শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১২

মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি: হাজার কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি ট্রান্সকমের


বছরের পর বছর ধরে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি করার মধ্য দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি চালিয়ে যাচ্ছে দেশের অন্যতম র্শীষস্থানীয় ব্যবসায়ী লতিফুর রহমানের মালিকানাধীন ট্রান্সকম গ্রুপ। কখনও এক পণ্যের ঘোষণা দিয়ে আরেক পণ্য আমদানি আবার কখনও ঘোষনায় আমদানি মূল্য কম দেখানোর মধ্য দিয়েই চলছে ট্রান্সকমের জালিয়াতি।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এভাবে মিথ্যা ঘোষণায় ট্রান্সকম গ্রুপের পণ্য আমদানির বিষয় বিভিন্ন সময় কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কাছেও ধরা পড়েছে। এরপর তদন্ত কিংবা সাময়িক কিছু আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বারবার থেমে গেছে কিংবা ধামাচাপা পড়ে গেছে ট্রান্সকমের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া।

চট্টগ্রাম বন্দরে ট্রান্সকম গ্রুপের দুটি সবচেয়ে বড় জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হয় ২০১০ সালে। ওই বছরের ৬ এপ্রিল বন্দরের সিসিটি ইয়ার্ডে ট্রান্সকম গ্রুপের নামে আমদানি করা চারটি কনটেইনারের একটি চালান আটক করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। 

Ôকমপ্রেসারÕ নামে যন্ত্রাংশ ঘোষণায় ওই চালানে ট্রান্সকম গ্রুপ আমদানি করে ৫৪০ ইউনিট এয়ার কন্ডিশনারের আউটলেট (যা ঘরের বাইরে স্থাপন করা হয়)। 

চট্টগ্রাম কাস্টমসের শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, Ôউৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান আয়কর ফাঁকির উদ্দেশ্যে পূর্ণাঙ্গ পণ্যকে যন্ত্রাংশ হিসেবে আমদানির ঘোষণা দেয়্।Õ

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় ট্রান্সকম গ্রুপ চালানে আনা পণ্যকে তাদের নয় বলে দাবি করেছিল। তবে এসব আউটলেটের গায়ে ইংরেজিতে লেখা ছিল Ôট্রান্সটেক Õ। কাগজের বাক্সেও লেখা আছে ট্রান্সটেক। ইংরেজিতে আরো লেখা ছিল মার্কেটেড বাই ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী লতিফুর রহমানের মালিকানাধীন ট্রান্সকম গ্র“পের লোগোও ছিল এতে। পরে কাস্টমস কর্মকর্তারা এবিষয়ে তদন্তে নামেন।

কর্মকর্তারা নগরীর শেখ মুজিব রোডের এস এস টাওয়ারে ট্রান্সকমের শো-রুমে গিয়ে দেখতে পান, ট্রান্সটেক ব্র্র্যান্ডের এয়ার কন্ডিশনার সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিক্রির উদ্দেশে। বন্দরে আটক এয়ার কন্ডিশনার আউটলেটের সঙ্গে শো-রুমে রাখা আউটলেটের হুবহু মিল পান তারা। 

আর শুল্ক গোয়েন্দা ও কাস্টমস কর্মকর্তারা তদন্তে ওই আমদানি চালানেও ব্যাপক গরমিল পান। কারণ, আমদানি ঘোষণায় পণ্যের মূল্য দেখানো হয় ২০ হাজার ৭২৭ দশমিক ২০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৪০ টাকা)। অর্থাৎ শুল্ক পরিশোধের আগে প্রতিটি এয়ার কন্ডিশনার আউটলেটের মূল্য দেখানো হয় মাত্র ২ হাজার ৬৬৮ টাকা!

কাস্টমস সূত্র জানায়, আমদানিকৃত চার কন্টেইনার পণ্যের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল এসির যন্ত্রাংশ হিসাবে। কিন্তু তাদের কাছে গোপন খবর ছিল এসবই পূর্ণাঙ্গ পণ্য, কেবল এসির কমপ্রেসার সংযুক্ত নেই। যন্ত্রাংশের শুল্ক ১২৫ শতাংশ আর পূর্ণাঙ্গ পণ্যের শুল্ক ১৪৯ শতাংশ।

এভাবেই ট্রান্সকম গ্রুপ মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর ধরে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বড় ধরনের জালিয়াতির এ ঘটনা পরবর্তী সময়ে ট্রান্সকম গ্রুপ ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়। এ নিয়ে পরে আর কোন উচ্চবাচ্য শোনা যায়নি।

এর আগে ২০১০ সালের শুরুতে ট্রান্সকম গ্রুপ একই পদ্ধতিতে ফিলিপসর ইলকট্রনিক পণ্য আমদানি করে। ইলেকট্রনিক পার্টস ও এক্সেসরিজ ঘোষণা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি করায় সেসময়ও তাদের একটি চালান আটক করেছিল শুল্ক-গোয়েন্দা বিভাগ। পরে ওই চালানের মাধ্যমে ট্রান্সকম গ্র“পের ৬ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির বিষয় ধরা পড়ে। এ নিয়ে আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন আছে। এই তথ্য জানা গেছে বলে কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ