বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩

ইন্দিরা দেবীর বয়স যখন ছাব্বিশ বছর তখন আইনজীবী, প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

''ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী:

ঠাকুরবাড়ির নব জাগরণের নাম।''

--ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের মধ্যে তিনিই প্রথম বি.এ পাশ করেন। ইংরেজি ও ফরাসী ভাষায় বি.এ পড়েছিলেন তিনি। ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী; সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং জ্ঞানদানন্দিনীর মেয়ে। ২৯ ডিসেম্বর, ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে ইন্দিরা দেবীর জন্ম। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই সন্তান সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী দুজনেই ছিলেন কৃতি ব্যক্তিত্ব। ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী ছিলেন একজন বিশিষ্ট সংগীতবিদ। রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্পর্কে তার অগাধ জ্ঞান ছিল।


১৮৭৭ সালে মা জ্ঞানদানন্দিনীর সাথে ভাই সুরেন্দ্রনাথ সহ তিনি পারি জমান ইংল্যান্ডে। বছরখানেক পর রবীন্দ্রনাথও ইংল্যান্ডে চলে গেলে কবিগুরুর নিবিড় সান্নিধ্যে বেড়ে ঊঠেন তারা দুই ভাইবোন। সুরেন্দ্রনাথ এবং ইন্দিরা দেবীকে বিশেষভাবে পছন্দ করতেন কবিগুরু। ছোটবেলা থেকেই তিনি পাশ্চাত্য এবং ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত এর উপর তালিম নেন। কবিগুরুর অসংখ্য গানের নোটেশন লিখেছেন তিনি। এছাড়াও তিনি কিছু ব্রহ্ম সঙ্গীত রচনা করেছিলেন।
ইন্দিরা দেবীর বয়স যখন ছাব্বিশ বছর তখন আইনজীবী, প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ইন্দিরা দেবী’র সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন অনুবাদক। ‘সাধনা’ পত্রিকায় তিনি পিয়ের লোতির গল্প ও ভ্রমণবৃত্তান্তের অনুবাদ প্রকাশ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথে গীতাঞ্জলির ভূমিকা ফরাসী অনুবাদ থেকে অনুবাদ করেন ইন্দিরা দেবী।অনুবাদ প্রকাশিত হয়, প্রমথ চৌধুরী সাদিত ‘সবুজপত্র’ পত্রিকাতে। রেনে গ্রুসে-লিখিত L’Inde এর বাংলা সঙ্কলনও এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য। এটি প্রকাশিত হয় ‘পরিচয়’ পত্রিকায়।
রবীন্দ্রনাথের বহু কবিতার ও রচনার তিনি ছিলেন দক্ষ অনুবাদক। রবীন্দ্রনাথও তার অনুবাদ পড়ে সবসময় সন্তোষ প্রকাশ করতেন। ইন্দিরাই প্রথম তার ‘জাপানযাত্রী’ গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন। ইন্দিরা দেবী অনেক গুণে গুণান্বিত ছিলেন। সঙ্গীত বিষয়েও তার জ্ঞান ছিল অগাধ। তিনি বেশ কিছু সংগীত বিষয়ক বই লিখেছেন। তার মধ্যে প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে একযোগে লিখিত ‘হিন্দু সংগীত’ গ্রন্থের (১৩৫২ বঙ্গাব্দ) ‘সংগীত পরিচয়’ নামক প্রাথমিক অংশ উল্লেখযোগ্য। তিনি রবীন্দ্র সঙ্গীত এর তথ্য এবং তত্ব দুটিকেই সমৃদ্ধ করেছেন সমান হারে।
সঙ্গীত বিশারদ,অনুবাদক হবার পাশাপাশি তিনি নিজেকে সামাজিক উন্নয়নেরও অংশীদার করেছেন। বাবার পথ ধরেই মহিলা শিক্ষা লিগ, সর্ব ভারতীয় মহিলা সম্মেলন, সঙ্গীত সংঘ, সঙ্গীত সম্মেলন সহ আরো নানান কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন।
১৯৪১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ফিরে আসেন এবং বিশ্ব ভারতীর ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নেন।
১৯৬০ সালের ১২ আগস্ট ঠাকুর পরিবারের নবজাগরণের অংশীদার এই মহীয়সী সাহিত্যিক এবং সঙ্গীত বিশারদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ছবি: ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীর স্টুডিও ফোটো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ