বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১২

১.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জিয়াউর রহমান ছাত্রদলের কর্মীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন। আপনি দয়া করে ছাত্রলীগের অতি উৎসাহী এবং নাম উজ্জলকারী সদস্যদের (যারা সংখ্যায় ছাত্রলীগের মোট কর্মী এবং নেতাদের তুলনায় খুবই নগন্য সংখ্যাক) হাতে বুলেট এবং কনডম তুলে দিন। আপনার স্স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশে তারা যেন শিবিরের মত রামদা চাপাটি দিয়ে মানুষকে পিটিয়ে, কুপিয়ে খুন না করে। একটা বুলেট খরচ করেই কষ্টহীন ভাবে একজন মানুষকে কষ্টহীন মৃত্যু বরণ করার সুযোগ দেয়। তাদের ক্ষনিকের জৈবিক আনন্দের ফলে যেন কেউ তাদের মত সন্তান জন্ম না দেয় তার জন্য কনডম সরবরাহটা নিশ্চিত করুন।
২.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে তুলে দিয়েছেন খাতা আর কলম। বর্তমানে ছাত্রলীগের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের অধিকাংশই এই খাতা আর কলমকে তুলে রেখেছেন। তারা এবং তাদের অনুসারীরা আত্ননিয়োগ করেছেন দখল, খুন, ইভটিজিং এবং ধর্ষনের মত মহত সব কার্যক্রমে। আপনার দেয়া খাতা আর কলম হয়তো কেউ কেউ ব্যবহার করেন তোলা আর ফিটিং-এর হিসাব রাখার কাজে, কাকে কাকে খুন করতে হবে, পিটাতে হবে, সাইজ করতে হবে তার তালিকা লিখার কাজে। গত তিন বছরে ছাত্রলীগ নতুন ঐতিহ্যে প্রবেশ করেছে। আপনার ভূমিকা আর ছাত্রলীগের নির্ভিক আচরণ এটাই প্রমান করে যে, এটাই আধুনিক ছাত্রলীগের প্রকৃত ঐতিহ্য এবং এই ঐতিহ্য হতে ছাত্রলীগের মুক্তি নাই।
৩.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ছাত্রলীগের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণ ছিল ছাত্রলীগের বেপরোয়া কর্মকান্ড। ছাত্রলীগের সদস্যদের শাসন না করে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন। তবুও সবাই আশা করেছিল যে, আপনার এই অভিমানের গুরুত্ব ও মূল্য আপনার সোনার সন্তানেরা দিবে। কিন্তু বাস্তবতা দু:খজনক এবং মর্মান্তিক এবং আরো মর্মান্তিক বিষয় হল ছাত্রলীগের কোন সুকর্মের জন্য আপনার অভিমান গলে পানি হয়ে গেল তা কারো কাছেই স্পষ্ট নয়।
৪.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ছাত্রলীগের কাউন্সিল সম্পন্ন হবার পরে অভিন্দনের বন্যায় ভেসে গেছেন আপনি। ছাত্রলীগের সকল কমিটির ব্যানারে আপনাকে অভিনন্দন জানান হয়েছে আপনার নেতৃত্ব একটি সফল কমিটি গঠনের জন্য। প্রতিটি ব্যানারে আপনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বার এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সোনার বাংলা গড়বার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছিল। অথচ ছাত্রলীগের কার্যক্রমের কোন গুণগত পরিবর্তন হয় নাই। শুধু আমরা দেখলাম ছাত্রলীগের সাথে আপনার অভিমানের পর্বটার মধুর সমাপ্তি ঘটেছে।
৫.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যে কলেজগুলোতে রাজনৈতিক কার্যক্রম চলে সেখানে ছাত্রলীগ এক আতংকের নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রশাসন এবং ভিসি নিয়োগে দলীয়করণ করা হয়েছে। দলীয়করণে ক্ষেত্রে এবার সুযোগ দেয়া হয়েছে অদক্ষ, অযোগ্য আর নির্লজ্জ দলবাজদের। যাদের কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল দলের নাম ব্যবহার করে ফায়দা হাসিল করা। সর্বশেষ উদাহরণ হল জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুয়েট। জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাগুলো পরস্পর সাজালে ভিসি আর ছাত্রলীগের পতিত অংশের সখ্যতা আর নির্লজ্জ দলবাজী স্পষ্ট। এই সত্য প্রমাণে এফবিআই বা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের প্রয়োজন নাই। দলবাজীর মোটা চশমা খুলে ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষন করলেই হয়।
৬.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি নিজের বাসভবনে ছাত্রলীগের নেতাদের সাথে নিয়ে বসেছিলেন। আপনি তাদের ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ধরে রাখতে বলেছেন। অথচ এই নেতাদের এক অংশের হাত দিয়েই ছাত্রলীগ শান্তি আর প্রগতির বদলে সন্ত্রাস এবং ধর্ষনের ঐতিহ্যের যুগে প্রবেশ করেছে। আপনি তাদের প্রতি কোন হুশিয়ারি উল্লেখ করেন নাই। তাদের উপস্থিতিতে তাদের প্রতি যখন আপনি ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব প্রদান করেন এবং ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বলেন তখন আমরা কোন ঐতিহ্য বুঝবো! ছাত্রলীগ আজ কোন ঐতিহ্যের ধারক!
৭.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি জানেন কি ছাত্রলীগের অনেক নিবেদিত সাধারন সদস্য আজ ছাত্রলীগের পরিচয় দিতে কুন্ঠাবোধ করে। তাদের কয়েকজনের সাথে ছাত্রলীগের বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কেউ কেউ দলীয় আনুগত্যের উর্দ্ধে উঠে বলেছে, ছাত্রলীগের কার্যক্রম বন্ধ করে একটা শুদ্ধি অভিযান চালান উচিত। এখনও ছাত্রলীগে মেধাবী এবং সৃজনশীল ছাত্ররা রয়েছে। কিন্তু তাদের কার্যক্রমকে ম্লান করে দিচ্ছে সুবিধাভোগী এবং ছাত্রসংসদের নাম ভাঙ্গিয়ে বাণিজ্য করার চেস্টায় আন্তরিক নেতারা। যাদের মূল লক্ষ্য প্রভাব বিস্তার আর তাদের কথায় ‘তোলা’ আদায় এবং ‘ফিটিং’ খাওয়া।
৮.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি নিশ্চয়ই ভুলে যান নাই যে ‘ভিক্ষা চাইনা, কুত্তা সামলান’-এর অনুকরণে সাধারন ছাত্র এবং জনতা সোচ্চার হয়েছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ চাইনা, ছাত্রলীগ সামলান দাবীতে। এটা খুব বেশী দিন আগের কথা নয়। তখন আপনি ছাত্রলীগকে না সামলে লোক দেখানোভাবে সর্ম্পক ছিন্ন করেছিলেন। আপনি এবং আপনার অনেক মন্ত্রীরা সাধারন জনতাকে এই তথ্য দিয়েছিল যে, ছাত্রলীগের ভিতরে ছদ্দবেশে ছাত্রদল এবং শিবির-এর কর্মীরা ঢুকে পড়েছে। তারাই যত আকাজ ও কুকাজগুলি করছে। দু:খজনক সত্য হল, এই মিথ্যা তথ্যকে কোনভাবেই সত্য প্রমান করা যায়নি। বরঞ্চ প্রতিটা ঘটনায় যাদের নাম এসেছে তারা প্রকৃতপক্ষে সকলে ছাত্রলীগের সাথেই ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত।
৯.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ছাত্রলীগের সদস্যদের করা প্রতিটা দু:খজনক ঘটনার পরে তিনটা মুখস্থ ঘটনা ঘটে। সেই তিনটা ঘটনা হল : ১. ঘটনাকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করন, ২. ঘটনার দায় দায়িত্ব ছাত্রলীগ নিবেনা, এবং একান্ত বাধ্য হলে ছাত্রলীগ হতে বহিস্কার করার একটি প্রেসনোট প্রেরণ, ৩. একটা লোক দেখানো মামলা করা। জাহাঙ্গীর নগরে একজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলার পরে দলীয় ভিসি ঐ ঘটনার নায়ককে বহিস্কার করেছিলেন মাত্র এক বছরের জন্য। যখন সাধারন ছাত্ররা আজীবন বহিষ্কারের জন্য আন্দোলন করে ভিসিকে অবরুদ্ধ করেছিল তখন ছাত্রলীগের ভিসি গ্রুপের সদস্যরা বহিরাগতসহ প্রায় একশোজনের সশস্ত্র দল নিয়ে ভিসিকে মুক্ত করে এবং স্লোগান দেয় “ভিসি তোমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই।” এই ঘটনার পরে সুস্থ মানসিকতার, বিবেকবান এবং মানসম্মানবোধ সম্পন্ন কোন মানুষ নিজ পদে বসে থাকতে পারেন না। অথচ জাহাঙ্হীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্লজ্জ ও অযোগ্য দলীয় ভিসি এখনও বহাল তবিয়তে আছেন আর সাফাই গাইছেন। তার মিথ্যা সাফাইতে সেই তিনটি ঘটনাই ঘটেছে।
১০.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি বেপরোয়া ছাত্রলীগকে (যারা সংখ্যায় ছাত্রলীগের মোট কর্মী এবং নেতাদের তুলনায় খুবই নগন্য সংখ্যাক) সামলাতে না পারুন, অন্তত তাদের কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজড করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ