সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১১

ইসলামী হুকুমাতের নমুনা

গ্রীষ্মের প্রখর দুপুরে একদিন লু-হাওয়া বইছিল। হযরত উমর রাযিঃ একাকী মরুভূমির দিকে যাচ্ছিলেন। হযরত উসমান রাযিঃ তাঁকে দূর থেকে দেখে চিনে নিলেন। নিকটে গিয়ে আওয়াজ দিলেন “হে আমিরুল মুমিনীন! এ প্রচন্ড গরম ও লু- হাওয়ার(মুরুভূমির গরম বালু ঝড়) মধ্যে আপনি কোথায় যাচ্ছেন” ? তিনি জবাব দিলেন, “বায়তুল মালের একটি উঠ উধাও হয়ে গেছে। সেটার তালাসে বের হয়েছি”। হযরত উসমান রাযিঃ বলেন, “ একজন খাদেমকে পাঠালে তো হত”। তিনি বলেন- কিয়ামতের দিন তো আমাকে প্রশ্ন করা হবে; খাদেমকে প্রশ্ন করা হবে না। হযরত উসমান রাযিঃ বললে, “একটু বিলম্ব করুন। তারপর না হয় বের হয়ে যাবেন। তখন গরমও একটু কমবে”। তিনি বলেন, “ জাহান্নামের আগুন এর চেয়েও গরম”।একথা বলে তিনি প্রখর রোদে মুরুভূমির প্রান্তরের দিকে ছুটে চললেন। এই ছিল তাদের রাজত্ব।
আরেকবার হযরত উমর রাযিঃ মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। খুতবায় তিনি বলেন, “শ্রবণ কর এবং মান্য কর ”। কিন্তু তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলে- “শ্রবণ কর না এবং মান্য কর না”।
হযরত উমর রাযিঃ জিজ্ঞেস করলেন- কেন? লোকটি বলল- “আপনি দুটি কাপড় পরে আছেন যা গণিমতের মাল হিসাবে পেরেছেন। কিন্তু প্রত্যেকের জন্য তো একটি করে কাপড় এসেছিল। আপনি দুটি কাপড় কোথায় পেলেন”?
হযরত উমর রাযিঃ বললেন-নিশ্চয়ই। তুমি ঠিকই বলেছ। হে আব্দুল্লাহ! (হযরত উমর রাযিঃ এর পুত্র) তুমি এর জবাব দিয়ে দাও। তখন হয়রত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযিঃ দাঁড়িয়ে বললেন- আজ আমিরুল মুমিনের পরার মত কোন কাপড় ছিল না। আমি আমার কাপড়টি তাঁকে ধার দিয়েছি। এতে করে তার দুটি কাপড় হয়েছে। একটি পরেছেন এবং অন্যটি তিনি গায়ে জড়িয়েছেন। এ জবাব শুনে অভিযোগকারী কাঁদতে লাগলো এবং বলল- আল্লাহ্‌ আপনাকে প্রতিদান দান করুন। আপনি এখন খুতবা দিন, আমরা শুনবো এবং আনুগত্য করবো।

এ ছিল ইসলামী হুকুমতের নমুনা। যেখানে ধনী- গরীব নির্বিশেষে সবাই রাষ্ট্র প্রধানকে জিজ্ঞাস করার অধিকার ছিল। সাহাবায়ে কিরামের জন্য খেলামতের দায়িত্ব সুখকর ছিল না। তাদের অবস্থা বর্তমান রাজা-বাদশাহদের মত ছিল না যে, তারা অহর্নিশ ভোগ- বিলাসে আর আমোদ ফুর্তিতে কাটাবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ