শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১২

সভাপতি বলে কথা, গমের ভাগ না দিলে সভাপতির সংসার চলবে কেমনে । হায়রে সভাপতি, লজ্জ্বা যে কবে হবে!!

ভাগ না দেওয়ায় রংপুরে টিআর (টেস্ট রিলিফ) প্রকল্প তালিকায় স্বাক্ষর করছেন না উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানরা। তারা উপজেলা টিআর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি। ফলে আড়াই মাস ধরে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম ঝুলে আছে। শুরু করা যাচ্ছে না কাবিখা কর্মসূচিও। সংশ্লিষ্ট দফতর বলছে, চলতি মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে না পারলে বরাদ্দ ফেরত পাঠাতে হবে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় টিআর প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রংপুরের আট উপজেলায় ১ হাজার ৩০২ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয় গত বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। ইউনিয়ন কমিটি প্রকল্প তালিকা তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পাঠাবে উপজেলা কমিটিতে। উপজেলা কমিটির অনুমোদনের পর তাতে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে জেলা কমিটি। এরপর শুরু হবে বাস্তবায়ন কাজ। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দফতর থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি প্রকল্প তালিকা চেয়ে উপজেলা কমিটিকে পত্র দেওয়া হয়। ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের অভিযোগ, ভাগ না দেওয়ায় প্রকল্প তালিকায় স্বাক্ষর করছেন না সভাপতিরা। ফলে প্রকল্প তালিকা পাঠানো যাচ্ছে না। সূত্র জানায়, পীরগাছা উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে টিআর প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১৪৯ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলা কমিটির সভাপতি প্রতি ইউনিয়ন থেকে চার মেট্রিক টন করে মোট ৩৬ মেট্রিক টন গমের ভাগ চান।ভাগ না দেওয়ায় তিনি প্রকল্প তালিকায় স্বাক্ষর করছেন না। পীরগাছা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আফছার আলী অভিযোগ করেন, উপজেলা সভাপতি তার কাছে চার মেট্রিক টন গম ভাগ চেয়েছেন। সেটা না দেওয়ায় তিনি প্রকল্প তালিকায় স্বাক্ষর করছেন না। একই অভিযোগ করেন ছাওলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজির হোসেনসহ অন্যরাও। উপজেলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ্ মাহবুবুর রহমান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুয়া প্রকল্প তালিকাভুক্ত করেন। তাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেওয়ার কথা বলায় তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। অন্যদিকে গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন সুজন অভিযোগ করেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভাগ নিয়ে সমন্বয় না হওয়ায় তালিকায় স্বাক্ষর হয়নি। তিনি তার ১৬ মেট্রিক টন গমের বরাদ্দ থেকে ৩ মেট্রিক টন উপজেলা চেয়ারম্যানকে ভাগ দিয়েছেন। অন্য চেয়ারম্যানরাও অনুরূপভাবে ভাগ দেওয়ায় তিন দিন আগে সভাপতি তালিকায় স্বাক্ষর করেন। একই কারণে পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ, সদর, উপজেলা থেকেও প্রকল্প তালিকা পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা অভিযোগ করেছেন। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলা কমিটিতে দ্বন্দ্বের কারণে প্রকল্পের তালিকা পাঠাতে বিলম্ব হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন কাজ শুরু করা যায়নি। তবে ১১ জানুয়ারি কাউনিয়া ও তারাগঞ্জ উপজেলার তালিকা পাওয়া গেছে। অপর ছয় উপজেলার তালিকা না পাওয়া পর্যন্ত জেলা কমিটির সভা হবে না। গ্রামাঞ্চলে আলু ও বোরো চাষাবাদ শুরু হয়েছে। কয়েকদিন পর কাজের জন্য মাটি মিলবে না। চলতি মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে না পারলে বরাদ্দ ফেরত পাঠাতে হবে। এদিকে টিআর প্রকল্পের কাজ ঝুলে থাকায় শুরু করা যাচ্ছে না কাবিখা কর্মসূচি। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৯৬৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ