বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১২

গো আ কে নিয়ে আওয়ামী লীগের এই খেলা নতুন না। এর আগে ১৯৯১ সালে সাধারন নির্বাচনে হেরে যাবার পরে এবং ১২শ সংবিধান সংশোধনী পাশ হবার পরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সাবেক বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়। সেই সময়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য ভোট চাইতে আওয়ামী লীগের তৎকালীন দলীয় প্রধান এবং এখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গো আ-র বাসায় যান।

প্রচারিত খবরে জানা যায় যে সেই সময়ে শেখ হাসিনা গো আ-র পা ধরে সালাম করেন এবং আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থীর জন্য গো আ-র দোয়া এবং তার দলের সমর্থন চান। যদিও বাস্তবতার কারনে সেই সময়ে আওয়ামী লীগ সেই সমর্থন পায় নাই।

এরপরে ১৯৯২ সালে গো আ-কে সরকার গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। উনার কেসের শুনানি হয় উচ্চ আদালতে। উচ্চ আদালত উনাকে মুক্তি দেন। সেই উচ্চ আদালতে যাঁর এজলাসে গো আ-কে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেই বিচারপতি পরবর্তি কালে আওয়ামী লীগের খুব প্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হন। 

এই বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। তিনি কথিত আওয়ামী-লীগ-সমর্থিত-সামরিক-অভ্যুত্থান ঠেকাতে বড়ই দো-নো-মনা করেছিলেন। 

সেই সময়ে রাষ্ট্রপতি সেই সময়ে অভ্যুত্থানের নায়ককে বরখাস্ত করে সাহসী ভূমিকা পাওলন করেছিলেন। এমন কি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ক্যাপ্টেন তাজের [ এখন সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ] এই বন্ধুকে কোন “রিটায়মেন্ট বেনিফিট” দেয় নি। 

এইবারে গো আ-কে ঠেলে পাঠানো হয়েছে জেলে। আমি জানি না এইবারে কার কোথায় কি ভাগ্য খুলে! আমাদের জাতির গেল ৪০ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখলে দেখা যায় যে, গো আ-কে নিয়ে যারাই নাড়াচাড়া করেছে, তারাই পুরস্কৃত হয়েছে।

দেখা যাক এই ট্রাইবুনালের কোন বিচারপতি কোন কোন উপকার বা পুরস্কার লাভ করেন।

যেহেতু আওয়ামী লীগের সমর্থিত ‘সেক্ট্রর কমান্ডার ফোরাম”-এর সম্পাদক জেনারেল হারুন [ উনি একজন প্রাক্তন ছাত্রলীগ কর্মীও বটেন ] ইতোমধ্যে বলেই ফেলেছেন যে সরকারের কাজ-কারবার দেখে মনে হচ্ছে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন না, জামাতের কিছু নেতাকে হয়রানি করছেন। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, আরো অনেক যুদ্ধাপরাধী আছেন আওয়ামী লীগের ছায়াতলে, যেটা উনারা জানলেও এখন বলতে পারছেন না – এবং অবশ্যই ‘রাজনৈতিক’ কারণে।
আমাদের জাতির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো এতোটা বছরেও আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাড়া করাতে পারি নাই। 

মানুষ আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করেছিল এই ভেবে যে, তারা হয় তো ঐ সব খারাপ লোকগুলোর বিচার করবে। লাখো মানুষ যারা নির্মম ভাবে হত্যা করেছে, তাদের বিচার হবে না, এইটা মানুষ মানতে পারে নাই। তাই আওয়ামী লীগের এই আশ্বাসের প্রতি আস্থা রেখে তাদের ক্ষমতায় এনেছিল।

কিন্তু এখন পরিস্থিত আর পরিবেশ বলছে, আওয়ামী লীগ অন্য এজেন্ডা আঁচলের নীচে লুকিয়ে ‘দশ টাকাসের চাল খাবো” / “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবো” শ্লোগান তুলে ভোট চেয়েছে। আর জেনারেল হারুনদের মত দেশপ্রেমীরা সেই কথায় ভুলে তাদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। 

এই এখন গো আ-কে গ্রেফতার করলেও তার যে সঠিক বিচার হবে, তার কোনই গ্যরান্টি নাই। কেননা প্রসিকিউশান যথাযথ অভিযোগ দায়ের করতেই ব্যর্থ হয়েছে প্রথম বারে। এই সরকারী উকিলদের উপরে আর ভরসা করা যায় না। আর সরকারের সফলতা যেহেতু গো আ-কে জেলে ভরা, সেই ক্ষেত্রে তারা ১০০% ভাগ সফল। তাই গো আ-র কোন বিচার হবে বলে মনে হচ্ছে না। 

যা হতে পারে, তা একটা পাতানো খেলা, যেখানে জামাতকে আগামী নির্বাচনে অনেক আসন ছেড়ে দিতে হবে যাতে করে গো হারা হারার চান্স থাকলেও আওয়ামী লীগ যাতে কিছু আসন পেতে পারে। আমাদের নির্বাচনী ইতিহাস বলে যে কোন ক্ষমতাসীন দল তাদের মেয়াদান্তের নির্বাচনে জিততে পারে নাই। তাই আওয়ামী লীগ যত চেষ্টাই করুক না কেন, এই ইতিহাস তাদের জানা আছে, তাই গো আ-কে জেলে পুরে ১০০% "সফলতা" দাবী করে এবং জামাতের কনফার্ম সিটগুলোর ব্যাপারে নিশ্চয়তা পেলেই এই বিচার স্থবির হয়ে যাবে।

যুদ্ধাপরাধী - সে যেই হোক না কেন, তার বিচার বাংলার মাটিতে হতে হবে। এই দাবী থেকে আমরা নড়তে পারি না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ