সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১২

বিএনপির ১৬ হাজার নেতা-কর্মীর নামে মামলা আর মামলা

চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরে পুলিশের গুলিতে বিএনপির চার কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় বিএনপির ডাকে ওই দুই জেলায় গতকাল শান্তিপূর্ণভাবে অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়েছে। হরতালকে কেন্দ্র করে জেলা দুটিতে কোনো পিকেটিং বা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে দুটি শহরেই পুলিশি টহল জোরদার ছিল বলে জানা গেছে। এদিকে বিএনপির চার কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ নিজেই বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছে। এ তিনটিসহ গত রবিবার বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ ১১টি মামলা করে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে বিরোধী দলের ১৬ সহস্রাধিক ব্যক্তিকে।

উল্লেখ্য, রবিবার জেলায় জেলায় বিএনপির গণমিছিলে পুলিশের বাধাদানকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরে বিএনপির চার কর্মী নিহত হন। এরা হলেন আবুল কাশেম (৫৫), রুবেল, আবুল মৃধা ও লিমন।

শান্তিপূর্ণ হরতাল : চাঁদপুরে বিএনপির গণমিছিলে পুলিশের হামলা ও গুলিতে দুই কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ডাকা হরতাল চলাকালে মাঠে খুব একটা তৎপরতা ছিল না বিএনপি নেতা-কর্মীদের। গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ডাকা এ হরতালে কোনো ধরনের মিছিল-সভা ও পিকেটিং করার সুযোগ পাননি নেতা-কর্মীরা। দুপুর ১২টায় হরতাল শেষ হওয়া পর্যন্ত শহরে কোনো প্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সকাল থেকে রাস্তাঘাট ছিল একবারেই ফাঁকা। চাঁদপুর থেকে দূরপাল্লার কোনো যানবাহনও ছেড়ে যায়নি। ট্রেন চলাচলও বন্ধ ছিল। হরতাল শেষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দ্রুত যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়। পিকেটিং না থাকলেও শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ টহল দিতে দেখা গেছে।

এদিকে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির ডাকে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়। সকাল থেকে জেলার পাঁচ উপজেলার কোথাও দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করেনি। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটেও কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। হরতাল চলাকালে শহরের বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। হরতালের সমর্থনে একদল নেতা-কর্মীকে জেলা শহরের দালালবাজার, মান্দারি, রায়পুর ও মিয়ার রাস্তায় মিছিল-পিকেটিং করতে দেখা যায়। এদিকে, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

১১ মামলায় আসামি ১৬ সহস াধিক : রবিবারের সহিংসতার ঘটনায় সাত জেলায় করা ১১ মামলায় ১৬ সহস াধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলার বাদী পুলিশ নিজেই।

চাঁদপুরে বিএনপির ছয় হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ দুটি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণমিছিল করতে গিয়ে পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় চাঁদপুর মডেল থানায় এ মামলা হয়েছে। রবিবার রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন বাদী হয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের ৬৯ নেতা-কর্মীকে।

লক্ষ্মীপুরে সাত হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা : লক্ষ্মীপুরে সাত হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। মামলাটি রবিবার রাতেই হয়েছে। এ পর্যন্ত মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এনামুল কামাল বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সাহাবউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে ১৮১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়াও অজ্ঞাত সাত হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে এতে। গ্রেফতার হওয়া তিনজন হলেন সদর উপজেলার চরমণ্ডল গ্রামের মাহমুদুন নবী সোহেল, টুমচরের মহিউদ্দিন ও বাঞ্ছানগর গ্রামের মো. জুয়েল।

দিনাজপুরে জোটের ডাকা গণমিছিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে এক হাজার ৫০০ নেতা-কর্মীর নামে মামলা করেছে পুলিশ। ২৯ জানুয়ারি মধ্যরাতে কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম সরকার বাদী হয়ে এ মামলা করেন। জামায়াতের আমির আনোয়ারুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামান উজ্জ্বল, কোতোয়ালি বিএনপি সাধারণ সম্পাদক, প্যানেল মেয়র মুরাদ হোসেন, শিবির শহর শাখার সভাপতি মশিউর রহমান রাজুসহ ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে দণ্ডবিধি ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩৩২/৩৩৩/৩৫৩/৩৪ ধারায় দেড় হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

২৯ জানুয়ারি বিএনপির গণমিছিলকে কেন্দ্র করে সারা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার ঘটনায় ৪২ জনের নামোল্লেখ করে পাঁচ শতাধিক বিএনপি কর্মীর বিরুদ্ধে নীলফামারী সদর থানায় মামলা করা হয়েছে। সদর থানার সাব ইন্সপেক্টর জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগ এনে ঘটনার রাতেই এ মামলা করেন (নম্বর-১৭) বলে জানা গেছে।

বরগুনা জেলা বিএনপি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। পৌরভবনে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে সদর উপজেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হালিমকে প্রধান আসামি করে পৌরসচিব রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ১১০ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে থানায় মামলা করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, পৌরভবনে হামলার সময় জেলা বিএনপি সভাপতি মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক এস এম নজরুল ইসলাম ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) আবদুল খালেক উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে বরগুনা থানার উপ-পরিদর্শক শামসুল আলম বাদী হয়ে জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক এস এম নজরুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। অপরদিকে বরগুনা থানার উপ-পরিদর্শক সফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপ-পরিদর্শক মনসুরের মোটরসাইকেলে অগি্নসংযোগ এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা করেন। বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন ফকির রবিবার রাতে তিনটি মামলার কথা স্বীকার করে জানান, এখন পর্যন্ত ১৩ জন আসামি গ্রেফতার হয়েছে।

কুড়িগ্রামে বিএনপির গণমিছিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দ্রুত বিচার আদালতে দুটি মামলা হয়েছে। এতে বিএনপি-জামায়াতের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল ভোরে দুই বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

গাড়ি ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ ও গণমিছিলে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের ৪৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গতকাল দুপুরে কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদুজ্জামান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ