বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১২

ড. এনামুল ভিসি না গডফাদার (মানিকের সহযোগি / পতিতা দালাল)

ড. শরীফ এনামুল কবীরের মতো ভিসি দেখেনি মানুষ। এমন দলবাজ উপাচার্য এসেছেন কি অতীতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক নাকি বিতর্কিত আধিপত্য বিস্তারকারী ছাত্রলীগের গডফাদার?_ এ প্রশ্নের মুখোমুখি আজ দেশবাসী। বাংলা নাটকের তীর্থস্থান, প্রাকৃতিক নিসর্গের সৌন্দর্যভূমি, শীতের অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত দেশের ঐতিহ্যবাহী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী-শিক্ষকের হৃদয়জুড়ে আজ শুধুই কান্না। তাদের বুকজুড়ে আজ বেদনার দীর্ঘশ্বাসই নয়, অন্যায়-জুলুমের বিরুদ্ধে রীতিমতো ঝড় বয়ে যাচ্ছে। জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের গৌরবময় মাথার মুকুট এখানে ধুলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে। যে ছাত্রলীগ বাঙালির মহান নেতা শেখ মুজিবের স্নেহছায়ায় স্বাধিকার-স্বাধীনতাসংগ্রামে ত্যাগের মহিমায় সাফল্যের গৌরব অর্জন করেছে, বুকের রক্ত দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রক্ত দিতে কার্পণ্য করেনি, নেতা-কর্মী মিলে সুখে-দুঃখে, খেয়ে-না খেয়ে আদর্শ ও দেশপ্রেমের চেতনায় নিরন্তর সংগ্রাম করেছে; সেই ছাত্রলীগের নামে একদল নষ্ট ছেলে প্রশাসনের আশকারা পেয়ে, মূল্যবোধহীন রাজনীতির ছায়ায় বেড়েই ওঠেনি, মানিক নামের কুসন্তান ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে উল্লাস করেছে। এই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক নিসর্গ ও পাখির কলতান শুনতে যাওয়া দর্শনার্থীরই নয়, গোটা দেশবাসীর ভয়ে-আতঙ্কে গা শিউরে উঠেছে। যে পিতা সন্তানকে উচ্চশিক্ষার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন, মনটা তার সারাক্ষণ অশান্তিতে ভরে থাকে। যে মা বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে সন্তানকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান, সারাক্ষণ অজানা আশঙ্কায় মনটা তার খচখচ করে। মেধা ও মননশীলতার তীর্থস্থান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দিন দিন গা ছমছম করা ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসের আস্তানায় পরিণত হচ্ছে। দলীয়করণের অশুভ প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যসহ নানা পদে অধিষ্ঠিত দলকানা শিক্ষকরা আজকের কলঙ্কিত ছাত্রলীগের অসভ্য কর্মীদের মনোরঞ্জন করেন, ছাত্রছাত্রীদের পিতার হৃদয় নিয়ে অভিভাবকত্ব করেন না। ২০১০ সালের ৫ জুলাই আলবেরুনি হল থেকে ছাত্রলীগের একাংশ প্রতিপক্ষ গ্রুপের আরেক কর্মীকে নিচে ফেলে দিলে পরে তিনি মারা যান। সেই তরুণের নিথর দেহের পাশে দাঁড়িয়ে তার স্বজনরা যখন কান্না-আহাজারি করেছেন, গোটা দেশবাসীর মন তখন বিদ্রোহের আগুনে জ্বলেছে। অভিশপ্ত ধর্ষক মানিক নাকি ইতালিতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তিনতলা থেকে ফেলে দিয়ে সংগঠনের কর্মী হত্যার অপরাধে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের শাখা বিলুপ্ত করেছে। এতে ছাত্রলীগের এক পক্ষ ক্যাম্পাসের ভেতরে উপাচার্য ও প্রশাসনের জামাই আদরে দাপটের সঙ্গে চলাফেরার সুযোগ পায়। আরেক পক্ষ ক্যাম্পাসে যাওয়া দূরে থাক, এক বছর ধরে রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছানির্বাসিত ছাত্রলীগ কর্মী জুবায়ের আহমেদ নিরিবিলি ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে চলে যেতে চাইলে তাকে তারই সংগঠনের সহকর্মীরা নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। দেশবাসীর গা শিউরে উঠেছে। জ্ঞান অর্জনের পবিত্র ভূমি জাবি ক্যাম্পাস জুবায়েরের রক্তে কলঙ্কিত হয়েছে। অসভ্য কর্মীরা ছাত্রলীগ নামের সংগঠনটির ললাটে আবারও কলঙ্কের তিলক এঁকে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উপাচার্য ড. শরীফ এনামুল কবীরের নেতৃত্বে কীভাবে ক্যাম্পাসে বিলুপ্ত ছাত্রলীগ কমিটির একাংশকে নিয়ে নির্লজ্জের মতো চলাফেরা করে, দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে তা দেখল। একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বপ্ন অসুস্থ, হিংস , অমানবিক রাজনীতির নিষ্ঠুর আঘাতে ধুলিসাৎ হয়ে গেল। নির্বাক বাবার কাঁধে পাহাড়ের মতো ভারী লাশখানি উঠে গেল। সন্তানহারা মায়ের বুক খালিই হলো না, চোখজুড়ে অশ্রুর ধারা বইল। মায়ের বিলাপে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠল। অথচ সন্তানতুল্য ছাত্রের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে দলবাজ অমানবিক উপাচার্য ড. শরীফ এনামুল কবীরের হৃদয় ব্যথিত হলো না। কি নির্লজ্জের মতো বললেন, এর সঙ্গে ছাত্রলীগ জড়িত নয়! সেনাশাসক জিয়া-এরশাদ জমানায় যেসব উপাচার্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত হয়েছিলেন, জ্ঞান-গরিমায়, উচ্চতায়, অভিভাবকত্বের আসনে অনেক ওপরে ছিলেন। ছাত্ররা ন্যায্য দাবি-দাওয়া নিয়ে তাদের সময়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। কিন্তু আজকালকার উপাচার্যের মতো মূল্যবোধের অবক্ষয়ের তলানিতে আসা শিক্ষকও তখন কোনো ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি। তারা একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীকে সন্তানের মতো যেমন আদর-স্নেহ দিয়ে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আগলে রেখেছেন, তেমনি ছাত্রনেতাদেরও শিক্ষাঙ্গনে সবার সহাবস্থান নিয়ে পরিবেশ রক্ষায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। এরশাদ জমানার শেষ দিকেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি প্রফেসর এম এ রকিব, প্রফেসর আমানুল্লাহ, উপ-উপাচার্য প্রফেসর আতফুল হাই শিবলীর মতো কিংবদন্তিতুল্য শিক্ষককে দেখেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু আমলে অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরীর কথা বাদই দিলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল ফজলের কথা নাইবা বললাম, সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে প্রফেসর ফজলুল হালিম চৌধুরী, এরশাদ জমানায় প্রফেসর শামসুল হক, আবদুল মান্নান, মনিরুজ্জামান মিয়াদের কথা এখনো সব দিকে আলোচিত। নব্বই-উত্তর গণতান্ত্রিক শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরীর মতো উপাচার্যরা সুনামই কুড়িয়ে গেছেন। কিন্তু দিনে দিনে একদিকে ডাকসুসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি গণতান্ত্রিক সরকার ও তাদের আজ্ঞাবহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বন্ধ করে রাখায় ছাত্ররাজনীতি কলঙ্কিতই হয়নি, অসুস্থ ধারা থেকে আজ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে গলায় গলায় ভাব করে চলছেন উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ ক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের বিতর্কিত ও নিন্দিত ভিসি ড. শরীফ এনামুল কবীর। আজকের দলবাজ বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি ও দলীয় আজ্ঞাবহ প্রশাসনের কাছে মেধাবী ছাত্ররা মূল্যহীন। তাদের দলের ক্যাডার না হলে শিক্ষক হওয়া যায় না। তাদের দলীয় অনুসারীর সন্তান না হলে সুযোগ পাওয়া যায় না। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির এমন প্রশাসন দেখতে হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজকের জ্বলন্ত উদাহরণ। জুবায়েরের মৃত্যুতে ক্ষোভ ও দ্রোহের আগুনে জ্বলে ওঠা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যখন ভিসি ড. শরীফ এনামুল কবীরকে অবরুদ্ধ করেছেন হত্যাকাণ্ডের বিচার ও খুনিদের শাস্তির দাবিতে তখন তার নিয়ন্ত্রিত ক্যাম্পাসে অবাধ ক্ষমতাধর ছাত্রলীগের একাংশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছে! একসময় এ রকম পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেট শিক্ষক ও পুলিশ মিলে পরিস্থিতি সামাল দিতেন। ভিসি তিনজন ছাত্রকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ক্যাম্পাসকে কি আদৌ ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদ জ্ঞান অর্জনের তীর্থস্থানে পরিণত করতে পারবেন? নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে না পারলে, প্রশাসন নিরপেক্ষ না হলে, আজ জুবায়েরের লাশ নিয়ে ক্যাম্পাস উত্তাল হয়েছে। কাল বা পরশু কার মায়ের বুক খালি হবে তার গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবেন না। ক্যাম্পাসকে সবার সহাবস্থানের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি মুক্তচিন্তার চারণভূমিতে পরিণত করতে না পারলে, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে না পারলে শীতের অতিথি পাখিরাও গান গাইবে না। লাশের মিছিলে তারাও নির্বাক হবে, না হয় কণ্ঠে দেখা দেবে কান্নার সুর। জুবায়েরের মায়ের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বড় বড় মন্ত্রী কী জবাব দেবেন আজ? এই মৃত্যুর দায় কে নেবে? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্দ হয়েছিলেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এ এ মামুন বলেছিলেন, ছাত্রলীগের কোন্দলের কারণে শিক্ষার্থীরা অনেকদিন ধরেই নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। ছাত্রলীগের একটি অংশ ক্যাম্পাসে রাজনীতি করছে, আরেকটি অংশ বাইরে আছে, এটা ঠিক নয়। ক্যাম্পাসে সব শিক্ষার্থীর সহাবস্থান নিশ্চিত করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা উপাচার্যকে অনেকবার বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ক্যাম্পাসজুড়ে আজ বিলুপ্ত ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তারকারী সন্ত্রাসী অংশটিকে 'উপাচার্য গ্রুপ' বলে ডাকছে সবাই। তবুও লজ্জা নেই ভিসির। গতকাল শিক্ষক সমিতির সভায় প্রক্টর অধ্যাপক ড. আরজু মিয়া সভাপতি ড. এ এ মামুনের প্রতি আক্রমণাত্দক হিংস আচরণ করেছেন। দলবাজ ভিসির আনুগত্য ও অনুকম্পালাভে কিংবা আধিপত্য বিস্তারকারী সন্ত্রাসীদের মন জয় করতে দলকানারা এই শিক্ষাই নিয়েছে। এর চেয়ে বেশি আজকের প্রক্টরদের কাছে কীইবা আশা করা যায়? অথচ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে ছায়াসুশীতল মতিহার ক্যাম্পাসে চিরনিদ্রায় শায়িত দেশের শিক্ষক সমাজের অহঙ্কার ড. শামসুজ্জোহা ঊনসত্তরের উত্তাল গণআন্দোলনে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের অস্ত্রের মুখ থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীদের বুক আগলে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে নিজের জীবনটি উৎসর্গ করেন। ইতিহাস ড. জোহাকে শিক্ষকের মর্যাদার মুকুটই পরায়নি, একজন জাতীয় বীরের আসনেও সম্মানিত করেছে। গোপালগঞ্জের ড. শরীফ এনামুল কবীরকে মনে রাখতে হবে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

বিবেকের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাকে নিজ থেকেই প্রশ্ন করতে হবে তিনি কি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য নাকি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর গডফাদার? প্রথমটি হলে দেশবাসী তার পাশে থাকবে। শেষটি বেছে নিলে এই আসন থেকে তার বিদায় এখন আসন্ন। প্রক্টরকে ড. জোহার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে না পারলে সরে যেতে হবে। এমন উপাচার্য ও প্রক্টর কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের উন্নত সংস্কৃতির শিক্ষায় বিকশিত করা দূরে থাক, তাদের জীবনের নিরাপত্তাও দিতে পারবেন না। অতীতে এই ক্যাম্পাসে ছাত্রীর সম্ভ্রম রক্ষা হয়নি। আজ ছাত্রের জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে। এমন অশুভ ক্যাম্পাস জনগণের ট্যাঙ্রে টাকায় চলতে পারে না। উপাচার্যসহ প্রশাসনকে জবাবদিহি আজ করতেই হবে। ইংরেজি বিভাগের মেধাবী ছাত্র জুবায়েরের জীবনের দায় সরকারকে নিতেই হবে। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার কোনো সুযোগ নেই। অভিভাবকত্বের জায়গা থেকে ক্যাম্পাসকে ছাত্র-শিক্ষকদের নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত করার লড়াইয়ে আজ সবাইকে শামিল হতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ