শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১২

মাদক-বাণিজ্য


রাজধানীর মগবাজার নয়াটোলা পুলিশ ফাঁড়ির অদূরেই মধুবাগ ঝিলপাড়। সেখানেই রমরমা ফেনসিডিলের কারবার। মগবাজার রেলগেট থেকে শুরু করে নয়াটোলা, মধুবাগ, মীরবাগসহ আশপাশের এ মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত পুলিশের সোর্স 'নার্গিস খুড়ি'। এলাকার অনেকে আবার 'বুড়ি' বলেও ডাকে। কেউ বলে নিপার মা। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, পান্নু ফকির আর তার ছেলে সুমনকে সঙ্গে নিয়ে নার্গিস গড়ে তুলেছে মাদকের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক।
গত মঙ্গলবার ঝিলপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১১টার দিকে পটাশের গলি নামে পরিচিত জায়গায় যুবকদের জটলা। প্রকাশ্যে ফেনসিডিলের বোতল হাতে আড্ডারত তারা। তাদের পেছনেই আরেকটি জটলায় গোল হয়ে বসে আছে কয়েকজন। তারা দলবেঁধে সেবন করছে হেরোইন। এভাবে প্রকাশ্যে মাদক সেবন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই পাশের মুদি দোকানি বলেন, 'ওরা পুলিশের সোর্স নার্গিস খুড়ির লোক। ওদের কে কী বলবে?' যুবকদের জটলা পেরিয়ে সামনে যেতেই দেখা গেল রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দুই কিশোরকে ফেনসিডিল খেতে। জাহাঙ্গীর ও হজরত নামের এ দুজন মীরবাগ এলাকার এক বস্তিতে থাকে। দুজনেরই বাবা রিকশাচালক। আলাপ প্রসঙ্গে জানা গেল, জাহাঙ্গীর ও হজরতের মোবাইল ফোনসেট আছে। নার্গিস খুড়ি তাদের চার হাজার টাকা দিয়ে দুটি মোবাইল ফোনসেট কিনে দিয়েছে। এখন তারা খদ্দেরের ফোন পেয়ে তাদের ফেনসিডিল পেঁৗছে দেয়। অনেক খদ্দের নার্গিস, পান্নু ফকির আর সুমনের মোবাইল ফোনে ফ্লেঙ্ িলোডের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে। মধুবাগ, মীরবাগ আর নয়াটোলা এলাকায় তাদের বয়সের ৭০-৮০ জন ছেলে আছে, যারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফেনসিডিল, হেরোইন ও ইয়াবা বিক্রি করে।
দুই কিশোর মাদক বিক্রেতার বক্তব্যে জানা গেল, প্রতিদিন নার্গিসের ১০০ বোতল ফেনসিডিল আর ২০০ পুরিয়া গাঁজা বিক্রি করে দেয় তারা। পারিশ্রমিক বাবদ তাদের দুই বোতল ফেনসিডিল ফ্রি দেওয়া হয়। এই ফ্রি বোতলের একটি তারা ৭০০ টাকায় বিক্রি করে, অন্যটি নিজেরা ভাগ করে খায়। তবে প্রতিদিন নয়, সপ্তাহে তিন দিন। নার্গিস খুড়ি, পান্নু ফকির আর তার ছেলে সুমন পুলিশের সোর্স। ফাঁড়ির জামাল দারোগার সঙ্গে ওদের অনেক সখ্য। তাই তাদের কেউ ধরে না। তারা পুলিশের সামনেই মাদক বেচাকেনা করে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপে জানা গেল এ মাদক চক্র সম্পর্কে নানা তথ্য। পুরো চক্রটি পরিচালনা করে নার্গিস, পান্নু ফকির আর সুমন। তাদের চক্রেও সদস্যসংখ্যা ৫০ জনের মতো। বস্তিতে বসবাস করে এ রকম অনেক স্কুল শিক্ষার্থীকেও তারা মাদক বেচাকেনার কাজে লাগিয়েছে। শিশুদের চক্র পরিচালনা করে নার্গিসের মেয়ে রিপা ওরফে নিপা। সে স্কুলের ব্যাগে করে মাদকদ্রব্য সরবরাহ করে খদ্দেরদের কাছে। নার্গিস আগে শুধু গাঁজা বিক্রি করত। এখন সব নেশাজাত দ্রব্যই পাওয়া যায় তার কাছে। এলাকায় সে ঘন ঘন বাসা বদল করে। পুলিশের সঙ্গে লেনদেন নিয়ে ঝামেলা হলেই গ্রেপ্তার হয়। কয়েক দিন পরই সে আবার ছাড়া পেয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ঝিলপাড় এলাকায় এই মাদক ব্যবসার কারণে বখাটে যুবকদের আনাগোনা বেড়েছে। স্কুলগামী ছাত্রীসহ মহিলাদের পথ চলতে নানা বাজে কথা হজম করতে হয়। পাশাপাশি বেড়ে গেছে চুরি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ; কিন্তু ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের ওপর নেমে আসে নানা হুমকি।
নার্গিসকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে নয়াটোলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, নার্গিস তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। আগেও তাকে কয়েকবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে; কিন্তু জামিনে বের হয়ে নার্গিস আবার এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ