শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল/সরকারী প্রাইমারী স্কুল,একটি টিউশিনি এবং আমার ব্রয়লার মুরগী হয়ে ওঠার গল্প

আমার কাছে ইদানিং মনে হয় বাংলাদেশে দুই শ্রেণীর লোক বসবাস করে। এক শ্রেণী অনেক অনেক ধনী আরেক শ্রেণী ভীষন গরীব। ধনীর দুলালদের জন্য এদেশে ইউরোপ আমেরিকার মত যেমন রয়েছে গাড়ী, বার , জিম, ফাইভস্টার হোটেল, ওয়েল ডেকোরেটেড হোম, সুন্দর পার্কের সুবিধা তেমন রয়েছে পড়াশোনার জন্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল,প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি।
গরীবের জন্য রয়ে গেছে প্রাইমারী স্কুল আর সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়।
ইংলিশ মিডিয়ামের স্কুলগুলোতে দেখা যায় প্রায় ৯০ ভাগ ছেলেমেয়ে স্কুলে আসে দামী গাড়ীতে চড়ে, পড়নে কেতাদুরস্ত পোষাক, চলনে সাহেবী ভাব।এদের বেশীরভাগই দেখা যায় বিজনেসম্যানের ছেলেমেয়ে বা এমপি/মন্ত্রীদের ছেলেমেয়ে বাদবাকি ডক্টর, ইন্জিনিয়ার বা অন্যান্য পেশাজীবীদের ছেলেমেয়ে, এককথায় সমাজের অনেক উঁচু স্তর থেকেই এরা আসে।
বাংলাদেশে যদিও মনে হয় মধ্যবিত্ত বলে কিছু আর নেই , তারপরও নিম্নবিত্তদের চেয়ে একটু ভাল পর্যায়ে যারা আছে তারাই ধরে নেই মধ্যবিত্ত। এদের অনেকের বাচ্চারা কিন্টারগার্ডেন বা কমদামী ইংলিশ মিডিয়াম কিছু স্কুল রয়েছে সেগুলোতে অধ্যয়ন করছে। তবে হাইস্কুল পর্যায়ে সরকারী স্কুলে চলে যাওয়া ছাড়া এদের কোন উপায় থাকেনা।

আপনাদের মনে হয়ত প্রশ্ন আসছে যে আমি আসলে কি নিয়ে লিখতে যাচ্ছি বা চাচ্ছি।
আমার এ লেখার মূল বিষয় হলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যা একটা শিশুর বা মানুষের জীবনে জীবনভর প্রভাব ফেলে থাকে
আমার ইচ্ছা নিজের মত করে কিছু কথা বলা। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং স্বনামধন্য প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়া খুব কাছের কিছু মানুষকে দেখার অভিজ্ঞতা এবং কয়েকমাস ঢাকার একটি স্বনামধন্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে চাকরির অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শেয়ার করার। আমি জানি ব্লগে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ রয়েছেন, অনেকেই হয়ত এসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত, বা অনেকেই শিক্ষাবঞ্চিত আপনারা কেউই এটাকে অন্য কোনভাবে নেবেন না আশা করি। কাউকে হার্ট করার জন্য আমি এটা লিখছিনা।
যাইহোক, প্রথমেই আসে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কথা, এ নিয়ে কিছু কথা আমি এরই মধ্যে বলে ফেলেছি।
ইংলিশ মিডিয়ামের স্কুলগুলোতে দেখা যায় প্রায় ৯০ ভাগ ছেলেমেয়ে স্কুলে আসে দামী গাড়ীতে চড়ে, পড়নে কেতাদুরস্ত পোষাক, চলনে সাহেবী ভাব।এদের বেশীরভাগই দেখা যায় বিজনেসম্যানের ছেলেমেয়ে বা এমপি/মন্ত্রীদের ছেলেমেয়ে বাদবাকি ডক্টর, ইন্জিনিয়ার বা অন্যান্য পেশাজীবীদের ছেলেমেয়ে, এককথায় সমাজের অনেক উঁচু স্তর থেকেই এরা আসে।

এসব স্কুলের বেতন সাধারণত মাসে ৩৫০০ থেকে শুরু করে ৭০০০০হাজার টাকা পর্যন্ত আমি জানি। এমনকি এর চেয়ে বেশী টাকাও হয়ে থাকতে পারে। মাসিক বেতন ছাড়াও আছে ভর্তি ফি, বুক ফি, অমুক ফি তমুক ফি। ক্লাস পার্টির জন্য টাকা, ক্লাসমেট এবং টিচারদেরকে নানারকম গিফট না দিলে মান সম্মান ই থাকেনা।
যদি ভাবেন ভর্তি ফি ১০/২০ হাজার টাকা তাহলে ভূল করবেন। ঢাকার প্রথম সারির ২০/২৫ টা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে প্রতিটা ক্লাসে ওঠার সময় যে পরিমান ফি দিতে হয়, তার পরিমান শুনলে স্তব্ধ হয়ে যেতে হয়!

এখন কথা হচ্ছে এত টাকা খরচ করে যারা এসব স্কুলে পড়ছে তারা নিশ্চয়ই একেকটা ক্রিম তৈরী হচ্ছে বলেই সাধারনভাবে মনে আসার কথা। কিন্তু আসলেই কি তাই?
আমি নিজের চোখে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস যা দেখেছি তাতে কোনভাবেই মনে হয়না এরা ক্রিম। ক্রিম তো নয়ই বরং এরা মানুষ হিসেবেও যথাযথ গুনাগুন বহন করেনা অনেকে!
বাংলাদেশের একটা শ্রেণী(এলিট শ্রেণী) ডেসপারেট হওয়াটাকে স্মার্টনেস বলে বোধ করে ইদানিং বোধ হয়।এই ব্যাপারটা ছড়িয়ে পড়েছে বাচ্চাদের মাঝেও। যখন আমি শুনি ক্লাস সিক্স সেভেনে পড়া ছেলে বাবার ফ্রিজ থেকে আনা ওয়াইন আনে স্কুলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার জন্য, যখন শুনি ছেলে দিনদিন ইয়াবা সেবন করে যাচ্ছে হাজার হাজার টাকা খরচ করে, আর ছেলে কোথায় যাচ্ছে কি করছে বাবা মার খবরই নেই।
শুনলে কানে তালা লেগে যায় ক্লাস এইট নাইনের মেয়ে স্কুলে সেক্স করে প্রেগন্যান্ট হয়ে বসে আছে, আবার সেটার সমাধান ও করে ফেলছে তখন আমি কোনভাবেই মানতে পারিনা যে এরা আসলে সঠিকভাবে মানুষ হচ্ছে।
আমার এর আগে একটা লেখায় লিখেছিলাম ক্লাস টুয়ের একটা ছেলে কি করেছিল। ক্ল্পনা করা যায় যে ক্লাস টুয়ের একটা বাচ্চা সেক্স কি তা পর্যন্ত জানে?
একদিন স্কুলে গিয়ে শুনি ক্লাস টুয়ের কয়েকটা বাচ্চা ক্লাসের বাথরুমে খুব বাজে কথা লিখেছে। কি লিখেছে এমন ক্লাস টুয়ের বাচ্চা? আমি শুনে হতভম্ব লিখেছে আই ফাক উ। আই লাইক ফাকিং। আই ওয়ান্ট টু ফাক ..একজনের নাম। দুইটা ছেলে এমন লিখেছে। বাথরুম লক করা হয়।
এইগুলা গেলো একটা দিক, আরেকটা দিক এবং আসল দিক হচ্ছে পড়াশোনা। পড়াশোনার কি খবর?
কিছু ছেলেমেয়ে রিয়েলি ভেরী ব্রিলিয়ান্ট, আই মাস্ট সে।তারা ভালো করছে, করবে বা ভালো করে যাবে।
কিন্তু মেজরিটির কি অবস্হা?
মেজরিটি ছেলেমেয়ের পড়াশোনার অবস্হা আসলে এত করুন যে মায়া হয় ভাবতে এতগুলো টাকা এভাবে তাদের বাবা মা তাদের পেছনে খরচ করছে অথচ এই দেশে অনেক অনেক গরীব ছাত্র আছে যারা পড়তে চায় কিন্তু পড়তে পারেনা টাকার অভাবে, পারেনা দুমুঠো ভাতের অভাবে।

আমি মাঝে মাঝে এত খারাপ পরিস্হিতিতে পড়েছি যে মনে মনে শপথ করে ফেলেছি যাইহোক না কেনো আমি আর চাইনা কখনোই যেনো আমাকে বাংলাদেশের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে চাকরি করার প্রয়োজন হোক।

আমার সাথে এখানে অনেক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষক অমত করে বসতে পারেন।
আমি তারপরো মনে মনে হেসে বলবো সত্যিকারের পরিস্হিতি তো আমি জানি এটাও জানি কি যন্ত্রনা আপনারা ভোগ করে চাকরি করছেন।

বেশীরভাগ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নিয়ম হলো যাই হোক না কেনো,কোন বাচ্চাকেই আপনি জাস্ট এটা করোনা, বা বলোনা এ বাদে কিছু বলতে পারবেন না। ব্যাপারখানা এমন, সে যদি এমনও বলে বসে থাকে আই *** ইউ তারপরও না। আপনি কমপ্লেইন দিবেন অফিসে, একসময় অথরিটিই উলটা আপনাকে দোষ দিবে।
আপনি ক্লাসরুম কনট্রোল করতে জানেন না। দোষ আপনার!
শিক্ষক রা এখানে কি যন্ত্রনা সহ্য করে বোলে বোঝানো মুশকিল।
ক্লাসরুমে ঢুকবেন ছেলেরা হইহইরইরই আর মেয়েরা সমানে গোল হয়ে বসে গল্প করছে। আপনি চিৎকার করতে করতে আর পড়ার কথা, নেক্সট এক্সাম অমুক দিন নোট দিতে দিতে কাহিল হয়ে বের হবেন। ১ টি সেকেন্ড শান্তি কি জিনিস পাওয়া অসম্ভব। অথরিটি আপনাকেই চার্জ করবে কতটুকু পড়া হলো, কতটুকু হলোনা, কেনো হলোনা, বাচ্চারা কেনো এক্সামে ভালো করলোনা!
আমি একবার ক্লাসে এক ছেলেকে চুয়ইগাম খেতে দেখে ফেলে দিতে বলেছিলাম। সে চুয়ইগাম চুষতে চুষতে বলে ম্যাম আপনি কি করবেন চুয়িংগাম টা নিয়ে? আপনি চুষবেন!
এরা মনে করে কিছু কথা ইংরেজীতে বলতে পারলেই আর কিছু লাগেনা। এটাইতো স্মার্টনেস!
খাতা দেখা নিয়ে আছে বিশাল ঝামেলা। প্রতিটা খাতা দেখতে প্রচুর সময় লাগে হোক সে ক্লাস টেস্টের বা ফাইনালের। বাচ্চারা বা বাচ্চাদের গার্জিয়ানরা ফাইনালের খাতা দেখতে আসে। যেখানে ভূল থাকবে সেখানে আপনাকে এমন কায়দা করে মার্ক করতে হবে যেনো শুধরানোর বা নতুন কিছু লেখার সুযোগ না থাকে, কারন কিছু গার্জিয়ান সুযোগ বুঝে বাচ্চার ভূল ঠিক করে ফেলে, এবং আপনি এতগুলো বাচ্চা বা গার্জিয়ানের মাঝে কে বসে থেকে এমন একটা কাজ করছে খেয়ালই করতে পারবেননা। এবং এই কিছু গার্জিয়ান এত নিচু মানসিকতার যে তারা এটাকে উল্টো কমপ্লেইন বানায়। আমার বাচ্চা ত ঠিক লিখেছে। আপনি কেনো কেটেছেন বা মার্ক কেটেছেন!
এই অংশ পড়েও অনেকে রাগারাগি করবেন আমি জানি । আমি খুব ভালো জানি।কিন্তু যা সত্য আমি তাই বলেছি, এবং ঢালাও ভাবে সবার কথা বলিনি।কিছু গার্জিয়ানের বিহেভ সত্যি এত খারাপ যে আমি আর ইচ্ছা রাখিনি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতা করার ।আমি টাকার কাঙাল নই। শিক্ষকতা সত্যি খুব ভালো লাগতো যদি একবার শিক্ষকদের মানুষ বলে অনেকেই ভাবতেন।

খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার, স্বনামধন্য এসব স্কুলের ৯৯.৯৯ ভাগ ছাত্র কোনভাবেই বাংলাদেশে থাকতে চায়না, তাদের স্বপ্নযাত্রাটা বিদেশে। ইউরোপ, আমেরিকায়। তাঁদের চিন্তাভাবনায় ইউরোপ, আমেরিকা এমনভাবে মিশে আছে যেনো তারা এ মুহূর্তেও বাংলাদেশে নেই আছে সে স্বপ্নরাজ্যে!
হায়রে বাংলাদেশ! যে দেশের সবচেয়ে বেশী সম্পদ যারা ব্যবহার করছে তারাই এদেশে কখনো থাকতে চায় না।

ইচ্ছে ছিলো ইংরেজী মাধ্যম নিয়ে আরো অন্তত একটি পর্ব আসুক, কিন্তু আবার ভাবছি নিজের সময় স্বল্পতার ব্যাপারটা।
আজকে আমি তাই সরাসরি সরকারী স্কুলের প্রসঙ্গেই যেতে চাই।
সরকারী স্কুল আছে দু ধরনের এক হলো প্রাইমারী স্কুল, আরেকটা হলো হাই স্কুল।
প্রাইমারী স্কুল শ্রেণীবিন্যাস হলো ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ।
হাই স্কুল হলো ক্লাস থ্রী থেকে টেন পর্যন্ত।
আসুন একটু প্রাইমারী স্কুল, এর ভেতরের পরিস্হিতি, শিক্ষকদের পরিস্হিতি নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
দেশের একটা বিরাট সাধারন শ্রেণীগোস্ঠী প্রাইমারী স্কুলেই নিজের শিক্ষা জীবন শুরু করে।তাই খুবই গুরুত্বপূর্ন হলো এ শিক্ষাকালটা। সরকারী স্কুলযেহেতু তাই সরকারী অনুদানেই এ স্কুল চলে থাকে।
বাংলাদেশ সরকারের টার্গেট বাংলাদেশের প্রতিটা গ্রামে অন্তত একটা করে সরকারী প্রাইমারী স্কুল রাখা। যাতে কেউ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়।একসময় আমাদের দেশের মানুষ ব হু পথ পাড়ী দিয়ে পায়ে হেটে স্কুলে গেছে। এ সমস্যাটা এখণও অনেক জায়গায় রয়েছে।
সরকারী স্কুলে আমাদের দেশে সাধারনত বেতন নেয়া হয়না, বই ফ্রি।এটা সত্যি এ গরীব দেশে অনেক ভালো একটা দিক।
তবে সরকার পারেনি এখনও নানাবিধ সুবিধা বাচ্চাদের কাছে পৌছে দিতে, ক্লাসরুম স্বল্পতা, অনেক ক্ষেত্রে জীর্ন শীর্ন ভবন, শিক্ষক স্বল্পতা, ভালো শিক্ষকের অভাব, ভালো ছাত্রদের রয়েছে এ চাকরিতে চরম অনীহা,কারন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকদের নাকি সমাজে তেমন মান সম্মান নেই।
প্রথম কারন বোধহয় স্বল্প বেতন।
দ্বিতীয় কারন আমাদের সমাজ শিক্ষকদের সম্মান করতে শিখেনি।
তৃতীয় কারন, কিছু স্বার্থান্বেষী শিক্ষকদের জন্য আজকে বৃহৎ একটা শিক্ষক সুবিধা বঞ্চিত।এবং তাঁদের প্রাপ্য সম্মান হতে বঞ্চিত।
চতুর্থত, এবং প্রধানত, বিগত কোন সরকারেরই শিক্ষা ব্যব্স্হায় অর্থ বরাদ্দ করে চললেও শিক্ষার আধুনিকায়ন নিয়ে চিন্তিত কিনা সেব্যাপারে আমি সন্দিহান!
যে ক্লাসরুমে ৫ টা ধারনক্ষমতার বিপরীতে ১৫০ জন বসে সেখানে পড়াশোনার কতটুকু পরিবেশ আছে, তা নিয়ে আমি সত্যি সন্দিহান।
যে ছেলে সকালে এক মুঠো ভাত খেয়ে স্কুলে আসতে পারেনা, তার স্কুলে এসে পড়াশোনা করতে পারার মানসিক শক্তি নিয়ে সন্দিহান আমি।

আমাদের দেশের অনেক গ্রামে, থানা পর্যায়ে বা জেলা পর্যায়ে অনেক অবস্হা সম্পন্ন ব্যক্তি স্কুল, কলেজের জন্য একসময় জমি দান করেছেন, দিয়েছেন অনেক আর্থিক সাহায্য।


ভাবনার সুযোগ থেকে যায়, এতগুলো প্লট যদি সরকার বিনামূল্যে না পেতো তাহলে কতো যে হিমশিম খেতো!


যাইহোক, প্রাইমারী স্কুলে আমার মায়ের চাকরি প্রাপ্তি এবং তার পরবর্তী কিছু ঘটনা শেয়ার করি।

একসময় আম্মুর চিন্তা ছিলো যে সে চাকরি করবেনা, কিন্তু পরবর্তীতে সে চায় কোন কাজের সাথে যুক্ত হতে। সিভিল সার্ভিসের বয়স সীমা শেষ। তাই প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার পদে আবেদন করে।
পরীক্ষায় সারা দেশে প্রথম হয় আমার আম্মু।
চাকরি করবে বলেই ইচ্ছা ছিলো আম্মুর। কিন্তু আশেপাশের সবাই এতো বেশী নেগেটিভ কথা বলতে শুরু করে যে জয়েন করার এক মাসের মধ্যেই চাকরি সে ছাড়তে বাধ্য হয়।
আব্বু আম্মুকে বলে বসে তোমার কারনে আমি পারছিনা মানুষকে মুখ দেখাতে!
এখন আমি বুঝতে পারি অনেকেই হয়ত ছিঃ ছিঃ করে আমার বাবাকেও অতিষ্ট করেছিল!
অনেকেই আম্মুকে বলছিল ভাবী আপনার কি টাকা, খাওয়ার অভাব যে এই নিচু চাকরী টা আপনি করবেন?
অনেকে আবার বলছিল যে মেয়ে আইন ও বিচার অনার্স, মাস্টার্স সে কেনো এই প্রাইমারী স্কুলের চাকরি করবে?
মোটামুটি মানসিকভাবে অতিষ্ট হয়েই আম্মু চাকরি ছেড়ে দিলো।
একটা স্কুল হয়ত একজন ভালো শিক্ষককে হারালো।
এমনই হয়।
এমনই হচ্ছে।
আমার প্রশ্ন,আমার কথা আর কত আমরা এভাবে ভালো ছাত্রদের ভালো শিক্ষক হিসেবে হারাবো?
আমাদের সরকারগুলো কবে শিক্ষকদের দীনহীন অবস্হার দিকে নজর দিবেন?
আমরা কবে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে পারবো?
আমরা কবে থেকে মনে করবোনা যে শিক্ষকতা একটা নিচু পেশা?


যাইহোক, দুইটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করে আজকের পর্ব শেষ করবো।


এক, আম্মুর একমাসের শিক্ষক হিসেবে অভিজ্ঞতা।

আম্মু যেহেতু প্রধান শিক্ষক ছিলো, তাই আম্মু ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি পুরা স্কুল মেইনটেইনের দায়িত্বেও ছিল। যে স্কুলে জয়েন করেছিল সেখানে আম্মু স হ শিক্ষক ছিলো মোট তিনজন।
বাকি দুইজন ছিলেন স হকারী শিক্ষক। এমনিতেই শিক্ষক অপ্রতুলতার কারনে, গোটা স্কুলে হইচই লেগেই থাকতো, তা বাদেও দেখা যেতো বাকি দুইজন শিক্ষক প্রায়ই ক্লাস নিচ্ছেননা। সরকারী প্রতিষ্ঠান দেখার বলার তো কেউ নেই! আম্মু স্কুলে যাবার পর তাদের জোর করে ক্লাসে দিয়ে পাঠাতেন।
আম্মু বলতো যে, বুঝি তাঁরা হয়ত বিরক্ত হন। বিরক্ত হলেও অথরিটি স্ট্রিক্ট হলে ক্লাস চলে ঠিকি। কিন্তু বাংলাদেশের বেশীরভাগ স্কুলে কেনো কোন প্রতিস্থানেই বোধহয় অথরিটি স্ট্রিক্টনেস নিজেরাই মেনে চলতে চায়না।


দুই, এক সরকারী গার্লস হাই স্কুলের ঘটনা


বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এক ছোটবোন শেয়ার করে তার এক চরম বিড়ম্বনার কথা। শুনে অসম্ভব মেজাজ খারাপ হলেও কিছু করার থাকেনা আমার।

মেয়েটা তখন ক্লাস সিক্সে পড়ে। এসময় ছেলে বা মেয়ে সবারই শারীরিক কিছু পরিবর্তন ঘটে, এটা আমরা সবাই জানি।
আমরা জানি, এসময় একটা মেয়ে পদার্পন করে তার নারীত্বের জীবনে।
কিন্তু এতটুকু বয়সে একটা মেয়ে কতটুকুই বা জীবন সম্পর্কে জানে বা কতটুকুই বা সাবধানী সবাই হতে পারে!
মেয়েটি অনুভব করে তার কোন শারিরীক সমস্যা হচ্ছে। মেয়েটা প্রথমে তার ক্লাস টিচারের কাছে যায়, ক্লাস টিচার প্রধান শিক্ষিকার কাছে নিয়ে গলে প্রধান শিক্ষিকা মেয়েটিকে চরম গালমন্দ করে, বলে আগে থেকে বুঝিসনা? স্কুলে আসিস কেনো কিছু আগে থেকে বুঝিসনা তো?
যা বাড়ীতে যা!
মেয়েটি শারীরিক অসুস্হতার পাশাপাশি মানসিক এরেকটা ধাক্কা নিয়ে বাড়ীর পথে পা বাড়ায়।
অথচ প্রধান শিক্ষিকা তো এমনও বলতে পারতেন, মা তোমার সমস্যা হয়েছে যেহেতু, এখুনি বাড়ী যাও। আমার কোন স হ শিক্ষিকাকেও সাথে দিচ্ছি তোমার।
কি পারতোনা?

বাবা মা মেয়েকে মেয়েদের আলাদা স্কুলে দেন, মেয়ে হিসেবে বাড়তি কিছু সুবিধা পেতে। কিন্তু এই কি ব্যব হার পাওয়ার ছিল একটি মেয়ের তার প্রধান শিক্ষিকার কাছে?
প্রধান শিক্ষিকা কি একজন নারী হয়ে একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে পারে এই ব্যব হার করতে?
এরকম প্রধান শিক্ষিকাদেরই বলছি, আপনাদের জন্যই সব শিক্ষকদের খারাপ ব্যবহারের দায় বহন করতে হয়।
আপনাদের কারনেই অনেক সময় এদেশের শিক্ষা পদ্ধতির উপর থেকে অভিভাবকদের আস্হা হারিয়ে যায়।
সরকারী স্কুল গুলোতে না আছে একটা অতি প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো হাতের কাছে পাওয়ার মত ক্যান্টিন, না আছে ব্যবহার করার মত ওয়াসরুম, যেটা আসল, লেখাপড়ার পরিবেশই নেই!

আরো একটা আলোচনা করার মত আসল জিনিস বাদ গেলো তা হলো স্কুলের শিক্ষকদের কোচিং দৌড়াত্ব্য, এর ভালো মন্দ দিক এবং উচিৎ, অনুচিতের বিষয়টি।
আপাতত তোলা থাকলো, আজ এ পর্যন্তই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ