বুধবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১২

মাংশাসী বন্য প্রাণীর সাথে বন্ধুত্ব যারা যে কোন সময় আপনাকে খেয়ে ফেলতে পারে

কোন প্রাণীটি মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু? খুবই সহজ এর উত্তর। কুকুর। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের হাতে সৃষ্ট নেকড়ের এই জাতিটি প্রাচীন গুহা থেকে আজকের আধুনিক ফ্লাট/এপার্টম্যান্টেও মানুষকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে। মরুভূমির বেদূঈনদের শিকারের সঙ্গী থেকে নিঃসঙ্গ বৃদ্ধার কাউচ পর্যন্ত এর অবস্থান। যাই হোক, আমাদের আজকের বিষয় কুকুর নয়, এমনকি বেড়ালও নয়, আমাদের আজকের বিষয় এমন কিছু প্রাণী যারা আপনার মাংশ বেশ মজা করেই খাবে, যারা পোষ মানে না, যারা খাচার ওপাশে থেকে চিড়িয়াখানার সৌন্দর্য বর্ধন করে। এই প্রাণীরা কি মানুষের বন্ধু হতে পারে? ভালবাসা বা স্নেহ এসবের পারস্পারিক বিনিময় কি এইসব প্রাণীদের সাথে সম্ভব? আমরা খুব পুরাতন বাংলা গল্পে পড়েছি সেই ভালুকওয়ালার কাহিনী যে ভালুকের নাচ দেখিয়ে বেড়ায়। একদিন সেই ভালুকওয়ালা খুন হয়ে যায়। অতঃপর সেই ভালুক তার মালিক ও বন্ধুর খুনের প্রতিশোয় নেয়। আজকে আর গল্প নয়, আজকে আমরা দেখব মানুষ যে একটা চিড়িয়া বা নমুনা এবং মানুষ যে পারে না এমন কোন কাজ নাই। পোষ্টটি মূলত ভিডিও সংকলন হবে। এখানে আপনারা বিভিন্ন প্রাণী, যাদের সাথে মানুষের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা একপ্রকার অসম্ভব, তাদের সাথে কিছু মানুষের বন্ধুত্ব দেখতে পারবেন।

প্রথমেই থাকছে এক কুমিরের কাহিনী। চিটো নামের এক মানুষ এবং পোচো নামের এক কুমিরের বন্ধুত্বের কাহিনী। চিটো ২০ বছর আগে পোচোকে খুজে পায়। পোচো এক কৃষকের ছোড়া বুলেটে আহত হয়েছিল। সে সময় পোচোর ওজন ছিল ১৫০ পাউন্ড। পোচো তখন কিছু খেতে পারত না। চিটো তাকে মুরগী, মাছ, ওষুধ এসব খাইয়েছে। পোচো এখন ১৫০ পাউন্ড থেকে প্রায় ১০০০ পাউন্ডে এসে দাড়িয়েছে এবং ১৭ ফিট দৈঘ্য অর্জন করেছে। চিটোর ভাষ্য অনুযায়ী দীর্ঘ সময় একসাথে থাকার পর প্রায় দশ বছর ধরে পোচো চিটোকে বিশ্বাস করা শুরু করে এবং কয়েক বছর ধরে পোচো কিছু খেলাধুলা শিখতে শুরু করে এবং চিটো তার বন্ধুদের এটা দেখায়। অন্য কোন লোক এই বিশাল প্রাণীর ধারে কাছে না ঘেষলেও চিটো তার সাথে স্বচ্ছন্দেই পানিতে নেমে খেলাধুলা করে থাকে।

 

অনেকেই কুমির পালে, কুকুরের মত কুমিরের গলায় দড়ি বেধে হাটাহাটিও করে। কিন্তু পানিতে নেমে কুমিরের সাথে কুস্তাকুস্তি করার মত আল্টিমেট ট্রাষ্ট চিটো এবং পোচোই দেখিয়েছে। 

এবার চিতাবাঘের একটা ভিডিও। বিড়ালের গলাতে কোনদিন দড়ি দেখি নাই। কিন্তু এই লোকে চিতাবাঘরেও কুকুর বানিয়ে ছেড়েছে।



 

ডগ হুইসপারারের টিভিচিত্র আপনারা অনেকেই দেখেছেন। অবাধ্য কুকুরকে বাধ্য করার কাহিনী সেটা। ভুলে যান ডগ হুইসপারের কথা। এইসব কুত্তাফুত্তা দিয়া কিছু হবে না। এবার দেখুন লায়ন হুইসপারের কাহিনী। সিংহরা তাকে নিজেদের দলের একজন হিসেবে গ্রহন করে নিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে সেই প্রথম ব্যাক্তি যাকে সিংহরা নিজেদের দলের সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা জানি যে সিংহীরা তাদের বাচ্চা নিয়ে প্রচন্ড রকম রক্ষনশীল। মা সিংহী তার জীবন দিয়ে হলেও বাচ্চাকে রক্ষা করে। সিংহীর মাতৃত্ব প্রাণী জগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাতৃত্ব। এক সিংহীর বাচ্চা ট্রেনে কাটা গিয়ে মারা যাবার পর, সেই সিংহী মা মৃত বাচ্চার পাশে একটানা বসে ছিল। এমনকি আরেকটি ট্রেন আসার পরেও সে ট্রেনের লাইন থেকে সরেনি, নিজেও ট্রেনের নীচে স্বেচ্ছায় কাটা পড়েছিল। সিংহীরা তাদের বাচ্চাদের কাছে বাচ্চার বাবা পুরুষ সিংহকেও ঘেষতে দেয় না। কিন্তু এই লায়ন হুইসপারার কেভিন রিচার্ডসন একজন সিংহীর আল্টিমেট ট্রাষ্ট অর্জন করেছে। সিংহীর পাশেই সে সিংহীর বাচ্চাদের স্পর্শ করার বিরল সম্মান অর্জন করেছে। পৃথিবীর অনেক সিংহ সিংহীদের কাছে যে বিশ্বাস পায় না, হোমো স্যাপিয়েন্স বা মানুষ হয়েও কেভিন সে বিশ্বাস পেয়েছে। মানব এবং সিংহ এই দুটি জাতির মধ্যেই সে অনন্য একজন। 

 

নীচের এই ভিডিওটি সিংহীর বাচ্চাদের সাথে কেভিনের অনন্য সম্পর্কের ভিডিও। বাচ্চাগুলোর বয়স ১ সপ্তাহেরও কম ছিল সে সময়।

 

---------------------------------

---------------------------------

ভালুকের সাথে মানুষের সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলা উচিত ছিল, কিন্তু আমি এই বিষয়টাকে অন্যভাবে দেখি। উপমহাদেশের একজন মানুষ হিসেবে ভালুক বা হাতি বা বানর আমার কাছে ঠিক পুরোপুরি বন্যপ্রাণী নয়। ভালুক বা হাতির সাথে আমাদের অঞ্চলের মানুষ অনেক আগে থেকেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। হাতির সাথে সম্পর্কগুলোতো কিংবদন্তী। তাই পশ্চিমা বন্যপ্রাণী সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গির এই ক্ষেত্রে আমি দ্বিমত এবং বিশেষ কিছু হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ