রবিবার, ১৫ জুলাই, ২০১২

ইরানের সক্ষমতা ও নারীর স্বাধীনতা !

যখন থেকে কিছু কিছু বুঝার চেষ্টা করছি তখন থেকেই পশ্চিমা শক্তি বিশেষ করে আমেরিকা ও তাদের মিত্র ন্যাটো জোটের যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমার মনোভাব তীব্র। তবে এইখানে বাদ যাবে আফগান যুদ্ধের বিষয়বস্তু ও আল কায়েদার যেকোনো অসামাজিক কর্মকাণ্ড। এছাড়া পশ্চিমা শক্তির বিরোধী বর্তমান বিশ্বের অন্যতম দেশ গুলোর পক্ষে আমার সমর্থন সবসময় রয়েছে। যেমন, আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে আমার প্রিয় দেশ গুলোর নাম কী ? বিনা বাধায় বলে দিতে পারি। কিউবা, ভেনিজুয়েলা, ইরান, রাশিয়ার নাম। উল্লেখ করতে চাই, বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশেই পুজিবাদের পতন লক্ষণীয়। সেই সাথে হু হু করে এগিয়ে যাচ্ছে সমাজতন্ত্রের জয়গান। সমাজতন্ত্রের বিপ্লব এর মডেল এখন সমগ্র দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সমাজতন্ত্রের বিপ্লব কে কাজে লাগিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে ভেনিজুয়েলা, ব্রাজিলের মত দেশ গুলো। আমি স্বপ্ন দেখি আমাদের দেশে ও সমাজতন্ত্রের বিপ্লব কোনও না কোনও দিন হবেই। আপাতত সেই আশায় রইলাম।

অপর দিকে ইরান যদি ও সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার কোনও দেশ নয় বা সমাজতন্ত্রের কোনও ফরমালিটি তারা ধারণ করে না। তবু ও ইরানের উত্থান আমাকে উত্সাহিত করে ভিবিন্ন কারণে ইসলামিক বিপ্লবের পরবর্তী গত ৩২ বছরে ইরানের সাফল্য, আবিষ্কার ও উদ্ভাবন! সম্পর্কে কিছুটা ধারনা নিতে পারেন। ইরানের বাংলা বিভাগের রেডিও তেহরান এর নিয়মিত একজন পাঠক হিসেবে বর্তমান ইরানের অগ্রগতি সম্মন্ধে আমি কিছু ধারনা পোষণ করি মাত্র। তাতে আমাদের অনেকের কাছে যা মনে হয় ইরানের সাধারণ নাগরিক হয়তো বা বর্তমান বিশ্বের আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। আসলে কিন্তু তা নয়, যেমন আধুনিক ইরানে নারী দের দেওয়া হয় সর্বোচ্চ মর্যাদা যা অন্যান্য আরব দেশে সম্ভব নয় বলে আমি ধারনা করি। বলছি,ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের আগে ইরানের শাসনব্যবস্থা ছিল পুরোপুরি পশ্চিমাপন্থী। সে সময় বেড়াতে যাওয়া, অ্যালকোহলিক পানীয় তথা মদ পান করা কিংবা সংক্ষিপ্ত পোশাক পরা বৈধ ছিল, কিন্তু এখন গণ অনুষ্ঠান আয়োজনে ইরানের নারীরা মাথায় স্কার্ফ এবং চাদর পরে ইসলামী হিজাব করে অংশ নেয় বা যাওয়া-আসা করে। ইরানের পাবলিক বাস গুলোতে নারী-পুরুষের জন্যে আলাদাভাবে আসনের ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরও ইরানের আইন কানুনগুলো অধিকাংশ আরব দেশের মতো কঠোর নয়। ইরানের নারীরা তাদের চেহারা নেকাব দিয়ে ঢেকে ফেলে না এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে তারা বেশ তত্পর। ইরানী নারীদেরকে স্কার্ফ পরতে হয় এটা অনস্বীকার্য কিন্তু ইরানের নারীরা কখনোই আরব নারীদের মতো গৃহপরিচারিকার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় না। ইরানী নারীরা মানুষ হিসেবে মর্যাদার আসনে আসীন, তারা তাদের হিজাবকে সামাজিক সুস্থতা ও নিরাপত্তার উপায় বলে মনে করে। ইরানে নারীদের হিজাব তথা ইসলাম পোশাক পরিধানের ফলে সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের তত্পরতা হ্রাস পায়নি, এমনকি তাদের সামাজিক কর্মকাণ্ডের ওপরও কোনোরকম সীমাবদ্ধতা আরোপিত হয়নি, উল্টো বরং ইরানী সমাজে নারীদের সামাজিক কর্মকাণ্ড মূলক তত্পরতা প্রতিদিনই বাড়ছে। ইরানের নারীদের নিয়ে অন্য আরেক দিন আলোচনা করা যেতে পারে। 

ইরান বিষয়ে আমেরিকা ও তাদের মিত্র দেশ গুলো যে ধরনের ভৌতিক ধারনা করে কার্যত ইরান কে এক ঘরে করে ফেলেছে আমার মনে হয় আমেরিকা বা তাদের মিত্রদের সেই মনবাসনা কোনও দিন পূর্ণ হবে না। পশ্চিমারা যতটুকু করতে পেরেছে বলে আমি বিশ্বাস করি উম্মোক্ত বিশ্বের সাথে তাদের স্বাধীনতা খর্ব করে রেখেছে। কিন্তু অনেকাংশে ইরান বর্তমান বিশ্বের অন্যতম একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে নিজের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। যা বহি:বিশ্বে এখনো অনেক বেশি প্রচারিত নয় ভিবিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে। এই ক্ষেত্রে ইরানের চেয়ে বেশি মুখ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট ও তাদের অন্যতম মিত্র দেশ গুলো। 

উপুর্যপরি অবরোধ আর নিষেধাজ্ঞা দেশটি কে দমিয়ে রাখতে ব্যার্থ হয়েছে বার বার। কার্যত ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরান মূলত বিশ্বে এক প্রকার গৃহবন্দী অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু প্রতিটা ইরানির সাহস আমাকে মুগ্ধ করেছে। কী অসীম ভালোবাসা তাদের, নিজের দেশের সরকার বা শাসন ব্যবস্থার প্রতি । সত্যি এক মডেল যেন, আমি একটা কথা না বলে থাকতে পারছি না। আমি যখন তাদের খবর গুলো নিয়মিত পড়ি তখন যেন মনে হয় প্রতি দিন একটা করে ইরানের জন্ম হচ্ছে ইরানের ভূমিতে। এ যেন অসাধারণ গল্প । যাই হোক পারস্য উপসাগরের তীরের শেখ সাদির এই দেশটি নিয়ে আরও লিখার চিন্তা রয়েছে অন্য কোনদিন। 


আমাদের দেশের সরকার বা বিরোধীদল যেখানে প্রভুভক্তিতে সারা পৃথিবীতে এক নাম্বার নিজেরা হাগু দিলেও পশ্চিমারা এসে নাক গলায়। আর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আমি তো মনে করি পশ্চিমারা আমাদের একধরনের প্রতিপক্ষ। উনারা ছুয়ে না দিলে আমাদের কোনও কাজ হালাল রূপ ধারণ করে না। সেই খানে ইরানীরা পশ্চিমাদের নিয়মিত হুমকি ধামকি দিয়ে চলছে। যদি ও আমি বিশ্বাস করি ইরান আর বাংলাদেশ এক বিষয় না। তাদের রয়েছে বিশ্বের মোট তেলের অন্যতম একটা মজুত ভান্ডার যা তাদের পক্ষে একটা অলিখিত পরমাণু অস্র। 

তুলে ধরছি ইরানের সক্ষমতার কিছু দিক, যা পোস্টের গুরত্ত্ব বহনের ক্ষেত্রে অতি প্রয়োজনীয় 

আয়তন: ১,৬৪৮,১৯৫ বর্গকিলোমিটার 
মোট জনসংখ্যা:৭ কোটি ৮৯ লাখ
পুরুষ (১৬ থেকে ৪৯ বছর):২ কোটি ৩০ লাখ
জিডিপি:৯৯০.২১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার 
মাথাপিছু আয়:১৩,০৫৩ মার্কিন ডলার

যুদ্ধ সরঞ্জাম
হস্তচালিত বড় কামান:২ হাজার ১০টি, স্বয়ংক্রিয় কামান: ৮৬৫টি, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘাঁটি: ২০০টি,
মর্টার(গোলা নিক্ষেপক): ৫ হাজার, ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী অস্ত্র: ১ হাজার ৪০০টি, বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র: ১ হাজার ৭০১টি, সামরিক যান: ১২ হাজার, কর্মরত সামরিক সদস্য: ৫ লাখ ৪৫ হাজার, রিজার্ভ ফোর্স: ৬ লাখ ৫০ হাজার, বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট: ৯২০ কোটি মার্কিন ডলার 

তাছাড়া ও ইরানের হাতে আছে ১ হাজার ৬১৩টি ট্যাঙ্ক। যেগুলোর মধ্যে একশ’টি স্থানীয়ভাবে তৈরি, যার নাম ‘জুলফিকার’। তাছাড়া একশ’টি পুরোনো মডেলের ব্রিটিশ ট্যাঙ্ক রয়েছে, যেগুলো ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের আগে সংগ্রহ করা।
পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি দেড়শ’টি এম-৬০এ-১ ট্যাঙ্ক, সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার তৈরি টি-৭২ মডেলের ৪৮০টি এবং টি-৫৪/ টি-৫৫ মডেলের ৫৪০টি ট্যাঙ্ক রয়েছে। ইসরায়েলের তুলনায় ট্যাঙ্ক কম থাকলেও ইরানের কামান রয়েছে অনেক বেশি। ২ হাজার ১০টি হস্তচালিত ও ৮৬৫টি স্বয়ংক্রিয় কামান রয়েছে ইরানের হাতে।

নৌশক্তি
নৌবাহিনীর মোট জাহাজ:২৬১টি, বাণিজ্যিক জাহাজ: ৭৪টি, প্রধান বন্দর: ৩টি, বিমানবাহী রণতরী: নাই
বড় রণতরী: ৩টি, ডুবোজাহাজ (সাবমেরিন): ১৯টি, দ্রুতগামী যুদ্ধজাহাজ (ফ্রিগেট): ৫টি, টহলদার সশস্ত্র ছোট জাহাজ: ১৯৮টি, জলে-স্থলে চলে এমন যান: ২৬টি
আছে। তাছাড়া ও ইরানের রয়েছে ২৩টি সাবমেরিন, যেগুলোর মধ্যে ১৫টি রাশিয়ার তৈরি।পারস্য উপসাগরের অগভীর পানির জন্য ইরানিরা নিজেরাই তৈরি করেছেন কয়েকটি সাবমেরিন। পাশাপাশি ইরানের রয়েছে ফ্রিগেট ও উভচর যান। রয়েছে কয়েক শতাধিক ক্ষুদ্র সাবমেরিন যা পশ্চিমাদের চোখের ঘুম হারাম করে দিতে পারে। 

ক্ষেপণাস্ত্র
স্বল্পপাল্লা: শাহাব-২ (১, ২৮০ কিমি) 
মাঝারিপাল্লা: ঘাদর -১ (১, ৬০০ কিমি) 
দূরপাল্লা: সাজ্জিল-২ (২, ৪০০ কিমি)

ইরানের সামরিক বাহিনীর চিত্র
ইরানের সামরিক বাহিনীতে রয়েছে সাড়ে ৩ লাখ সেনা। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতি কঠোর আনুগত্যশীল রেভ্যুলশনারি গার্ডে রয়েছেন ১ লাখ ২৫ হাজার সদস্য। ইরানের আইন অনুসারে, প্রত্যেক ইরানি পুরুষের বয়স ১৯ বছর পূর্ণ হলে সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে ১৮ মাস কাজ করতে হবে। এদের বাইরে ইরানের রয়েছে ৩৪ হাজার সদস্যের বিমান বাহিনী, ১৮ হাজার সদস্যের নৌবাহিনী, গ্রাউন্ড রেসিস্টেন্স ফোর্স এবং স্পেশাল অপারেশনের জন্য কুদস ফোর্স।

যাইহোক ইরান যে এই মুহূর্তে কোনও ফেলে দেওয়া শক্তি নয় তা পশ্চিমাদের ভিবিন্ন ভাবে বুঝে নিতে হবে। আর আমাদের তো ইরানের কাছে অনেক কিছু শিক্ষনীয় রয়েছে বলে আমি মনে করি। ইরানের জন্য শুভকামনা। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ