মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১২

অহি-নাজিল-জিব্রাইল

ওহি, ওয়াহউন= ইশারা, গোপন (ভাষাহীন) বার্তা, গোপনে কারো অন্তরে কোনো বিষয় সৃষ্টি করে দেয়া, কারো নিকট প্রেরিত পয়গাম। [আরবি-বাংলা অভিধান; মা. মুহিউদ্দীন খান] 
অহি = অনুপ্রাণিত করা, ধারণা দেয়া, অনুপ্রেরণা দেয়া; উহিয়া ইলাইয়া = আমার প্রতি/মধ্যে ঘটেছে, আত্ম ভাব-ধারণা, আমি চিন্তার সিদ্ধান্তে পৌছলাম, আমি অনুপ্রাণিত, চিন্তা/প্রেরণাদ্বারা চালিত। ওয়াহি = অনুপ্র্রেরণা দেয়া, উদ্ঘাটন, প্রকাশ, প্রত্যাদেশ. [আরবি-ইংরাজী অভিধান; জে এম কাউয়ান] 

নাযালুন= বৃষ্টি, আধিক্য, বরকত, সর্দিতে আক্রান্ত হওয়া। নাযলাতুন= সর্দি, উর্বরভূমি, একবার অবতরণ করা। নুযুলুন= অবতরণ করা, দাবি পরিত্যাগ করা। (আরবি বাংলা অভিধান; মা. মুহিউদ্দীন খান)
ইংরাজি অভিধানে অগুণতি অর্থের মধ্যে অবরোহণ, প্রজ্বলিত, উদ্ভাসিত, অদৃশ্য থেকে অবতরণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য [জে এম কাউয়ান]

প্রধানত অহি অর্থ প্রেরণা বা উপলব্দি; নাজিল অর্থ উদয়, প্রকাশিত; অহি নাজিল অর্থ: প্রকাশিত প্রেরণা। ‘প্রেরণা’ অর্থটি নিচের আয়াতে আরো নিশ্চিত করেছে:
‘হাওয়ারীদের প্রেরণা (অহি) দিলাম ( ৫: ১১১), -মৌমাছিকে প্রেরণা (অহি) দিলাম (১৬: ৬৮,৬৯)।
মৌমাছির প্রাপ্ত অহির সঙ্গে মানুষের প্রাপ্ত অহি, প্রকাশের পার্থক্য ছাড়া আর কোনো পার্থক্য নেই।

পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে, স্রষ্টা-সৃষ্টের অনবরত প্রেম-সংঘর্ষের ফলে যে প্রেরণা বাণী হৃদয় থেকে উত্থিত হয় বা বেজে ওঠে এবং আপন ভাষায় স্বতঃফূর্তভাবে প্রকাশিত হয় উহাই অহি- নাজিল।

জাবরুন/জিব্রাইল= অত্যাচার করা, কারো আর্থিক অবস্থা ভালো করে দেয়া, ভগ্ন বস্তু একত্রিত করে দেয়া, জোরপূর্বক, (আরবি-বাংলা অভিধান; মা. মুহিউদ্দীন খান]
স্থাপন করা, বসানো, রোপন করা, সন্নিবেশ করা, প্রত্যর্পণ করা, আরোগ্য করা, শক্তি, বাধ্য করা, বল্ পূর্বক শাসন [ আরবি-ইংরাজী অভিধান; জে এম কাউয়ান] 

১. কুল মান কানা আদুব্বুন—মুমীনীন। অর্থ: বল! যে কেউ জিব্রাইলের শত্রু এজন্য যে, সে আল্লাহর নির্দেশে তোমার হৃদয়ে কোরান পৌঁছিয়ে দিয়েছেন, যা তার পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক এবং যা মুমীনদের জন্য পথপ্রদর্শক ও শুভ সংবাদ। [২: বাকারা-৯৭]

২. ইন্না হু লাতানজিলূ-মুনজিরীন। অর্থ: কোরান জগতসমূহের প্রতিপালক থেকে অবতীর্ণ। জিব্রাইল এটা নিয়ে অবতরণ করেছে তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারী হতে পার; অবতীর্ণ করা হয়েছে সুস্পষ্ট আরবি ভাষায়। [২৬: শুয়ারা- ১৯২-১৯৫]

লক্ষণীয়: 
১ক. ১নং আয়াতে ‘কোরান’ শব্দটি নেই; আল্লাহর ‘সহজবোধ্য কোরান’ আরো সহজবোধ্যের জন্য সর্বনাম আরবি ‘হু’র অনুবাদ আরবি ‘কোরান’ লেখা অসংগত, অন্যায়! এমনকি ‘পৌছাইয়া দিয়াছে’ বাক্যটিও আরবি কোরানে নেই।

১খ. আদুব্বুন=শত্রু, অবাধ্যতা, সীমা লংঘন করা, দৈর্ঘ-প্রস্থ, অবয়ব, ছোট পাথর যা কোন কিছু ঢেকে রাখে। দিগ্বিদিক জ্ঞনশুন্য হয়ে দৌড়ানো [আরবি-বাংলা অভিধান; মা. মুহিউদ্দীন খান] 
দৌড়ানো, গতি, দ্রুত বেগে গমন করা, দৌড়বাজী, জাতি, শত্রু,(অগুন্তি অর্থ আছে)[আরবি-ইংরাজী অভিধান, জে এম কাউয়ান]

১গ. অনুবাদটি সাধারণ দৃষ্টেই অসামঞ্জস্য বা অর্থহীন এজন্য যে, জিব্রাইল কিছু পৌছাবার জন্য আসা-যাওয়া করার মত কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিত্ব নয়; সুতরাং জিব্রাইল, আজরাইল প্রভৃতি কারো শত্রু/মিত্রের ধার ধারে না। 

২ক. ২ নং আয়াতে কুরান ও জিব্রাইল শব্দদ্বয় নেই; আরবি ‘রহুল আমিন’এর অনুবাদ আরবি ‘জিব্রাইল’ করা মারাত্বক ভুল। 

২খ. রুহ্ অর্থ (মানুষের) আত্মা বা নূর/জ্যোতিদেহ (দ্র: ধর্ম দর্শন); আমিন অর্থ বিশ্বস্ত, ট্রাস্টি, সেক্রেটারি ( দ্র: আরবি-বাংলা অভিধান; মা. মুহিউদ্দীন খান)। সুতরাং ‘রূহুল আমিন’ অর্থ বিশ্বস্থ বা পবিত্র আত্মা। স্ব জ্যোতিদেহ স্ব পবিত্র দেহের সামনে স্বরূপে প্রকাশ হয় এবং তিনিই জিব্রাইল; কথিত ভিন্ন ব্যক্তি বা জাত নয়। এমন পবিত্র দেহ সম্বলিত মানুষ ছিলেন মুহাম্মদসহ সকল রাছুল-নবিগণ।আর যাদের উহা দর্শন হয় বা হবে তারাও ঐ একই শ্রেণীর। 

অতিরিক্ত: নবি-রাছুল পাঠাই-পাঠিয়েছিলাম শব্দগুলি যত্রতত্র অনুবাদে দৃষ্ট হলেও কোরানের কোথাও নেই। জীবের হৃদয়ই যখন আল্লাহর আরশ (দ্র: ২৪: নূর- ৩৫, ৮: আনফাল-২৪) এবং মানুষই যখন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ তখন কাল্পনিক ব্যক্তিত্বধারী ভিন্ন জাতের ‘জিব্রাইল’ সাহেব পাখির মতো ৪টি/৭০ হাজার (রূপক) পাখনা মেলে কোথা থেকে কোথায় উড়ে উড়ে অহি বহন করেন! তা নতুন যুগে নতুন করে ভাববার বিষয়।

অতএব প্রচলিত কল্পনা মতে সপ্তম আসমানের উর্ধ্বে মটকীর মতো বরই বাগানের পাশে (ছেদ্রাতুল মোন্তাহা) আল্লাহর বসতবাড়ি থেকে জিব্রাইল সাহেব আরবি ভাষায় অহি বহন করে মুহাম্মদের কানে পৌঁছায়নি; বরং উদয় হয়েছে তার হৃদয়ে (দ্র: ১ নং আয়াত; ২: ৯৭); যেমন কর্ম প্রচেষ্টায় (ছালাত সাধনায়) দুধের মধ্যেই মাখনের উদয় হয়! সুখ-দু:খ একই হৃদয়ে অনুভূত হয়; জন্ম-মৃত্যু একক দেহেরই হয়। উদিত বর্ণহীণ প্রেরণা বা উপলব্দি আপন ভাষায় প্রকাশ হয় এবং উহাই কথিত অহি।

উল্লিখিত শব্দার্থগুলির আলোকে যে কেহ আয়াতটির সামঞ্জস্যপূর্ণ সঠিক অনুবাদ/ভাবার্থ করলে যুক্তি-প্রমান ব্যতীত বেহুদা তর্ক করা সংগত নয়; আর প্রচলিত অনুবাদকগণও অনুরূপভাবেই সীমাবদ্ধ জ্ঞানে, বিশেষ করে হাদিছের আলোকেই অনুবাদ এবং শতভাগ পরস্পর অনুকরণ করেছেন।

প্রেরণাপ্রাপ্ত মুজিবল বলেন:
-আমি এস্রাফিল বিশুদ্ধ
জিব্রাইল মিকাইল আজরাইল শুদ্ধ
অদূরের খালেদ আমি
আমি বহুদর্শী আবুবকর
ওমরের পথচারী আমি
আমি ওসমান আলীউল হায়দর-
---------------------
আমি ব্রম্মা আমি শিব
আমি হরি আমি কৃষ্ন
ইন্দ্র অগাস্ত বিষ্নু আমি
আমি শোক-সন্তাপ পরিত্যাক্ত
অহিংস বুদ্ধ অশোক
সর্বাংগ সুন্দর সুঠাম আমি
আল আমিন আহম্মদ শুদ্ধ।
-----------------
ত্রিলোচন ত্রিলোকায়ত্ব মহাদেব আমি
আমি মহামহিম আ-মহাপরিব্যপ্ত
মম পদে সবে লীন অহোরাত্র।
[সুত্র: প্রেরণাবাণী, পৃ: ৯৩, ৯৮]
বিনীত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ