই সহজ করে দেখতে চাই।’ স্কুলশিক্ষক আর্জিনা জলিও মনে করেন এই বাংলায় আবহমানকাল থেকে চলে আসা বউ-শাশুড়ির চিরন্তন সম্পর্কে শাশুড়ির ভূমিকাই মুখ্য। বললেন, ‘মান-অভিমান কি মা-সন্তানের মাঝে হয় না? সব সম্পর্কে হয়। মিটমাট করতে অগ্রজকেই এগিয়ে আসতে হবে।’ জানতে চাইলাম, ছেলের বউকে কি আসলেই মেয়ের মতো করে দেখা সম্ভব? বললেন, ‘শতভাগ হয়তো সম্ভব না। কিন্তু ৮০ ভাগ তো সম্ভব। আন্তরিকতা নিয়ে চেষ্টা করে দেখতে দোষ কোথায়?’

পেশায় চিকিৎসক লামিয়া জান্নাতের তিন বছরের সংসার। স্বামীও চিকিৎসক। প্রেমের বিয়ে। মেডিকেল কলেজে পড়ার দিনগুলো থেকেই প্রেম। শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্ক অম্লমধুর। তবে সময়ের সঙ্গে অম্লের পরিমাণ কমেছে। বেড়েছে মধুর ভাগ। কীভাবে? জানতে চাইলে একটা মজার কথোপকথনের গল্প বললেন লামিয়া। জানালেন, শুরুতে খানিকটা নাকানিচুবানিই খেতে হয়েছে। কেননা, কমবেশি সব মা–ই ছেলেকে নিয়ে কিঞ্চিৎ ‘ইনসিকিউরিটি’তে ভোগেন। লামিয়াই উদ্যোগী হয়ে শাশুড়িকে নিয়ে মাঝেমধ্যে কেনাকাটা করতে যান। পেশাগত দায়িত্ব সামলে সময় পেলেই শাশুড়িকে ডেকে চা নিয়ে নাটক দেখতে বসেন। একদিন গল্পগুজবের একফাঁকে লামিয়া তাঁর শাশুড়িকে সাহস করে কথাটা বলেই ফেললেন।

1 টি মন্তব্য:

  1. অসাধারণ লেখা খুব ভালো লাগলো। সব সংসারে এইরকম শাশুরি বউমা দরকার।

    উত্তরমুছুন

পৃষ্ঠাসমূহ