রবিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১২

বিচ্ছিন্ন



১। সময়-স্রোত

মনের আয়নায় টানানো ছবি
আমি বলছিনা সে ছবি অন্য কারো,
তোমার প্রেমিকা বা প্রিয়জন নয় সে
সে তোমারই ছবি।

যাকে ভালবাস সারাদিনক্ষণ,
দু পা আর মস্তিস্কের বলে
যোগ্য ও শ্রেষ্ঠতর জীব বলে
দাবী রাখো বারবার।

দিনে ক’টি শ্রেষ্ঠ কাজ করেছো 
বলতে পারো?
দিনে ক’কদম সুপথে হেঁটেছো
বলতে পারো?
বলতে পারো 
নিয়ত তোমার ছবির
উপযুক্ত মূল্যায়ন করছো?

যে সময়-স্রোত বয়ে গেছে 
যাক না 
বৃথা ভয় পেয়ে
মন খারাপ করে থেকো না
জলে না নেমে
কে কবে শিখেছে সাঁতার?

আমি জানি তুমি তা পারবে
তোমার প্রতিকৃতি রক্ষার যুদ্ধে 
জয়ী হতেই হবে
আজকে থেকেই শুরু করো
ঝাপিয়ে পড়ো
হাত পা ছোড়ো সঠিক তালে
আয়না সরিয়ে নাও
দেখো অন্যজনা তোমার 
প্রতিকৃতির অনুসরণ করছে।


২। ছুঁয়ে যাও জলবীন

ছুঁয়ে যাও মেঘদল
ছুঁয়ে যাও রোদজল
ছুঁয়ে ছুঁয়ে নিয়ে যাও
দুঃখ শতদল।

ছুঁয়ে যাও মেঘলাদিন
ছুঁয়ে যাও বর্ষাদিন
ছুঁয়ে ছুঁয়ে প্রাণ ভরাও
বাজাও জলবীন।


৩। তোমার চিঠি পেলেই

তোমার চিঠি পেলেই বুঝতে পারি
আজ বৃষ্টি হবে
সূর্য হারাবে মেঘের পেটে
এই মধ্যদুপুরেই 
এক অলীক ভ্রমণ হবে।

কাটাতার পেরিয়ে আমরা 
নেমে যাবো হিমবাড়ী
সাত সকালে চাদর গায়ে
দূর গায়ের কোন টঙ দোকানে
খেয়ে নেব ডালপুরী।

ধরো আমি এক স্বর্ণকার
ঝিঙে ফুল তোমার কান-দুল
ঘাসফুল তোমার নাকফুল হবে
তুমি চুমকি সেজে ভুল পথে পা মাড়াবে
আমি টেনে নিবো আমার ভবে।

দিন রাত 
রাত দিন ভুলে
আমরা এক মেরু ভ্রমণে মত্ত রবো
পায়রা বেশে সুখ দুখের কথা কবো।


৪। চলো খুঁজি

শায়িত ধরনী 
প্রস্ফুটিত জোছনা 
পদে পদে মায়ার কানন
কৃত্রিম ধার করা কাশবন
মেঘে মেঘে জোছনা চুরি
উড়ে যায় ইচ্ছে ঘুড়ি
গল্প করে চাঁদের বুড়ি
আমার পঁচিশ তোমার কুঁড়ি
চলো খুঁজি হারানো নুড়ি।


৫। কেউ না থাকলেও কারো কিছু যাবেনা। আসবে না। 

কেউ না থাকলেও কারো কিছু যাবেনা। আসবে না। পৃথিবী পৃথিবীর মত করে সূর্যের মোহে তার চারিধারে ঘুরবে। রাত আসবে। দিন আলোকিত হবে। কেউ কেউ সকালবেলা পূব জানালায় হেরে গলায় সারেগামাপা ধরবে। পাখি ডাকবে। ছেলে মেয়েরা খেলায় মাতবে। রাখালরা গরু তাড়িয়ে মাঠে যাবে। কৃষক ধান কাটার গান গাইবে। কৃষাণী চোখের জল নাকের জল এক করে রান্নায় ব্যস্ত থাকবে। মক্তবে ওস্তাদজী সুর করে কালেমা পাঠ শিখাবেন। ছায়া সুশীতল বট তলে ক্লান্ত পথিক জিরোবে। নদীতে পাল তুলে নৌকা চলবে। জেলেরা মাছ ধরবে। শীত আসবে। বর্ষা আসবে। ফাল্গুনে ফুল ফুটবে। প্রজাপতি, মৌমাছিরা ফুলে ফুলে উড়বে। দিন যাবে। আকাশে চাঁদ মুচকি হাসবে। মা হাসবে। খোকা নাচবে। পাড়া ঘুমাবে। পড়শী নিদারুণ দুঃখে কাঁদবে। কেউ প্রিয়াকে ভালোবেসে কাছে টানবে। পোষা বিড়াল বাচ্চা ফুটাবে। রাত গত হবে। দিন গত হবে। আমি চলে যাবো। বিস্মরণ হবো। আমার জানালার পাশের চালতা গাছে আগের মতই ফুল ফুটবে। ফল ধরবে। বসন্ত পাখিরা ফিরে আসবে। ডালে বসে সেই একই সুরে গাইবে। 


৬। এক অঞ্জলী জল

ঝরে পরা পাখির পালকের মত 
বাতাসের ঘূর্ণিপাকে উড়ন্ত
দূরন্ত ডায়েরীর পাতাটা
তুমি এখনো ছুঁয়েই দেখোনি।

ওটা ছিল আমার শেষ চিঠি
শেষ নিঃশ্বাস মাখা ছিল ওর গাঁয়ে
আমি মরে যাওয়ার আগে
পিপাসা কাতর ছিলাম
ব্যস্ত নগরীর 
গোপন কুটির নিবাসী বলে
কেউ জল নিয়ে আসেনি।

তুমি দিন রাত 
রাত দিন ভুলে
কত নির্বিঘ্নে এই কুটিরে আসো যাও
তোমার অবাধ যাত্রা পথে 
কত পদ্মপুকুর 
কত সরোবর 
জল টলমল
পিপাসা কাতর এক পথিক আমি
তোমার আগমনী বার্তার অপেক্ষায়
বসে আছি জপমালা হাতে
তুমি পথ ভুলে কভু এই পথে 
পদ মাড়াও না
এক অঞ্জলি জল দাওনা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ