শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আর কত নিচে নামলে আমরা সভ্য হবো,এলিট হবো??

বাবার আদরের মেয়ে । কোনদিন কষ্ট বুঝিনি তেমন । স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বাবার সাধ্যমত টাকা দিয়েছে। বাবার টাকায় চলা মানুষ। টাকা যে কোন আজব জিনিস, আর এর কি অলীক শক্তি তা নিয়ে কখনও ভাবিনি। ভাবনার প্রয়োজনও হয়নি। এতটুকু জানতাম যে টাকার প্রয়োজনে মানুষ ঘুষ খায়। কিন্তু এই পয়সা, পাওয়ার, পজিশন মানুষের, শিক্ষিত মানুষের যে কত নৈতিক অবক্ষয় ঘটিয়েছে আর তা সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ছড়িয়েছে কিভাবে আমাদের অজান্তে আমরা জানিনা,ভাবিনা । জানলেও এটাই আমাদের কাছে স্বাভাবিক এখন।মানুষ মানুষকে টাকার জন্য খুন করে এটা এখন এই দেশে ডাল ভাত। কিনতু আমি বলছি মধ্যবিত্তের কথা...


কালকে এক পুরোনো বন্ধুর সাথে কথা বলতে গিয়ে কিছু কথায় অবাক হলাম সাথে বিমর্ষ হয়ে গেলাম। ভাবলাম চলমান কুরে কুরে খাওয়া সমাজে এখন এতো বিশ্রীভাবে মধ্যবিত্ত সমাজ গা এলিয়ে দিলো কেনো?

আজ আমরা বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে সবাই মিলে একসাথে উ লা লা লা দেখি, কিচ্ছু মনে করিনা।
আমার চাচাত ভাই বলছিলো ওর ইউনিভার্সিটিতে এক টিচার নাকি উলা লা তু হ্যায় মেরি ফ্যানটাসি গানটা গায়..! আমাকে আমার এক ছাত্র বলেছিল ম্যাডাম উলালা গানটা আছে কি মোবাইলে? !!!!
আচ্ছা ধমক দিয়েছিলাম।
চাচাত ভাই শুনে বলেছিল বুড়োদের পাশাপাশি এখনকার পিচ্চিগুলাও তো দেখি কামুক!!!
ওকেও দিলাম এক বকা!!
কি বলিস না বলিস বড় বোনের সামনে?
:|
যাইহোক আজকের লেখাটা আমার ঔ ছেলেবন্ধুর সাথে কিছু কথোপকথন দিয়ে শুরু করবো তারপর আমার একটা বাস্তব অভিঙ্গতা আর শেষে গুলশানের একটি স্বনামধন্য স্কুলে টিচার হিসেবে আমার আর একটি বাস্তবতার কাহিনী তুলে ধরবো। আর প্রশ্ন থাকবে আপনাদের কাছে:)
বন্ধুর সাথে কথোপকথন

কিরে তুই বিয়ে করবি কবে?

করবোনা,টাকা নাই:(
বয়সতো কম হয়নাই।
টাকা নেই বিয়ে করার বলছিতো।
তোর কত টাকা দরকার বিয়ে করতে?
মিনিমাম ৭০ লাখ।
৭০ লাখ!!!
কি বলিস?একমাত্র চোরাকারবারীরা এতো টাকা বিয়ের বাজেট করতে পারে!!এতো টাকায় কি করবি?
একটা ফ্ল্যাট কিনবো ৫০ লাখ টাকায়, আর একটা কার ২০ লাখ টাকায়।
বিয়ে করতে ফ্ল্যাট আর কার লাগবে ক্যানো?
এগুলো ছাড়া বিয়ে হচ্ছেনা সনি।কেউ মেয়ে দিতে চায় না।
বলিস কি মোমিন!! মাত্র ২৭/২৮ বছর বয়সে কার আর ফ্ল্যাট পাবি কেমনে তুই?
ঔতো যতদিন ওগুলো না হবে বিয়েও হবেনা।
এইটা কোন কথা? বিয়ে করতে গেলে কার,ফ্ল্যাট রেডি থাকতে হবে কেন? এগুলো তো সময়ের সাথে মানুষের হবে । সবকিছু কি মানুষ জন্মের সাথে সাথে পায় নাকি?
সনি মেয়ের বাবা মারা সেটা জানতে,বুঝতে চায়না। তারা এভরিথিং রেডি চায়। সনি এটাই এখন বাংলাদেশের কালচার।
চুপ থাক।কয়টা কালচারের বই পড়েছিস?
আমি গলাবাজি করতে থাকি...
হঠাত চুপসে গেলাম বন্ধুর এক কথায়..কারন ও বলেছিলো..
সনি তোর বাবা মা কি করেছিল মনে করে দেখ!!:(

সত্যিতো

কালচারের ডেফিনেশন কেউ জানুক আর না জানুক দ্যট ইজ কালচার অফ বাংলাদেশ নাউ:)

ফিরে যাই তাহলে পিছনে।


আমার জীবনের সেই বাস্তব ঘটনা



আমাকে বলা নেই কওয়া নেই আমার বাবা একেবারে এক ছেলে কে বাড়িতে নিয়ে হাজির।
আমি ইউনিভার্সিটির প্রেজেনটেশন বাদ দিয়ে এসেছি বাসায়!!!
আমার অনেক গুরুত্বপূর্ন কাজ ফেলে আমি বাসায় সেই ছেলের দেখা পেতে।
কে সে?
বুয়েট থেকে পাস। ইনজিনিয়ার(বিসিএস ক্যাডার)।
ইংল্যান্ড থেকে এম.এস করে এসেছেন। আবার ইংল্যান্ড এ যাবেন পি.এইচডি করতে।
সবচেয়ে বেশী আমার বাবার জান ধরকে গেছে যে কারনে(আনন্দে)
ছেলের ধোকার শহর ঢাকার উত্তরায় আছে ফ্ল্যাট, কার মালে মালামাল:)


আমার একটাই প্রশ্ন সরকারী চাকরী করে এসব এলো কোথা থেকে?


আমাকে বিনদুমাত্র জানানোর বা মতামত নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি কেউ। কারন আমি মানুষ না বোধয়। প্রত্যেকটা মানুষের বিয়ে নিয়ে কিছু স্বপ্ন থাকে থাকে নিজস্ব কিছু চিন্তার জগত। আর একটা ফ্ল্যাট বা কার শধু এইটুকু কি পরিমাপক একটা মানুষের ভালত্বের পরিমাপের?


মানুষের চিন্তাভাবনার ভিন্নতা থাকেই কিনতু কেউ যদি হয় উত্তর মেরু আর কেউ দক্ষিন মেরু সেই সংসার কতটা সুখের হতে পারে?


আমার কাছে মনে হতো বিয়ে হয় দুইটা মানুষের ভালোলাগা, বয়সের মিল, পরিবারের সমতা আছে কিনা ,দুইটা মানুষের সবরকম খোলাখুলি আলোচনার মাধ্যমে।


কিন্তু এখন দেখছি এই সমাজ বুঝে শুধু ফ্ল্যাট,টাকা,কার, প্লট।

আচ্ছা বাংলাদেশের সব লোক যদি চাইতো ঢাকায় তাদের ফ্ল্যাট থাকতে হবে, তাহলে ভাবুনতো এই ডাস্টবিনের নগরী তাইলে কই গিয়ে দাঁড়াতো?
মানুষের মুখে দুইটা ভালো বই নিয়ে কথা শুনিনা। দুইটা ভালো কাজের জন্য উতসাহো পাইনা । চোরাকারবারী, ঘুষ, ডাকাতি সবই আজ এই দেশে প্রশংসিত।
মানুষ জানতে চাইনা আপনি কত ঙ্গানের আলো, জানতে চায় মাল কিতনা হ্যায়?
মেয়ের বাবা ডাকাতির টাকা দিয়ে লাখ টাকার হীরার আংটি দিয়ে দরবার হলে বিয়ের দরবার করবে আর বিবাহ পরবর্তী মেয়ে করবে পরকীয়া , ছেলে অফিসে নিংরামী। কিন্তু কোই বাত নেহি। যতই নোংরামী করিনা কেনো আমরা এলিট ক্লাসে নাম লিখিয়েছি আমরা এলিট:)


গুলশানের নামকরা স্কুলের এলিট ক্লাসের বাচ্চাদের এলিট কান্ড


কয়েকমাস গুলশান ২ এর একটা অত্যন্ত নামকরা স্কুলে আমি ইংলিশ টিচার ছিলাম।

আই স্কুলের প্রিন্সিপাল এক ভদ্রমহিলা ,যিনি ক্লাস ১২ পর্যন্ত ছিলেন ইংল্যান্ডে।তারপর ঢাকা ইউনিভারসিটির ইংলিস থেকে মাস্টার্স তারপর দেশেই স্কুল চালাচ্ছেন। আমি উনাকে দেখছি সামনাসামনি একবার।কথাও হয়েছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি!!(উনার সাথে দেখা হলে সবাই অপ্রীতিকর ঘটনার ভয়ে থাকে)
কারন উনার মুখের ভাষা নাকি খুব খারাপ।উল্লেখ করছিনা ভাযাগুলো কারন অনেক কুতসিত অনেক পাঠক অনেক রকম প্রশ্ন করতে পারেন। তবে এই স্কুলটা চিনেনা ঢাকায় এমন মাণুয কম। এন্ড এই ভদ্রমহিলার কারবার সবাই জানেন কম, বেশী। সম্মান কি জিনিস টিচাররা একানে জানেন না। যে সমাজে একজন টিচার কাজের লোকের চেয়ে নীচু শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত সেই সমাজ আজ কোথায়,কোন বিপদের সন্ধিক্ষনে আছে আপনারা একটু বিবেচনা করবেন কি?
যাই হোক মূল ঘটনায় আসি।
একদিন স্কুলে গিয়ে শুনি ক্লাস টুয়ের কয়েকটা বাচ্চা ক্লাসের বাথরুমে খুব বাজে কথা লিখেছে।
কি লিখেছে এমন ক্লাস টুয়ের বাচ্চা?
আমি শুনে হতভম্ব
লিখেছে
আই ফাক উ।
আই লাইক ফাকিং। আই ওয়ান্ট টু ফাক ..একজনের নাম।
দুইটা ছেলে এমন লিখেছে

বাথরুম লক করা হয়।
ওরা নাহয় বাথরুমে লিখে ভুল করেছে।
কিন্তু ওরা অলটাইম এই ভাষা ব্যাবহার করে এটা আমরা টিচার রা জানি।
এই বাচ্চাদের আবার কিছু বলা যাবেনা।
কারন এদের এলিট বাবামা লক্ষ লক্ষ টাকা ঢেলে এদের এখানে পড়াচ্ছে।
দুইটা বাচ্চা কে একটা কিছু বললে ইনকাম কতো কমবে খবর আছে?
যে সমাজ দুইটা বইয়ের কদর করেনা। যে সমাজে আজ ভালোমানুষের মাপকাঠি ফ্ল্যাট।প্লট আর টাকা,ব্যভিচার, অথবা টিভি দেখা বলতে একমাত্র হিন্দি সিরিয়াল। আর বাচ্চাগুলো চলে গেছে এই পরযায়ে সেই সমাজের কাছে কি প্রত্যাশা আপনাদের?
এখনতো সবার প্রত্যাশা এলিট হওয়ার:)
দোষ কার? ঢাকার পরিবহন ব্যবস্হার?
অর্থনৈতিক মন্দার?
টিভি সিরিয়াল?
দেশের সরকার?
নাকি আমাদের মত একদল শিক্ষিত তরুন তরুনী যারা সমস্ত নোংরামি কে কোন না কোনভাবে সাপোর্ট দিচ্ছি।
কারন আমরা চুপচাপ আছি।
নিজের মতামত জানানোর মত বুদ্ধিও আমাদের লোপ পেয়ে গেছে।
আর মৌনতা তো সম্মতির লক্ষন তাইনা?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ