সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১২

দীপু মনি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি দাবি করেছেন ভারত টিপাইমুখে প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু করেনি। তারা সেখানে শুধুই বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। গতকাল জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ দাবি করেন।

তিনি বলেন, ভারতের নাগাল্যান্ড ও মণিপুর রাজ্যের সীমান্তের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন বরাক নদের বিভিন্ন উপনদীর প্রবাহের কারণে বন্যা হয়। আর এতে আসামে প্রায়ই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ এলাকার বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্যই ভারত টিপাইমুখের উজানে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এ লক্ষ্যে তারা অনুসন্ধান চালাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের ১৯৭২ সালের প্রথম বৈঠকে আসামের কাচাড় ও বাংলাদেশের সিলেটের বন্যার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর উভয় দেশের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে একটি সমীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে এবং বরাকের উজানে ভুবন্দর সাইটে বাঁধ নির্মাণের পরামর্শ দেয়। সংসদে দীপু মনি বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল ২০০৯ সালের ২৯ জুলাই ভারতের প্রস্তাবিত টিপাইমুখ প্রকল্প পরিদর্শন করে। তারা দেশে ফিরে ওই এলাকায় বাঁধ নির্মাণসংক্রান্ত কোনো অবকাঠামো পড়েনি বলে প্রতিবেদন দেয়। উল্লেখ্য, সে সময় প্রতিনিধি দলটি প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য হেলিকপ্টার থেকে নামতে পারেনি। এ কে এম মাইদুল ইসলাম এমপির তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে চীন এখন পর্যন্ত ব্র?হ্মপুত্র নদের পানি প্রত্যাহারসংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব করেনি। চীন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যৌথ আলোচনার একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। আমরা আশা করি, চীনের মধ্যে বিদ্যমান পানিসংক্রান্ত বিষয়াদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করা হবে।

টিপাইমুখ বাঁধ ঠেকাতে মণিপুরে ছাত্র-জনতার শপথ : এদিকে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, যে কোনো মূল্যে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ প্রতিহত করার শপথ নিয়েছে ভারতের মণিপুর রাজ্যের ছাত্র সংগঠন 'হমার স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন'। তারা বরাক ও দুই ভাই নদীর মিলিত প্রবাহের ৫০০ মিটার ভাটিতে মণিপুর-মিজোরাম সীমান্তের কাছে ভারতের প্রস্তাবিত এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের টিপাইমুখ বহুমুখী জলবিদ্যুৎ প্রকল্প যে কোনো মূল্যে ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে। গ্রামবাসীও প্রকল্প এলাকায় কোনো কর্মকর্তাকে ঢুকতে না দিতে বদ্ধপরিকর।

মণিপুরের চুরাচাঁদপুর জেলার টিপাইমুখ গ্রামে শিলচর ও ঢাকার একদল সাংবাদিকের কাছে সংগঠনের নেতারা বলেন, এই গ্রাম থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দূরে প্রস্তাবিত ১৬২ দশমিক ৮০ মিটার উচ্চতার ওই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা সরকার এবং এর সমর্থকদের ওপর ক্ষুুব্ধ। তারা বুকের রক্ত দেবেন তবু তাদের গ্রামে ওই বাঁধ হতে দেবেন না। বাঁধের বিরোধিতার কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন, বাঁধ হলে হাজার হাজার আদিবাসী বাসস্থান এবং জীবিকা হারাবে। উল্লেখ্য, বরাক নদে প্রস্তাবিত টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি যৌথ উদ্যোগে সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নির্মাণ করবে এনএইচপিসি এবং সাতলুজ জলবিদ্যুৎ নিগম লি. (এসজেভিএনএল)। রাজ্যের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০০৮ সালের ১০ অক্টোবর টিপাইমুখ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এর জন্য বন পরিষ্কারের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে নয় হাজার ২১১ কোটি রুপি। শেষ হতে সাত বছর তিন মাস লেগে যেতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ