সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১২

শেয়ারবাজারে ৭৫ লাখ টাকা খুইয়ে নির্মম মৃত্যু!

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে সর্বস্ব হারিয়ে ক্ষোভে-হতাশায় আত্দহত্যা করলেন কাজী লিয়াকত আলী ওরফে যুবরাজ (৪০) নামে এক বিনিয়োগকারী। গতকাল সকালে রাজধানীর সূত্রাপুরের গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মিশন রোডের ভাড়া বাসায় সিলিংফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তিনি আত্দাহুতি দেন। স্বজনরা জানিয়েছেন, জমিজমা বিক্রি করে ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে প্রায় ৭৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি। গত এক বছরে শেয়ারবাজারে দরপতনে পুরো নিঃস্ব হয়ে যাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে তিনি আত্দহত্যার পথ বেছে নেন।

লিয়াকতের আত্দহত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে গতকাল দুপুরে রামকৃষ্ণ মিশন রোডের ৬৪/জে/৬ নম্বরের মৃতের বাসার সামনে কালো ব্যাজ ধারণ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সতীর্থ লিয়াকতকে হারিয়ে বিনিয়োগকারীদের অনেকেই চাপা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় ওই ভবনের পাঁচতলায় তার বাসায় গিয়ে দেখা যায় মাতম। একমাত্র মেয়ে মনীষাকে বুকে জড়িয়ে ডুকরে পড়ে কাঁদছিলেন স্ত্রী তাহমিনা। তাকে ঘিরে স্বজন ও প্রতিবেশীরা নানাভাবে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবেগে এ সময় বাসায় উপস্থিত অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে লিয়াকতের স্ত্রী শহীদ নবী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তাহমিনা বেগম সাথী বলেন, 'আমার তো সবই শেষ হয়ে গেল। এখন কথা বলে কী হবে। শেয়ারবাজারে ব্যবসা করতে গিয়ে আমার স্বামী মৃত্যুর পথ বেছে নিলেন। এখন আমাদের কী হবে।' তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার আর কতজনের এভাবে মৃত্যু দেখতে চায়। তিনি জানান, লিয়াকত আলাপচারিতায় প্রায় বলতেন, 'যদি বাজার ঘুরে দাঁড়ায় তাহলে হয় তো তার মেরুদণ্ড সোজা হবে। নইলে যে কি করব জানি না।' সাথী বলেন, সম্প্রতি লিয়াকত কারও সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলতেন না। শেয়ার ব্যবসার এসব নিয়ে বাসায় তিনি খোলামেলা কথাও বলতেন না। তবে রবিবার রাতে তিনি স্ত্রীকে ডেকে বলেছিলেন, 'শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে আমি ফতুর হয়ে গেছি। আমার বিনিয়োগের ৭৫ লাখ টাকা শেষ। উল্টো এতসব ঋণের বোঝা, ভাগ্যে কী আছে জানি না।' রাতের এসব কথার পর গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সবার অগোচরে লিয়াকত শয়নকক্ষে ঢুকে গলায় ফাঁস দেন। সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, স্বজনদের দাবি মতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারিয়ে লিয়াকত আত্দহত্যা করেছেন। এ ছাড়া অন্য কোনো কারণ জানা যায়নি। এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। লিয়াকতের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের আজিমনগরে। পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর রশীদ চৌধুরী জানান, লিয়াকত আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ হাউস ও জয়তু সিকিউরিটিজে লেনদেন করতেন। লিয়াকত তাদের সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। টানা দরপতনে তার পুঁজি শেষ হয়ে উল্টো আরও ঋণে জড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ