মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১২

নাসিম-জুবায়ের-বক্কর কে ফিরে দে ছাত্রলীগ, ফিরে দে.।

২০১০ সালের ১৫ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাসিরুল্লাহ নাসিমকে ছাত্রলীগের গুনধর নেতারা ২য় তলা ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করার খবর সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কালো অধ্যায় রচনা করে। সমগ্র দেশে ছাত্রলীগের সুগন্ধী(দুবাতাস) ছড়িয়ে পরেছিল। িসেই হত্যা কান্ডর আজও কোন বিচার হয়নি। একবছরের মাথায় ২০১১ সালে নাসিমের বাবা হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে যখন সংবাদ সম্মেলন শেষ করলেন ঠিক তার এবঘন্টার মধ্যে সাজানো গ্রেপ্তারে কাহিনী শুনতে পেল নাসিমের সহপাঠিরা। ১০ আসামীকে গেপ্তারের ৪ দিন পর ফুলের মালা পরিয়ে তাদেরকে জামিন দেয়া হয়। সেই হত্যাকান্ড আর জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যোলয়ের হত্যাকান্ড একই সুতোই বাধা। একই স্টাইলে ছাত্রলীগের নামধারী ক্যাডারা হত্যা করলো জুবায়ের কে। আমরা কেউ কখনো সেই ব্যথা ভুলতে পারবো না। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত শিক্ষার্থীদের শুধু বহিষ্কার আদেশ দিয়ে নম নম পাঠ করছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আমাদের কি এই হত্যাকান্ডের খবর কি বারবার শুনতে হবে? আর কতো?

আপনাদের জন্য আজকের আপটেড তথ্য নিচে শেয়ার করলাম
রহস্যময় হত্যা
জুবায়ের হত্যার ঘটনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত হয়েছে। তবে তাকে কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সাভারের এনাম মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তবে এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক ড. এ টি এম আবদুল হান্নান বলেন, “চিকিৎসাকেন্দ্রের কাউকে না জানিয়ে অ্যাম্বুলেন্স না নিয়ে জুবায়েরকে সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছিল। সেখান থেকে প্রক্টরকে তার বিষয়ে জানানো হয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা এম আজিম উদ্দিন বলেন, “প্রোক্টরিয়াল বডির সদস্যদের কাছে বহিষ্কৃত তিন শিক্ষার্থী স্বীকার করেছে তারা জুবায়েরকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের পেছন দিকের খোলা জায়গা দিয়ে সাভারে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো গেইট দিয়ে তারা বের হয়নি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস থেকে জুবায়ের হত্যার ঘটনায় প্রক্টর অফিস থেকে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ নামে এক লিফলেট প্রচার করা হয়। সেখানে প্রথমে দাবি করা হয়েছে জুবায়েরকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে প্রেরণ করার জন্য ক্যাম্পাস থেকে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে।

ভিসিপন্থী ছাত্রলীগের ভূমিকা
জুবায়ের হত্যার ঘটনায় ভিসিপন্থী ছাত্রলীগ গ্রুপের নেতা শরিফ-শামিম-আজগর রহস্যময় ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ উঠে আসলেও তারাই জুবায়ের হত্যায় জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দায়ী করে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সকাল ১২টায় ভিসি অধ্যাপক ড.শরীফ এনামুল কবিরকে তার অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে ভিসিপন্থী বলে পরিচিত ছাত্রলীগ নেতারা তাকে মুক্ত করে আনে। এ সময় ‘জাবি ভিসি ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ বলে স্লোগান দেয় তারা। 
ভিসিপন্থী ছাত্রলীগ নেতাদের বক্তব্য
জাবি ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরকার মোঃ আজগর আলী বলেন, “আমি এখন চাকরির আশায় ক্যাম্পাসে থাকি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে জুবায়েরের ঝামেলা ছিল। তাছাড়া আমি আগামী কমিটিতে কোনো পদও প্রত্যাশা করছি না। কারো সঙ্গে শত্রুতার প্রশ্নই আসে না।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিপন্থী ও ছাত্রলীগের নাম ব্যবহারকারী নেতা মোঃ শরিফ বলেন, “জুবায়ের ছাত্রলীগের কেউ ছিল না। তবে আমার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো ছিল।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের গ্রুপ হলের নেতৃত্ব নেয়ার সময় সে হল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল কিনা আমার মনে নেই। তবে আমরা তার হত্যাকারীদের বিচার দাবি করছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম বরকত হলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রনেতা বলেন, “ভিসিপন্থী ছাত্রলীগ নেতারা ভিসিকে অবরোধমুক্ত না করলে তিনি বিপদে পড়তেন। তিনি ছাত্রলীগের দায়দায়িত্ব নেবেন না, সেটা তার মুখের কথা,মনের কথা নয়।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাশেদুল ইসলাম শাফিন ও সাধারণ সম্পাদক নির্ঝর আলম সাম্য বলেন, “ভিসি ক্যাম্পাসে অছাত্রদের লালন পালন করছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষার্থী কেউ নিরাপদে নেই। ভিসি নিরপেক্ষ নন। আমরা চাইলেও হয়ত জুবায়ের হত্যার ঘটনা আলোর মুখ দেখবে না।”

পুলিশের বক্তব্য
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম বদরুল আলম বলেন, “আমরা আশিকুল ইসলাম নামে একজনকে আটক করেছি। সে আটজনের নাম বলেছে। অপরাধীদের খুঁজে বের করতে চেষ্টা করছি।”

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, “ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে কঠোরভাবে তা মোকাবেলা করার নির্দেশনা আছে।”

তদন্ত কমিটির প্রধানের বক্তব্য
জুবায়ের হত্যার ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ আহমেদ বলেন, “তদন্ত কমিটিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৪৫ দিনের সময় দিয়েছে। আমরা আশা করি এ সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেবো।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিগত সময়ে আমি যেসব তদন্ত করেছি সঠিক সময়ে তার প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। বাস্তবায়নের ক্ষমতা আমার নেই।”

শিক্ষকরা যা ভাবছেন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড.নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, “প্রশাসন অবশ্যই জানেন ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত। কারণ তড়িঘড়ি করে তিন শিক্ষার্থীকে শাস্তি প্রশাসন দিয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে তারা কী ব্যবস্থা নেবেন তা পরিষ্কার করতে হবে। অন্যদিকে ভিসির মদদপুষ্ট বাহিনী সোমবার তাকে যেভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবরোধ করা অবস্থা থেকে মুক্ত করেছে সেটিই প্রমাণ করে তিনি তাদের প্রতি নির্ভরশীল।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড.এম এ মতিন বলেন, “অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। প্রশাসনের ক্যাম্পাস পরিচালনা করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।”

শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ.এ. মামুন বলেন, “জুবায়ের হত্যার ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত কলংকজনক ঘটনা। প্রশাসনকে অবিলম্বে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপিপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো.শরিফ উদ্দিন বলেন, “প্রশাসনকে কাজ করে প্রমাণ করতে হবে যে তারা নিরপেক্ষ। জাবির নিরাপত্তা ভালো নেই, এ সত্যটি মেনে নিতে হবে।” 

ভিসি যা বললেন 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড.শরীফ এনামুল কবির বলেন “ছাত্রলীগের কোনো দায়দায়িত্ব নেবো না। তবে জুবায়ের হত্যার ঘটনায় জড়িত কাউকে ক্ষমা করা হবে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ