শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১২

গাড়ি আমদানিতে জালিয়াতি


আমদানি নীতি লঙ্ঘন করে দেশে দেদার ঢুকছে পাঁচ বছরের চেয়েও বেশি পুরনো গাড়ি। জাল কাগজপত্র ও চেসিস নম্বর বদলে এসব গাড়ি আনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মংলা বন্দরকে। এর ফলে সরকারও হারাচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব। প্রতারিত হচ্ছেন এসব গাড়ির ক্রেতারাও। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নীতিমালা অনুযায়ী পাঁচ বছরের পুরনো গাড়ি আমদানি করা যায় না। সেই সুযোগ দেওয়া হলে এসব পুরনো গাড়ির দাম পড়বে অনেক কম। এতে রাজধানীসহ সারা দেশে গাড়ির সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। এ কারণেই পাঁচ বছরের পুরনো রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির ওপর সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে।
সূত্র জানায়, ২০১১ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর- এ দুই মাসেই ২৬টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে গাড়ি আমদানি করেছে ২৭৭টি। এর মধ্যে মংলা সমুদ্রবন্দর দিয়েই আনা হয়েছে ২৭২টি গাড়ি। বাকি পাঁচটি আনা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। সর্বাধিক ৬৯টি গাড়ি আমদানি করেছে যমুনা ট্রেডিং করপোরেশন। এ ছাড়া কার শপ ৫৫, আইএম করপোরেশন ২৬, স্টার ট্রেড ১৮, আনাস কার ১২, এওয়াই করপোরেশন ১১, জমজম কার অ্যান্ড অটোমোবাইলস পাঁচ, ডলফিন বাংলাদেশ দুই, জেনারেল মোটরস চার, আইয়ান করপোরেশন দুই, এসএম ট্রেডিং সাত, এলএনবি অটোমোবাইলস এক, হোজাইফা এন্টারপ্রাইজ চার, আখতার ইমপেঙ্ পাঁচ, আদর্শ কুমার বড়ুয়া আট, থামি মোটরস পাঁচ, নাসিমা অটোস ১৫, শাহতাবস ট্রেডিং এক, কেএনএস অটোমোবাইলস সাত, এভোল্ট সিস্টেমস পাঁচ, জাপানস কার এক, সিয়াম মোটরস তিন, হেনা এন্টারপ্রাইজ চার, নাফাস ওয়ার্ল্ড অটো লিমিটেড এক, শিমুল এন্টারপ্রাইজ পাঁচ এবং নেট অটোমোবাইলস একটি গাড়ি অবৈধভাবে আমদানি করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগের এক পত্রে উল্লিখিত আমদানিকারকদের তালিকা সংযুক্ত করে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে কতিপয় অসাধু আমদানিকারক পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমদানি নীতি লঙ্ঘন করে ২০০২, ২০০৩, ২০০৪ ও ২০০৫ সালের বিভিন্ন মডেলের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি করছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমদানি নীতিবহির্ভূত এসব গাড়ি বাজারজাতকরণের ফলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বিভিন্ন জাল দলিল যেমন- জেএএআই সার্টিফিকেট, আরসিসি সার্টিফিকেট, বিল অব ল্যান্ডিং, সিপি, আই/সি ইত্যাদি এবং চেসিস নম্বর পরিবর্তন করে এসব গাড়ি আমদানি করা হচ্ছে। ক্রেতারা না জেনে এসব গাড়ি কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হামিদ শরীফ কালের কণ্ঠকে এ ব্যাপারে বলেন, 'তালিকাভুক্তদের মধ্যে দু-তিনজন আমাদের সদস্য। তাঁদের আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে যাচ্ছি। নোটিশের জবাব গ্রহণযোগ্য না হলে কার্যকরী পরিষদের বৈঠকে তাঁদের সদস্য পদ বাতিলের বিষয়ে প্রস্তাব তোলা হবে। তবে বাকিদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের।' 
চট্টগ্রামে না গিয়ে মংলা বন্দরকেই কেন এসব অবৈধ গাড়ি আমদানির নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নেওয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে বারভিডার সেক্রেটারি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সামনেই কাস্টম হাউস। সেখানে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাস্টম ব্যবস্থা নিতে পারে। অন্যদিকে মংলার কাছাকাছি কোনো কাস্টম হাউস নেই। হাউস আছে খুলনায়, যেখান থেকে মংলার দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। এর ওপর খুলনা কাস্টমে রয়েছে লোকবল সংকট। ফলে খুলনা কাস্টম কোনো খবর পেলেও ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে তারা পেঁৗছানোর আগেই গাড়ি ছাড় করিয়ে নেওয়ার যথেষ্ট সময় পায় ওই সব অসাধু আমদানিকারক।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র জানায়, এ ধরনের অবৈধ গাড়ি আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ইতিমধ্যে অবৈধভাবে আমদানি করা গাড়িগুলো চিহ্নিত করতে মাঠে নামছে এনবিআর।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ