বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩

রবীন্দ্রনাথ 'বাঁদর' বলতেই ঘরের সকলে চমকে উঠলেন...

 


জীবনের শেষ দিকে এসে রবীন্দ্রনাথ সামনের দিকে ঝুঁকে লিখতেন। একদিন তাঁকে ওইভাবে লিখতে দেখে তাঁকে একজন বললেন, আপনার নিশ্চয় ওভাবে লিখতে কষ্ট হচ্ছে। হেলান দিয়ে লিখতে পারেন এরকম একটা চেয়ারের ব্যবস্থা করলে তো লিখতে সুবিধা হবে। বক্তার দিকে তাকিয়ে রসিক রবীন্দ্রনাথ জবাব দিলেন, কী জানো, এখন উপুড় হয়ে না লিখলে কি আর লেখা বেরোয়! কুঁজোর জল কমে তলায় ঠেকলে একটু উপুড় তো করতেই হয়।
রবীন্দ্রনাথ একবার এক ভদ্রলোককে বললেন, 'আপনাকে আমি দণ্ড দেব।' ভদ্রলোক তো ভীষণ বিব্রত। কী অপরাধ হয়েছে তার! বললেন 'কেন, আমি কী অপরাধ করেছি?' রবীন্দ্রনাথ বললেন, 'গতকাল আপনার লাঠি মানে দণ্ডটি আমার এখানে ফেলে গিয়েছিলেন। এই নিন আপনার দণ্ড।' বলে তাঁর দিকে লাঠিটি বাড়িয়ে ধরলেন।
একবার এক ঘরোয়া আসর জমেছে। সবাই হাসি-গল্পে মশগুল। রবীন্দ্রনাথ বললেন, 'এ ঘরে একটা বাঁ দোর আছে।' সবাই এ-ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছে। গুরুদেব কাকে আবার 'বাঁদর' বললেন? রবীন্দ্রনাথ বুঝতেই পারছিলেন, তিনি সকলকে চমকে দিয়েছেন। তখন বুঝিয়ে দিলেন, 'এ ঘরে দুটো দরজা বা দোর। একটা ডান দিকে, অন্যটা বাম দিকে। সেই দরজাটিকেই বলছিলাম বাঁ-দোর!'
একবার এক দোলপূর্ণিমার দিনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাক্ষাৎ। পরস্পর নমস্কার বিনিময়ের পর হঠাৎই দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর জামার পকেট থেকে আবির বের করে রবীন্দ্রনাথের গায়ে রং দিলেন। আবিরে রঞ্জিত রবীন্দ্রনাথ সহাস্যে বলে উঠলেন, এতদিন জানতাম দ্বিজেনবাবু হাসির গান ও নাটক লিখে সকলের মনোরঞ্জন করে থাকেন, আজ দেখছি শুধু মনোরঞ্জন নয়, দেহরঞ্জনেও তিনি ওস্তাদ!
একবার রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজি একসঙ্গে বসে খাচ্ছেন। সেদিন কবি লুচি খাচ্ছিলেন। গান্ধীজি লুচি পছন্দ করতেন না, তাই তাঁকে ওটসের পরিজ খেতে দেওয়া হয়েছিল। তবে কবিকে গরম গরম লুচি খেতে দেখে গান্ধীজি বলে উঠলেন, গুরুদেব, তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছ। কবিগুরু বললেন, বিষই হবে; তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে। কারণ, আমি বিগত ষাট বছর যাবৎ এই বিষই খাচ্ছি।
নৃত্যপ্রেমী রবীন্দ্রনাথ। নৃত্য নিয়ে তিনি বিপুল ভাবনাচিন্তা করেছেন। তবে অনেকেই হয়তো জানে না, কবি স্বয়ং চমৎকার বল ডান্স করতে পারতেন। শিখেছিলেন খুড়তুতো দিদি সত্যেন্দ্রবালা ঠাকুরের কাছে। যদিও রবীন্দ্রনাথ নিজে তাঁর নৃত্যশৈলীকে বলতেন ভাবনৃত্য। জাভা দেশের নৃত্যের স্বতঃস্ফূর্ত ভাবাবেগ থেকে এই শৈলীর জন্ম। পরে তাতে মেশে মণিপুরী, কথাকলি, শ্রীলঙ্কার নাচ, ইত্যাদ আরও নানা স্থানিক নৃত্যভঙ্গি।
রবীন্দ্রনাথ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় দক্ষ ছিলেন। নিজের জমিদারির প্রজাদের তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন বলে জানা যায়। নিজেও হোমিওপ্যাথি পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিতে পছন্দ করতেন।

২টি মন্তব্য:

  1. অসাধারণ লেখা খুব ভালো লাগলো। আপনাকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল

    উত্তরমুছুন
  2. এত রকম বর্ণ ময় প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তিনি !
    রন্ধ ন এর তিনি নানান নতুন নতুন পদ বানিয়ে নিতেন মৃণালিনী দেবীর থেকে !
    একবার জলখাবারে উনি ফরাসী মধু দিয়ে খাচ্ছি লেন , একজন বললেন , আপনি দেশি মধু কেনো নেন না ?উনি হেসে বললেন,
    আমার গুর সহ্য হয় না !
    ঐ সময়ে মধুতে গুর ভেজাল দেয়া হত !

    উত্তরমুছুন

পৃষ্ঠাসমূহ