প্রতি বছর ষোলই ডিসেম্বর এর পরের দিন পাগলটাকে দেখা যায় এ গলিতে ও গলিতে , এ রাস্তায় ও রাস্তায় , এ মোড়ে ও মোড়ে , ডাস্টবিনের পাশে ,নর্দমার ধারে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চষে বেড়ায় শহরের এ কানা থেকে সে কানা, কাঁধে বস্তা নিয়ে ।
সকালবেলা কৌতুহল বশে  জিজ্ঞাসা করেছিলাম, 
"তোমার নাম কী?"
বলেছিল , "ক্ষুদিরাম" ।
"কী খুঁজছ ক্ষুদিরাম?"  
উত্তর দিল, "আমি ক্ষুদিরাম নই , প্রফুল্ল চাকী।"
অবাক হলাম ।
বিকালে আবার দেখা , বললাম, 
"প্রফুল্ল চাকী চা খাবে?"
ও বলল ,  "আমার নাম কানাইলাল" । 
এবার বিস্ময়।
সন্ধের মুখে বড় রাস্তার মোড়ে  জটলা দেখে থমকে দাঁড়ালাম। জিজ্ঞাসা করলাম  ,
"কী হয়েছে?"
ভীড়ের থেকে একজন বলল,  "একটা চোর ধরা পড়েছে।"
ভীড় ঠেলে এগিয়ে গিয়ে  দেখলাম , ল্যাম্প পোষ্টে বাঁধা সকালের ক্ষুদিরাম  দুপুরের প্রফুল্ল চাকী বিকালের কানাইলাল। 
পাশে মাল বোঝাই বস্তা,  যা ছিল সকালে খালি।
একজন বলল ,ঐ বস্তায় আছে চুরি করা জিনিস ।
খটকা লাগল ,জিজ্ঞাসা করলাম ,
"চুরি  করেছ?"
ও নির্বিকার, কোনো উত্তর দিল না। 
আমি বস্তার মুখের বাঁধন খুলে মাটিতে ঢেলে দিলাম , বেরোল ছেঁড়া , ফাটা ,দুমড়ানো ,মোচড়ানো, প্লাস্টিকের ও কাগজের যত জাতীয় পতাকা  । রাস্তা , ডাস্টবিন , নর্দমা থেকে কুড়িয়ে  ভরেছে বস্তায় ।
মুহূর্তে ভীড়  হল অদৃশ্য, .চোখ ভরা জল নিয়ে  বাঁধন খুলে দিলাম পাগলের। আমার মুখের দিকে  তাকাল একবার,  তারপর  মৃদুস্বরে বলল, 
"যেন কেউ পা দিয়ে মাড়িয়ে না যায় তাই ...."
তারপর আবার পতাকা গুলো বস্তায় ভরে নিয়ে  চলে গেল দূর থেকে  দূরে । 
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম স্থানুর মতো  অপার বিস্ময় আর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন