সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১২

দীপু মনি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি দাবি করেছেন ভারত টিপাইমুখে প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু করেনি। তারা সেখানে শুধুই বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। গতকাল জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ দাবি করেন।

তিনি বলেন, ভারতের নাগাল্যান্ড ও মণিপুর রাজ্যের সীমান্তের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন বরাক নদের বিভিন্ন উপনদীর প্রবাহের কারণে বন্যা হয়। আর এতে আসামে প্রায়ই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ এলাকার বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্যই ভারত টিপাইমুখের উজানে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এ লক্ষ্যে তারা অনুসন্ধান চালাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের ১৯৭২ সালের প্রথম বৈঠকে আসামের কাচাড় ও বাংলাদেশের সিলেটের বন্যার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর উভয় দেশের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে একটি সমীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে এবং বরাকের উজানে ভুবন্দর সাইটে বাঁধ নির্মাণের পরামর্শ দেয়। সংসদে দীপু মনি বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল ২০০৯ সালের ২৯ জুলাই ভারতের প্রস্তাবিত টিপাইমুখ প্রকল্প পরিদর্শন করে। তারা দেশে ফিরে ওই এলাকায় বাঁধ নির্মাণসংক্রান্ত কোনো অবকাঠামো পড়েনি বলে প্রতিবেদন দেয়। উল্লেখ্য, সে সময় প্রতিনিধি দলটি প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য হেলিকপ্টার থেকে নামতে পারেনি। এ কে এম মাইদুল ইসলাম এমপির তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে চীন এখন পর্যন্ত ব্র?হ্মপুত্র নদের পানি প্রত্যাহারসংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব করেনি। চীন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যৌথ আলোচনার একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। আমরা আশা করি, চীনের মধ্যে বিদ্যমান পানিসংক্রান্ত বিষয়াদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করা হবে।

টিপাইমুখ বাঁধ ঠেকাতে মণিপুরে ছাত্র-জনতার শপথ : এদিকে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, যে কোনো মূল্যে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ প্রতিহত করার শপথ নিয়েছে ভারতের মণিপুর রাজ্যের ছাত্র সংগঠন 'হমার স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন'। তারা বরাক ও দুই ভাই নদীর মিলিত প্রবাহের ৫০০ মিটার ভাটিতে মণিপুর-মিজোরাম সীমান্তের কাছে ভারতের প্রস্তাবিত এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের টিপাইমুখ বহুমুখী জলবিদ্যুৎ প্রকল্প যে কোনো মূল্যে ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে। গ্রামবাসীও প্রকল্প এলাকায় কোনো কর্মকর্তাকে ঢুকতে না দিতে বদ্ধপরিকর।

মণিপুরের চুরাচাঁদপুর জেলার টিপাইমুখ গ্রামে শিলচর ও ঢাকার একদল সাংবাদিকের কাছে সংগঠনের নেতারা বলেন, এই গ্রাম থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দূরে প্রস্তাবিত ১৬২ দশমিক ৮০ মিটার উচ্চতার ওই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা সরকার এবং এর সমর্থকদের ওপর ক্ষুুব্ধ। তারা বুকের রক্ত দেবেন তবু তাদের গ্রামে ওই বাঁধ হতে দেবেন না। বাঁধের বিরোধিতার কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন, বাঁধ হলে হাজার হাজার আদিবাসী বাসস্থান এবং জীবিকা হারাবে। উল্লেখ্য, বরাক নদে প্রস্তাবিত টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি যৌথ উদ্যোগে সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নির্মাণ করবে এনএইচপিসি এবং সাতলুজ জলবিদ্যুৎ নিগম লি. (এসজেভিএনএল)। রাজ্যের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০০৮ সালের ১০ অক্টোবর টিপাইমুখ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এর জন্য বন পরিষ্কারের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে নয় হাজার ২১১ কোটি রুপি। শেষ হতে সাত বছর তিন মাস লেগে যেতে পারে।

কেএফসিকে আবারও জরিমানা

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)-এর অনুমোদন ছাড়াই এর সিল ব্যবহার করে পণ্য বিক্রির অভিযোগে 'কেএফসি'র চট্টগ্রাম আউটলেটকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বাংলানিউজ

নগরীর লালখানবাজারে অভিজাত ওই রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা প্রদানের নির্দেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রধান, জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট গৌতম বাড়ৈ। অভিযানের সময় বিএসটিআই ও র্যাব কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন (কেএফসি) নামে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে পরিচালনা করছে ট্রান্সকম গ্রুপ।

এর আগেও ঢাকা ও চট্টগ্রামে ট্রান্সকম পরিচালিত কেএফসির একাধিক আউটলেটকে জরিমানা গুনতে হয়েছে ভেজাল ও নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরির জন্য। ম্যাজিস্ট্রেট গৌতম বাড়ৈ জানান, 'কেএফসি যেসব পণ্য বিক্রি করছে এর অনেকটিরই বিএসটিআইর লাইসেন্স নেই। অথচ বার্গার বানের মোড়কে অবৈধভাবে বিএসটিআইর মার্ক ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বিএসটিআই (সংশোধিত) আইন-২০০৩ এর লঙ্ঘন।' বিএসটিআইর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এস এম ইসহাক আলী জানান, কেএফসি রেস্তোরাঁয় ঢুকে বিএসটিআইর মার্ক ব্যবহার হওয়া বেশ কিছু বার্গার বানের সন্ধান পাওয়া যায়, যেগুলো বিএসটিআই অনুমোদিত নয়। বিএসটিআইর কাছ থেকে কেএফসি এসব পণ্য বিক্রির জন্য কোনো অনুমোদনও নেয়নি। এ সময় কেএফসি কর্মকর্তাদের কাছে এসব পণ্যে বিএসটিআইর মার্ক ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তারাও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এর আগেও চট্টগ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের পক্ষ থেকে কেএফসির বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। এরপর ওই মামলায় জরিমানা প্রদানের আদেশ দিলে কেএফসি কর্মকর্তারা তা পরিশোধ করেন।

পুলিশের গুলিতে রাজশাহীতে নিহত ১,

রাজশাহীতে বিএনপির গণমিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম শফিকুল ইসলাম রেন্টু (৩০)। জামায়াত দাবি করেছে নিহত শফিকুল তাদের সংগঠনের কর্মী। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও দুজন। এছাড়া দুই ওসিসহ সাত পুলিশ সদস্য এবং বিএনপি ও জামায়াতের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করে।

এদিকে এ ঘটনার পর মহানগর বিএনপি গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে আজ রাজশাহী নগরীতে আধাবেলা হরতাল ডেকেছে। পাশাপাশি আরও তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা। এর মধ্যে ১ ফেব্রুয়ারি দোয়া দিবস এবং ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি শোক দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এদিকে শফিকুল ইসলাম রেন্টু কার গুলিতে মারা গেছেন তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। নিহতের পরিবার এবং জামায়াত ও বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে মহানগর পুলিশ কমিশনার এম ওবাইদুল্লাহ বলেছেন, পুলিশ কোনো গুলি করেনি। কার গুলিতে শফিকুল মারা গেছেন তা তদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। নিহত নগরীর বহরমপুর অচিনতলা এলাকার বাসিন্দা এবং ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকালে নগরের হেতেমখাঁ এলাকা থেকে জামায়াতের একটি মিছিল লোকনাথ স্কুলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ নিয়ে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশ শতাধিক টিয়ার শেল ও রাবার বুলেটসহ এক পর্যায়ে গুলি ছোড়ে। এ সময় বহরমপুরের অচিনতলার শফিকুল গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে জামায়াত কর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পুলিশ বাধা দিতে গেলে জামায়াত কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। সংঘর্ষে মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি শাহরিয়ার, ডিবির ওসি তোফাজ্জেল হোসেন খানসহ শতাধিক আহত হন।

শেয়ারবাজারে ৭৫ লাখ টাকা খুইয়ে নির্মম মৃত্যু!

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে সর্বস্ব হারিয়ে ক্ষোভে-হতাশায় আত্দহত্যা করলেন কাজী লিয়াকত আলী ওরফে যুবরাজ (৪০) নামে এক বিনিয়োগকারী। গতকাল সকালে রাজধানীর সূত্রাপুরের গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মিশন রোডের ভাড়া বাসায় সিলিংফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তিনি আত্দাহুতি দেন। স্বজনরা জানিয়েছেন, জমিজমা বিক্রি করে ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে প্রায় ৭৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি। গত এক বছরে শেয়ারবাজারে দরপতনে পুরো নিঃস্ব হয়ে যাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে তিনি আত্দহত্যার পথ বেছে নেন।

লিয়াকতের আত্দহত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে গতকাল দুপুরে রামকৃষ্ণ মিশন রোডের ৬৪/জে/৬ নম্বরের মৃতের বাসার সামনে কালো ব্যাজ ধারণ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সতীর্থ লিয়াকতকে হারিয়ে বিনিয়োগকারীদের অনেকেই চাপা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় ওই ভবনের পাঁচতলায় তার বাসায় গিয়ে দেখা যায় মাতম। একমাত্র মেয়ে মনীষাকে বুকে জড়িয়ে ডুকরে পড়ে কাঁদছিলেন স্ত্রী তাহমিনা। তাকে ঘিরে স্বজন ও প্রতিবেশীরা নানাভাবে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবেগে এ সময় বাসায় উপস্থিত অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে লিয়াকতের স্ত্রী শহীদ নবী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তাহমিনা বেগম সাথী বলেন, 'আমার তো সবই শেষ হয়ে গেল। এখন কথা বলে কী হবে। শেয়ারবাজারে ব্যবসা করতে গিয়ে আমার স্বামী মৃত্যুর পথ বেছে নিলেন। এখন আমাদের কী হবে।' তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার আর কতজনের এভাবে মৃত্যু দেখতে চায়। তিনি জানান, লিয়াকত আলাপচারিতায় প্রায় বলতেন, 'যদি বাজার ঘুরে দাঁড়ায় তাহলে হয় তো তার মেরুদণ্ড সোজা হবে। নইলে যে কি করব জানি না।' সাথী বলেন, সম্প্রতি লিয়াকত কারও সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলতেন না। শেয়ার ব্যবসার এসব নিয়ে বাসায় তিনি খোলামেলা কথাও বলতেন না। তবে রবিবার রাতে তিনি স্ত্রীকে ডেকে বলেছিলেন, 'শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে আমি ফতুর হয়ে গেছি। আমার বিনিয়োগের ৭৫ লাখ টাকা শেষ। উল্টো এতসব ঋণের বোঝা, ভাগ্যে কী আছে জানি না।' রাতের এসব কথার পর গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সবার অগোচরে লিয়াকত শয়নকক্ষে ঢুকে গলায় ফাঁস দেন। সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, স্বজনদের দাবি মতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারিয়ে লিয়াকত আত্দহত্যা করেছেন। এ ছাড়া অন্য কোনো কারণ জানা যায়নি। এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। লিয়াকতের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের আজিমনগরে। পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর রশীদ চৌধুরী জানান, লিয়াকত আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ হাউস ও জয়তু সিকিউরিটিজে লেনদেন করতেন। লিয়াকত তাদের সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। টানা দরপতনে তার পুঁজি শেষ হয়ে উল্টো আরও ঋণে জড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

বিএনপির ১৬ হাজার নেতা-কর্মীর নামে মামলা আর মামলা

চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরে পুলিশের গুলিতে বিএনপির চার কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় বিএনপির ডাকে ওই দুই জেলায় গতকাল শান্তিপূর্ণভাবে অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়েছে। হরতালকে কেন্দ্র করে জেলা দুটিতে কোনো পিকেটিং বা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে দুটি শহরেই পুলিশি টহল জোরদার ছিল বলে জানা গেছে। এদিকে বিএনপির চার কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ নিজেই বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছে। এ তিনটিসহ গত রবিবার বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ ১১টি মামলা করে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে বিরোধী দলের ১৬ সহস্রাধিক ব্যক্তিকে।

উল্লেখ্য, রবিবার জেলায় জেলায় বিএনপির গণমিছিলে পুলিশের বাধাদানকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরে বিএনপির চার কর্মী নিহত হন। এরা হলেন আবুল কাশেম (৫৫), রুবেল, আবুল মৃধা ও লিমন।

শান্তিপূর্ণ হরতাল : চাঁদপুরে বিএনপির গণমিছিলে পুলিশের হামলা ও গুলিতে দুই কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ডাকা হরতাল চলাকালে মাঠে খুব একটা তৎপরতা ছিল না বিএনপি নেতা-কর্মীদের। গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ডাকা এ হরতালে কোনো ধরনের মিছিল-সভা ও পিকেটিং করার সুযোগ পাননি নেতা-কর্মীরা। দুপুর ১২টায় হরতাল শেষ হওয়া পর্যন্ত শহরে কোনো প্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সকাল থেকে রাস্তাঘাট ছিল একবারেই ফাঁকা। চাঁদপুর থেকে দূরপাল্লার কোনো যানবাহনও ছেড়ে যায়নি। ট্রেন চলাচলও বন্ধ ছিল। হরতাল শেষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দ্রুত যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়। পিকেটিং না থাকলেও শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ টহল দিতে দেখা গেছে।

এদিকে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির ডাকে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়। সকাল থেকে জেলার পাঁচ উপজেলার কোথাও দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করেনি। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটেও কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। হরতাল চলাকালে শহরের বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। হরতালের সমর্থনে একদল নেতা-কর্মীকে জেলা শহরের দালালবাজার, মান্দারি, রায়পুর ও মিয়ার রাস্তায় মিছিল-পিকেটিং করতে দেখা যায়। এদিকে, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

১১ মামলায় আসামি ১৬ সহস াধিক : রবিবারের সহিংসতার ঘটনায় সাত জেলায় করা ১১ মামলায় ১৬ সহস াধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলার বাদী পুলিশ নিজেই।

চাঁদপুরে বিএনপির ছয় হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ দুটি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণমিছিল করতে গিয়ে পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় চাঁদপুর মডেল থানায় এ মামলা হয়েছে। রবিবার রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন বাদী হয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের ৬৯ নেতা-কর্মীকে।

লক্ষ্মীপুরে সাত হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা : লক্ষ্মীপুরে সাত হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। মামলাটি রবিবার রাতেই হয়েছে। এ পর্যন্ত মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এনামুল কামাল বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সাহাবউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে ১৮১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়াও অজ্ঞাত সাত হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে এতে। গ্রেফতার হওয়া তিনজন হলেন সদর উপজেলার চরমণ্ডল গ্রামের মাহমুদুন নবী সোহেল, টুমচরের মহিউদ্দিন ও বাঞ্ছানগর গ্রামের মো. জুয়েল।

দিনাজপুরে জোটের ডাকা গণমিছিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে এক হাজার ৫০০ নেতা-কর্মীর নামে মামলা করেছে পুলিশ। ২৯ জানুয়ারি মধ্যরাতে কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম সরকার বাদী হয়ে এ মামলা করেন। জামায়াতের আমির আনোয়ারুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামান উজ্জ্বল, কোতোয়ালি বিএনপি সাধারণ সম্পাদক, প্যানেল মেয়র মুরাদ হোসেন, শিবির শহর শাখার সভাপতি মশিউর রহমান রাজুসহ ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে দণ্ডবিধি ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩৩২/৩৩৩/৩৫৩/৩৪ ধারায় দেড় হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

২৯ জানুয়ারি বিএনপির গণমিছিলকে কেন্দ্র করে সারা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার ঘটনায় ৪২ জনের নামোল্লেখ করে পাঁচ শতাধিক বিএনপি কর্মীর বিরুদ্ধে নীলফামারী সদর থানায় মামলা করা হয়েছে। সদর থানার সাব ইন্সপেক্টর জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগ এনে ঘটনার রাতেই এ মামলা করেন (নম্বর-১৭) বলে জানা গেছে।

বরগুনা জেলা বিএনপি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। পৌরভবনে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে সদর উপজেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হালিমকে প্রধান আসামি করে পৌরসচিব রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ১১০ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে থানায় মামলা করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, পৌরভবনে হামলার সময় জেলা বিএনপি সভাপতি মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক এস এম নজরুল ইসলাম ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) আবদুল খালেক উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে বরগুনা থানার উপ-পরিদর্শক শামসুল আলম বাদী হয়ে জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক এস এম নজরুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। অপরদিকে বরগুনা থানার উপ-পরিদর্শক সফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপ-পরিদর্শক মনসুরের মোটরসাইকেলে অগি্নসংযোগ এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা করেন। বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন ফকির রবিবার রাতে তিনটি মামলার কথা স্বীকার করে জানান, এখন পর্যন্ত ১৩ জন আসামি গ্রেফতার হয়েছে।

কুড়িগ্রামে বিএনপির গণমিছিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দ্রুত বিচার আদালতে দুটি মামলা হয়েছে। এতে বিএনপি-জামায়াতের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল ভোরে দুই বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

গাড়ি ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ ও গণমিছিলে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের ৪৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গতকাল দুপুরে কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদুজ্জামান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

বাংলাদেশ কি ভারতের শ্বশুরবাড়ি হয়ে গেল নাকি ..?

Bangladesh has faced dozens of coups, failed or not, in its 40 years. But for an army spokesman to give details of one, on January 19th, was unusual’. -- `Politics in Bangladesh;
Turbulent House. The army claims to have thwarted a coup'.
ECONOMIST. 20 January 2012.
ব্যর্থ হোক আর না হোক, কয়েক ডজন অভ্যুত্থান গত চল্লিশ বছরে বাংলাদেশকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। তবে গত ১৯ জানুয়ারি তারিখে একজন সেনা মুখপাত্রের এক অভ্যুত্থানের বিস-ৃত বর্ণনা দেওয়া খুবই অস্বাভাবিক ব্যাপার (ইকোনমিস্ট, ২০ জানুয়ারি ২০১২)।

গত দিনের এই লেখার প্রথম কিসি-তে বোঝাতে চেয়েছি ‘বিশৃংখলা’ এবং ‘অভ্যুত্থান’ আক্ষরিক দিক থেকে সমার্থক নয়, এটা আমরা সহজেই বুঝি। কিন' সেটা গুর"ত্বপূর্ণ নয়। আসল গুর"ত্ব হ"েছ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর সংবিধান ও আইনের দিক থেকে উভয়ের পার্থক্যের তাৎপর্য। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদও বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, সেনাবাহিনীতে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টায় বেসামরিক কেউ জড়িত থাকলে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে। তিনি ঠিকই বলেছেন, ‘সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর পরে সংবিধান ও আদালতের বির"দ্ধে সংঘটিত এ ধরনের অপরাধ রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল’ (মানবজমিন, ২৯ জানুয়ারি ২০১২)। পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী অপরাধীরা সেই ক্ষেত্রে ‘সর্বো"চ দণ্ডে দণ্ডিত’ হবে, অর্থাৎ তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানের কিছু সময় পরে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস'া বাসস খবর জানায় যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত বলে মন-ব্য করেছেন। তিনি সম্ভবত এই সংবাদ সম্মেলনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। শনিবারও প্রধানমন্ত্রী আবার ষড়যন্ত্রের কথা বলেন। শুক্রবার রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং পরে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনিসহ মন্ত্রিসভার আরো অনেক সদস্য প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করবার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবি করতে থাকেন। অর্থাৎ সেনাসদরের তরফে সংবাদ সম্মেলনে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তারা সেই অভিযোগটাকেই বিএনপির বির"দ্ধে রাজনৈতিক প্রচারে ব্যবহার করতে শুর" করেন।
জানুয়ারির ২০ তারিখে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে দুটো ব্যাপার খোলাসা হয়ে যায়। তাদের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল : ‘উঠেছে খালেদা-পুত্রের নাম : ষড়যন্ত্র হলে হাসিনার পাশেই থাকবে দিল্লি’। স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেওয়া হোল, ‘শেখ হাসিনাকে সরানোর চেষ্টা হলে, তাকে সব রকম সাহায্য করার সিদ্ধান- নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বাংলাদেশ সরকারকেও সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে’। শেখ হাসিনার পক্ষে কোন দেশ থাকুক বা না থাকুক গণতান্ত্রিক ভাবে সরকার পরিবর্তনের যে নির্বাচনী নীতি রয়েছে তার বরখেলাফ করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানো হোলে বিশ্বের সব দেশই নিন্দা করবে। তা ছাড়া বাংলাদেশের জনগণ সেনা অভ্যুত্থান আদৌ সমর্থন করবে কি না সন্দেহ। কিন' আনন্দবাজার বলছে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাবার চেষ্টা হলে দিল্লি তাকে ‘সবরকম সাহায্য’ করবার সিদ্ধান- নিয়েছে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। তার মানে কি এই যে শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য দিল্লি সেনাবাহিনী পাঠাবে?
‘সবরকমের সাহায্য বলতে এটাও বোঝায়। দ্বিতীয় যে ব্যাপারটি আনন্দবাজার খোলাসা করে দিয়েছে সেটা হোল- বাংলাদেশে দিল্লির গোয়েন্দা নজরদারি তীক্ষ্ণ। মূলত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস'ার সহায়তাতেই সেনা অভ্যুত্থান নস্যাৎ করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই বিশৃংখলা বা অভ্যুত্থান নস্যাৎ করে দেবার ক্ষেত্রে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সহযোগিতা ছিল। তাদের ভাষায়, ‘সেনা অভ্যুত্থান ভেসে- দেওয়ার পিছনে ভারতের তরফ থেকেও গোয়েন্দা তথ্য ছিল’। বলা হয়েছে, ‘হিজবুত তাহরীর, জামাতে ইসলাম ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি একজোট হয়ে কাজ করছে। গোটা ঘটনার মাথা হিসেবে উঠে আসছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের নামও।’ এই অভিযোগ সত্য না মিথ্যা সেটা বিচার করা আমাদের কাজ নয়। তদন- চলছে, এই বিষয়ে তদনে-র স্বার্থে আমাদের নীরব থাকাই সমীচীন। কিন' আনন্দবাজারের এই তথ্যের গুর"ত্বপূর্ণ দিক হ"েছ- এই অভিযোগ শুধু বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের নয়। দুই দেশের গোয়েন্দাদেরই যৌথ তথ্য এটা। দুই দেশের গোয়েন্দারা যে একজোট হয়ে কাজ করছে, তারই ভিত্তিতে আনন্দবাজার এই খবর ছেপেছে। আনন্দবাজার পত্রিকার এই প্রতিবেদনের বির"দ্ধে সেনাসদর থেকে কোন প্রতিবাদ আমার চোখে পড়ে নি।
এবার যদি পুরা ঘটনা প্রকাশ হবার আগে ফিরে যাই তাহলে দেখব বিডিআর হত্যাকাণ্ড, সেনাবাহিনীর ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠা, দেশের সামগ্রিক পরিসি'তি এবং পেশাগত স্বার্থের ক্ষোভের কথা বাদ দিলে সেনাবাহিনীতে ভারতীয় গোয়েন্দাদের তৎপরতা বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে অসি'রতা ও ‘বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টির প্রধান কারণ। তা ছাড়া বাংলাদেশ সীমানে- ক্রমাগত বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতন তো আছেই। সেনাসদরের সংবাদ সম্মেলনের পরদিনই আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন পরিসি'তি অনুধাবন করতে আমাদের খুব কাজে আসে।
আমরা জানি, মেজর জিয়াউল হক নিজেকে ৪১ বিএমএ লং কোর্সের একজন অফিসার দাবি করে ফেসবুক ও ইন্টারনেটে বক্তব্য প্রকাশ করেছেন। ফেস বুক ও ইন্টারনেটে প্রচারিত মেজর জিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী তাঁকে একটি গোয়েন্দা সংস'ার সদস্যরা অপহরণ করেছিল। দুই দিন দুই রাত আটক রাখার পর কৌশলে সেখান থেকে তিনি পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। এটা তাঁর দাবি, কিন' ঘটনার জটিলতা এখান থেকেই শুর"। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে কোর্স শেষে বদলিকৃত রেজিমেন্টে যোগদানের পথে তিনি অপহৃত হন বলে তিনি তার লেখালিখিতে দাবি করেন। তুলে নেয়ার পর অজ্ঞাত স'ানে রেখে চোখ বেঁধে তাকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার প্রকাশিত বর্ণনা অনুযায়ী বাংলাদেশীদের পাশাপাশি পাশের একটি দেশের গোয়েন্দা সংস'ার সদস্যও উপসি'ত ছিল সেখানে। দোভাষীর মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পাশের রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস'ার সদস্যরা এমন কিছু তথ্য মেজর জিয়ার কাছে জানতে চেয়েছে, যা একটি স্বাধীন দেশের নিরাপত্তার জন্য অত্যন- সংবেদনশীল বলে মেজর জিয়া তাঁর জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন। তার প্রকাশিত লেখায় তিনি আরো বলেন, লে. কর্নেল যায়ীদ, লে. কর্নেল হাসিন ও লে. কর্নেল এহসান ইউসুফ নামে আরো তিন সেনা অফিসারকে গ্রেফতার দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
এই লেখা ইন্টারনেটে ছড়াতে থাকে। দৈনিক আমার দেশ ৩ জানুয়ারি তাদের একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঘটনাটির সত্যতা নির্ণয় করবার জন্য তারা সরাসরি ক্যান্টনমেন্টে ও মেজর জিয়ার লেখায় উল্লিখিত বাসার ঠিকানায় যাবার চেষ্টা করে বিফল হয়। গেটে বসিয়ে রেখে তাদের বলা হয়, সাংবাদিক প্রবেশ নিষেধ। জানানো হয়, ওপরের কর্তৃপক্ষের আগাম অনুমতি ছাড়া যাওয়া যাবে না। পত্রিকাটি ২ জানুয়ারি বিকাল ৩টা ৪৭ মিনিটে আন-ঃবাহিনী জনসংযোগ বিভাগেও মেজর জিয়ার অভিযোগগুলোর সত্যতা জানতে ফোন করে। তখন পত্রিকাটিকে জানানো হয়, আন-ঃবাহিনী জনসংযোগ বিভাগ থেকে কিছুই বলা যাবে না। সেনা সদর দফতর বা সামরিক গোয়েন্দা পরিদফতর মেজর জিয়ার বিষয় জানাতে পারবে বলে জানানো হয়।
সেনা অফিসারদের বিনা বিচারে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে বন্দি করে রাখা প্রসঙ্গে দৈনিক আমার দেশ সাবেক সেনাকর্মকর্তা এবং এখন সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেনের কাছে তাঁর মতামতও জানতে চায়। তিনি আমার দেশকে বলেন, ‘১৫০ দিনের বেশি সময় ধরে লে. কর্নেল পদমর্যাদার দুই অফিসার আটক আছেন বলে তিনিও জানতে পেরেছেন। তিনি আরো বলেন, যতটুকু জানি এদের একজন গত ৯ জুলাই ও আরেকজন ১২ জুলাই কর্মরত অবস'ায় গ্রেফতার হন। তবে তাদের বির"দ্ধে কোনো বিচার শুর" হয়নি। সেনা বিধান অনুযায়ী আইনি প্রক্রিয়া এবং সেই বিধান ও প্রক্রিয়ার অধীনে প্রযোজ্য মানবাধিকার প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য হ"েছ, ১৯৫২ সালের আর্মি অ্যাক্টের ৭৫ ধারা অনুযায়ী, অভিযোগের ভিত্তিতে সেনা অফিসারদের গ্রেফতার করা যায়। এ ধারায়ই বলা আছে, গ্রেফতারের ৮ দিনের ভেতর কোর্টমার্শাল গঠন করতে হবে। ৮ দিনের মধ্যে কোর্টমার্শাল গঠন করা সম্ভব না হলে উপযুক্ত কারণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে আইনে। তিনি বলেন, আইনেই বলা আছে, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে কোর্টমার্শাল গঠন করতে না পারলে আটক ব্যক্তিদের মুক্ত করে দিতে হবে। ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন বলেন, ১৫০ দিন পার হয়ে যাওয়ার পরও তাদের বির"দ্ধে কোর্টমার্শাল গঠন করা সম্ভব হয়নি। এতে অনুমান করা যায় প্রমাণ করার মতো কোনো অভিযোগ এ অফিসারদের বির"দ্ধে নেই। প্রমাণের মতো অভিযোগ থাকলে কোর্ট মার্শাল গঠন হয়ে যেত।’
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা সত্যতা নির্ণয়ের এই অভিজ্ঞতা এবং সেনা অফিসারদের গ্রেফতারের পর ১৫০ দিন পেরিয়ে যাবার পরেও কোন কোর্টমার্শাল গঠিত না হওয়া সম্পর্কে ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেনের বক্তব্য প্রতিবেদন হিশাবে প্রকাশ করার পরই গত ৪ জানুয়ারি আন-ঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় যে, ই-মেইলে অপহরণের অভিযোগকারী মেজর জিয়ার বির"দ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এর আগে তারা কিছু বলেন নি। ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এমআইএসটি থেকে কোর্স সম্পন্ন শেষে বদলিকৃত ইউনিট ৩ই বেঙ্গলে যোগদানের জন্য মেজর জিয়াকে যাবার আদেশ দেয়া হয়। পরে সেনা শৃঙ্খলাপরিপন'ী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে তখন সদর দফতর লজিস্টিক এরিয়া, ঢাকা সেনানিবাসে সংযুক্তি আদেশ প্রদান করা হয়। এই আদেশ অনুযায়ী মেজর জিয়া সদর দফতর লজিস্টিক এরিয়ায় যোগদান না করে পলাতক রয়েছেন; এই কারণেই সেনা আইন অনুযায়ী এরই মধ্যে তার বির"দ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, সেনাবাহিনীতে কর্মরত লে. কর্নেল যায়ীদ ও লে. কর্নেল হাসিনকেও শৃঙ্খলাপরিপন'ী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে সেনা আইনের সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পরপরই গত ১১ জুলাই ২০১১ তারিখে একটি উ"চপর্যায়ের তদন- আদালত গঠন করা হয়। আদালত সুষ্ঠু তদন- শেষে তাঁদের বক্তব্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করেন এবং উক্ত বক্তব্যের ভিত্তিতে লে. কর্নেল হাসিনের বির"দ্ধে ১১ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে একটি ফিল্ড জেনারেল কোর্টমার্শাল গঠন করা হয়; তার বিচারকার্যক্রম চলছে। এই বক্তব্যে দেখা যায়, আট দিনের মধ্যে কোর্টমার্শাল গঠনের বিধান পালিত হয়েছে কি না সেই মৌলিক প্রশ্নটা উহ্য। এই বিধান পালিত না হলেও আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পত্রিকায় উল্লিখিত ‘অভিযুক্ত অফিসারদের বির"দ্ধে কোনরূপ বিচারকার্যক্রম শুর" হয়নি এবং ১৫০ দিন পার হওয়ার পরও তাদের বির"দ্ধে কোর্টমার্শাল গঠন করা সম্ভব হয়নি’ মর্মে প্রকাশিত বক্তব্য সঠিক নয়।
এরপর গত ৫ জানুয়ারি দৈনিক আমার দেশে আন-ঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের বরাত দিয়ে ‘মেজর জিয়ার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে’ শীর্ষক আইএসপিআরের বক্তব্যের একাংশের প্রতিবাদ জানিয়েছেন লে. কর্নেল যায়ীদের ছোট ভাই আ. আ. জাবিদ। এক প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, তার ভাই যায়ীদ পিএসসি, এমডিএস, এসএ, বিএসবিএএ (এমআইএস, টি.আইবিএ)-কে গত ১০ জুলাই ২০১১ তারিখে ছুটিতে থাকা অবস'ায় পিঠে অস্ত্র ঠেকিয়ে ঢাকা সেনানিবাসের সরকারি বাসভবন থেকে তুলে নেয়া হয়। তিন-চার দিন পর পরিবারের লোকজন বিষয়টি জানতে পারেন। সেই থেকে প্রায় ছয় মাস বা ১৮০ দিন অতিবাহিত হয়েছে। অদ্যাবধি তার ভাইয়ের বির"দ্ধে কোনো চার্জ বা অভিযোগ আনতে পারে নাই। তাই যায়ীদ সম্পর্কে আইএসপিআরের বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য ও বিভ্রানি-মূলক। আ. আ. জাবিদ তার প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলেন, সামরিক কর্মকর্তাকে তদনে-র জন্য আটক করার প্রয়োজন পড়ে না। তাকে শুধুমাত্র লগ এরিয়াতে অ্যাটাচমেন্ট করলেই হয়। একটি কক্ষে বহুসংখ্যক সৈনিক দ্বারা তালাবদ্ধ অবস'ায় কেন লে. কর্নেল যায়ীদকে আটক রাখা হয়েছে- এর ব্যাখ্যা চান তিনি।
পত্রিকায় আমি যেভাবে পড়েছি সেভাবেই বিষয়গুলো হাজির করছি। আমরা দেখছি পুরা ঘটনাঘটনের মধ্যে মূল বিষয় হ"েছ- এক. সেনাবাহিনীতে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সক্রিয় ভূমিকা আনন্দবাজার পত্রিকার বক্তব্যের সঙ্গে যার কোন অসঙ্গতি নাই; দুই. সেনা আইনের অধীনে সৈনিকদের সামরিক আদালতে সুবিচার পাবার অধিকার- যা মানবাধিকারের প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত এবং তিন. বিচার ছাড়া আটক রাখা এবং আটক রাখার পরেও অভিযুক্তের আত্মীয়-স্বজনদের তা না জানতে দেওয়া বা অস্বীকার করা।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে ভারতীয় গোয়েন্দাদের ভূমিকা শুধু সেনাবাহিনীর উদ্বেগের বিষয় নয়, বাংলাদেশের যেকোন নাগরিকেরই উৎকণ্ঠার বিষয়। গুজব মাত্রই সেনাবাহিনীর জন্য ক্ষতিকর। দৈনিক আমার দেশ সকল প্রকার গুজব নিরসন করবার জন্যই আসলে সেনাবাহিনীতে কী ঘটছে তা সেনাবাহিনীর কাছেই জানতে চেয়েছে। কিন' নাগরিকদের উৎকণ্ঠা নিরসন করবার জন্য দৈনিক আমার দেশের ভূমিকাকে দমন করবার জন্য প্রথমে যে কাজটি করা হয় সেটা হোল- মামলা। গত ৮ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি খর্ব ও সম্মানহানির অভিযোগ এনে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, প্রকাশক আলহাজ মো: হাসমত আলী ও বিশেষ প্রতিনিধির বির"দ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন একজন সাবেক সেনাকর্মকর্তা মেজর (অব:) শাহ আলম তালুকদার। মামলায় তার অভিযোগ হ"েছ- ৩ জানুয়ারি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ‘মেজর জিয়াকে নিয়ে রহস্য’ শিরোনামের সংবাদে বলা হয়েছে, মেজর জিয়া সম্পর্কে জানতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ বিভাগে যোগাযোগ করা হলে দৈনিক আমার দেশকে বলা হয়, পরিচালক সাহেব মিটিংয়ে আছেন। মেজর জিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে বলা হয়, ‘মেজর জিয়া সম্পর্কে কোন তথ্য দেয়া যাবে না’। সাবেক এই সেনাকর্মকর্তার দাবি হ"েছ- দৈনিক আমার দেশের এই সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও মানহানিকর। প্রকৃতপক্ষে পত্রিকা অফিস থেকে জানতে চাইলে সেনা কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘নিয়ম মোতাবেক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আনুষঙ্গিক দাপ্তরিক কার্য সম্পাদন অনে- অফিসিয়ালি যাবতীয় তথ্য জানানো হবে। মেজর জিয়া সংশ্লিষ্ট কর্মস'লে যোগদান না করায় তাঁর বির"দ্ধে সেনা আইনে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে’। খেয়াল রাখতে হবে দৈনিক আমার দেশের বির"দ্ধে মামলা সেনা কর্তৃপক্ষ করছে না, করছে একজন সাবেক সেনা অফিসার। কিন' তিনি জানেন সেনা কর্তৃপক্ষ দৈনিক আমার দেশকে কী বলেছে। এখন অভিযোগ হ"েছ যে- বিবাদিরা তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে আমার দেশ তা উল্লেখ করায় সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি প্রশ্নের সম্মুখীন এবং এতে বাদি একজন সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা হওয়ায় তার মর্যাদা/সম্মানহানি হয়েছে।
সেনা সদরের তরফে যে সংবাদ সম্মেলন হয় সেখানে দৈনিক আমার দেশের বির"দ্ধে এই মামলার প্রসঙ্গ ওঠে নি। তবে সংবাদ সম্মেলনে ৩ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে দৈনিক আমার দেশের প্রতিবেদনটিকে ‘হলুদ সাংবাদিকতার অংশ’ হিশাবে অভিযুক্ত করা হয়। দৈনিক আমার দেশ অবশ্য তার পরদিনই এই অভিযোগের জবাব দেয়। এরপর সেনা সদর থেকে কোন উত্তর এসেছে বলে আমি দেখি নি।
এই তথ্যগুলো পাঠকদের আবার বলবার কারণ হ"েছ- সেনাবাহিনীর তরফে যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা নাগরিকদের উৎকণ্ঠার মূল জায়গা এবং সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্রের মৌলিক প্রশ্নগুলোকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে পুরা ব্যাপারটিকেই ‘প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের ইন্ধনে অবসরপ্রাপ্ত এবং সেনাবাহিনীতে কর্মরত কতিপয় ধর্মান্ধ কর্মকর্তা কর্তৃক অন্যান্যদের ধর্মান্ধতাকে পুঁজি করে দুরভিসন্ধিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে বিশঙ্খলা সৃষ্টি করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করার একটি বিফল প্রয়াস’ হিশাবে হাজির করেছেন। পুরা ব্যাপারটি আরো প্রশ্নবোধক হয়ে পড়েছে ইকোনমিস্টকে দেওয়া সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টায় অভিযুক্ত বেসামরিক ব্যক্তি প্রবাসী ইশরাক আহমেদের সাক্ষাৎকারে। ইশরাক আহমেদ ইকোনমিস্টকে বলেছেন- তিনি ধর্মান্ধ মৌলবাদী নন। ধর্মীয় মৌলবাদের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। দায়িত্বের সঙ্গে নিজের দেশকে স্বাধীন করতে তিনি লড়েছেন। তার বাড়ি থেকে মদ, ব্র্যান্ডি ও হুইস্কি জব্দ করা হয়েছে। কোনো ধরনের অস্ত্র নয়। ইকোনমিস্ট বলছে- ইশরাক অনেক কথাই বলেছেন। তবে খুবই সম্ভব ও সুনির্দিষ্ট যে তথ্য তিনি জানিয়েছেন সেটা হোল- ভারতীয় গোয়েন্দা সংস'া রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইংয়ের সদস্যরা বাংলাদেশে তৎপর। এই সংস'ার সদস্যরা প্রায় দুই বছর থেকে বাংলাদেশী গোয়েন্দা সংস'ার কার্যালয়ে অফিস করছে এবং সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগব্যবস'াও কার্যকর রয়েছে। ভারতীয়রা বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক নজরদারি চালায় এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর থেকে তাদের সন্দেহভাজনদের অপহরণ করে। ইশরাক আহমেদ আরো বলেছেন, সরকার সেনা অভ্যুত্থানের কথা বললেও কোনো ট্রুপস ও গান মুভমেন্ট দেখাতে পারে নি।
ইকোনমিস্ট এই সাক্ষাৎকার ছাপিয়ে জানান দিতে চেয়েছে ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ সেনা সদর তুলেছে এবং ভারতের আনন্দবাজারের মতো পত্রিকা রটনা করে যা"েছ তার ভিত্তি দুর্বল। এই দিকটা প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে। আসলে কী ঘটেছে তা প্রকাশ ও প্রমাণের দায় সরকারের। আমরা আশা করব সেনাবাহিনী দলীয় স্বার্থে ব্যবহৃত হবে না। আমরা চাই বা না চাই এটা পরিষ্কার যে বাস-ব কারণেই দিল্লির আগ্রাসন ও আধিপত্যের বিরোধিতা বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান নির্ণায়ক হয়ে উঠতে বাধ্য। এর জন্য ক্ষমতাসীন সরকারের ভারত নীতিই দায়ী। মৌলবাদ বা ধর্মান্ধ জুজুর ভয় দেখিয়ে বাংলাদেশের মর্যাদা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নকে দাবিয়ে রাখা যাবে না।

রাজনৈতিক দলগুলো কি গনতান্ত্রিক অধিকারের সোল এজেন্সি নিয়েছে?

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো খুবই গনতান্ত্রিক অধিকার সচেতন - আর সেই সাথে একদল বুদ্ধিজীবিও সেই রকমের ধারনা প্রচার করে যে রাস্তায় মিছিল মিটিং করে সাধারন মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা আর মাইক লাগিয়ে উচ্চস্বরে চিৎকার করে শব্দদুষন তৈরী করার অধিকার রাজনৈতিকদলগুলো গনতান্ত্রিক অধিকার হিসাবে পেয়েছে।

আসলে কি তা ঠিক?


আমার একটা গনতান্ত্রিক দেশে বসবাসের সুবাদে যা দেখছি - তাতে এইটুকু বলতে পারি - বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে যা করে - তা পাবলিক নুইসেন্স এবং কোনকোনটা রীতিমতো ক্রাইম।


যেমন ধরা যাক - কোন দল যদি সমাবেশ করতে চায় - তাকে এখানে পুলিশের এবং সিটির অনুমোদন নিতে হবে। পুলিশ যদি তাদের নিয়মনীতির মধ্যে থাকে তবে ফ্রী পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা দেবে - নতুবা একটা বিল ধরিয়ে দেবে - কতজন পুলিশ কতঘন্টা তাদের নিরাপত্তার জন্যে কাজ করবে তার বিস্তারিত ব্যয় দেখিয়ে বিল পরিশোধ করলে তারপর পরমিশন। এখানে বুঝার বিষয় হলো পুলিশের ব্যয় বহন করে সরকার আর সরকারকে জনগনের ট্যাক্স থেকে তা খরচ করতে হয় বলে প্রতিটি পেনির সঠিক হিসাব রাখতে হয়। আর সিটি একটা নির্দিষ্ট পরিমান জামানত রাখবে যাতে মিটিং এরপর মিটিং এর স্থান পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। নতুবা জামানত থেকে টাকা কেঁটে রেখে দেওয়া হবে।


আর রাস্তা বন্ধ করে কোন অনুষ্ঠানের অনুমোদন পাওয়া খুবই কঠিন।


গতকাল ঢাকায় দেখলাম দুই দল মিটিং মিছিল করলো - তারা রাস্তা বন্ধ করে যান চলাচল বন্ধ করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যহত করলো - রাস্তা নোংরা করলো - আর হাজার দশেক পুলিশ তাদের নিরাপত্তা দিলো।


একটা গরীব দেশের জন্যে এই বিরাট অংকের ব্যয় ভার বহন না করে - রেডিও টিভিতে জাতির উদ্দেশ্যে দুই দল প্রচার চালাতে পারতো। তাতে টিভিগুলো কি আয় করতো। অন্যদিকে নিরাপত্তার জন্যে ব্যয়, রাস্তা পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যয় আর যানচলাচলের বাঁধার জন্যে যে ক্ষতি হলো তার সকল দায় ভার জনগনের উপরে চাপলো। কিন্তু সাধারন জনগন ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি সংসদে পাঠিয়েছে - যাতে সেখানে তারা সকল বিষয়ে আলোচনা করে।


রাজনৈতিক দলগুলো এই বিপুল ব্যয় রাষ্ট্র কেন বহন করবে?


এখানেই প্রশ্ন আসে এইটা কোন ধরনের গনতান্ত্রিক অধিকার - জনগনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত করার দায়ভার জনগনের উপরেই চাপনোর যে কর্মকান্ড কোন ভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়।


গনতান্ত্রিক অধিকার প্রতিটি নাগরিকের - প্রতিটি নাগরিকের অধিকার হলো নির্বিঘ্নে নিরাপদে রাস্তায় চলাচল করা - আর তার চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করে যারা তাদের অন্যায় কাজকে জনগনের ট্যাক্সের পয়সায় ব্যয়ভার বহন করা অন্যায়।


সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মুল হলো সংসদ আর দলগুলোর জন্যে নিজস্ব ফোরাম। নিজেদের কাজ মূল্যায়নের জন্যে এরা অডিটরিয়াম ভাড়া করে যত ইচ্ছা বত্তৃতা করুক - তার জন্যে জনগনের সমস্যা হয় না। আর জনগনকে তাদের বক্তব্য জানানোর জন্যে আছে মিডিয়া - যেখানে বিজ্ঞাপন দিয়ে - সংবাদ সন্মেলন করে যত ইচ্ছা যুক্তিতর্ক তুলে ধরতে পারেন। কিন্তু জনগন ভোট দিয়ে একটা দলকে নির্বাচিত করে সরকার গঠন করতে দিয়েছে বলে মিছিল মিটিং আর জ্বালাও পোড়াও করে জনগনকে শাস্তি দেওয়া কোন ভাবেই গনতান্ত্রিক অধিকার হতে পারে না।

মরার মিছিল

ফুটুস ফাটুস মরছে মানুষ গোলন্দাজের গুলি খেয়ে
এই দেশেতে আজীবনই মরবে আরো হোচট খেয়ে।
নিয়ম নীতি ভরকে গেছে আলুর বস্তা এই জনতা
আছাড় খাবে রোজই তারা চলছে এটার প্রবনতা।
আজকে মরে দুর্ঘটনায় কালকে মহা গেন্জামে
পরশু দেখো গুম করা লাশ পরে আছে ডান বামে।
মৃত্যু এখন হাতের মোয়া চাইলে তারে ছোঁয়া যায়
অহরহ মরছে মানুষ চিপা খোলা সব জা‘গায়।
দেশে কি ভাই জনগনের কদর গেলো অযথাই?
না কি তারা নিজেই নিজের কদরটাকে দেয় ধোলাই?
মান ইজ্জতের ধার ধারেনা, এই দেশেতে এমন লোক
লুটে পুটে খাচ্ছে যেন অন্ধ হলো জাতির চোখ।
জাত মেরেছে এই জাতিটার হায়রে অবোধ বাঙ্গালী
মায়ের নামে ছাফাই গেয়ে মাকেই দিলি শেষ কালি।
মরছে মানুষ চতুর্দিকে বাঁচার কোন রাস্তা নাই
দাফন কিবা চিতার আগেই প‍ঁচা লাশের গন্ধ পাই।
গুনী লোকও যাচ্ছে মরে হচ্ছে ফাঁকা বাংলাদেশ
সব মানুষের চির সাথী হলো যেন দু:খ ক্লেশ।

পুলিশের গুলিতে নিহতরাই পুলিশের মামলার আসামি!

চাঁদপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত রিকশাচালক আবুল মৃধা এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা লিমন ছৈয়ালকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইন এবং সরকারি কাজে বাধা, গুলি করে মানুষ হত্যা, মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের করা দুটি মামলায় তাঁরা আসামি। গত রবিবার মধ্যরাতে সদর মডেল থানায় পুলিশ মামলা দুটি করে।
মামলা দুটিতে চাঁদপুরের বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীসহ ৫৯ জন এবং অজ্ঞাত পাঁচ হাজারজনকে আসামি করা হয়েছে। সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর হোসেন মজুমদার মামলা দুটির বাদী। এসব মামলায় পুলিশ ইতিমধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। গতকাল সোমবার তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়।















Warfare of Nuclear


Atomic warfare, or Nuclear warfare, is a military conflict or political strategy in which nuclear weaponry is detonated on an opponent. Compared to conventional warfare, nuclear warfare can be vastly more destructive in range and extent of damage. A major nuclear exchange could have severe long-term effects, primarily from radiation release but also from possible atmospheric pollution leading to nuclear winter, that could last for decades, centuries, or even millennia after the initial attack. Nuclear war is considered to bear existential risk for civilization on Earth.
Only two nuclear weapons have been used in the course of warfare, both by the United States near the end of World War II. On 6 August 1945, a uranium gun-type device code-named "Little Boy" was detonated over the Japanese city of Hiroshima. Three days later, on 9 August, a plutonium implosion-type device code-named "Fat Man" was exploded over Nagasaki, Japan. These two bombings resulted in the deaths of approximately 200,000 Japanese people—mostly civilians—from acute injuries sustained from the explosions.
After World War II, nuclear weapons were also developed by the United Kingdom, France, the Soviet Union, and the People's Republic of China, which contributed to the state of conflict and tension that became known as the Cold War. In the 1970s, India and in the 1990s, Pakistan, countries openly hostile to each other, developed nuclear weapons. Israel, North Korea, and South Africa are also believed to have developed nuclear weapons, although South Africa became the first country to subsequently abandon them. Nuclear weapons have been detonated on over two thousand occasions for testing purposes and demonstrations.
After the collapse of the Soviet Union in 1991 and the resultant end of the Cold War, the threat of a major nuclear war between the superpowers was generally thought to have receded. Since then, concern over nuclear weapons has shifted to the prevention of localized nuclear conflicts resulting from nuclear proliferation, and the threat of nuclear terrorism.

শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১২

হলের সিট রাজনীতি বনাম শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ

(ছদ্মনাম) এসএসসি-এইচএসসিতে এ-প্লাস পেয়েছে। তার স্বপ্ন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। কঠোর পরিশ্রম আর পড়াশোনা করে ভর্তি পরীক্ষায় একটা ভালো মেধাস্থান নিয়ে ভর্তিও হয়েছে সে। পড়াশোনা নির্বিঘ্নে চালিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তার একটা সিট দরকার। গ্রাম থেকে আসা হাসান প্রথমে ভেবেছিল ভর্তি হলেই কর্তরর্্ৃপক্ষ তাকে সিট দেবে। বাস্তবতা দেখল ভিন্ন, সিটের জন্য বাধ্য হয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্রনেতাদের কাছে ধরনা দেয় সে। তারা তাকে হলে উঠিয়েছে ঠিকই, তবে রুমে নয়; বারান্দায়। বিনিময়ে ক্লাস বাদ দিয়ে রাজনৈতিক দলের হয়ে শোডাউন করছে হাসান। তবু সিট মিলছে না। সেই ছাত্রনেতাদের (!) মনোরঞ্জন আর গেস্ট রুমের নামে নির্যাতন সহ্য করাই তার লক্ষ্য। কারণ এর চেয়ে বড় লক্ষ্য সিট পাওয়া। এত কিছুর পরও সে সিট পেয়েছে বছর দেড়েক পর। হাসান সিট পেয়েছে বটে, ইতিমধ্যে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর পার হয়ে গেছে। যে হাসান জীবনের কোনো পরীক্ষায় কখনও দ্বিতীয় হয়নি। এবার তার কোনো মেধাস্থান তো হয়নিই বরং টেনেটুনে পাস করেছে। ফলে সিটটা এখন তার কাছে শুধুই প্রহসন। হাসানের মতো বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের অবস্থা এরকম কি-না জানা নেই। অন্তত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবারই জানা আছে। এখানে সিট পাওয়া যে কত কষ্টকর তা ভুক্তভোগীরাই ভালো বলতে পারবেন। একটা সিটের পেছনে একজন শিক্ষার্থীর কতটা শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন সহ্য করার যন্ত্রণা রয়েছে তা অকল্পনীয়। দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির বল সে, তাকে নিয়ে ছাত্রনেতারা খেলে; নিজেদের চাঁদা আদায়, লবিং এবং সব অপকর্মের কর্মী সে। বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র শতকরা এক-দুই ভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে। এখানে শিক্ষার্থী তার মেধা এবং যোগ্যতা নিয়ে ভর্তি হয়। ভর্তি হয়েই তাকে একটা সিটের জন্য জীবনের চরম বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। এ রকম অবস্থায় টিকে থাকা দায়। বিশ্ববিদ্যালয় তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে না করায় মেধাবী জীবনগুলো প্রস্টম্ফুটিত হওয়ার বদলে ঝরে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আইন (অর্ডার, অর্ডিন্যান্স) এখানে অসহায়। প্রতি বছর মেধার ভিত্তিতে সিট দেওয়ার নিয়ম কেবল কেতাবেই আছে। কেতাবে এ রকম বহু জিনিসই আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী (বর্তমানে শিক্ষক) ২০০০ সালে 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর প্রশাসনিক বিধিবিধানের পর্যালোচনা' নামে একটি একাডেমিক গবেষণা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, হলের প্রশাসনিক বিধিবিধান 'অকার্যকরভাবে দুর্বল'। বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্সের সাত নম্বর পরিচ্ছেদে আবাসিক হলগুলোর ৩৫টি নিয়মকানুনের প্রায় সবগুলোর ক্ষেত্রে ১১ বছর আগে তিনি বলেছেন 'অকার্যকরভাবে দুর্বল'। আর বর্তমানে কেউ গবেষণা করলে হয়তো তাকে 'অকার্যকর'ই বলতে হবে। তবে তিনি গবেষণার সিদ্ধান্তে বলেছেন, 'হলের বিধিবিধান প্রয়োগ করতে গিয়ে প্রশাসন কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়।'
প্রশাসন হলের বিধিবিধান প্রয়োগ করতে রাজনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হবে কেন? প্রশ্নটা আসলে এখানেও, তাহলে এসব শিক্ষার্থীর জীবন নষ্টের জন্য দায়ী শুধুই কি প্রশাসন? যদি তা-ই না হয়, তাহলে হলগুলোতে প্রভোস্ট, হাউস টিউটর কিংবা অন্যান্য কর্মকর্তা নিয়োগই-বা কেন দেবে? কারণ, কার্যত তো তাদের কোনো ক্ষমতা নেই। না আছে সিট বণ্টনে, না হলের শৃঙ্খলা রক্ষায়? হল প্রভোস্টের কথা না হয় বাদই দিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে আছে হাউস টিউটররা প্রতিদিন আবাসিক শিক্ষার্থীদের হাজিরা নেবেন। বাস্তবতা হলো, তারা প্রতিদিন হাজিরা নেবেন দূরে থাক, বছরে একদিনও পুরো হল ঘুরে দেখেন কি-না সে বিষয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তাহলে তারা কী করছেন? উত্তরটা হলো, পুরো হল প্রশাসন যে দল ক্ষমতায় আসে সে দলের নেতাদের সহযোগিতার জন্য কাজ করছে। এসব নেতা যা বলে প্রশাসন তাই করে, পুরো প্রক্রিয়াটাই এখন উল্টো। বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা একই রকম। আমরা বুয়েটের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন চিন্তা করতাম, সেটাও গত বছর কলঙ্কিত হলো। মেডিকেলও এর থেকে বাদ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবায়ের হত্যা, বুয়েটের শিক্ষার্থী বড় ভাইয়ের পা ভেঙে দেওয়া, জগন্নাথ-রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা কিংবা এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু বকর হত্যাসহ ক্যাম্পাসের সব হত্যাকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা। জাহাঙ্গীরনগরে তো শিক্ষক-ছাত্র রাজনীতির মেশালো চিত্র ভালোই দেখা গেল। বর্তমানে সিট পাওয়ার যে রাজনীতি চলে আসছে তা যদি চলতে থাকে এর ভয়ঙ্কর একটা ফল আমরা দেখব। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অনুরোধ, এই একটা বিষয় নিশ্চিত করুন। এর মাধ্যমে যেমন ছাত্র রাজনীতির নামে দলবাজি বন্ধ হবে, তেমনি হলের পরিবেশ ফিরে আসবে। এসব বাদ দিলেও অন্তত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা নির্যাতন থেকে রেহাই পাবে। সিট বণ্টন প্রক্রিয়ায় কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নয়। এর আগে যেভাবে মেধার ভিত্তিতে প্রতি বছর সিট দেওয়া হতো সেটা চালু করা যায়। প্রয়োজনে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন হলে নতুন হল নির্মাণ করা যেতে পারে। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে। অনেকে নিশ্চয় ইতিমধ্যেই হলে সিটের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। তাদের জীবন হাসানের মতো যে নষ্ট হবে না, সে নিশ্চয়তা কে দেবে!

ধর্ষণ: এবার মাদ্রাসা অধ্যক্ষের সাজা


সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে শিক্ষিকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মাদ্রাসার এক অধ্যক্ষকে গ্রাম্য সালিশে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি গলায় হরেক-রকম ছেঁড়া জুতা পরিয়ে ঘোরানো হয়েছে পুরো গ্রাম। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে তাকে করা হয়েছে চাকুরিচ্যুত।



সাজাপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উপজেলার মারমা আলহেরা নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার মাওঃ ইব্রাহিম হোসেন। তার বাড়ি উত্তর খাসকাউলিয়া গ্রামে।



এলাকাবাসী ও সালিশের মাতব্বরেরা জানায়, চৌহালী উপজেলার মারমা আলহেরা নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ দুঃচরিত্র মাওঃ ইব্রাহিম হোসেন বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা স্বামী পরিত্যাক্তা এক সন্তানের জননী হাফেজা খাতুনকে (২৬) মাঝে-মাঝেই কুপ্রস্তাব দিত। এতে সে রাজি হতো না। বরং বিষয়টি সম্পর্কে ম্যানেজিং কমিটিকে অবগত করে।



এতে ঐ শিক্ষক আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে স্কুলে কেউ না থাকায় শিক্ষিকাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। তখন তার আর্তচিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে হাতে-নাতে লম্পট মাওঃ ইব্রাহিম হোসেনকে ধরে ফেলে।



পরদিন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা শিক্ষককে বরখাস্ত করে। বিষয়টি মীমাংসার জন্য গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চর জাজুড়িয়া চেকির মোড় হাফিজিয়া মাদ্রাসা চত্বরে গ্রাম্য শালিশ বৈঠক ডাকা হয়।



সেখানে ঘোরজান ইউপি চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান মন্টু সভাপতিত্ব করেন। ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হজরত আলী মাস্টারসহ চৌহালী ও নাগরপুরের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।



ঘোরজান ইউপি চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান মন্টু জানান, দোষী প্রমাণিত হওয়ায় ঐ অধ্যক্ষকে জরিমানা ও শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। এতে একটু হলেও নারী নির্যাতন বন্ধে ভূমিকা রাখবে। আর কেউ যাতে এ রকম হেয় কাজ না করতে পারে সেজন্যই উন্মুক্তভাবে এ বিচার করা হয়েছে।

বিনা কারণে অভিসম্পাত করার শাস্তি!

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেছেন, “যখন বান্দাহ কোনো বস্তুকে বা কাউকে অভিসম্পাত করে, তখন সে অভিসম্পাত আকাশের দিকে উঠতে থাকে, তখন আকাশের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর ঐ অভিসম্পাত যমীনের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। তখন যমীনের দরজাও বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর উহা ডান দিকে ও বাম দিকে যায় এবং সেখানেও যখন কোনো রাস্তা না পায়, শেষ পর্যন্ত সেই ব্যক্তি বা বস্তুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে যার প্রতি অভিসম্পাত করা হয়েছে। যদি সে অভিসম্পাতের উপযুক্ত হয়, তবে তার উপরে আপতিত হয়। অন্যথায় (যদি সেই ব্যক্তি বা বস্তু অভিসম্পাতের উপযুক্ত না হয়) অভিসম্পাতকারীর দিকেই ফিরে আসে।” (আবূ দাউদ শরীফ) কাজেই যারা বিনা কারণে, বিনা প্রমাণে কারো প্রতি অভিসম্পাত করে তাদের খালিছ তওবা ও ইস্তিগফার করা উচিত। নচেৎ ইহকাল ও পরকালে মহান আল্লাহ পাক উনার আযাব-গযবে গ্রেফতার হতে হবে।

ইরান পরমাণু শক্তিধর দেশ - কোনো নিষেধাজ্ঞা কাজে আসবে না - বিশ্ব মোড়লরা কুপোকাত

তেহরানের জুমার নামাজের খতীব আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আহমাদ খাতামি বলেছেন, ইউরোপ ইরানের ওপর তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এদেশের অগ্রগতি রোধ করতে পারবে না। তিনি আজ তেহরানের জুমার নামাজের খোতবায় ইউরোপের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ইউরোপীয় নেতারা ইরানকে অবরোধ করতে গিয়ে মূলতঃ নিজেদের অবরোধ করে ফেলেছেন এবং এর ফলে আসল ক্ষতির শিকার হবে ইউরোপের জনগণ।
তেহরানের জুমার নামাজের খতীব বলেন, বিগত কয়েক বছরে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার বদৌলতেই ইরান পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে।শত্রুদের ব্যাপক চাপ সত্ত্বেও এদেশের বিজ্ঞানীদের কঠোর অধ্যবসায়ের ফলে ইরান বর্তমানে একটি পরমাণু শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক বাজারে তেল বিক্রির ক্ষেত্রে ইরান কোন সমস্যায় পড়বে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। আয়াতুল্লাহ খাতামি সৌদি আরবের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, সৌদি সরকার ইউরোপীয় দেশগুলোকে ইরানের তেলের ঘাটতি পুরণ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজের পতন ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা করছে।
ইরানের মোট রপ্তানিকৃত তেলের শতকরা মাত্র ১৮ ভাগ ইউরোপীয় দেশগুলো আমদানি করে। সম্প্রতি ইরানের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে সৌদি আরব পাশ্চাত্যকে এই বলে আশ্বস্ত করে যে, দেশটি ইরানের তেলের ঘাটতি পুষিয়ে দেবে।
আয়াতুল্লাহ খাতামি তেহরানের জুমার নামাজের খোতবার অন্য অংশে বাহরাইনের নিরীহ মানুষের ওপর সরকারের কঠোর দমন অভিযানের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, মানামা সরকার জনগণের দাবি মেনে না নিলে গণ-অভ্যুত্থানে আলে খলিফা সরকারের পতন হবে।#

তাবলীগ যেভাবে মুসলমানদের করছে

শুরুতেই বলি, এটা আপনাদের কাছে আমার আমানত যে লেখাটি পুরো না পড়লে আপনি কোন মন্তব্য করবেন না। আমি যা লিখেছি, কোরআন ও হাদিসের আলোকে লিখেছি। আপনি যদি এই লেখায় কোন ভুল ধরতে চান, তাহলে অবশ্যই কোরআন ও হাদিস দিয়ে ভুল ধরবেন। আপনি সঠিক হলে আমি মেনে নিব। যেখানে কোরআন হাদিস দিয়ে একটা কথা ভুল প্রমাণ করা হয়েছে, সেখানে কোরআন হাদিসের প্রমাণ ছাড়া শুধু আবেগের বশে তর্ক করা মানে আপনি কোরআন-হাদিসের অমান্য করছেন।



আর কোরআন-হাদিসের আলোকে তাবলীগদের সূফীবাদের ভুলভ্রান্ত আকিদা, ও বানোয়াট হাদিস-কিচ্ছা ভুল প্রমান করার পরেও যদি আপনি "ফাজায়েল আমলের" কথাই মেনে নেন, তাহলে আমার কিছু বলা নেই। আর আপনি যদি আমার লিখিত কথাগুলো (লেখার বাহিরে না) কোরআন-হাদিস দিয়ে ভুল প্রমাণ করেন, তাহলে আমি কথা দিচ্ছি আমি একেবারে ৩ চিল্লা দিয়ে আসব ইনশাআল্লাহ।



► এই লেখার উদ্দেশ্যঃ



আমি নিজেও একসময় তাবলীগের সাথে জড়িত ছিলাম। তাবলীগের সাথে শত্রুতা করে কিংবা কারো আদেশে এই লেখা না, বরং ঈমানের দাবী পুরন করে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাত পাওয়ার আশায় সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় আমার এই লেখা কারন ইসলামের সাথে সাংঘর্শিক বিষয়গুলো তুলে ধরা সব মুসলমানের দায়িত্ব। যেখানে আমি সুস্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এবং আপনাদের দেখিয়ে দিব ইনশাআল্লাহ যে তারা কোরআন হাদিসের উল্টো কথা ও গল্প প্রচার করছে, সেখানে একজন মুসলমান হিসেবে কি চুপ থাকা উচিৎ কারো? ভণ্ড কাদিয়ানী নবী দাবী করেছিল, আর সে সময় রাসুলের এই সুন্নাতধারি দাবীকৃত এই তাবলীগরা ছাড়া আর কেউ তাদের বিরুদ্ধে চুপ ছিলনা। ভণ্ড কাদিয়ানী নিজেও সুন্নাতি লেবাস পরিধান করতো।



আমরা মুসলমানরা চাই, তারা তাদের সুফিবাদের ভ্রান্ত আকিদা, ও বানোয়াট হাদিস-কিচ্ছা প্রচার করা থেকে বিরত থেকে মুল ইসলামের দাওয়াত দিক। তারা যদি তাদের ভিন্ন আকিদা, শিক্ষা ও ভ্রান্ত আমলের বইগুলো অনুসরন করা বাদ দিয়ে কোরআন ও হাদিস অনুসরন করে সে অনুযায়ী আমল ও মানুষকে দাওয়াত দিত, তাহলে মুসলমানদের অনেক বেশি উপকার হত!



► সংক্ষেপে “তাবলীগ জামায়াত” এর ইতিহাস ও দলের নাম বিশ্লেষণঃ



কোরআনের এই বাণী “সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ” কে মুল টার্গেট করে ১৯২৬ সালে মওলানা ইলিয়াস আল কান্ধলভি তাবলীগ জামায়াত প্রতিষ্ঠা করেন। (পরে আমরা দেখব এরা কি সত্যি অসৎ কাজের নিষেধ করে কিনা...)। পরবর্তীতে গিয়ে মওলানা জাকারিয়ার সময় থেকে এদের কাজ আরও সুনির্দিষ্ট হয়ে যায়। উল্লেখ যে, মওলানা জাকারিয়া একজন সুফি মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন।



তাবলীগ অর্থ প্রচার করা, আর জামায়াত অর্থ দল। তাবলীগ জামায়াত অর্থ প্রচারের দল। তারা কি প্রচার করে? যদি ইসলাম প্রচার করে, তাহলে তাদের নাম হওয়া লাগতো “ইসলামে তাবলীগ জামায়াত” বা “দাওয়াতে ইসলামী”। বিধর্মীরা ইসলাম নামটা সহ্য করতে পারেনা বলে আর চিল্লা লাগিয়ে বিধর্মীদের দেশে যাতায়াতের সুবিধার্থেই হয়তো তারা কৌশলগত দিক চিন্তা করে ইসলামের নাম তাদের দলের সাথে যোগ করেনি।



► তাবলীগদের সিলেবাসঃ



একই মতবাদ ও বিশ্বাসের সকল মানুষ নিয়ে একটা দল তৈরি হয়। তাবলীগও একটা দল। তাদের মতবাদে বিশ্বাসী মানুষ তৈরি করতে তাদের একটা নির্দিষ্ট সিলেবাস আছে যা সকল তাবলীগদের পাঠ্যবই। কিন্তু এগুলোতে কিছু কোরআন ও হাদিস শিক্ষা থাকলেও এসব বইয়ে অনেক কথা আছে যা কোরআন ও রাসুলের হাদিসের সংঘর্ষশীল ও অপব্যখায় ভরপুর যার প্রমান আমি পরে দিব।



তাবলীগদের নিসাব বা সিলেবাস অনুযায়ী আম বই দুইটি।


১. ফাযায়েল আমল যার খণ্ড আটটি- ফাযায়েল নামাজ, তাবলীগ, জিকির, কোরআন, রমজান, দরুদ, হজ ও হেকায়তে সাহাবা।


২. ফাযায়েল সাদাকাত- ২টি খণ্ড।



তাদের খাস বইও দুইটি-


১. হায়াতুস সাহাবা।


২. রিয়াদুস সালেহিন (শুধু আরবদের জন্য) ।



তাদের সিলেবাসে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়ঃ



১. এখানে কোন কোরআন ও এর কোন তাফসীরগ্রন্থ নেই। তাবলীগরা কখনো কোরআনের অনুবাদ ও এর তাফসীর অধ্যয়ন করে না। তাবলীগের মুরুব্বিরা কোরআনকে শুধু আরবিতে পড়ে অনেক ফায়দা হাসিলের দাওয়াত দিলেও তারা সাধারন মানুষকে অর্থ ও তাফসীরসহ কুরআন বুঝার ব্যপারে নিরুৎসাহিত করে। তারা বলে মুফতি, আলেম না হলে বা ১৫ টা আরবি ভাষায় জ্ঞান বা আবার কেউ বলে ১৫ টি ভাষা না জানা থাকলে কুরআন বুঝা উচিত না। অথচ আল্লাহ বলেছেন,



--> “আমি বুঝার জন্য কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি। কেউ কি বুঝতে চায়"? (সূরা কামারঃ ১৭)


--> “তারা কোরআন নিয়ে কেন গবেষণা করেনা? তাদের অন্তরে কি তালা লেগে গেছে?” (সূরা মুহাম্মদঃ২৪)

২. তারা নবীর সুন্নাতকে ধারন করে এই দাবী করে। কিন্তু কোরআনের পরে ইসলামের মুলভিত্তি সহিহ হাদিসগ্রন্থ বুখারি, মুসলিম ইত্যাদি তাদের সিলেবাসে নেই এবং এগুলো পড়তেও তারা উৎসাহ দেয়না। আর ফাযায়েল সিরিজের বইগুলো মওলানা ইলিয়াস ও হায়াতুস সাহাবা বইটা ইলিয়াসপুত্র ইউসুফ কান্ধলভি দ্বারা রচিত। পিতা-পুত্রের একই ভাব ও নির্দিষ্ট মতাদর্শে লিখিত বইগুলোই শুধু তাদের জ্ঞানের মুল উৎস।

৩. তাদের সিলেবাসে লক্ষ্য করে দেখবেন যে জিহাদ সম্পর্কে কোন বই নেই। তারা সুকৌশলে মানুষকে জিহাদ থেকে দূরে রেখে পরকাল ও দোআ-জিকির নির্ভর ইসলাম প্রচার করতে ব্যস্ত। জিহাদের ব্যখায় তারা যুদ্ধ বা আন্দোলন না করে নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করা বুঝায়। কিন্তু রাসুল (সঃ) এর জীবনী থেকে দেখা যায় তিনি আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াতও দিয়ছেন, সাথে যুদ্ধ, আন্দোলন, সংগ্রামও করেছেন। সাহাবীরা কি শুধু জিকির, আমল করেই তাদের জীবন পার করে দিয়েছেন, না ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আন্দোলন করে তাদের জীবন দান করেছেন? তাদের মত হল, নামাজ, রোজা, জিকির করব, জিহাদ করব না। এমন লোকদের ব্যপারে আল্লাহ বলছেন,

“তোমরা কি তাদেরকেও দেখেছো, যাদেরকে বলা হয়েছিল, তোমাদের হাত গুটিয়ে রাখো এবং নামায কায়েম করো ও যাকাত দাও? এখন তাদেরকে যুদ্ধের হুকুম দেয়ায় তাদের একটি দলের অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যে, তারা মানুষকে এমন ভয় করেছে যেমন আল্লাহকে ভয় করা উচিত অথবা তার চেয়েও বেশী। তারা বলছেঃ হে আমাদের রব! আমাদের জন্য এই যুদ্ধের হুকুমনামা কেন লিখে দিলে? আমাদের আরো কিছু সময় অবকাশ দিলে না কেন"? (সূরা নিসাঃ ৭৭)

৪. আরবরা যেহেতু দুর্বল ও জাল হাদিস ও বিভিন্ন কেচ্ছা-কাহিনী (যা ফাযায়েল আমল বইতে আছে) বিশ্বাস করেনা, তাই আরবদেশ গুলোতে এর পরিবর্তে ইমাম নবভি রচিত “রিয়াদুস সালেহিন” পড়ানো হয়। উল্লেখ যে, পৃথিবীর অনেক ভাষায় “ফাযায়েল আমল” বইটি অনুবাদ হলেও আরবি ভাষায় এটার অনুবাদ করা হয়নি।

► মওলানা জাকারিয়া ফাজায়েল আমল বইটি কি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য লিখেছিলেন?

এর উত্তর মওলানা জাকারিয়ার নিজের মুখ থেকেই শুনুন। তিনি তার “ফাজায়েল আমল” বইয়ের ভুমিকায় শুরুতেই লিখেছেন,
“আল্লাহ তায়ালার তারীফ ও প্রশংসা এবং নবীয়ে করীম (ছঃ) এর উপর দরুদ শরীফ পড়ার পর, ওলামায়ে কেরাম ও ছুফীকুল শিরোমণি, মোজাদ্দেদ দ্বীন, হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহঃ) আমাকে আদেশ করেন যে তাবলীগে দ্বীনের প্রয়োজন অনুসারে কোরআন ও হাদিছ অবলম্বনে যেন একটা সংক্ষিপ্ত বই লিখি। এতবড় বুজুর্গের সন্তুষ্টি বিধান আমার পরকালে নাজাতের উছিলা হইবে মনে করিয়া আমি উক্ত কাজে সচেষ্ট হই।

এখানে লক্ষনীয়ঃ
১. তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য বইটি লিখেন নি। তিনি লিখছেন তার উস্তাদ মাওলানা ইলিয়াস এর সন্তুষ্টি লাভের জন্য।

২. যতটা বিশেষণ তিনি আল্লাহ ও রাসুল (সঃ) এর পরিচয়ে দিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি বিশেষণ দিয়ে তার উস্তাদ মাওলানা ইলিয়াস এর পরিচয়ে দিয়েছেন।

৩. শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করেই পরকালে নাজাত পাওয়া যাবে। কিন্তু তিনি তার উস্তাদের সন্তুষ্টিকে নাজাতের উসিলা বলেছেন। এটা একটি শিরক যা ইহুদি-নাসারারা করে। আল্লাহ বলেন,
“তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের আলেম, আবেদদের (পীর, দরবেশ, ধর্মযাজক) কে তাদের প্রভু বানিয়ে নিয়েছে এবং মরিয়ম পুত্র মসিহ্‌কেও। অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে তারা শুধুমাত্র এক মা’বূদের ইবাদত করবে যিনি ছাড়া আর আর কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি তাদের অংশী স্থির করা হতে কতইনা পবিত্র!” (সূরা আত্‌ তাওবাঃ ৩১)

জাল হাদিস কিভাবে উৎপত্তি হয় তার বাস্তব প্রমানঃ

তাবলীগী ভাইদের অনুসরনিয় ও পঠিত বই “ফাজায়েল আমল” এর জিকির অধ্যায়ে ৩৫৪ পৃষ্ঠায় নীচের ঘটনাটি উল্লেখ আছে যা আমি সংক্ষেপে উল্লেখ করলামঃ

শায়খ আবু করতবী (রঃ) বলেন, আমি শুনিয়াছি যে ব্যক্তি সত্তর হাজার বার কালেমা পড়িবে সে দোযখ হইতে নাজাত পাইবে। ইহা শুনিয়া আমি নিজের ও আমার স্ত্রীর জন্য সত্তর হাজারবার এবং অতিরিক্ত কয়েকনিছাব আদায় করিয়া পরকালের ধন সংগ্রহ করি। আমাদের নিকট এক যুবক থাকিত এবং সে নাকি কাশফের মাধ্যমে বেহেশত ও দোযখ দেখিতে পাইত, আমি উহাতে সন্দেহ করিতাম। একদিন ঐ যুবক আমার সহিত আহার করিতে বসে চিৎকার করে বলিয়া উঠিল, আমার মা দোযখে জ্বলিতেছে, আমি তাহার অবস্থা দেখিতে পাইতেছি। একথা শুনিয়া আমি মনে মনে আমার পড়া কালেমার অতিরিক্ত নিছাব হতে এক নিছাব (৭০ হাজার) ঐ যুবকের মায়ের নামে বখশিয়া দিলাম, যা আমি ও আল্লাহ ছাড়া আর কেহ জানত না। কিছুখন পর ঐ যুবক বলিয়া উঠিল, চাচা আমার মা দোযখ থেকে নাজাত পাইয়া গেলেন।

উক্ত গল্প থেকে একটি নতুন জাল হাদিস তৈরি হয় যা হল-
“সত্তর হাজার বার কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পাঠ করে এর সওয়াব মৃত্যু ব্যক্তির নামে উৎসর্গ করলে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে”।

নাউজুবিল্লাহ !!! রাসুলের নামে কি জঘন্য মিথ্যাচার। অথচ রাসুল (সঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি ইচ্ছাপুর্বক আমার নামে মিথ্যা আরোপ করবে, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা খুজে নেয়”। (সহিহ বুখারি)

এই গল্প থেকে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়ঃ

১. জান্নাত ও জাহান্নাম ও মৃত্যুব্যক্তির কি হচ্ছে তা আল্লাহ গায়েব বা অদৃশ্য রেখেছেন। ফাজায়েল আমল কিতাবে যা উল্লেখ আছে তা প্রমাণ করে ঐ যুবক গায়েবের খবর জানত। অথচ গায়েবের খবর একমাত্র আল্লাহ জানেন। আল্লাহ বলেন,
“বলুন, আল্লাহ ব্যতিত নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে কেউ গায়েবের খবর জানেনা। এবং তারা জানেনা যে, তারা কখন পুনারাজ্জিবিত হবে”। (সুরা নামলঃ ৬৫)

২. শায়খ আবু করতবী (রঃ) ব্যক্তিটা কে? তিনি বলেন, আমি শুনিয়াছি যে...। তিনি কই থেকে শুনেছেন? কোন হাদিছে এমন কথা নেই।

৩. জনৈক আবু করতবী (রঃ) এটাকে কাশফ বলেছেন। অদৃশ্য জগতের কিছু কথা প্রকাশ হওয়াকে কাশফ বলে। কাশফ সত্য - মিথ্যা দুটোই হতে পারে। তাই শরীয়তের ক্ষেত্রে কাশফ একদম গ্রহণযোগ্য না। ভণ্ডনবী ইবনুস সাইয়েদ বা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানীও বিভিন্ন মিথ্যা কাশফের দাবী ও ঘটনা বর্ণনা করতো।

৪. যদি এমন সহজেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তাহলে জাহান্নামে আর কেউ যেত না। এগুলো বানিয়ে আসলে মুসলমানদের শুধু জিকিরনির্ভর সূফীবাদের দিকে নিয়ে যাওয়ার টার্গেট নেওয়া হয়েছে।

► তাদের বহু জাল হাদিসের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করলামঃ

১. এক ঘণ্টা কিছু সময় চিন্তা জিকির করা, ষাট বছর ইবাদতের চেয়ে উত্তম। (ফাজায়েল জিকির, ৩০৪ পৃষ্ঠা)
২. এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা গেলে ৮০ হুকবা জাহান্নামে পুড়তে হবে। (ফাজায়েল নামাজ, ৮৯ পৃষ্ঠা)
৩. পাচ ওয়াক্ত নামাজ পরলে, বিভিন্ন রকম পুরুস্কার, না পরলে বিভিন্ন রকম শাস্তি সংক্রান্ত হাদিসটি। (ফাজায়েল নামাজ, ৮০-৮১ পৃষ্ঠা)
৪. সহজে মুখস্থ করার দোআ সংক্রান্ত দীর্ঘ হাদিসটি (ফাজায়েল কোরআন, ১০৫-১০৯ পৃষ্ঠা)

এছাড়া আরও অসংখ্য জাল হাদিস ও বিভিন্ন কেচ্ছা কাহিনী আছে যা উল্লেখ করতে গেলে বিশাল এক বই হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা হল ফাজায়েল আমল বইটিতে জাল ও দুর্বল হাদিসগুলোকে ঢেকে রাখার জন্য কোন হাদিসের পূর্ণ উৎস দেয়নি।

► তাবলীগদের কোরআন ও হাদিস বিরোধী মনগড়া গল্প

ফাজায়েল সাদাকাত, ২য় খণ্ড, ২৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
“আবু আলি রোদবারি (রঃ) বলেন, ঈদের দিন একজন ফকির আসিয়া আমাকে বলিল যে এখানে কি কোন পরিস্কার জায়গা যেখানে একজন ফকির মরিতে পারে? আমি ইহা বাজে কথা মনে করিয়া বলিলাম, ভিতরে এসে যেখানে এসে মর। সে ভিতরে আসিয়া ওযু করিয়া দুই রাকাত নামাজ পড়িল ও মারা গেল। আমি তাহার কাফন দাফনের ব্যবস্থা করার পরে দেখিবার জন্য কাফন হটাইয়া দেখিতেই সে চোখ খুলিয়া ফেলিল। আমি তাকে বলিলাম, মৃত্যুর পরেও জীবন? সে বলিল আমি জীবিত ও আল্লাহর প্রত্যেক আশেকই জীবিত থাকেন। আমি তোমায় কাল কিয়ামতে স্বীয় প্রতিপত্তিতে সাহায্য করিব”।

এখানে লক্ষণীয়-

১. ফকির আগে থেকেই তার মৃত্যুর খবর জেনে সে তার মৃত্যুর জায়গা নিজে নিজেই ঠিক করল।
২. সে মারা যাওয়ার পরেও একজন জীবিত মানুষ তাকে তাকে কিছু জিজ্ঞাস করল ও সে শুনল।
৩. কথা শুনার পর সে তার উত্তরও দিল।

এখন দেখা যাক কুরআন কি বলে।

১. আল্লাহ বলেন,
“... কেউ জানেনা আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানেনা কোন স্থানে সে মৃত্যুবরন করবে।” (সূরা লুকমানঃ ৩৪)
এই আয়াতের ব্যখায় নবী (সঃ) বলেন, “এগুলো গায়িবের কথা এবং এগুলো আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেনা।” (সহিহ বুখারি)

কুরআন আমাদের শিক্ষা দেয়, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা সে কোথায় মারা যাবে। আর তাবলীগরা শিক্ষা দেয় ফকির বুজুর্গরা জানতে পারে তারা কোথায় মারা যাবে !!!

২. আল্লাহ বলেন,
“মৃতকে তো তুমি (নবী) কথা শুনাতে পারবে না”। (সূরা নামলঃ ৮৪)

তাহলে কিভাবে ঐ ব্যক্তি মৃত ফকিরকে প্রশ্ন করল এবং সে শুনল?

৩. আল্লাহ বলেছেন, “জীবিত ও মৃত কখনো সমান না”। (সুরা আল ফাতিরঃ ২২)
অর্থাৎ, কিন্তু গল্পে জীবিত ও মৃত- উভয়েই কথা বলছে অর্থাৎ উভয়েই সমান।

হাদিসে আছে (প্রথম অংশ দেওয়া হল), “একদিন রাসুল (সঃ) ও একজন ইহুদী বসে ছিলেন। এমন সময় একটি জানাজা অতিক্রম করতে থাকলে সে জিজ্ঞাসা করে, “হে মুহম্মদ, এই লাশ কি কথা বলতে পারে?” রাসুল (সঃ) জবাব দেন, “এই বিষয়ে আল্লাহ অধিক অবগত।.।"
(আবু দাউদঃ ৩৬০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত)

শুধু একটি ঘটনা না, আরও অসংখ্য (যেমন ফাজায়েল সাদাকাত, ২য় খণ্ডের পৃষ্ঠা ২৭০তে উল্লেখ্য দুটি ঘটনা, ৩২২, ৩৫৪ ইত্যাদি পৃষ্ঠাতে) এমন আজগুবি অনেক কিচ্ছা রয়েছে তাবলীগি ভাইদের একমাত্র পঠিত বইগুলোতে।

এখন দেখতে পাচ্ছি যে তাবলীগ ও তাদের আমলের বই, এক কথা বলছে, আর কোরআন হাদিস আর এক কথা বলছে। যেহেতু দুটো বিপরীত কথা, তাহলে এখানে যেকেউ একজন অবশ্যই মিথ্যাবাদী। যেহেতু, কোরআন ও রাসুল (সঃ) কখনো মিথ্যা বলতে পারেনা, সেহেতু যে গল্পটি বলেছে সে অবশ্যই মিথ্যাবাদী। আর যে বইয়ে মিথ্যাবাদীদের দ্বারা তৈরি আজগুবি গল্প, কিচ্ছা কাহিনী দিয়ে ভরা সে বই অনুযায়ী আমল করতেই কি রাসুল (সঃ) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন? বরং রাসুল বলেছেন,

“নেতা, উপনেতা বা দাম্ভিক ধোঁকাবাজ লোক ছাড়া আর কেউ কিচ্ছা কাহিনী বর্ণনা করেনা”। (আবু দাউদঃ ৩৬২৪)

► একটু জানুন ও ভাবুনঃ

১. ইহুদী নাসারারা মুসলমানদের একটা জিনিসই ভয় পায়, তা হল জিহাদ। তাবলীগরা এমন ধরনের জিনিস প্রচার করে মুসলমানদের কে মুল ইসলাম ও জিহাদ থেকে সরে নিয়ে এসে শুধু জিকিরনির্ভর সূফীবাদের দিকে নিয়ে যায়। আপনি কি জানেন, ইসরাইলেও তাবলীগরা বাধাহীন ভাবে নিশ্চিন্তে চলাফেরা করে, যেখানে অন্যান্য মুসলমানদের প্রবেশ নিষেধ !!!

২. অন্যান্য সব ভাষায় ফাজায়েল আমল বইয়ের অনুবাদ থাকলেও আরবি ভাষায় এর কোন অনুবাদ নেই। কারন আরবরা দুর্বল, জাল হাদিস ও কিচ্ছা কাহিনীতে বিশ্বাস করেনা। তাই আরব তাবলীগদের বিশ্বস্ত হাদিসগ্রন্থ “রিয়াদুস সালেহিন” পড়ানো হয়।

৩. পাকিস্তান তৈরি হওয়ার সময়, ১৯৫০ সালে যখন সব ইসলামী দল “ইসলামী সংবিধান” প্রণয়নের জন্য আন্দোলন করছিল, তখন এই তাবলীগ নামক ইসলামী দল নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করেছিল, এই জন্য যে এগুলো নাকি ফেতনা, ফ্যাসাদ !!!

৪. ইহুদী খ্রিষ্টানদের তৈরি, নিজেকে নবী হিসেবে দাবীকারী ও নতুন ইসলাম প্রচলনকারী গোলাম আহমেদের তৈরি কাদিয়ানীদের যখন অমুসলিম ঘোষণা ও বিতাড়িত করার জন্য রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সকল ইসলামী দল মতভেদ ভুলে একসাথে ১৯৭৪ সালে “খতমে নবী” আন্দোলন ও প্রতিবাদ করছিল, তখন একমাত্র এই তাবলীগ জামায়াতই কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আন্দোলনে যেতে অস্বীকার করে নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করেছিল। যুক্তি তাদের যে প্রকৃত জিহাদ হল নিজের নফসের বিরুদ্ধে। ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য যুদ্ধ বা আন্দোলন করা জিহাদ না, এগুলো ফেতনা, ফ্যাসাদ। অথচ আল্লাহ বলেছেন,
"তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকো যতক্ষণ না ফিতনা নির্মূল হয়ে যায় এবং দ্বীন একমাত্র আল্লাহ‌র জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়"। (সূরা আনফালঃ ৩৯)

৫. সত্য-মিথ্যা যেখানে স্পষ্ট, সেখানে নিরপক্ষ ভুমিকা পালন করা মানেই মিথ্যাকে সমর্থন করা। কাদিয়ানীদের ক্ষেত্রে তাবলীগদের সেখানে নিরপক্ষ ভুমিকা পালন করা মানে এই নয় যে মিথ্যা কাদিয়ানীদেরকেই সমর্থন করা? আপনি কি জানেন কাদিয়ানীরাও যুদ্ধ, আন্দোলনের মাধ্যমে জিহাদ করে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টাকে ফেতনা, ফ্যাসাদ হিসেবে প্রচার করে?

৫. ভারতে যখন হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা হল, তখন হাজার হাজার মুসলমানদের হিন্দুরা হত্যা করেছিল। এর প্রতিবাদ সব ইসলামী দলই করলে, একমাত্র তাবলীগ ছিল চুপ, ফেতনা ফ্যাসাদের ভয়ে। এর পুরষ্কার সরূপ তারা ইন্দ্রা গান্ধীর সময়েও তাদের “তাবলীগি” দাওয়াত চালানোর অনুমতি পায়, যখন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অন্য সকল ইসলামী দলকে নিষিদ্ধ ও বাধা দেওয়া হয়।

৬. এমন কোন বিধর্মী দেশ নেই, যেখানে তাবলীগরা তাদের দাওয়াতি কাজ করতে পারেনা। আপনি অনেক আরবের তাবলীগ দেখতে পাবেন, কিন্তু সউদি আরবে তাবলীগকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করেছে তাদের ত্রুটিযুক্ত একমুখী নির্দিষ্ট ভিন্ন আকিদার কারনে।

৭. রাসুল (সঃ) ও তার সাহাবারা যখন ইসলামের দাওয়াতে বের হতেন, তখন তারা ইহুদীদের হাতে অত্যাচারিত, বাধাপ্রাপ্ত হতেন। এর কারন ইসলামেরর মুল আদর্শ, বিশ্বাসের সাথে তাদের আদর্শ এক হতনা বলে। অথচ, আজ পর্যন্ত দেখেছেন আমাদের এই তাবলীগ ভাইরা কোথাও গিয়ে অত্যাচারিত, জেল, জরিমানা হয়েছে? এমনকি যেকোনো বিধর্মী দেশে গেলেও তাদের আরও Welcome জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে তারা বলে, এটা নাকি তাদের উপর আল্লাহর রহমত !!! অত্যাচারিত, বাধাপ্রাপ্ত না হওয়াকেই যদি তারা আল্লাহর রহমত বলে, তাহলে কি রাসুল (সঃ) এর উপর আল্লাহর রহমত ছিলনা? (নাউজুবিল্লাহ)

৮. ইসলাম মুসলমানদের দলবদ্ধ হয়ে থাকাকে ফরজ করে দিয়েছে। তারাও দলবদ্ধ। আল্লাহ বলেছেন,
"আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা (মানুষকে) সৎকর্মের প্রতি আহবান জানাবে, ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই হলো সফলকাম"। (সূরা আলে ইমরানঃ ১০৪)

কই তারা কখনো অন্যায় কাজের নিষেধ বা প্রতিবাদ করেছে? কখনোই না। যেকোনো অন্যায় ও অ-ইসলামিক কাজের প্রতিবাদ করা জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন,
“তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেনইনি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল”। (সূরা আলে ইমরানঃ ১৪৪)

এটা স্পষ্ট যে তারা যেহেতু কোরআনের কিছু অংশ মানছে, আবার কিছু অংশ মানছে না।

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যখন বিভিন্ন সরকার অ-ইসলামিক আইন ও কাজ করত, তারা কখনো এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা তো দূরে থাক, এসব নিয়েও আলোচনা করতো না... কারন একটাই- ফেতনা, ফ্যাসাদের ভয়। যেই আল্লাহ প্রদত্ত ধর্ম ইসলামের দাওয়াত তারা দেয়, সেই আল্লাহর নাম ও তার প্রতি বিশ্বাস সংবিধান থেকে মুছে ফেলা হল, আর ফেতনা ফ্যাসাদের ভয়ে তারা চুপ !!!
বাংলাদেশের বর্ডারে হিন্দু বি.এস.এফ প্রতিনিয়ত গুলি করে বাংলাদেশিদের পাখির মত মারছে। এটাওকি রাজনৈতিক ফেতনা? তারা সরকারকে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে না বলে চুপ করে থাকে। ইসলাম কি অন্যায় দেখে চুপ থাকতে বলেছে? অবশ্যই না। যদি না বলে থাকে, তাহলে তাবলীগরা কোন ইসলাম প্রচার করছে?

৯. ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার কথা বললে, তারা বলে তাদের এখনো পর্যাপ্ত জনবল হয়নি। তাই দাওয়াতি কাজ দিয়ে আগে বেশি সংখ্যক মানুষকে ইসলামের দিকে নিয়ে আসতে হবে। অথচ তারা গর্বকরে বলে, পবিত্র হজ্জের পরেই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুসলিম একত্রিত হয় তাদের বিশ্ব এজতেমায়। সত্যি, টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমায় তাদের যে সংখ্যক লোক সমাবেত হয়, তারা সবাই যদি একযোগে ইসলামী রাষ্ট্রের দাবীতে বা যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদে ঢাকার দিকে মার্চ শুরু করে, কোন সরকারের ক্ষমতা নাই এত সংখ্যক মানুষকে আটকানোর।

► এবার চিন্তা করে দেখুন, তাবলীগরা কি প্রকৃত ইসলাম মানছে? বরং প্রকৃত ইসলামকে তারা ধীরে ধীরে ধংস করছে । অনেকে বলতে পারেন, তারা একটু হলেও তো ভাল কাজ করছে, মানুষকে নামাজের দিকে ডাকছে। তাদের জন্য উত্তর হল- ওযু করা তো পবিত্র কাজ। কিন্তু আপনি যদি পানি না দিয়ে মুত্র দিয়ে ওযু করেন, তাহলে কি সেই ওযু হবে? মানুষকে ইসলামের দিকে ডাকতে হবে, কিন্তু সেটা করতে হবে রাসুল (সঃ) যে পদ্ধতিতে করে গেছেন সেভাবে; কিন্তু তাবলীগের মত “চিল্লা” নামক বেদায়াত পদ্ধতিতে না।

আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, “ হে মুমিনগন, তোমরা পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু”। (সূরা বাকারাঃ ২০৮)
পূর্ণরূপে মানে এই না যে শুধু সুন্নাতি পোশাক ও লেবাস পরে দোআ, জিকির, নামাজ নিয়ে পরে থাকা। পরিপূর্ণরূপে মানে এটা যে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোরআন সব বিধান ও রাসুলের সুন্নাহ মান্য করে একমাত্র কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠা করা।

তাবলীগদের কোরআন ও হাদিস বিরোধী মনগড়া গল্প

এটা আমার একটি ব্লগের সার সংক্ষেপ পোস্ট। সংক্ষেপে আমি এই জন্য আবার লিখলাম যে অনেক ভাইয়ের বড় পোস্ট পড়ার ধৈর্য নেই।

► শুরু কথাঃ
আমি যা লিখেছি, কোরআন ও হাদিসের আলোকে লিখেছি। আপনি যদি এই লেখায় কোন ভুল ধরতে চান, তাহলে অবশ্যই কোরআন ও হাদিস দিয়ে ভুল ধরবেন। আপনি সঠিক হলে আমি মেনে নিব। যেখানে কোরআন হাদিস দিয়ে একটা কথা ভুল প্রমাণ করা হয়েছে, সেখানে কোরআন হাদিসের প্রমাণ ছাড়া শুধু আবেগের বশে তর্ক করা মানে আপনি কোরআন-হাদিসের অমান্য করছেন।

আর কোরআন-হাদিসের আলোকে তাবলীগদের সূফীবাদের ভুলভ্রান্ত আকিদা, ও বানোয়াট হাদিস-কিচ্ছা ভুল প্রমান করার পরেও যদি আপনি "ফাজায়েল আমলের" কথাই মেনে নেন, তাহলে আমার কিছু বলা নেই।

► মুল কথাঃ
ফাজায়েল সাদাকাত, ২য় খণ্ড, ২৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

“আবু আলি রোদবারি (রঃ) বলেন, ঈদের দিন একজন ফকির আসিয়া আমাকে বলিল যে এখানে কি কোন পরিস্কার জায়গা যেখানে একজন ফকির মরিতে পারে? আমি ইহা বাজে কথা মনে করিয়া বলিলাম, ভিতরে এসে যেখানে এসে মর। সে ভিতরে আসিয়া ওযু করিয়া দুই রাকাত নামাজ পড়িল ও মারা গেল। আমি তাহার কাফন দাফনের ব্যবস্থা করার পরে দেখিবার জন্য কাফন হটাইয়া দেখিতেই সে চোখ খুলিয়া ফেলিল। আমি তাকে বলিলাম, মৃত্যুর পরেও জীবন? সে বলিল আমি জীবিত ও আল্লাহর প্রত্যেক আশেকই জীবিত থাকেন। আমি তোমায় কাল কিয়ামতে স্বীয় প্রতিপত্তিতে সাহায্য করিব”।

এখানে লক্ষণীয়-

১. ফকির আগে থেকেই তার মৃত্যুর খবর জেনে সে তার মৃত্যুর জায়গা নিজে নিজেই ঠিক করল।
২. সে মারা যাওয়ার পরেও একজন জীবিত মানুষ তাকে তাকে কিছু জিজ্ঞাস করল ও সে শুনল।
৩. কথা শুনার পর সে তার উত্তরও দিল।

এখন দেখা যাক কুরআন কি বলে-

১. আল্লাহ বলেন,
“... কেউ জানেনা আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানেনা কোন স্থানে সে মৃত্যুবরন করবে।” (সূরা লুকমানঃ ৩৪)
এই আয়াতের ব্যখায় নবী (সঃ) বলেন, “এগুলো গায়িবের কথা এবং এগুলো আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেনা।” (সহিহ বুখারি)

কুরআন আমাদের শিক্ষা দেয়, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা সে কোথায় মারা যাবে। আর তাবলীগরা শিক্ষা দেয় ফকির বুজুর্গরা জানতে পারে তারা কোথায় মারা যাবে !!!

২. আল্লাহ বলেন,
“মৃতকে তো তুমি (নবী) কথা শুনাতে পারবে না”।
(সূরা নামলঃ ৮৪)
তাহলে কিভাবে ঐ ব্যক্তি মৃত ফকিরকে প্রশ্ন করল এবং সে শুনল?

৩. আল্লাহ বলেছেন, “জীবিত ও মৃত কখনো সমান না”।
(সুরা আল ফাতিরঃ ২২)
অর্থাৎ, কিন্তু গল্পে জীবিত ও মৃত- উভয়েই কথা বলছে অর্থাৎ উভয়েই সমান।

হাদিসে আছে (প্রথম অংশ দেওয়া হল), “একদিন রাসুল (সঃ) ও একজন ইহুদী বসে ছিলেন। এমন সময় একটি জানাজা অতিক্রম করতে থাকলে সে জিজ্ঞাসা করে, “হে মুহম্মদ, এই লাশ কি কথা বলতে পারে?” রাসুল (সঃ) জবাব দেন, “এই বিষয়ে আল্লাহ অধিক অবগত।.।"
(আবু দাউদঃ ৩৬০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত)

শুধু একটি ঘটনা না, আরও অসংখ্য এমন আজগুবি অনেক কিচ্ছা রয়েছে তাবলীগি ভাইদের একমাত্র পঠিত বইগুলোতে।

এখন দেখতে পাচ্ছি-
১. তাবলীগ ও তাদের আমলের বই এক কথা বলছে।
২. কোরআন হাদিস তার ভিন্ন আর এক কথা বলছে।

যেহেতু দুটো বিপরীত কথা, তাহলে এখানে যেকেউ একজন অবশ্যই মিথ্যাবাদী। যেহেতু, কোরআন ও রাসুল (সঃ) কখনো মিথ্যা বলতে পারেনা, সেহেতু যে গল্পটি বলেছে সে অবশ্যই মিথ্যাবাদী। আর যে বইয়ে মিথ্যাবাদীদের দ্বারা তৈরি আজগুবি গল্প, কিচ্ছা কাহিনী দিয়ে ভরা সে বই অনুযায়ী আমল করতেই কি রাসুল (সঃ) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন? বরং রাসুল বলেছেন,
“নেতা, উপনেতা বা দাম্ভিক ধোঁকাবাজ লোক ছাড়া আর কেউ কিচ্ছা কাহিনী বর্ণনা করেনা”। (আবু দাউদঃ ৩৬২৪)

► তাবলীগ সম্পর্কে কিছু তথ্য যার ব্যখা তাবলীগদের নিজেদেরও জানা নেইঃ

১. তাবলীগরা "মুরুব্বি" শব্দটা বহুল ব্যবহৃত। মুরুব্বিকে ইংরেজিতে Elder বলা হয়। আপনি কি জানেন এই মুরুব্বি বা Elder শুধু দুদল বেশি মান্য করে? ইহুদী ও তাবলীগরা। ১৯০৫ সালে ইহুদীদের "The protocol of the learned elders of Jews" বা "জ্ঞানী ইহুদী মুরুব্বিদের প্রোটোকল" নামে একটি গোপন নথি আবিস্কার হয়। আর তাবলীগ মুরুব্বিদের আবির্ভাব হয় ১৯২৬ সালে।

২. তাবলীগের মুরুব্বিরা কোরআনকে শুধু আরবিতে পড়ে অনেক ফায়দা হাসিলের কথা বললেও তারা সাধারন মানুষকে অর্থ ও তাফসীরসহ কুরআন বুঝার ব্যপারে নিরুৎসাহিত করে। তারা বলে মুফতি, আলেম না হলে বা ১৫টি ভাষায় জ্ঞান না থাকলে কুরআন বুঝা উচিত না। অথচ আল্লাহ বলেছেন,
--> “আমি বুঝার জন্য কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি। কেউ কি বুঝতে চায়"? (সূরা কামার)

৩. ফাযায়েল আমল ও সাদাকাত বইয়ে কোন হাদিসেরই সঠিক উৎস দেওয়া নেই। এই কৌশলের কারনে এখানে দুর্বল, জাল ও বানোয়াট সব হাদিস একসাথে করা গেছে খুব সহজেই। তাবলীগের মুরুব্বিরা ইসলামের আরেকটি ভিত্তি সহিহ হাদিসগ্রন্থ বুখারি, মুসলিম ইত্যাদি তারা অধ্যয়ন করেনা ও করতে উৎসাহ দেয়না। কারন তারা ভয় পায়, মানুষ কোরআন বুঝে পড়লে কোরআন ও হাদিস বিরোধী তাদের ফাজায়েল আমল বই কেউ আর পড়বেনা।

৪. তাদের সিলেবাসে লক্ষ্য করে দেখবেন যে জিহাদ সম্পর্কে কোন বই নেই। ফাজায়েল সব সিরিজ থাকলেও কেন "ফাজায়েল জিহাদ" নেই? তারা সুকৌশলে মানুষকে জিহাদ থেকে দূরে রেখে পরকাল ও দোআ-জিকির নির্ভর ইসলাম প্রচার করতে ব্যস্ত।

৫. পৃথিবীর অনেক ভাষায় “ফাযায়েল আমল” বইটি অনুবাদ হলেও আরবি ভাষায় এটার অনুবাদ করা হয়নি এবং আপনি অনেক আরব তাবলীগ দেখলেও সৌদি আরবে তাবলীগ নিষিদ্ধ। তারা তো সরকার বা বাদশার বিরুদ্ধে কোন কথা বা আন্দোলন করেনা, তাহলে কেন তাদের নিষিদ্ধ করা হল? কারন সকল বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার একমত তাদের আকিদা ভিন্ন।

৬. ভণ্ডনবী গোলাম আহমেদের তৈরি কাদিয়ানীদের যখন অমুসলিম ঘোষণা করার জন্য রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সকল ইসলামী দল একসাথে ১৯৭৪ সালে “খতমে নবী” আন্দোলন করছিল, তখন একমাত্র এই তাবলীগ জামায়াতই কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আন্দোলনে যেতে অস্বীকার করে। অন্যান্য অন্যায়ের প্রতিবাদ, আন্দোলন দূরে থাক, ভণ্ডনবীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করাও নাকি ফেতনা, ফ্যাসাদ !!!

৭. এমন কোন বিধর্মী দেশ নেই, যেখানে তাবলীগরা তাদের দাওয়াতি কাজ করতে পারেনা। এমনকি ইসরাইলেও তাবলীগরা বাধাহীন ভাবে নিশ্চিন্তে চলাফেরা করে, যেখানে অন্যান্য মুসলমানদের প্রবেশ নিষেধ !!!

৮. ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার কথা বললে, তারা বলে তাদের এখনো পর্যাপ্ত জনবল হয়নি। অথচ টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমায় তাদের যে সংখ্যক লোক সমাবেত হয়, তারা সবাই যদি একযোগে ইসলামী রাষ্ট্রের দাবীতে বা যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদে ঢাকার দিকে মার্চ শুরু করে, কোন সরকারের ক্ষমতা নাই এত সংখ্যক মানুষকে আটকানোর।

এসব কথার কি ব্যখা কোন তাবলীগ ভাই দিবেন? না, তাদের নিজেদের কাছেও এসবের কোন ব্যখা নেই।

► যদি ইসলাম বিষয়ে একটা বইয়ে একটাই কোরআন এর বিপরীত বানোয়াট ও নতুন কিছু থাকে, তাহলে মুসলমানদের জন্য সেই একটাই কারন যথেষ্ট সেই বইকে আর অনুসরন না করা।

দেখা যাবে অনেকে আবেগের বশে মুলবিষয় ভিন্ন দুনিয়ার আরও অন্যান্য কিছু নিয়ে এসে তর্ক শুরু করবে, অথচ তারা আমার এই মুল বিষয়ের কোন উত্তর দিবেনা। যারা তর্ক করতে চান, তারা অন্যান্য তর্ক বাদ দিয়ে কোরআন ও হাদিস দিয়ে প্রমাণ করুন, ফাজায়েল আমলের গল্পটি সঠিক। শুধু এই গল্প না, হুবহু এরকম আরও দুইটা গল্প আছে ২৭০ পৃষ্ঠায়। । একজন মুসলমান হিসেবে ইসলামের পক্ষ থেকে তাবলীগদের কাছে এটা চ্যালেঞ্জ করা হল।

হৃদয় নাড়া দেয়ার মত গল্প-পুরোটা পড়ুন

একজন ডাক্তার একটি জরুরী সার্জারির জন্য তাড়াহুড়ো করে এক ডাক্তানকে হাসপাতালে ডেকে পাঠানো হল ।সে তড়িৎ গতিতে হাসপাতালে পৌঁছে গেলো । হাসপাতালে ঢুকেই সে নিজেকে দ্রুত প্রস্তুত করে নিল সার্জারির জন্য ।

এরপর সার্জারির ব্লক এ গিয়ে সে দেখল রোগীর ( একটি ছোট্ট ছেলে ) বাবা ওখানে পায়চারি করছে ডাক্তারের অপেক্ষায় , ডাক্তার কে দেখামাত্র লোকটি চেঁচিয়ে উঠল- আপনার আসতে এত দেরি লাগে? দায়িত্ববোধ বলতে কিছু আছে আপনার? আপনি জানেন আমার ছেলে এখানে কতটা শোচনীয় অবস্থায় আছে ????

ডাক্তার ছোট্ট একটা মুচকি হাসি হেসে বলল- " আমি দুঃখিত, আমি হাসপাতাল এ ছিলাম না, বাসা থেকে তাড়াহুড়ো করে এলাম, তাই খানিক দেরি হল, এখন আপনি যদি একটু শান্ত হন, তবে আমি আমার কাজ টা শুরু করি?

লোকটি এবার যেন আরও রেগে গেলো, ঝাঁঝাঁলো স্বরে বলল- " ঠাণ্ডা হব? আপনার সন্তান যদি আজ এখানে থাকতো? আপনার সন্তান যদি জীবন মৃত্যুর মাঝে দাঁড়াইয়া থাকতো, তবে আপনি কি করতেন? শান্ত হয়ে বসে থাকতেন??

ডাক্তার আবার হাসলেন আর বললেন " আমি বলব পবিত্র গ্রন্থে বলা হয়েছে মাটি থেকেই আমাদের সৃষ্টি আর মাটিতেই আমরা মিসে যাব! ডাক্তার কাউকে দীর্ঘ জীবন দান করতে পারেন না আপনি আপনার সন্তান এর জন্য প্রার্থনা করতে থাকুন আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা টা করব

লোকটি পুনরায় রাগত স্বরে বলল- যখন আপনার টেনশন না থাকে তখন উপদেশ দেয়া সহজ ই !!

এরপর ডাক্তার সাহেব সার্জারির রুম এ চলে গেলো, ২ ঘণ্টার মত লাগলো , শেষে হাসি মুখে ডাক্তার হাসি মুখে বের হয়ে এলেন, "আলহামদুলিল্লাহ অপারেশন সফল" এরপর লক্তির উত্তরের অপেক্ষা না করেই ডাক্তার আবার বলে উঠলেন- আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে নার্স কে জিজ্ঞেস করুন, বলে তিনি চলে গেলেন

এরপর লোকটি নার্স কে বললেন- ডাক্তার এত ভাব নেন কেন? তিনি কি আর কিছুক্ষণ এখানে দারাতে পারতেন না? যাতে আমি ওনাকে আমার সন্তান এর ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করতাম….:@

নার্স কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন আর জানালেন- ডাক্তার এর ছেলে আজ সকালে মারা গেছেন রোড এক্সিডেন্ট এ, তিনি আপনার ফোন পেয়ে ওনার ছেলের জানাজা থেকে উঠে এসেছেন , এখন আবার দৌড়ে চলে গেলেন- কবর দিতে

moral- একজন মানুষ কে কখনো তার বাইরের আচরন দেখে যাচাই করবেন না, কারন আপনি কখনই জানেন না তিনি কিসের মাঝে আছেন

যে ৫ টি বিদেশি গোয়েন্দাসংস্থা বাংলাদেশের মাটিতে সর্বাধিক সক্রিয়..আজকের পর্ব আই .এস. আই ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪২

বাংলাদেশে এ যে ৫ টি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা সর্বাধিক সক্রিয় আছে বলে বিবেচনা করা হয় তার মধ্যে পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স সংক্ষেপে আই এস আই কে তর্ক সাপেক্ষে সবচেয়ে সক্রিয় গোয়েন্দা সংস্থা ধর আহয়ে থাকে। এই সংস্থা বাংলাদেশের অনেক ইতিহাস বিখ্যাত কুখ্যাত ব্যক্তি ও ঘটনঅঘটনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত। (সতর্কীকরনঃ এখানে আমি এমন কিছু তথ্য দিয়েছি যা হয়তো মতাদর্শগত বা অন্যকোন কারনে কারো কারো ভালো নাও লাগতে পারে সেক্ষেত্রে এড়িয়া যাওয়াই ভালো উপায়)

পুর্ব কথাঃ
“সরকারের ভিতরে সরকার” পাকিস্তানের মাটিতে এই নামে বহুল পরিচিত ও সবচেয়ে ক্ষমতাধর সংস্থাটির নাম আই এস আই। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা পরবর্তি পাকিস্তানে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তৈরী হয়েছিলো দুইটি গোয়েন্দা সংস্থা আইবি ও এমআই। কিন্তু ১৯৪৭ সালে পাক ভারত সংঘর্ষের পর সামরিক বাহিনীর প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যগুলির মধ্যে সমন্নয় সাধনে ঘাটতি থাকায় এ জন্য একটি নতুন সংস্থা গঠন জরুরি হয়ে পড়লে। ১৯৪৮ এর মাঝামাঝি ঐ সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত অস্ট্রেলিয় বংশভুত ব্রিটিশ আর্মি অফিসার ও পাকিস্তান সেনা বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্ট্যাফ মেজর জেনারেল রবার্ট চাওথামের পরামর্শে ও তত্বাবধানে আই এস আই তৈরী হয়। প্রাথামিক ভাবে এর কাজ তিন বাহিনীর প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে সমন্নয় সাধন করা হলেও ১৯৫০ সাল থেকে একে আদালা করে শুধুমাত্র পাকিস্তান রাস্ট্রের নিরাপত্তা,স্বার্থ রক্ষা ও অখন্ডতা বজাইয় রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়।প্রথম সংস্থা প্রধান কর্নেল সৈয়দ শহিদ হামিদ।

মুল মন্ত্রঃ বিশ্বাস একতা শৃংখলা।
লোগোঃ

সদর দফতরঃ ইসলামাবাদ সাহরা ই সোহরোয়ার্দি ।খুব অনারম্বর বাহ্যিক নিরাপত্তা বজায় রেখে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের সামনে দিয়ে প্রবেশ করতে হয়।


বর্তমান প্রধানঃ লেঃজেঃ আহামেদ সুজা পাশা।


সদস্য সংখ্যাঃ সম্ভাব্য ২৫,০০০ ও অসংখ্য ইনফর্মার।

লক্ষ ও উদ্দেশ্যঃ
পাকিস্তান রাস্ট্রিয় স্বার্থ ও অখন্ডতা রক্ষা করা।
যে সকল ব্যক্তি,গোস্টি,প্রতিস্টান,বৈদেশিক গোয়েন্দাসংস্থা রাস্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে তাদের উপর নজরদারি করা ও প্র্যোজনে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স পরিচালনা করা।
আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে সক্রিয় কার্যক্রম পরিচালনা।
বিদেশে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করা।
ইসলাম ধর্ম সমুন্নত রাখা ও নিজেদের কার্য সিদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করা।
ভারতের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধে কৌশলগত ভাবে নিজেদের অগ্রবর্তী রাখার উদ্দেশ্যে পার্শবর্তি সব দেশকে প্রভাবিত করা।
সরকার ও সেনা বাহিনীকে বাইরে ও ভিতর থেকে নিয়ন্ত্রন করা।
সরকারের বৈদেশিক নীতি নির্ধারন করা।
পাকিস্তানের সমাজে অবিশ্বাস ও অনৈক্য জিইয়ে রেখে নিজেদের সকল কর্মকান্ডর বৈধতা দেয়া।

ইসলামাবাদে আই এস আই রেসিডেন্স


সাধারন দায়িত্বঃ
নিজেদের অফিসারের,মিডিয়া কার্যকলাপ পর্যবেক্ষন করা।
পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোস্টির উদ্দেশ্য ও গতিবিধি নজর রাখা।
দেশে ও দেশের বাইরে কুটনীতিকদের ওপর নরদারী করা।
বিভিন্ন কমিউনিকেশন ইন্টারসেপ্ট ও মিটরিং করা।
প্রাপ্ত তথয উপাত্ত পর্যালোচনা করা।

সঙ্গঠনঃ ৩ জন ডেপুটি ডাইরেক্টর জেনারেল এর অধীনে ৩ টি কোর বিষয়ের জন্য ৭টি বিভাগ কাজ করে।

ডিডিজি ইন্টার্নাল,ডিডিজি এক্সটার্নাল ও ডিডিজি জেনারেল।
এরমধ্যে ইন্টার্নাল উইং এর ডিডিজি -পলেটিক্যাল ইস্যু ও কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স,
এক্সটার্নাল উইং এর ডিডিজি -বৈদেশিক ইস্যু ও বিশ্লেষন।
ফরেন রিলেশন উইং এর ডিডিজি - পাকিস্তানের বাইরে বৈদেশিক যোগাযোগ রক্ষা ও দেখাশোনা করে।

ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স এর সব কাজ মুলত ৭ টি ডাইরেক্টরেটে দ্বারা পরিচালিত হয়।

১.জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স এক্স (JIX)
এর কাজ মুলত সেক্রেট্রিয়েট হিসাবে দায়িত্ব পালন করা।এই ডাইরেক্টরেট আই এস আই এর অন্যান্য উইং ,আঞ্চলিক সংগঠন ও মাঠ পর্যায়ে অবস্থিত ফিল্ড অফিসগুলির সাথে সমন্নয় সাধন করে এবং এদের প্রাশনিক সাপোর্ট প্রদান করে।এছাড়া প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনার ভিত্তিতে সম্ভাব্য হুমকি বিশ্লেষন করে করনীয় নির্ধারন করে।

২.জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (JIB)
এরা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সবচেয়ে বড় আর ক্ষমতাধর ঈশ্বর।এরা আই এস আই এর অন্যতম অপারেশনাল বাহু । এরাই আই এস আই পলিটিক্যাল উইং নামে সু/কুপরিচিত।তাদের অন্যতম কাজ পাকিস্তানের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক গতিবিধি পর্যবেক্ষন করা এবং সেই সাথে পার্শবর্তি দেশেসমুহের রাজনৈতিক ঘটনা নজরদারিতে রাখা এবং প্রয়োজনবোধে সেই সব দেশের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে হস্তক্ষেপ করা। এদের ৩ টি সাব সেকশন একটি ভারত সংক্রান্ত,একটি এন্টি টেরোরিজম এন্ড ভিআইপি প্রটেকশন,একটি অন্যান্য অপারেশন।

৩.জয়েন্ট কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (JCIB)
বৈদেশিক গোয়েন্দা ততপরতা পরিচালনাকরা এদের দায়িত্ব। মধ্য এশিয়া,দক্ষিন এশিয়া, আফগানিস্তান,মধ্যপ্রাচ্য,ইসরায়েল ও রাশিয়ায় তথ্য সংগ্রহ করা।এছাড়া বিদেশে অবস্থানকারী পাকিস্তানী কুটনীতিক ও অন্যদেশের কুটনীতিকদের নজরদারী করাও এই বিভাগের কাজ।কিছুদিন আগে ওয়াশিংটনে পাকিস্তানী রাস্ট্রদুতের মেমোগেট কেলেংকারী এরা স্পট করে।

৪.জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স নর্থ (JIN)
।জুম্মু কাশ্মীরে আই এস আই এর যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করা এই বিভাগের দায়িত্বে।এরা কাশ্মীরিদের মোটিভেশন প্রদান,ট্রেনিং ক্যাম্প পরিচালনা, প্ল্যান তৈরিতে সহায়তা,গোলাবারুদ সরব্রাহ ছাড়াও কাশ্মীর উপত্যাকায় ভারতি সেনা বাহিনীর সকল মুভমেন্ট এর উপর নজর রাখে।

৫.জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স মিসেলিনিয়াস (JIM)
বিশ্বের বিভিন্ন অংশে ক্ল্যান্ডেস্টাইন কভার্ট অপারেশন চালানো ও যুদ্ধকালীন গোয়েন্দাবৃত্তি পরিচালনা এই বিভাগের কাজ। এই বিভাগ মুলত পারমানবিক প্রযুক্তি,মেসাইল প্রযুক্তি,সমৃদ্ধ প্লুটোনিয়াম সংগ্রহ করার কাজে নিয়োজিত।৮০ ও ৯০ এর দশক জুড়ে রাশিয়া চেক প্রজাতন্ত্র,পোল্যান্ড,উত্তর কোরিয়া সহ বিভিন দেশে ব্যাপক ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশন পরিচালনা করে পাকিস্তানি গুপ্তচরেরা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন তথ্য সংগ্রহ করে আনে।তারা এমন কি উত্তর কোরিয়া থেকে পারমানবিক প্রযুক্তির বদলে জাহাজ ভর্তি উত্তর কোরিয়ান ক্ষেপনাস্ত্র সংগ্রহ করে আনে।

৬.জয়েন্ট সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (JSIB)
পাকিস্তানের সকল ওয়ার্লেস স্টেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর এদের লোক। এরা ওয়ার্লেস ম্যাসেজ ইন্টার্সেপ্ট মনিটরিং,ফোনে আড়িপাতা,ছবি তোলা, চেইন সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স কালেকশন স্টেষন পরিচালনা, মাঠ কর্মীদের কমিউনিকেশন সাপোর্ট দেয়ার দায়িত্ব পালন করে। এছাড়া পার্শবর্তি দেশগুলির সকল কমিউনিকেশন চ্যানেল মিনিটরিং ও ইন্টার্সেপ্ট করে তথ্য সংগ্রহ করে। এরা ভারত পাকিস্তান সীমান্তে বরাবর ও কাশ্মীরে একগুচ্ছা কমিউনিকেশন ট্রাকিং স্টেশন পরিচালনা করে।
ইসলামাবাদ,করাচী,পেশোয়ার, লাহোর, কোয়েটায় এদের অফিস রয়েছে।
৭.জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স টেকনিক্যাল ডিভিশন (JIT)
যরদুর জানা যায় এরা বিস্ফোরক ও কেমিকেল ওয়ার্ফেয়ার নিয়ে কাজ করে।

এই ৭ টি ছাড়াও জয়েন্ট ডিভিশন অফ টেলনিক্যাল ইন্টেলিজেন্স নামে একটি শাখা আই এস আই পরিচালনা করে যারা মুলত বিভিন্ন ট্রেনিং এর সাথে জড়িত।

ট্রেনিং ও রিক্রুটমেন্টঃ আই এস আই এর কর্মীরা সাধারনত সেনা বাহিনীর এস এস জি,নৌ বাহিনীর ও বিমান বাহিনী থেকে আসে।।তবে নিচু স্তরের কর্মীদের অনেক সমইয় প্যারা মিলিটারি ও পুলিশ বাহিনী থেকেও নেয়া হয়। সিভিলিয়ানদের মধ্যে থেকে নেয়ার ক্ষেত্রে ফেডারেল রিপাব্লিক সারভিস কমিশন এর অধীনে বিজ্ঞাপন দেয়া হয় এবং এরা মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্সের কর্মচারী হিসাবে বিবেচিত হয়। পরীক্ষা শেষে বাছাইকৃত দের তালিকা আই এস আই;র কাছে চেক করার জন্য দেয়া হয় ও ব্যাকগ্রাউন্ড চেকিং শেষে মৌখিক ইন্টর্ভিউর মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়া শেষ হয়।

ট্রেনিংঃ

রিক্রুট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পড় নির্বাচিত ব্যাক্তিকে প্রয়োজন ভেদে সল্পমেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি ট্রেনিং প্রদান করা হয়। সল্প মেয়াদে ১৫ দিনের ট্রেনিং এ প্রধানত রিক্রুটের মনবল বৃদ্ধির ব্যাবস্থা করা হয় পাশাপাশি,দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ,ইসলামিক অনুপ্রেরনা,সাধারন কিছু বিষয় যেমন ক্ল্যাসিফায়েড ইনফর্মেশন কি,ছোটখাটো প্রযুক্তির ব্যাবহার,নজরদারির সাধারন কৌশল, বহির্দুনিয়া আর গোয়েন্দা জগতের পার্থক্য ব্যাখ্যা,প্রতিপক্ষের গোয়েন্দা চেনার উপায়,গোয়েন্দা জগতে শ্ত্রু বা বন্ধু নেই সবাই প্রতিদন্দ্বি,সাধারন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যাবহার যেমন রেডিও ট্রান্সমিটার ব্যাবহার ইত্যাদি শেখানো হয়।

এরপর আই এস আই ট্রেনিং স্কুলে তাদের ১ বছরের ট্রেনিং এ এডমিন্সট্রেটিভ, বিদেশে ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশন ট্রেনিং,পালানোর ও গ্রেফতার এড়ানোর কৌশল,ছদ্দবেশ নেয়ার কৌশল,কাভার তৈরী করার উপায়,খালি হাতে আত্মরক্ষা,যোগাযোগ তৈরি,নেটোয়ার্ক তৈরি সহ প্রয়োজনিয় বিষয় শিক্ষা দেয়া হয়।

বিদেশের মাটিতে টার্গেট নির্বাচন ও কার্যক্রম পরিচালনা পদ্ধতিঃ
ধর্মীয় উন্মাদনা ব্যবহার।
মতাদর্শগত দুর্বলতা ব্যবহার।
স্থানীয় সংঠিত অপরাধী চক্রকে নিজের নেটওয়ার্কে একিভুতকরন ।যেমন মুম্বাইয়ে ডি কোম্পানী।
সাধারনত বেসিক কিছু বিষয়ের যেমন সরকার দ্বারা নির্যাতিত ব্যাক্তি বা গোস্টিকে ব্যবহার।
নারী সঙ্গ ও অর্থ লোভী ব্যক্তি।
ধর্মীয় দান দাক্ষিন্য করে এমন সঙ্গঠন ব্যবহার।
আক্রমনাত্তক গোয়েন্দাবৃত্তি যেমন পালটা হামলা,বোমা বিস্ফোরন,মানসিক যুদ্ধ,সামাজিক অস্থিরতা তৈরী,অন্তর্ঘাত পরিচালনা করা।

আই এস আই কে কখনো রীতিমত ব্যবসায়িক ব্রান্ড নেমের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
পাকিস্তানী মডেল ভিনা মালিকের নগ্ন ছবিতে আই এস আই ট্যাটু ব্যাবহার


এপর্যন্ত পরিচালিত গুরুত্বপুর্ন অপারেশনঃ
Some Major successes of ISI
১৯৬০ এর দশকে সি আই এ ও কানাডা সরকারের সাথে সম্মিলিত ভাবে স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলনের জন্য গ্রাউন্ডওয়ার্ক করা এবং পরিকল্পনা প্রনয়ন।
৭০এর দশকের শেষে পাকিস্তানে লিবিয়ান সামরিক এ্যাটাশে কর্নেল হুসেই ইমাম মোবারক জেলে বন্দী ভুট্টোর অনুগত দুইজন নির্বাসিত পাকিস্তানী সাথে জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনা করার সময় আই এস আই এদের সপট করতে সক্ষম হয় এবং দুই পাকিস্তানীকে গ্রেফতার করে।
১৯৭৯ সালের ২৬শে জুন পাকিস্তানের ফরাসী রাস্ট্রদুত ও ফার্স্ট সেক্রেটারী গোপনে কাহুটা পারমানবিক প্রকল্পের ছবি তোলার চেস্টা করলে আই এস আই’র হাতে ধরা পরে এবং পরে জানা যায় যে পাকিস্তানের পারমাবিক প্রকল্পের অগ্রগতির তথ্য সংগ্রহের জন্য ঐ দুইজন সি আই এ’র রিক্রুটেড ছিলো।

আশির দশকে ইসলামাবাদে সোভিয়েত ইউনিয়নের এ্যাম্বেসীতে আই এস আই একজন ইনফর্মার ঢুকাতে সক্ষম হয় এবং তার কাছে জানতে পারে দুতাবাসের থার্ড সেক্রেটারী কারাকোরাম হাওইওয়ের উপর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য জনৈক ঈজাজকে ব্যাবহার করছে।পরে সেই লোক কে স্পট করে তার মাধ্যে সোভিয়েত দুতাবাসকে আই এস আই দীর্ঘ দিন ভুতা তথ্য সরবরাহ করে।
আশির দশক জুড়ে আই এস আই সাফল্যের আথে আফগানিস্তানে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে আফগান মুজাহেদিনদের অস্ত্র সরবরাহ ট্রেনিং প্রদান করে। এসময় তারা কয়েক হাজার স্ট্রিঙ্গার সারফেস টু এয়ার মিসাইল কেজিবি রেড আর্মির চোখ এড়িয়ে আফগানিস্তানে সাপ্লাই করে। কিন্তু ঐ সব অস্ত্র ছিলো সোভিয়েত ইউনিয় এ তৈরী একে-৪৭ যা আই এস আই মোসাদের কাছে থেকে সংগ্রহ আফগানদের দেয় যাতে আমেরিকার বিরুদ্ধে সরাসরি অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ রাশিয়ানরা না করতে পারে। এই পুরো ঘটনার উপর টম হ্যাংক্স অভিনিত “চার্লি উইলসন্স ওয়ার” নামের একটা হলিউড মুভি আছে।

আশির দশকে ইসলামাবাদে ইন্ডীয়ান দুতাবাদের স্কুলের এক শিক্ষিকার বেশে “র” এর অফিসার পাকিস্তানী পারমানবিক প্রকল্পে কাজ করা এক ইঞ্জিয়ারের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতো।দুইজনকেই আই এস আই সপট করতে সক্ষম হয়।
ইলাম দীন নামে একজন “র” গুপ্তচর কে আই এস আই ধরতে সক্ষম হয় ।তার সাহায্যে পুরো একটা “র” স্পাই রিং আই এস আই এর হাতে ধরা পড়ে এবং পরে ভারত কে পাকিস্তানের সমরস্ত্র সম্পর্কে ভুয়া তথ্য সরব্রাহে তাদেরকে বাধ্য করা হয়।

আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ইন্দীরা গান্ধী সোভিয়েতদের গোপন পারমানবিক সাবমেরিন ঘাঁটি তৈরীর চুক্তি করার চেস্টা করলে আই এস আই তা ধরে ফেলে এবং সি আই এর কাছে ফাঁস করে দেয়।
১৯৭৯ সালে ইরানে মার্কিন দুতাবাসে জিম্মী উদ্ধারে অভিযানের জন্য সি আই এ’র লোকজন মার্কিন দুতাবাসে চাকরি রত এক পাকিস্তানী কুকের কাছে থেকে তথ্য সংগ্রহ করে।
১৯৮২ সালে আই এস আই মোসাদ ও সি আই এর যৌথ দল প্যালেস্টাইন ও লেবাননের জন্য পাঠানো সোভিয়েত অস্ত্রের চালান ভুমধ্য সাগরে স্পট করে এবং ধরে ফেলে।পরে সেই অস্ত্র আফগানিস্তানে পাচার করে দেয়।

১৯৯৩ এ মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জ ব্লাস্টের সাথে জড়িত থাকা ও দাউদ ইব্রাহিমের ডি কোম্পানীকে সাংপাঙ্গ সহ করাচীর সেফ হাউজে দীর্ঘ দিন নিরাপদের রাখা।

আফগান যুদ্ধে সোভিয়েতদের পরাজয়ের পর শুন্যতা ব্যাবহার করে আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রন প্রতিস্টা এবং ১৯৯৪ এ আফগান গৃগ যুদ্ধে পাকিস্তানের মুখপাত্র হিসাবে তালেবান দের তৈরী।
১৯৯৩ সালে বসনিয়ার যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর জন্য প্রচুর অস্ত্র সরবরাহ।তালেবানদের প্রথমসারির ১৫ জন নেতার মধ্যে ৭ জনই আই এস আই কর্মী।

এছাড়া ভারতের মাটিতে বহু জঙ্গী হামলা পরিচালনা ও ভারতীয় জঙ্গীদের নিরাপদ অভয়ারন্য হিসাবে পাকিস্তানে আশ্রয় প্রদান।
২০১১ তে পাকিস্তানে এক সাংবাদিক কে হত্যা।

ব্যার্থতাঃ
১৯৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধে কাশ্মীরে অপারেশন জিব্রাল্টারে সাফল্য ধরে রাখার জন্য স্থানীয় জনগনের সমর্থন যোগার করতে সম্পুর্ন ব্যার্থ হয়।

১৯৭০ এ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর প্রত্যাশা অনুযায়ি পাকিস্তানের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এর বিরুদ্ধে অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে মোটামুটি অবস্থানে নিয়ে যেতে ব্যার্থ হয়।

১৯৮১ সালে লিবিয়ানরা মিশর আর শাদ এর সাথে যুদ্ধের জন্য অবসরে যাওয়া পাকিস্তানী সৈনিকদের একটা বিশ্ল দললে মার্সেনারি হিসাবে ভাড়া করে যুদ্ধে পাঠিয়ে দেয় যা আই এস আই অনেক পরে জানতে পারে ততদিনে বিরাট সংখ্যক পাকিস্তানী সামরিক অফিসাররা চাক্রি ছেড়ে বেশি টাকার লোভে লিবিয়াতে ভাড়াটে সৈনিক হিসাবে পাড়ি জমিয়েছে।

১৯৮৪ সিয়াচেন হিমবাহ দখলের জন্য ব্রিটিশ কোম্পানীর কাছে থেকে স্নো ওয়ার্ফেয়র গিয়ার কেনার খবর গোপন রাখতে ব্যার্থ হয় আই এস আই। যার ফলে ভারতীয় সেনা বাহিনী ও “র” অপারেশন মেঘদুত সাফল্যের সাথে পরিচালনা করে সিয়াচেন হিমবাহে পাকিস্তানের আগেই অ্যাডভান্টেজ পজিশনে চলে যেতে সক্ষম হয়।

মোল্লা ওমরকে বুঝিয়ে ওসামা বিন লাদেন কে আমেরিকার হাতে তুলে দিতে ব্যার্থ হয়।
বেনজির ভুট্টো হত্যাকান্ড রোখতে ব্যার্থ।

করাচীতে মার্কিন কুটনীতিক কে অনুসরন করতে গিয়ে তার গুলিতে এক মেজর সহ দুই আই এস আই কর্মী মৃত্যু।

অন্যতম সেরা এজেন্টঃ

৯০ এর দশক জুড়ে আই এস আই পশ্চিম ও পুর্ব ইউরোপ ও দক্ষিন পুর্বএসশিয়ায় মিসাইল টেলনোলজি ও উন্নত পারমানবিক প্রযুক্তির সন্ধানে ব্যাপক অনুসন্ধান ও পাচারের নেটওয়ার্ক তৈরি করে। এসব ক্ষেত্রে সাফল্যের পাশাপাশি আই এস আই’র গুপ্তচরেরা অনেক অপরাধমুলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরে।মেজর জেনারেল সুলতান হাবিব নামের এক আই এস আই কর্মী মস্কোতে পাকিস্তান দুতাবাসে ডিফেন্স এ্যাটাশে হিসাবে কাজ করার সময় সেন্ট্রাল এশিয়ান রিপাব্লিক এর দেশসমুহ,পোল্যান্ড,চেকোশ্লোভাকিয়াতে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত পারমানবিক প্রযুক্তি ও বিশুদ্ধ প্লুটোনিয়াম চুরি ও সংগ্রহের জন্য একাধিক ভাবে ধারাবাহিক ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশন পরিচালনা করে।মস্কো অপারেশন শেষে এরপর তিনি উত্তর কোরিয়ায় রাস্ট্রদুত হিসাবে যোগ দিয়ে সেখানে পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার যৌথ পারমানবিক ও মিসাইল অপারেশনের তত্বাবধান করেন। সেসময় উত্তর করিয়া থেকে জাহাজে বোঝাই করে দূর পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র পাকিস্তানে চোরাচালানে নেতৃত্ব দেন।

ডিফেকশন এবং ডায়মন্ড আস্ত্র ও ড্রাগ ব্যাবসাঃ

সে সময় পাকিস্তানের এক্সপারটদের ক্ষেপনাস্ত্র ট্রেনিং এর জন্য উত্তর কোরিয়ায় পাঠানো হয় আর উত্তর কোরিয় টেকনিশিয়ানরা পারমানবিক অস্ত্র তৈরীর জন্য পাকিস্তানে ট্রেনিং নিতে আসে। এই অপারেশন এর ধারাবাহিকরা ধরে রাখতে উত্তর কোরীয়ায় পাকিস্তন দুতাবাসের থার্ড সেক্রেটারি হিসাবে ক্যাপ্টনে (অব) শাফাকাত চীমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই সুযোগে ক্যাপ্টেন চিমা পরমানু অস্ত্র ও মিসাইল তৈরীর প্রযুক্তি অর্থের বিনিময়ে ইরানি ও ইরাকি ইন্টেলিজেন্স এজেন্সীর কাছে সরবরাহ করে। শুধু তাই নয় রাশিয়া ও সি এস আর দেশগুলি থেকে প্রচুর ইরেনিয়াম ও খুচ্রা যন্ত্রাংশ পাকিস্তানী এজেন্টরা সংগ্রহ করে ইরানি কাছে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। পরে ক্যাপ্টেন চিমার অধীনের গ্রুপ্টাকে দেশে ফেরার নির্দেশ দিলে ক্যাপ্টেন চিমা পালিয়ে চিনের জিনজিয়াং এ চলে আসে।পরে পাকিস্তানের অনুরোধে চীনারা তাকে গ্রেফতার করে ইসলামাবাদ পাঠিয়ে দেয়।এর পরে তার আর তার বিক্রি করা টাকার কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি।তদন্তে বের হয়ে আসে ক্যাপ্টেন চিমা পিপিপি’র সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুপারিশে উত্তর কোরীয়ায় পোস্টিং পেয়েছিলেন।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করার সময় সেখানে থাকে আই এস আই এজেন্টরা আইভরি কোস্ট,সিয়েরোলিয়ন ও কঙ্গোতে অবৈধ হীরা ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে পরে।

বাংলাদেশে আই এস আইঃ

“ভারত পুর্ব পাকিস্তান নিয়ে যাচ্ছে নিয়ে যাক,৫ বছরের মধ্যে আমরা সোনার বাংলা আমাদের কাছে ফিরিয়ে আনব,সোনার বাংলা শুধু আমাদের আর কারো নয়”
- জুলফিকার আলী ভুট্টো।

বাংলাদেশে আই এস আই একটি বেশ বহুল চর্চিত নাম।কাভার্ট ও নন কাভার্ট গুপ্তচর হিসাবে বাংলাদেশে ৪৫০ কভার্ট আই এস আই অপারেটর নিয়োজিত আছে। বেতনভুক্ত ইনফর্মার,সংখ্যালঘু বিহারী ও আদর্শগত ভাবে অত্যন্ত সহানুভুতিশীলদের ধরলে এই সংখ্যা ১ লক্ষর অধিক হবে।কিছু ইসলামিক দাতব্য প্রতিস্টান ও অর্থনৈতিক সংস্থা সাধারনত এদের উর্বর চারনক্ষেত্র।এছাড়া বেশকিছু ন্যাশানাল ও মাল্টি ন্যাশানাল কোম্পানীতে বড় পদে আই এস আই কর্মকর্তারা কাভার্ট অপারেটর হিসাবে আছে।বলা হয়ে থাকে ধানমন্ডি সিটি কলেজের কাছে একটি বহুতল টাওয়ারে অনেক আই এস আই’র

বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে আই এস আই এর অনেক সাফল্য ব্যার্থতা জড়িয়ে আছে
দুস্টলোকেরা বলে বাংলাদেশের একজন সাবেক রাস্ট্রপতি ১৯৭১ সালে আই এস আই’র ডীপ কাভার অপারেটর ছিলেন।যদিও তার সার্ভিস রেকর্ড বলে তিনি মাত্র ৫ বছর আই এস আই তে ছিলেন এবং ১৯৬৩ তে সংস্থা থেকে চলে যান। আর একজন রাস্ট্রপতি ডবল এজেন্ট হিসাবে দীর্ঘদিন থাকার পর আই এস আই তাকে সাময়িক ভাবে ত্যাগ করে।

বলা হয়ে থাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যাকান্ড সি আই এ ও আই এস আই এর যৌথ প্রকল্প। নিজ ডিপ কাভার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আড়াই মাস আগে ফারুক ও একমাস আগে খন্দকার রশিদ মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়। যেখানে ৭১ এ বাঙ্গালী অফিসারদের হয় গৃহবন্দী নয়তো জেলে রাখা হতো সেখানে রশিদ ঐ সময় পাকিস্তানের পোস্টিং থেকে ছুটি নিয়ে স্ত্রী সহ প্রথমে দেশে প্রবেশ করে পরে আগরতলা যায় এবং পরে জিয়াউর রহমানের জেড ফোর্সের সাথে ডিসেম্বরে বাংলাদেশের প্রবেশ করে। ফারুক আগস্ট মাস পর্যন্ত দুবাইয়ে ট্রেনিং এ থাকলেও শেষ সময়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

১৯৭৬ এ বাংলাদেশ এর নাম ইসলামিক রিপাব্লিক অব ইস্ট পাকিস্তান রাখার পরিকল্পনা করলেও মাওলানা ভাসানীর দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

জেনারেল হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ কে পুরানো সম্পর্কের জের ধরে “র” এর কব্জা থেকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে আসা।
বাংলাদেশ কে ব্যবহার করে উত্তরপুর্ব ভারতের স্বাধীনতাকামী গেরিলা গ্রুপগুলিকে অস্ত্র সরব্রাহ।
পশ্চিম সীমান্ত নজরদারিতে থাকায় বাংলাদেশের সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে নিজেস্ব নেটওয়ার্ক এর সাথে যোগাযোগ রক্ষা ও ভারতের জন্য সন্ত্রাসের প্যাকেজ রফতানী করা।

২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সম্পৃক্ততা

১৯৯৬ এ নেদারল্যান্ড প্লপ্ট,১৯৯৭ এ নেপালি আত্মঘাতী বোমারু আই এস আই কর্মী শ্রীবাস্তব এর সাহায্যে ,১৯৯৯ ১০ মিলিয়ন ডলারে এল টিটি ই আত্মঘাতী ভাড়া করা সহ আই এস আই অনেক বার বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে হত্যার একাধিক চেস্টা করে।

বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে আই এস আই’র কর্মীরা সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দরবেশ উপাধি পাওয়া এক নেতা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সাথে আই এস আই’র প্রধান কন্ট্যাক্ট।দুস্ট লোক বলে বি এন পি জামাতের শেষ সময়ে এসে আই এস আই যখন নিশ্চিত হয় শেখা হাসিনা আগামিতে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসছেন তখন তারা দরবেশ এর মারফত আওয়ামী লীগ কে ৩০০ কোটি টাকা নির্বাচনি তহবিল প্রদান করে।যা “র” খুব ভালো ভাবে নেয় নি। ফলাফল তত্বাবধায়ক আমলে আওয়ামী লীগে RATS এর উত্থান ও শেখ হাসিনাকে কোন্ঠাসা করার চেস্টা।

বাংলাদেশ এ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এক ভাই আই এস আই’র অন্যতম প্রধান কন্ট্যাক্ট।
আর জামাতের কথা বলে নাহয় সময় নস্ট নাই করি ক্বেন... কারন সিনিয়ার নেতাদের মধ্যে কম বেশি সবাই পাকিস্তানের প্রতি শুধু সহানুভুতিশীলই না... তাদের সাথে যেকোন পর্যায়ে সহযোগিতা করতে ও সহযোগিতা নিতে প্রস্তুত থাকে।

আরো সংযুক্তিঃ
১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে হরতাল কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে জাসদের মিছিল চলাকালে শিবিরের সশস্ত্র হামলায় সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে জাসদ নেতা মুকিম মারাত্মক আহত হন এবং মারা যান। ঐ হামলায় প্লট আই এস আই'র করা ছিলো।

চট্টগ্রামে এইট মার্ডার ।চট্টগ্রামের বদ্দরহাটে শিবির ক্যাডাররা মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা ৮ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্রাশফায়ার করে নৃশংসভাবে হত্যা করে।নাসির গ্রুপের নাসির সহ প্রত্যেকে আই এস আই ট্রেনিং ক্যাপমের সদস্য ছিলো।

৫ মে, ২০০৭ চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি আর্মি ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থাপনা ভিডিও করার সময় আর্মি সদস্যরা শিবিরের ২ নেতাকে ভিডিও ফুটেজসহ আটক করে।

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা থেকে শিবির ক্যাডার মাহমুদুল চৌধুরীকে পুলিশ সদস্যরা একে-৪৭ এর ৩৩টি বুলেটসহ গ্রেপ্তার করে। যার মধ্যে ১৭টি বুলেট দেশীয় কোনো কারখানায় তৈরি হয়েছে বলে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল মত প্রকাশ করে।

১৯৯৯ রাবি ছাত্র শিবির সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর পাকিস্তানে তৈরী রিভলবার, গুলি ও গান পাউডার সহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।তার কোয়েটায় টেনিং নেয়ার অভিজ্ঞতা আছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি নামে একটি দল আছে যাদের ১২,০০০ কর্মী সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধ ও পরবর্তিতে আফগান গৃহযুদ্ধে লড়াঈ করে ।এদের ট্রেনিং রিক্রুটমেন্ট আসা যাওয়ার সব খরচ আই এস আই বহন করে।

১৯৯২ সাল থেকে রোহিঙ্গা রিফিউজিদের মধ্য থেকে বাছাই করে তাদের ট্রেনিং দিয়ে কাজে লাগায় আই এস আই।

চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র যে জেটিতে ভিড়ল এই জেটিটা শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় ছিল। শিল্পমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া বা জানা ছাড়া অস্ত্র চট্টগ্রামের জেটিতে ভিড়তে পারেনা। আর তখন শিল্পমন্ত্রী ছিলেন জামায়াতে ইসলামের মতিউর রহমান নিজামী।

১২৫ টা গুপ্ত জঙ্গী সংঠন আই এস আই'র হাতে তৈরী যাদের অনেকের বাংলাদেশে শাখা আছে।

মধ্যযুগের একজন বিখ্যাত আরব মনীষির নামে তৈরি করা একটি দাতব্য সংগঠন ও চিকিৎসা কেন্দ্রের নামে আসা ফান্ড এর বড় একটা অংশ স্থানীয় কর্মী আর ইনফর্মারদের বেতন ভাতায় খরচ হয়।

অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে টার্গেট করে আক্রমনের নির্দেশ দেন বাংলাদেশের বড় ইসলামিক আলেমের ছদ্দবেশে একজন আই এস আই'র কর্মী।

পৃষ্ঠাসমূহ