শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১২

নামাজকেও বিদ্রূপ করছে প্রথম আলো

এক-এগারোর ঘটনার নেপথ্য কারিগর প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান আবার নতুন করে দেশকে বিরাজনৈতিকীকরণের উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আশঙ্কা করছেন অনেক পর্যবেক্ষক। তবে এবারের প্রস্তুতি আরো ব্যাপক, আর এই প্রস্তুতিতে তিনি তাঁর কমিউনিস্ট-নাস্তিকতার স্বভাব অনুযায়ী আবারও ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, বিলবোর্ডসহ বিভিন্নভাবে প্রচারিত প্রথম আলোর একটি বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়, নানা অপকর্ম চোখের সামনে ঘটতে দেখেও কিছু মানুষ উটপাখির মতো মাথা গুঁজে না দেখার ভান করছে। বিজ্ঞাপনটিতে দেখানো উটপাখির ভঙ্গিগুলোর মধ্যে একটি আছে মুসলমানদের নামাজের সেজদার ভঙ্গি। এই সেজদার ভঙ্গিকে প্রথম আলো 'উটপাখির ভান' হিসেবে দেখিয়ে প্রকারান্তরে ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে বলে সমালোচনা হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে, প্রথম আলো এটা ইচ্ছা করেই করেছে।
প্রথম আলোর এ বিজ্ঞাপন টেলিভিশনসহ অন্যান্য প্রচারমাধ্যমে আসার পর পত্রিকার নিজস্ব ব্লগেই এর বিরুদ্ধে তুমুল সমালোচনা হয়েছে। ব্লগে লেখকরা বিজ্ঞাপনের মাথা নিচু করার ওই ভঙ্গিটিকে সেজদার ভঙ্গিকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে বলে মনে করেন এবং বিষয়টি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার শামিল বলে মন্তব্য করেন। 
এর আগে প্রথম আলো মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন-কাহিনী প্রকাশ করে পরে প্রবল প্রতিবাদের মুখে নাকে খত দিয়েও নিবৃত্ত হয়নি। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেই চলেছে তারা। সচেতন মহল বলছে, বিদেশি প্রভুদের এজেন্ট এই পত্রিকা এসব অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে করে যাচ্ছে। কারণ, তাদের ভয়ংকর অশুভ এজেন্ডা আছে। 
এক-এগারো পরবর্তী সময়ে দুই নেত্রীকে সরিয়ে তৃতীয় শক্তির হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার ব্যাপারে মতিউর রহমানের আগ্রহের কথা দেশব্যাপী সুবিদিত। ওই সময় বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষকে বিষিয়ে তোলার জন্য হেন কোনো চেষ্টা নেই যা প্রথম আলোর পক্ষ থেকে করা হয়নি। ওই সময়ে সামাজিক আন্দোলনের ছদ্মাবরণে 'যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন'সহ অনেক তৎপরতা চালায় প্রথম আলো। 
কিন্তু কোনো ধরনের সাংগঠনিক প্রস্তুতি না থাকায় এক-এগারো পরবর্তী সময়ে এসব নেপথ্য কুশীলবের পক্ষে দুই নেত্রীকে মাইনাস করে ক্ষমতা স্থায়ী করা সম্ভব হয়নি। এক-এগারোর মূল পরিকল্পকদের ধারণা ছিল, দীর্ঘদিন ধরে দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে মানুষকে খেপিয়ে তুললে এক-এগারো পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষ তৃতীয় শক্তির পক্ষে এগিয়ে আসবে। কিন্তু ড. ইউনূসকে দিয়ে রাজনৈতিক দল তৈরির ঘোষণা দেওয়ার পরও যখন সেই আহ্বান জনমনে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়নি, তখন এই চক্রান্তকারীরা ড. ইউনূসকে একা রেখে পেছন থেকে সরে যান। বাধ্য হয়ে ড. ইউনূসকে রাজনৈতিক দল তৈরির উদ্যোগ থেকে সরে আসতে হয়। এ সময় ড. ইউনূস অভিযোগ করে বলেন, যাঁরা তাঁকে সমর্থন দিয়ে দলে যোগ দেবেন বলে কথা দিয়েছিলেন, তাঁরা সরে পড়ায় তাঁর পক্ষে রাজনৈতিক দল গঠন করা সম্ভব হয়নি।
এক-এগারোর সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান আগে থেকেই মঞ্চ প্রস্তুত করছেন বলে আশঙ্কা করছে রাজনীতি বিশেষজ্ঞ মহল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল নিয়ে সরকারি দল আর বিরোধী দলের মধ্যে যখন দ্রুত দূরত্ব বাড়ছে, তখন পরিস্থিতির সুযোগ নিতে মুখিয়ে উঠেছে গণতন্ত্রবিরোধী সেই একই মহল।
এই প্রস্তুতিতে এবার তরুণদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বেশ কিছুদিন আগে প্রথম আলোয় 'যুবশক্তি'র পক্ষে কথা বলা শুরু করেন ড. ইউনূসের ভাই মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর। উল্লেখ্য ড. ইউনূসের প্রস্তাবিত রাজনৈতিক দলের নাম ছিল 'নাগরিক শক্তি'।
নতুন এই রাজনৈতিক উদ্যোগে এবার তরুণদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে সম্প্রতি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তরুণদের রাজনৈতিক তৎপরতায় আশাবাদী হয়ে উঠেছে এই মহল। তারা তৈরি করেছে 'বদলে যাও, বদলে দাও' নামের একটি ফোরাম। প্রথম আলোর গত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই ফোরাম তৈরির ঘোষণা দেওয়া হয়। মূলত একটি ওয়েবসাইটকে ঘিরে প্রাথমিকভাবে এ ফোরামের যাত্রা শুরু হয়েছে এবং এখানে নিবন্ধিত হতে তরুণদের ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রথম আলোর তরুণ পাঠকদের নিয়ে 'বন্ধুসভা' নামের একটি সংগঠন এবং 'প্রথম আলো ব্লগ' নামের একটি ব্লগ সাইট থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে কেন এই নতুন সংগঠনের জন্ম হলো, তা নিয়ে কৌতূহলী হয়ে উঠেছে সচেতন মহল। ধীরে ধীরে দেখা যাচ্ছে, গত এক-এগারোর মতো করেই আবারও প্রথম আলো খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে রাজনীতিবিদদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। তবে এবার তারা বারবারই সামনে আনছে 'তরুণ সমাজ' আর 'যুবশক্তি'কে। গত ১২ জানুয়ারি ড. ইউনূসের ভাই মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের সর্বশেষ লেখা থেকে সচেতন মহল মনে করছে, প্রথম আলো শিগগিরই রাজনৈতিক সংগঠনের আদলে একটি তরুণ সংগঠনের জন্ম দিতে যাচ্ছে। যেকোনো রাজনৈতিক বিপর্যয়ের সময় এ সংগঠন তৃতীয় শক্তিকে সহায়তা করতে পারে। এদিন মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর লিখেছেন, "বড় দুই দল যখন 'প্রতিজ্ঞা' করেছে তারা এই অপরাজনীতি চালিয়ে যাবে, তখন তরুণদেরই উচিত হবে দেশে সুস্থ ও গণতান্ত্রিক (প্রকৃত) রাজনীতির সূচনা করা। কারণ এ দেশের ভবিষ্যৎ তরুণদের হাতে। ভবিষ্যৎ যদি তারা ভালো দেখতে চায়, তাহলে রাজনীতিকে ঠিক করতে হবে সবার আগে। 
বর্তমান সময়ের মিডিয়া ও নাগরিক সমাজের ফোরামগুলো অনেক চেষ্টা করেছে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য। কিন্তু তাৎপর্যময় কোনো পরিবর্তন আনা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে তারা যে চেষ্টা করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে, এ জন্য তারা অভিনন্দন দাবি করতে পারে।"
তাঁর এই লেখা থেকে সচেতন মহল ধারণা করছে, আগেরবার সামাজিক সংগঠনের আদলে প্রথম আলোর চক্রান্ত 'তাৎপর্যময় কোনো পরিবর্তন' আনতে না পারায় এবার তারা তরুণদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে। তবে তিনি প্রকারান্তরে স্বীকার করেছেন, ওই মহলটি 'চেষ্টা করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে'।
কিন্তু তরুণদের সম্পৃক্ত করতে গিয়ে প্রথম আলো যে ব্যাপক মাত্রায় প্রচারণা শুরু করেছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই ধর্মভীরু মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে। বিজ্ঞাপন আকারে এসব প্রচারণায় মুসলমানদের নামাজের সেজদার ভঙ্গিকে বিদ্রূপ করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
এসব বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, দেশে অনেক অনাচার-অত্যাচার চলছে এবং একজন মানুষ সেজদার ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে এসব পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। তারা একে উটপাখি বলে অভিহিত করেছে। তরুণদের আকৃষ্ট করার জন্য কখনো কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ধর্মাচরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো ইঙ্গিত দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশের নজির কোনো মুসলিম দেশে নেই। প্রথম আলো এর আগেও একাধিকবার ইসলাম ধর্মের ওপর আঘাত করে একাধিক প্রকাশনা করেছে। মহানবী (সা.)-কে অপমান করে প্রকাশিত কার্টুনের বিরুদ্ধে একসময় সারা দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। 
নতুন করে সেজদাকে অপমান করার মাধ্যমে প্রথম আলো আবারও দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায় কি না, সেটাই এখন সচেতন মহলের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ