রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১২

রোগ নির্ণয়ক সফটওয়্যার তৈরী করলেন চবি শিক্ষক ড. হানিফ সিদ্দিকী




কোন অসুস্থ রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে অনেকের মন আঁতকে ওঠে! কারণ সাথে সাথে আপনার মনে জেগে ওঠে একগাদা টেস্টের কথা। যে ল্যাবরেটরি বা প্যাথলজিতে আপনি রোগ নির্ণয়ের জন্য যান না কেন প্রথমেই হাজার হাজার টাকা আপনার পকেটে থাকা চাই। তারপরও ব্যাঙের ছাতার মত গজে ওঠা এসব ল্যাবরেটরি বা প্যাথলজিতে পরীক্ষা করার পরও সঠিক রোগ নির্ণয়য় হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে আপনার মনে আশঙ্কা থেকে যায়। আবার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও উপসর্গ দেখে সঠিক রোগ নির্ণয়ে অনেক সময় ভূল করেন। রোগটি অজানা হলে সমস্যা আরো বেশী। তবে ডাক্তার যদি রোগীর সমস্যাগুলো অনুধাবন করে একটি বা দুটি টেস্টেই রোগ নির্ণয় করে ফেলেন তাহলে রোগীর অর্থ সাশ্রয়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়রানিও কমতো।
রোগ নির্ণয়ে বহু টেস্টের ঝামেলা কমাতে এবার এমনই একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক ড. হানিফ সিদ্দিকী। তাকে এ কাজে সহায়তা করেছেন তার অধীনে গবেষণারত শিক্ষার্থী আরিফ ও কামরুল।
রোগ নিয়ে ব্যাক্তি জীবনে হয়রানি থেকেই এধরণের একটি সফটওয়্যার তৈরির চিন্তা করেন ড. সিদ্দিকী। এ সফটওয়্যারটির মাধ্যমে শুধু টেস্টের সীমিতকরণ নয়, চিকিৎসকরা রোগীর অতীত উপসর্গগুলোও সংরক্ষন করতে পারবে।
রোগ নির্ণয়ক এ সফটওয়্যারটি নিয়ে উপস্থাপিত গবেষণা প্রবন্ধটি ইতোমধ্যেই হংকংয়ে অনুষ্ঠিত জৈব-তথ্যবিজ্ঞানের উপর আয়োজিত একটি আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে সেরা প্রবন্ধ হিসেবে মনোনীত হয়েছে।
সফটওয়্যার প্রসঙ্গে ড. হানিফ সিদ্দিকী বার্তা সংসস্থা আইএনবিকে বলেন, ‘মানবদেহের জিনের পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ দেহের পরিবর্তন হয়। কোন জিন যখন অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন হয় তখন রোগ দেখা দেয়। আমরা মানবদেহের জিনের কোড, রোগের উপসর্গ এবং জিনের সাথে রোগের সম্পর্ক নির্দেশ করে সফটওয়্যারটি তৈরি করেছি।
’গবেষণা করতে গিয়ে তিনি লক্ষ্য করেন, একজন ডাক্তারের ক্ষেত্রে অনেকগুলো রোগ এবং তার উপসর্গগুলো মনে রাখা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু রোগের উপসর্গগুলো বিবেচনা করে রোগ নির্ণয় যদি কোন যন্ত্রের উপর ছেড়ে দেওয়া যায় তাহলে রোগ নির্ণয় করাটি অনেক সহজ হয়ে যায়। এ চিন্তাটি নিয়ে গত কয়েক দশক ধরে সারা বিশ্বে গবেষণা চললেও তা সীমাবদ্ধ ছিল কেবল কয়েকটি রোগকে কেন্দ্র করে। কিন্তু ড. হানিফ সিদ্দিকীর গবেষনা দলটির চিন্তা এ ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম।
তাদের এ সফটওয়্যারটি মানবদেহের ২২টি গ্রুপের ১ হাজার ১২৯টি রোগ এবং এসব রোগের ৯ হাজার ৮২৬টি উপসর্গ বা লক্ষণ নিয়ে কাজ করতে পারে। সফটওয়্যারটিতে রয়েছে দুটি দিক। ইনপুট এবং আউটপুট। ইনপুটে রোগীর রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ গুলো উল্লেখ করা হলে আউটপুটে রোগী সম্ভাব্য কি কি রোগে আক্রান্ত হতে পারে তা দেখাবে। যার উপর ভিত্তি করে ডাক্তার সঠিক রোগটি নির্ণয় করতে পারবে।
এ সফটওয়্যারের রোগ নির্ণয়ক ক্ষমতা সম্পর্কে ড. হানিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি রোগের লক্ষণগুলো উল্লেখ করার পর এ সফটওয়্যার দিয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ সঠিক রোগ নির্ণয় করা যায় । অধিকাংশ সময় প্রথম দুইটি অনুমিত রোগের মাধ্যমে সঠিক রোগটি নির্ণয় করা যায়। আমরা রোগ নির্ণয়ে আরো কতটা নির্ভুলভাবে কাজ করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি।
ড. হানিফ সিদ্দিকী আরো বলেন, ‘রোগীর হিস্ট্রি সংরক্ষণের সুযোগ থাকায় এ সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে রোগী অতীতে কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে তাও জানা যাবে। এক্ষেত্রে এটি ডাটাবেইস হিসেবে কাজ করবে। রোগীর নাম ও ঠিকানা টাইপ করে দিলেই রোগীর অতীত রোগের বিবরণ চলে আসবে।’ড. সিদ্দিকী বলেন, ‘রোগীর রোগের অতীত ইতিহাস জানা থাকলে চিকিৎসক সহজে সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পারেন। এ সফটওয়্যার যে চিকিৎসকরা ব্যবহার করবেন তাদের মধ্যে একই রোগী অন্য চিকিৎসকের কাছে গেলেও দ্বিতীয় বার রোগের হিস্ট্রি বলতে হবে না। চিকিৎসককে প্রয়োজনীয় তথ্য দিলেই তিনি এ সফটওয়্যার ব্যবহার করে রোগীর অতীত হিস্ট্রি জানতে পারবেন।
রোগ নির্ণয়ক এ সফটওয়্যার বাজারজাত করার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা বেশকজন চিকিৎসকের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছি । তারা এটি ব্যবহার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সফটওয়্যারটি আপাতত আমরা সেবা মাধ্যম হিসেবে শীঘ্রই চিকিৎসকদের ব্যবহার করার সুযোগ দিব। বাণিজ্যিকভাবে বাজারে ছাড়ার ইচ্ছে আমাদের নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ