বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১২

এই হল বিএনপি জামাতের ষড়যন্ত্র

সেনাবাহিনীতে বিপথগামী সাবেক এবং বর্তমান কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিলেন মর্মে তথ্য পাওয়া গেছে। গত নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বিষয়টি একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পারে। বিশেষ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ওই সময় উগ্র ধর্মীয় মতাদর্শ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান ঘটানোর লক্ষ্যে নিজেদের পক্ষের লোক সংগ্রহের জন্য গোপন প্রচার অভিযান শুরু করেন লে. কর্নেল (অব.) এহসান ইউসুফ, পিএসসি, পদাতিক (বিএ নম্বর-৩১১৯) ও তাঁর কয়েকজন সহযোগী।
সূত্র জানায়, এহসান ইউসুফ ১৯৮১ সালের ৩০ মে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বদানকারী নিহত মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরের ভাগ্নে এবং ওই হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট নিহত কর্নেল মাহবুবের ভাই। ২০০৯ সালের ৫ মার্চ তাঁকে মেজর পদে থাকা অবস্থায় সেনাবাহিনী থেকে এমএস অপশনে (বাধ্যতামূলক) অবসর দেওয়া হয়। পরে সশস্ত্র বাহিনী রিভিউ কমিটি/অফিসার্স পর্ষদের সুপারিশে বর্তমান সরকার বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে পদোন্নতিবঞ্চিত ৩৬ জন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁকেও ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি এবং আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেয়। সার্বিক পরিস্থিতি ও প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, অপচেষ্টায় যাঁরা লিপ্ত ছিলেন তাঁদের সঙ্গে মূল ধারার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্ক নেই।
সূত্র জানায়, অবসরে যাওয়ার পর লে. কর্নেল (অব.) এহসান ইউসুফের অবয়ব ও আচরণে লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটে। তাঁর শ্মশ্রুমণ্ডিত মুখ একসময়ের সহকর্মীদের কাছেও অচেনা এবং বিস্ময়ের ব্যাপার হয়ে ওঠে। আটকের পর সেনা গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে এহসান ইউসুফ গোপন প্রচার অভিযান চালিয়ে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে তাঁদের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন এবং তাঁদের সঙ্গে বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে মেজর জিয়া রয়েছেন বলেও জানান।
মেজর জিয়া সম্পর্কে গত ৪ জানুয়ারি আইএসপিআরের (আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর) মাধ্যমে সেনা সদর জানায়, 'এমআইএসটি থেকে কোর্স সম্পন্ন শেষে বদলি করা ইউনিট ৩ ই বেঙ্গলে যোগদানের জন্য মেজর জিয়াকে গমনাদেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সেনা শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি তাঁকে সদর দপ্তর লজিস্টিকস এরিয়া, ঢাকা সেনানিবাসে সংযুক্তি আদেশ প্রদান করা হয়। ওই আদেশ মোতাবেক মেজর জিয়া সদর দপ্তর লজিস্টিকস এরিয়ায় যোগদান না করে পলাতক রয়েছেন বিধায় সেনা আইন অনুযায়ী ইতিমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।'
তার আগে পলাতক অবস্থায় মেজর জিয়া ই-মেইল বিবৃতির মাধ্যমে এমন সব তথ্য প্রকাশ করেন, যা বিভ্রান্তিমূলক এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার প্রয়াস বলেও সেনা সদরের বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মেজর জিয়া গত ২২ ডিসেম্বর থেকে পলাতক। ২৬ ডিসেম্বর ফেসবুকে তাঁর বিবৃতি প্রচার হয়। এরপর ৩ জানুয়ারি এ বিষয়ে একটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর গত ৯ জানুয়ারি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া চট্টগ্রামের সমাবেশে সেনাবাহিনীতে গুমের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেন। ১০ জানুয়ারি দুপুর ২টার দিকে পলাতক মেজর জিয়া মোবাইল ফোনে প্রায় ৪০ জন বিভিন্ন পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তার কাছে অভ্যুত্থানে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, মেজর জিয়া ওই সেনা কর্মকর্তাদের অস্ত্র সংগ্রহ করে অভিযান শুরু করতে বলেন এবং কাদের হত্যা করতে হবে সে নির্দেশনা দেন। ওই দিন এ বিষয়ে তিনি প্রায় ৯ ঘণ্টা টেলিফোনে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেন। এর পরদিনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হলে গোলাম আযমকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। একটি গোয়েন্দা সংস্থা মেজর জিয়ার ফোনকলগুলো পরীক্ষা করে কাদের কাছে তিনি টেলিফোন করেছেন এবং কী ধরনের সংলাপ বিনিময় হয়েছে তা জানতে পারে। এরপর কুমিল্লার ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল কামরুজ্জামানকে বদলি করে ঢাকায় আনার ঘটনা ঘটে। ১৩ জানুয়ারি এমন গুজবও ছড়িয়ে পড়ে যে, কুমিল্লা সেনানিবাসে সংঘর্ষ এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সূত্রমতে, তা ছিল শুধুই গুজব। ঢাকায় এই গুজবের সঙ্গে সঙ্গে হিযবুত তাহ্রীর নামে পোস্টার সাঁটা এবং লিফলেট ছড়ানোর ঘটনা ঘটে। জানুয়ারির প্রথম দিক থেকেই হিযবুত তাহ্রীর লিফলেট ছড়ানো হতে থাকে। তাতে সেনা সদস্যদের প্রতি ইসলামী খেলাফত রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানানো হয়। গোলাম আযমকে গ্রেপ্তারের পর ওই ধরনের লিফলেট এবং গুজব ছড়ানোর ঘটনা বেশি ঘটতে থাকে। এসব কারণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দেশের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে এসব গুজবের একটি সম্পর্ক থাকতে পারে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা।
সূত্র জানায়, কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তার এই হঠকারী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বৃহৎ অংশের কোনো সম্পর্কই নেই। সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক। আইএসপিআরের পরিচালক মো. শাহীনুল ইসলাম সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টার অভিযোগ সম্পর্কে গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিষয়টি তদন্তাধীন। অভিযোগ প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সেনা আইনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
প্রসঙ্গত, এর আগে সেনাবাহিনীতে কর্মরত লে. কর্নেল যায়ীদ ও লে. কর্নেল হাসিনকে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে সেনা আইনের বিধান অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হয়। এ সম্পর্কে গত ৪ জানুয়ারি আইএসপিআরের মাধ্যমে সেনাসদর জানায়, এই দুই সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের পরপরই গত ১১ জুলাই একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত আদালত গঠন করা হয়। তদন্ত আদালত সুষ্ঠু তদন্ত শেষে তাঁদের সুপারিশ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করেন এবং ওই সুপারিশের ভিত্তিতে লে. কর্নেল হাসিনের বিরুদ্ধে গত ১১ ডিসেম্বর একটি ফিল্ড জেনারেল কোর্ট মার্শাল গঠন করা হয় এবং এই বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে এই আদালতের প্রসিকিউশনে সাক্ষীদের শুনানি গ্রহণ চলছে। এ দুই কর্মকর্তার সঙ্গে বর্তমান ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই বলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ