বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১২

তুমি বধু হয়ে এলে না আমার ঘরে



নীল অপরাজিতা না নীল ত্সিকোরী?
এখন তুমি কেবলই স্বপ্ন-সহচরী।
প্রিয়তমা তুমি ঘুমোওনি জানি,
আমিও কাটাই একা বিনিদ্র রজনী।
মায়াবতী মেঘ উড়ে যায় নিকষ আকাশে,
বিষন্ন পাহাড়ের কোল ঘেষে, নি:সঙ্গ চাঁদ হাসে।
নিঝুম রাতের নিস্তদ্ধতা ভেঙে দেয় আমার ভারাক্রান্ত স্মৃতি
আমি হারিয়েছি অসম্ভব সুন্দর একটি রমনী, একজন মায়াবতী

আজ সারা রাত আমি কেবল তোমার কথাই ভাবব,
টুকরো টুকরো স্মৃতি জুড়ে দিয়ে হয়ে যাবে মহাকাব্য।
এইতো এখন রাতের আকাশে উঠেছে রঙিন চাঁদ,
মনে পড়ে যায় মেহেদির রঙে রাঙানো তোমার হাত।

সেই প্রথম সাক্ষাতে আমার দিকে তাকিয়ে তোমার মৃদু হাসি,
দুর্দান্ত ঝড়ের মত, দুরন্ত আলোড়ন তুলে, ফুটিয়েছে কার্নেশন রাশি রাশি।
তোমার আঁখিতে আমার হৃদয় হারিয়েছে কতবার,
প্রথম প্রেমের রোমাঞ্চ ছুঁয়ে কল্পেছি অভিসার ।

হালকা শীতের শরৎ তখন নেমেছে দেশের মাঝে,
সবুজ ফিরিয়ে তরু বিথীকা সেজেছে রঙিন সাজে ।
গ্রীস্মের ছুটি শেষ করে তাই আবার ছুটছি পাঠে,
কাধে ঝোলা ব্যাগ, জ্ঞান ভরা বই নিত্যসঙ্গী সাথে।

সহপাঠিনী তুমি আমার সেদিন ছিলে বাসে,
মধুর কন্ঠে প্রশ্ন শুনি,"নামবেন কি কাছে?"
ঘুরে যখন দেখতে পেলাম আর কেউ নয় তুমি;
মিস্টি করে মৃদু হেসে, সায় জানালাম আমি।

সহপাঠি আমরা দুজন সেদিনের বাসে সহযাত্রী ছিলাম,
বাসস্ট্যান্ড থেকে একত্রে আমরা ক্লাসরূম পর্যন্ত গিয়েছিলাম,
কেউ কাউকে বলতে হয়নি, আপনা থেকেই বুঝলাম,
অনেক দিনের চেনা মিথুনের মত, পাশাপাশি বসলাম,
সেই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিনটি পর্যন্ত আমরা পাশাপাশিই বসেছিলাম,
বোরিং সব ক্লাসগুলোকে, প্রেমের রঙে রাঙিয়েছিলাম।

ঘন্টার পর ঘন্টা পাশাপাশি বসে ক্লাস করেছি,
লেকচার শুনতে শুনতে আলতো করে তোমার হাত ধরেছি,
একদিন দেখলাম তুমি বাঁ হাত দিয়ে লিখছ,
আমি প্রশ্ন করলাম ডান হাত থাকতে বাঁ হাতে কেন কলম ধরছ?
তুমি মৃদু হেসে বললে, “আমার ডান হাতটা যে তোমার হাতে ধরা”।"
তাইতো, আমার হাতে যে স্বর্গ ধরা আছে, তুমি স্বর্গের অপ্সরা!

ক্লাস শেষ হলে, মুখরিত ক্যাম্পাস বেয়ে চলেছি,
ক্যাফেতে বসে কাপের পর কাপ কফি খেয়েছি।
দিন পেরিয়ে, দুপুর ছাড়িয়ে, গড়িয়ে দিয়েছি সন্ধ্যা,
ফুটতে দেখেছি বিকেলের শেষে একটি রজনীগন্ধা।


যা আছে আমার দেশে, তার সব কিছু তোমার দেশে হয়না,
যেমন তোমার দেশে নারকেল পাওয়া যায়না।
ভালোবাসার ঐ শুরুর দিনগুলোতে,
কেবলই চাইতাম তোমাকে আনণ্দ দিতে।
তোমাকে একদিন নারকেলের নাড়ু খেতে দিয়েছিলাম,
"অপূর্ব স্বাদ!" সুন্দর মন্তব্যটি তোমার কন্ঠে শুনেছিলাম।

পরে একদিন তুমি বলেছিলে,
“যেদিন তুমি আমার জন্য পরম যত্নে রাখা
নারকেলের নাড়ুটি মোড়ক খুলে আমাকে খেতে দিয়েছিলে,
সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম তুমি আমায় ভালোবাসো"।
তুমি নি:সন্দেহে বুদ্ধিমতি,
তাই তাজমহল নয়,
একটি নারকেলের নাড়ুই তোমাকে ভালোবাসার সাক্ষ্য দিল।


আমাদের ডরমিটরির সামনে এক বৃদ্ধা বসত ফুলের পশরা নিয়ে
এর অনেক ফুলই আমাদের দেশে অচেনা, দু-একটি ফুল বাদ দিয়ে,
ডালিয়া ফুলটি এমনই একটি ব্যাতিক্রম,
হাস্যজ্জ্বল এর পুস্পরেণু, পাঁপড়ির শোভা মনোরম।
আমার প্রিয় ফুলের তালিকায় আছে ডালিয়ার নাম,
তাই সবচাইতে বড় ফুলটি কিনে তোমাকে উপহার দিয়েছিলাম।
উইকএন্ড-এ পরদিন তোমাদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে,
তোমার ঘরে সাজানো ডালিয়া ফুলটি দেখিয়ে বলেছিলে,
"ভোরবেলা ঘুম ভেঙে যখন ডালিয়া ফুলটি দেখলাম, মনটা এত ভালো হয়ে গেল!"
বন্ধু আমার, তোমার ভালোইতো আমার ভালো, তোমার মনইতো আমার মন
সেখানে গোলাপের বাগিচা উঠল হেসে, কোকিলের গানে ভেসে এলো
প্রিয়তমা আমার, তোমার ঘরের ফুলদানীতে না হোক, না হোক ঘরের শোভাটি,
মনের ফুলদানীতে কি আজও শোভা পায় সেই ডালিয়া ফুলটি?

হৃদয়ের উত্তাপ বিলিয়ে দিয়েছি বাহুপাশে থেকে,
আকাশ ভরা তারা দেখেছি, চাঁদের সাথে জেগে,
আবেগ আপ্লুত তোমার ঠোটে যেই ছুঁয়েছি ঠোট,
উবে গিয়েছে সব অভিমান, মুগ্ধ হয়েছে চোখ।
রোমান্টিক কত সময় কাটিয়েছি, ফায়ার প্লেসের পাশে,
পরম আবেগে আলিঙ্গনের সুখ স্মৃতির তারায় হাসে।

যেদিন তুমি মায়ের সাথে তোমাদের শহরতলির বাড়ীটিতে গেলে,
কেন আমি তোমায় যেতে দিলাম, আমায় একা ফেলে?
আমার মন বলেছিল, আজ তোমার কোন অঘটন ঘটেছে,
বিকেলের দিকে ফোন করে জানলাম, তোমার পায়ে পেরেক ফুটেছে,
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বুঝিনা কেবল, বুঝি ভালোবাসা,
পাগলের মত বাসলে ভালো, দূর কাছ নয় কথা,
মনের মানুষ যে দেশেই থাকুক, যেখানেই সে রয়
অনেক দূর থেকেও তার ব্যাথা অনুভব করা যায়।

সেই তুমি আজ অনেক দূরে, অনেক সময় রেখে,
ভুলেও ভাবিনি আমরা চলে যাব সরে, একে অপরের কাছ থেকে।
যত ভুল শুধু করেছি জীবনে হিসেব নেইনি আমার,
সবচেয়ে ভুল ভেঙেছি হৃদয়, অশ্রু ঝরিয়ে তোমার ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ