রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য প্রমথনাথ বিশী অঙ্ক পরীক্ষার খাতায় শুধু কবিতা লিখে থামলেন না,
প্রমথনাথ বিশী'র মধ্যে ভবিষ্যতের প্রতিভাবান লেখকটি সুপ্ত ছিল রবীন্দ্রনাথের জহুরী দৃষ্টিতে ধরা পড়েছিল৷ তিনি প্রমথনাথ কে একটু বেশি স্নেহ করতেন৷ সেই প্রমথনাথ একবার বেশ অবাক করা এক কাণ্ড করে বসলেন৷ অঙ্কের পরীক্ষায় প্রশ্নের সঠিক উত্তর না লিখে অথবা ভুল উত্তর দিয়ে নিজের কাজের সমর্থনে লিখে এসেছিলেন—
'তোমার শরণাগত নহি সতত
শুধু পরীক্ষার সময়—
দয়া করি কিছু মার্ক দিও গো আমায়
ওগো মাস্টার মশায়,
পরীক্ষার সময় পড়ি তোমার পায়'৷
শুধু কবিতা তিনি লিখে ক্ষান্ত দেন নি, নিঃসঙ্কোচে অঙ্ক পরীক্ষার সেই খাতা জমা দিয়েছিলেন পরীক্ষকের কাছে৷
প্রমথনাথের কবিতা কাণ্ডে প্রথম বিপদে যিনি পড়লেন তিনি সুধাকান্ত রায়চৌধুরী ৷ ছিলেন গৃহাধ্যক্ষ,প্রমথনাথ সেই ঘরে থাকতেন৷ পরীক্ষক মহাশয়ের ক্রোধ কার্যত বর্ষিত হল সুধাকান্তর ওপর৷ কারণ তিনি তখনও যুবক,সেই বয়সে যুববয়সোচিত অনেক দুঃসাহসিক কাজ করার সুখ্যাতি,কুখ্যাতি অর্জন করেছেন৷ বকলমে বলতে চেয়েছেন প্রমথনাথ এহেন কাজ করার সাহস পেয়েছেন সুধাকান্ত কে দেখে৷ বিনা তর্কে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সহ্য করলেন সুধাকান্ত, কারণ যিনি পরোক্ষ তাঁর দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন তিনিও কিছুদিন সুধাকান্তর মাস্টারমশায় ছিলেন৷
প্রমথনাথের অঙ্কের পরীক্ষার খাতায় কবিতা লেখার ঘটনায় সত্যি-সত্যি বিড়ম্বনা বেড়ে যাচ্ছিল সুধাকান্তর৷
তখন তিনি ১৫টাকা বেতন পান সঙ্গে বিনা ব্যয়ে খাওয়া-দাওয়া৷ আরামের সেই চাকরি যাবার ভয়ে সোজা রবীন্দ্রনাথের শরণাপন্ন হলেন৷কবিগুরুকে বললেন নিজের সম্ভাব্য বিপদের কথা৷
রবীন্দ্রনাথ সুধাকান্তর কাছে দীর্ঘ সেই কবিতার পুরোটা শুনে বেশ মজাই উপভোগ করলেন৷ সুধাকান্ত কে অভয় দিয়ে বললেন ভয় নেই বিশী যা লিখেছে,ঠিকই লিখেছে৷ তিনি নগেনকে (নগেন্দ্রনাথ আইচ) কে বুঝিয়ে বলবেন৷
গুরুদেবের কথায় নিশ্চিন্ত হলেন বটে তবে নগেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ কে কি বলেন সেকথা শোনার জন্য উদগ্রীব৷ নিজেই গেলেন তাঁর কাছে -বললেন মাস্টারমশায়,গুরুদেবের সঙ্গে একবার দেখা করবেন৷ বিশীর সেই কবিতার কথা গুরুদেব কে বলেছি৷
রবীন্দ্রনাথের কাছে নগেন্দ্রনাথ গেলে কবি বললেন -প্রমথ অঙ্কের জবাব দেয় নি৷ পারেনি বলে দেয় নি৷ কিন্তু যা লিখেছে তাতে ওর সত্যনিষ্ঠা ও প্রয়োজনীয় নম্রতার প্রমাণ আছে৷ রাগ করো না,ক্ষমা করো৷ ঠিক উত্তর দিলে তো পা ধরাধরি করে নম্বর চাইত না৷
নগেন্দ্রনাথ আর উচ্চবাচ্য করেন নি,কারণ ডাকাবুকো ছেলেদের ওপর স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের সস্নেহ প্রশ্রয় যখন আছে তখন তিনি আর কি বলবেন!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন