সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১১

আওয়ামী লীগের জোড়া হার

অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পর নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার প্রতিশ্র"তির প্রেক্ষাপটে নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের ভরাডুবি দৃশ্যত ক্ষমতাসীন দলের একযোগে দুই পরাজয়।

রাজধানী সংলগ্ন নগরীটির মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর অনতিক্রম্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকাকে সরকারের রাজনৈতিক হার বলে মনে করছেন অনেকে।

ক্ষমতাসীন জোটের সাংসদ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে সরকারের একটা বড় শিক্ষা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ যাকে পছন্দ করতেন তাকে মনোনয়ন না দিয়ে একজন সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজকে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সে সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল, এখন তারা বুঝতে পারছে।"

এ 'ভুল' থেকে আওয়ামী লীগের শিক্ষা নেয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে সেনা মোতায়েন নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে দৃশ্যত ক্ষুব্ধ প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা রোববার বলেছেন, এ বিষয়ে সরকারের ব্যাখ্যা চাইবে তারা। সরকারের তরফেও বিষয়টির কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত।

যদিও নাম না প্রকাশ করার শর্তে অনেক আওয়ামী লীগ নেতাই সরকারি সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন।

প্রার্থীদের দাবির মুখে নির্বাচন কমিশন শুক্রবার সকাল থেকে নির্বাচনী এলাকায় চার কোম্পানি সেনা মোতায়েনের নির্দেশনা দিলেও তা না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। ওইদিন দিনভর অনিশ্চয়তার পর রাতে সিইসি সাংবাদিকদের জানান, এ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হচ্ছে না।

সরকারের ব্যাখ্যা না পেয়ে এটিএম শামসুল হুদা রোববার ভোটগ্রহণের পর হতাশার সুরে সাংবাদিকদের বলেন, "সাংবিধানিকভাবে তারা দিতে বাধ্য।....তাদের উচিত ছিলো, আমাদের সঙ্গে কথা বলা।"

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান মনে করছেন, শেষ মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে বিষয়টি গোটা নির্বাচনকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিতে পারতো।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলি বলেন, "সাংবিধানিক ক্ষমতা বলেই নির্বাচন কমিশন নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন চেয়েছিল। কিন্তু সরকার সে ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া না দিয়ে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতাকে অবজ্ঞা করেছে।"

"আর এখানেই সবচেয়ে বড় ভয়। সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাইরে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে যে নির্বাচন করার পরিকল্পনা করেছে তা কতোটা বিশ্বাসযোগ্য হবে?", প্রশ্ন তার।

"কোনো নির্বাচনে কমিশন সেনাবাহিনী চাইলে সরকার যদি তা না দেয়, বিরোধীদল দল যদি সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন তোলে তাহলে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।"

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিজয়কে ইতিবাচক চোখে দেখছেন তিনি।

তিনি বলেন, "এই বিজয় বাংলাদেশের গণতন্ত্রের শুভ সূচনা বলে আমি মনে করি। এই নির্বাচন থেকে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি বিষয়ে ভালোভাবে শিক্ষা নিতে হবে। আর সেটি হচ্ছে- তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃত্বের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেয়া। এ নির্বাচনে তৃণমূল নেতৃত্ব জয়যুক্ত হয়েছে। আর পরাজয় হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের।"

এ প্রসঙ্গে আকবর আলি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যাকে মনোনয়ন দিয়েছিল নারায়ণগঞ্জের তৃণমূলের মানুষ তাকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। এ থেকে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বের আরও একটি শিক্ষা নিতে হবে। তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে হবে।

"আর এ কাজটি যদি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অনুসরণ করে তাহলে আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে", পর্যবেক্ষণ তার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ