শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১২

আমি

খুব সুন্দর করে ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে মাথায় বেহালা বাজছিল। আমি বেহালায় সুর তুলছিলাম। সুরগুলো ছিল খুব দুঃখের। আমার অর্কেষ্ট্রাবাহিনীতে ছিল একজন বাশীবাদক। সে করুণসুরে কাপাচ্ছিল অডিটোরিয়ামের বাতাস। পিয়ানোবাদক যোগান দিচ্ছিল অন্তরার। আমি শুধু পরিচালনা করছিলাম। অখ্যাত কম্পোজার হিসেবে অডিটোরিয়ামে শ্রোতা ছিল খুবই কম, প্রায় শূন্যের কোঠায়। আমার বাজনা শেষে দেখলাম সর্বসাকুল্যে পাচজন তাদের ঘাড় ডানদিকে কাত করে সজল নয়নে তাকিয়ে আছে। আসলেই সুরগুলো ছিল খুব দুঃখের। পাচজোড়া সজল চোখ দেখেই আমার দুঃখের সাথী আমি খুজে পেলাম। করুণ, খুবই করুণ সুরের প্রতি একধরনের মোহাচ্ছন্নতা নিয়ে আমি স্বপ্নের মধ্যে আরও আরও সুর তৈরী করতে লাগলাম। 

ঘুম ভাংল একটা বিষধর সাপের কাপড় খেয়ে। আমি বিছানা থেকে পুরোপুরি না উঠে চোখ বন্ধ করেই সাপটার হিসহিস শুনতে থাকলাম। অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন তার হিসহিস বন্ধ হবে। কিন্তু সে কিছুক্ষণ পরে আবার একটা কামড় বসিয়ে দিল। এইবার সে বেশ খানিক্ষণ দাত বসিয়ে রাখল। সবটুকু বিষ খুব যত্ন করে ঢেলে দিল। বিষের যন্ত্রনায় আমার শরীরে ভোঁতা যন্ত্রণা শুরু হল। যন্ত্রণা সইতে না পেরে বিছানা থেকে উঠে এন্টিডোট খুজতে লাগলাম। প্রথমেই আমার মাথার কাছের চেয়ারে রাখা ল্যাপটপের ডালাটা খুলে দেখতে লাগলাম সেখানে কোন এন্টিডোট আছে কিনা। ল্যাপটপের মনিটরে সজোরে একটা ঘুষি বসিয়ে দিলাম। এতে ল্যপটপটা চেয়ার সহ উল্টে পড়ে গেল। আপাতত এতে ল্যাপটপের কি ক্ষতিবৃদ্ধি হয়েছে সেটা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে আমি মাথার কাছে রাখা মোবাইলটা হাতড়ে হাতড়ে খুজে বের করলাম। মোবাইলটা পাওয়ার পর ইনবক্সে কেউ ইতিমধ্যে কোন এন্টিডোট পাঠিয়েছে কিনা দেখতে লাগলাম।

১ম বার্তা - আপনাকে পশ্চাতদেশে সজোরে একটা লাথি দেওয়া হল, দয়া করে লাথিটি সংগ্রহ করুন। আগামী তিনদিনের মধ্যে লাথিটি সংগ্রহ না করতে পারলে আপনার লাথির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। ধন্যবাদ।

২য় বার্তা - আপনাকে ঘৃণাভরে একদলা থুতু দেওয়া হল, এখন থেকে আপনি নিয়মিত আমাদের থুতু সেবা পাবেন। বিস্তারিত জানতে নরকের দিকে যাত্রা করুন।

৩য় বার্তা - আপনি একজন বালিশ। আপনাকে তুলা ভরে প্রথমে সেলাই করা হবে। এরপরে বেত দিয়ে আচ্ছামত পিটিয়ে নরম করা হবে। আপনার কোমলতা যাচাই করতে পাচতলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করুন। যদি লাফ দেবার পরে আপনি ফেটে যান তাহলে নিকটস্থ কবরখানায় জমি কিনে ঘুমিয়ে পরুন।

৪র্থ বার্তা - আমাদের প্রাত্যহিক ধর্ষন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে এখনই ডায়াল করুন ৭৭৭। বিস্তারিত জানতে নিকটস্থ নরকে যোগাযোগ করুন।

৫ম বার্তা - আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি আপনাকে এ মাসে শারিরীক নির্যাতনের জন্য অতিরিক্ত ৫ মিনিটের সময় বরাদ্দ করা হয়েছে। এখনই আপনার সবচেয়ে ঘৃণিত শত্রুর সাথে দেখা করে নির্যাতিত হউন।

নাহ কেউ কোন এন্টিডোট পাঠায় নি। ঐদিকে বিষের যন্ত্রণায় আমার ভিতরের খুনী, ধর্ষক, নির্যাতনকারী, ভন্ড, মিথ্যেবাদী সহ অন্যান্য সত্তারা জেগে উঠছে। বেশীক্ষণ এদের ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। এরা প্রতিদিনই জেগে ওঠে। কোনদিন আমাকে খুন করতে হয়, কোনদিন আমাকে মিথ্যে কথা বলতে হয়। আমি যেদিন কাউকে খুন করি, সেদিন তার লাশটা আমার ঘর পর্যন্ত টেনে আনি। তারপরে আমি আমার রান্নায় কাটাকাটিতে ব্যাবহৃত ছুরিটা দিয়ে প্রথমেই তার পেটটা বুক থেকে নাভী বরাবর ফেড়ে ফেলি। তারপরে আমি তার হৃদপিন্ড আর কলিজাটা বের করে গরম তেলে উনুনে ছেড়ে দিই। তার হৃদপিন্ড আর কলিজা তপ্ত কড়াইয়ে চিতকার করতে থাকে। আমি তখন আমার নির্যাতনকারী সত্তাটাকে বের করে এনে আমার পাশে দাড় করিয়ে দিই। সে তখন রান্নার ছুরিটা দিয়ে ভাজতে থাকা কলিজায় আর হৃদপিন্ডে খোচা দিতে থাকে। হৃদপিন্ড আর কলিজার আর্তচিতকারে আমার কড়াইয়ে কম্পন সৃষ্টি হয়। আমার পাশে দাড়িয়ে থাকা নির্যাতনকারী তখন কড়াইয়ের হাতলে হাত দেয়। হাত দিয়ে অনুভব করে সে কম্পন। আবেশে তার চোখ বুজে আসে। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি। দেখতে আমার ভালও লাগেনা, আবার খারাপও লাগে না। দেখার দরকার তাই দেখি। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ