বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১২

অসহায়া নারীদের দুর্গতি

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাচারকারী চক্র প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে এনে বিক্রি করে দিচ্ছে। পুলিশ মাঝেমধ্যে কিশোরী পাচারে জড়িত দু-একজনকে গ্রেপ্তার করলেও থেমে নেই এসব চক্রের তৎপরতা।
গত এক বছরে এই পল্লি থেকে অন্তত অর্ধশত কিশোরী উদ্ধার ও পাচারকারী চক্রের শতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সর্বশেষ গত বুধবার সন্ধ্যায় এখান থেকে এক কিশোরী (১৪) উদ্ধার হয়েছে।
পুলিশ, বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার হওয়া নারী, গ্রেপ্তার পাচারকারী ও মানবাধিকার কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, এই পল্লিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার যৌনকর্মীর বসবাস। দুই হাজার খুপরিতে বসবাসকারী এদের দেখভালের জন্য আছেন প্রায় ৩০০ বাড়িওয়ালী বা মাসি। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা দুই শতাধিক পাচারকারীর; যাদের অধিকাংশই নারী। সরলতার সুযোগে ফুসলিয়ে, চাকরি দেওয়ার কথা বলে, প্রেমের ফাঁদে ফেলে নারীদের এখানে এনে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা স্কুলপড়ুয়া কিশোরী হলে পাচারকারীর কাছ থেকে ক্ষেত্রভেদে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় কিনে নেন তাঁরা। অভিযোগ আছে, এখনো পল্লিতে কয়েক শ অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী আছে।
মঙ্গলবার পল্লি থেকে উদ্ধার হওয়া বরগুনার এক কিশোরী জানায়, চার-পাঁচ বছর আগে তৃতীয় শ্রেণীতে থাকাকালে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকায় এলে মাস খানেক আগে গাবতলী এলাকায় শাহনাজ নামের এক নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই নারী তাঁর শিশুসন্তানকে দেখাশোনার কাজ দেওয়ার কথা বলে তাকে এই পল্লিতে নিয়ে আসেন। ওই নারী তাকে এখানে বাড়িওয়ালী শাহনাজ নামের এক যৌনকর্মীর কাছে ৪০ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করে দেন। শাহনাজের কথামতো কাজ না করায় তাকে মারধর করে। বাধ্য হয়ে বাড়িওয়ালীদের কথামতো কাজ করতে হয়। সে জানায়, ওই বাড়িতে আরও চারজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী আছে। এই পল্লিতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারীর সংখ্যা কয়েক শ হবে বলে সে জানায়।
২১ ডিসেম্বর পল্লিতে অভিযান চালিয়ে এক কিশোরীকে (১৪) উদ্ধার এবং পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে আনোয়ারা বেগম ও মুন্নু মুন্সি নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার হওয়া কিশোরী জানায়, গ্রাম থেকে গত ৩০ নভেম্বর ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরির সন্ধানে গেলে মিরপুর এলাকায় খলিল ও যৌনকর্মী লিলির সঙ্গে পরিচয় হয়। চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাকে পল্লির বাড়িওয়ালী আনুর কাছে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়।
গত ১৯ ও ২২ নভেম্বর পল্লি থেকে দুই জেএসসি পরীক্ষার্থীকে উদ্ধার এবং পাচারকারী এক নারী সদস্যসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই দুই পরীক্ষার্থী জানায়, তাদের একজনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এবং অন্যজনকে চাকরির আশ্বাস দিয়ে পল্লিতে আনা হয়েছে।
পায়াক্ট বাংলাদেশ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিতকরণ প্রকল্প দৌলতদিয়ার প্রোগ্রাম অফিসার শফিকুল ইসলাম গতকাল জানান, তাঁদের সংস্থা গত এক বছরে দৌলতদিয়া যৌনপল্লি থেকে ২৮ জন কিশোরী ও তরুণীকে উদ্ধারে পুলিশকে সহায়তা করেছে। সংস্থাটির হিসাবে এই পল্লিতে বর্তমানে ৬০-৭০ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী আছে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার বলেন, ‘পাচারকারী চক্রগুলো খুবই শক্তিশালী। গত এক বছরে যৌনপল্লিতে অভিযান চালিয়ে অন্তত অর্ধশত কিশোরীকে উদ্ধার ও পাচারকারী চক্রের শতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, অভিযানের আগে খবর পেয়ে এরা পালিয়ে যায়। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ