গল্প রং
৫০ তম পর্ব
লেখিকা তন্নী তনু।
সিনথিয়ার সবটা গুলিয়ে আসছে। ভিষণ এলোমেলো লাগছে। কফির মগ এগিয়ে দেয় সিনথিয়া। সাথে সাথে বলিষ্ঠ হাতে মুঠিতে বন্ধি হয় তার হাত। ইরফাদ কফির মগ অন্যহাতে নিয়ে শক্ত করে ধরে সিনথিয়ার হাত। উঠে আসে ধীরে ধীরে। সিনথিয়ার কপালের চুলগুলো একহাতে সরিয়ে দেয় ইরফাদ। সিনথিয়া পালাতে চায়। তার আগেই ইরফাদ বলিষ্ঠ আঙ্গুলে চেপে ধরে সিনথিয়ার গাল। একহাতে তিক্ত কফির মগে প্রগাঢ় চুমুক দেয় ইরফাদ। অতঃপর তিক্ত ওষ্ঠাধর নিয়ে মিষ্টির খোঁজে ডুব দেয় সিনথিয়ার অধরে........
ফোনের রিং টোনের ভেসে আসা মৃদু শব্দে বন্ধ হওয়া ঘন আখি পল্লব ছুটে যায় সিনথিয়ার, ছিটকে দূরে সরে যায় সে।নিজেকে লুকাতেই পিছু ফিরে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ছুট দেয় ।সহসাই তার কোমল হাত বাঁধা পড়ে বলিষ্ঠ হাতের বাঁধনে। কফি মগটা রেখে রকিং চেয়ার থেকে ফোন তুলে নেয় ইরফাদ,অন্যহাতে তুলতুলে বেড়াল ছানার পিঠ মিশিয়ে নেয় নিজের লৌহকঠিন বুকে। অমোঘ প্রেমের আহবানে বন্ধ হয়ে যায় সিনথিয়ার ঘন কালো আখিপল্লব,লৌহশক্ত বুকের কোমল,সিগ্ধ, উষ্ণ ওমে নিজের শরীর ছেড়ে দেয় সে,লাল টকটকে ধোঁয়া ওঠা কানের লতিতে নেমে আসে বরফ শীতল ওষ্ঠ,
-- ডিসট্যান্স কমাতে বলে পালাতে চাইছো কেনো?
সমুদ্রের স্রোতের মতো ভেসে আসা ফিসফিস শীতল স্বরে জমে যাচ্ছে সিনথিয়া। শরীর এলিয়ে দিচ্ছে আরোও।অপরহাতে ফোন কানে তুলে নেয় ইরফাদ,তার মুখটা এখনো সিনথিয়ার কাঁধের উপরেই। সিনথিয়া ধীর গলায় বলে,
--ছাড়ুন।
ইরফাদের ফিসফিস করা স্বর,
--ডোন্ট সাউন্ড।
মূহুর্তেই গলার স্বরে আমূল পরিবর্তন,
-- আসসালামু আলাইকুম স্যার!
সিনথিয়া হাফ ছাড়ে। চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টেনে নেয়।সালামের উত্তর নিয়ে রুস্থান কবির বলেন,
-- ইরফাদ!
-- স্যার বলুন!
-- একোরডিং টু ইউর কমান্ডস, সালমান সারাফি হ্যাজ ফুলফিলড হিজ অল ডিউটিস। প্রভাতরঞ্জন সরকারের সকল প্রপার্টি,ব্যাংক ব্যালেন্স এর সকল তথ্য কালেক্ট করেছেন। সব প্রুফ রেডি। ক্রিকেট বোর্ডের সাথে জড়িত সকলকেই ইতিমধ্যে থানায় আনা হয়েছে।আজ রাতে তো ফাইনাল খেলা। আশা করছি ক্রিকেট টিম দেশের জন্যেই খেলবে। তবে যে জন্যে তোমাকে কল দেয়া। কাল সকালে প্রেশ মিডিয়ার সামনে সব এক্সপোজ করবে তুমি।
-- ওকে স্যার।
-- আর একটু সাবধানে চলাফেরা করো। যে লোক ঠান্ডা মাথায় এতো বছর ধরে ক্রাইম করে আসছে। সে অবশ্যেই এতো সহজে হার মানবে না। ডিআইজি জেলে থাকলেও, তার হাত লম্বা। তোমার উপর এট্যাক হতে পারে।
--ডোন্ট ওয়ারী! আমি আছি স্যার নিজের জন্য।
-- ডিআইজি প্রভাতরঞ্জন যে খেলা খেলেছেন। তিনি চাইলে তোমাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতেও পারতেন। তবে আল্লাহ্ সহায় ছিলেন এবং তোমার তীক্ষ্ম বুদ্ধির জোরে সবসময় ই তুমি নিজেকে রক্ষা করে গেছো। ইউ আর ওভারটেক ইউর সেলভ ডে বাই ডে। আ"ম প্লিজড ফর ইউ। সত্যিই তুমি মাস্টার পিছ ইরফাদ...
--স্যার! এভাবে বলে আমাকে লজ্জায় ফেলবেন না প্লিজ। আমার বাবা ছোট্ট থেকে একটা কথা বলতেন," আমি চাই আমার সন্তান প্রথমত একজন মানুষ হোক।" আমি শুধু ঐটুকুই হতে চেয়েছি, এখনো চেষ্টা করছি করবো মৃত্যুর আগ মূহুর্ত অবধি।
-- আল্লাহ্,ব্লেস ইউ মাই বয়!
_______
ইরফাদের বাঁধনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সিনথিয়া।কথা শেষ করে ফোন রকিং চেয়ারে রাখে ইরফাদ। চাপ দাড়িতে ঢাকা আকর্ষণীয়, মোহনীয় গাল ও চিবুক টুকু সিনথিয়ার কাঁধে ঠেকায় ইরফাদ,প্রথম বারের মতো অচেনা, অজানা, নতুন অনুভূতির স্পর্শে শক্ত হয়ে দাঁড়ায় সিনথিয়া,কাঁধের ফাকা অংশে পুরুষালী দাঁড়ির ধাঁরালো ছোঁয়ায় শিউরে শিউরে ওঠে সে। বলিষ্ঠ হাতে কোমল হাতদুটোকে হাতের মুঠোতে নিয়ে উদরে চেপে কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
-- প্রশ্নের উত্তর পাইনি....
নতুন স্পর্শে, নতুন গন্ধে ভাসতে থাকা সিনথিয়া ধীর গলায় বলে,
--কি?
-- দূরত্ব কমাতে বলে কেনো পালাচ্ছো..
আধখোলা চোখজোড়া লজ্জায় নুইয়ে পড়া লজ্জাবতী গাছের মতো নুইয়ে যায়। নতুন স্পর্শের বাঁধন থেকে নিজেকে ছুটাবার ব্যথা চেষ্টা করে বলে,
-- আমি শুধু পাশাপাশি ঘুমাতে চেয়েছি...এইটুকু দূরত্ব কমালেই হবে....
-- আমার কল্পনাবিলাশী, আবেগঘন মনের অধিকারীনী,বাস্তব জ্ঞানহীন, ইমম্যাচিউর বউ কি কখনো বুঝবে একসাথে, একঘরে, এক বিছানায় থেকে ডিসট্যান্স মেইনটেইন করা তার ম্যাচিউর বরের জন্য যুদ্ধের সমান!!!
আবছা আলোয় ডুবে থাকা নিস্তব্ধ নিরব পরিবেশে সিনথিয়ার হৃদযন্ত্রের কাঁপন পাল্লা দিয়ে বাড়ে, কোমল ভালোবাসার বন্ধনের জালে বাঁধা পেয়ে ডুবতে থাকে সিনথিয়া, মনের সাথে তলিয়ে ভাবে সে," একারণেই দোলনা তে ঘুমাতে বলেছিলো রাতে।" সিনথিয়া চুপচাপ বলে,
-- আজ থেকে তাহলে দোলনাতেই ঘুমাবো।
ইরফাদ হালকা করে প্রসস্ত করে ওষ্ঠজোড়া,
"আমার উপস্থিতিতে তোমার রাজ্যে নামবে প্রগাঢ় ঘুম, আর তোমার উপস্থিতিতে আমার নির্ঘুম রাত সর্বোচ্চ দীর্ঘ হবে।"
--আমার জন্যে কি আপনার ঘুমের প্রবলেম হচ্ছে? আমি তো বললাম বিছানায় ঘুমাবো না আর।
--গাঁধা কোথাকার!
সিনথিয়া চোখ গোল গোল করে তাকায়। আপন মনে ভাবতে থাকে কি হলো?
ফোনের রিং টোনের মৃদু শব্দে আবারও ছেদ ঘটে কথোপকথনের। ইরফাদ সিনথিয়াকে ছেড়ে ফোনটা কানে তুলে নেয়। সিনথিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। মনে মনে ভাবে, "ইরফাদ কি রাগ করলো?"
--কিরে! অনেক দিন পর?
-- নম্বর সেইভ করা?
-- হুম!
-- ভাগ্যিস এই তুচ্ছ "সুভা" তোমার কনট্রাক্ট লিষ্টে থাকে।
-- থাকাটাই তো নরমাল।
--ভালো আছো?
-- হুম! মন খারাপ কেনো? এনিথিং সিরিয়াস?
-- তুমি কি করে বোঝ বলোতো? কেউ তো এভাবে বোঝে না।
-- এমন কিছু না। প্রফেশনালী অভ্যস্ত তাই অনেক সময় বুঝতে পারি। আংকেল কেমন আছেন?
--ভালো।
ইরফাদ উঠে যায় বেলকনির দিকে। সিনথিয়া ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে।
--কি হয়েছে তাই বল।
সুভার মনটা ভার। গলা থেকে কথা বের হচ্ছে না। হাতে টাকা পয়সা নেই। ধার করে নেয়া হয়েছে বাবার ঔষধ, সবচেয়ে প্রিয় রিং বিক্রির টাকায় কোন রকমে শুরু হয়েছে ভাইয়ের চিকিৎসা। তবে এইবার দম ফুরিয়ে আসছে,গলায় ঠেকে আছে কান্নার ভারী দলা, তীক্ত অনুভূতিতে বুজে আছে গলা, শুধু কাঁদতে পারছে না। চড়চড়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে নেয় সুভা, শূন্যে তাকিয়ে মানসম্মানের সীমা পেড়িয়ে বলে,
-- কিছু টাকা দিতে পারবে?
এতোক্ষণের আটকে রাখা কান্নার ভারী দলাটা ভেঙে ঝুরঝুরে বালির মতো পড়ে, ওষ্ঠজোড়া হয় লাল টকটকে, কান থেকে ধোয়া ওঠে অনবরত,বুকের মধ্যে ছাঁই চাপা দেয়া আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে,হসপিটালের কড়িডোরে দাঁড়িয়ে সুভা হাত কামড়ে ধরে ঠেকায় কান্নার আওয়াজ। ইরফাদ ধীর গলায় বলে,
--কি হয়েছে বল......!
সুভা সাদা ছাদের দিকে মুখ করে কান্না গিলে ফেলে, চোখ দুটো মুছে বলে,
--দিতে পারলে বলো।
-- দিবো তো অবশ্যই!তবে আমার তো জানা দরকার আমার ফ্রেন্ড কোন প্রবলেমে পড়েছে!!
-- আমার ভাই সুমন! গতকাল বাড়ি ফেরেনি। আজ শুনলাম হসপিটালে। ও পয়সন খেয়েছে। অবস্থা ভালো না।টাকা লাগবে। আমার কাছে টাকা নেই ইরফাদ....
-- আমাকে আগে কেনো বলিসনি?
--ভীষণ একা লাগছে, অসহায় লাগছে। একটা মেয়ের জন্যে কিছু কিছু সময় জীবনটা ভীষন ভারী ভীষণ।
-- আমি আসছি ওয়েট...
-- কষ্ট করে আসতে হবে না। টাকা দিতে পারলে দিও। আই"ল ম্যানেজ.....
-- বেশী বুঝিস!! আমি আসছি...
বলেই ফোন রাখে ইরফাদ। তারপর সিনথিয়ার সামনে দিয়েই তড়িঘড়ি করে কেবিনেট খোলে ,একটা ছোট্ট ব্যাগ স্কুল ব্যাগের মতো কাঁধে ঝুলিয়ে নেয়। সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-- বাইরে যাচ্ছি।একা ভয় লাগলে ইভার কাছে থেকো। বেশী লেট হলে ঘুমিয়ে যেও। বাসায় ফিরে আমি তোমাকে নিয়ে আসবো।
-- কোথায় যাবেন?
-- হসপিটালে,বাকিটা ফিরে বলবো ওকে?
-- অনেক লেইট হবে?
-- আই ডোন্ট নৌ। তবে আই"ল ট্রাই যতো তাড়াতাড়ি ব্যাক করা যায়।
সিনথিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। বেরিয়ে যায় ইরফাদ। এই তো একটু আগেই এলো, এখনি যেতে হবে। সে তো অনেক অপেক্ষা করেছিলো।
ড্রয়িং রুম পার হতে হতে ইভাকে ডাকে ইরফাদ,
-- ইভা!
-- বলো ভাইয়া
--বাইরে যাচ্ছি, সিনথিকে দেখে রেখো। নতুন জায়গা একা একা খারাপ লাগবে...
-- কোথায় যাচ্ছো...
-- হসপিটালে, সুভার ছোট ভাই হসপিটালাইজড।
-- অফিসিয়াল কাজ আছে কোনো?
--নাহ..
--ভাইয়া যদি রাগ না করো তাহলে বলতাম সিনথিয়াকে নিয়ে বের হও। যেহেতু অফিসিয়াল কাজ না। তাহলে তো প্রবলেম হওয়ার কথা না ভাইয়া।
-- রাত হয়েছে। অনেক দূর যেতে হবে।
--মেয়েটা নতুন এসেছে... এই সময় তুমি কাছাকাছি থাকলেই ওর ভালোলাগবে। সেই তো সকালে না বলেই গেলে সারাটা দিন মেয়েটা একা একা। কিছুক্ষণ হলো বাসায় ফিরেছো। সারাদিন তো মনমরা ছিলো। এখন ফিরেছো মেয়েটা কতো খুশি। যাবেই তো বাইরে নিয়ে যাও। একটা লং ড্রাইভ ও হলো।
-- ওকে বাইরে নেয়া রিস্কি হবে।
-- তুমি তো আছোই ভাইয়া। দেখে রেখো। প্লিজ নিয়ে যাও...
--নাহ
-- নিয়ে যাও না ভাইয়া।
-- ওকে,পাঁচ মিনিটে নিচে আসতে বল!
-- থ্যাংকস ভাইয়া
________________
হসপিটালের করিডোরে বসে আছে সুভা। রক্তচক্ষুতে আটকে আছে ছাঁই চাপা আগুন। যা তাকে পুড়িয়ে দিচ্ছে। পরিবার নামক দায়িত্ব ঘাড়ে বইয়ে বেড়াতে বেড়াতে আজ ক্লান্ত লাগছে তার। পৃথিবীর কোনো প্রান্তে কি এইটুকু শান্তির জায়গা নেই? যেখানে একটু শান্তিতে শ্বাস নেয়া যায়? একটা রাত চিন্তামুক্ত ভাবে শেষ হয়। বলিষ্ঠ শরীরের অধিকারী পুরুষটিকে সুভা চেনে আর ভালো করেই চেনে। তার মুখোশঢাকা চোখ দুটোকেও চেনে। তবে এই রাত বিড়েতে পাশের মেয়েটা কে? সুভা উঠে দাঁড়ায়।
-- ঠিক আছিস!!
সুভা মাথা নাড়ায়। প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে শীড়দাড়া টান টান করে দাড়ায় ইরফাদ। তারপর বলে,
--ট্রান্সফার করেছি তোর একাউন্টে...
সুভা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ায়। জীবনের কোন মূহুর্তে দাঁড়ালে অন্যের থেকে টাকা চেয়ে নিতে লজ্জা লাগেনা,সে এই মূহুর্তে ঐ পর্যায়েই আছে। ইরফাদ বলে,
-- বল! প্রবলেম কি! সু*ই*সাইড এটেম্ট নেয়ার রিজন?
-- জানি না!
-- গার্লফ্রেন্ড ইস্যু!
-- জানিনা। তবে কিছু দিন হলো টাকা পয়সা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। বাবার ঔষধের টাকা, বাজারের টাকা, বন্ধু-বান্ধবের থেকে মিথ্যা বলে টাকা নিয়েছে। আমার থেকে ভার্সিটির সেমিস্টার ফি এর কথা বলেও টাকা নিয়েছে। আগে কখনো এমন করেনি।
-- তোর ভাইয়ের ফোন কোথায়? দিতে পারবি?
--ওর বন্ধুরা একটু আগে আমাকে দিয়েছে। দাড়াও দিচ্ছি...
ফোন বের করে দেয় সুভা। বিশ মিনিট ফোন হাতে রাখে ইরফাদ।
-- তোর ভাই অনলাইন জু*য়াতে আসক্ত। শুনেই বুঝতে পেরেছি। ফোনটা নিলাম তোকে প্রুফ দেওয়ার জন্য। দেখ....
--মানে??
-- জু!য়া!তে আসক্ত তাদের মধ্যে প্রাথমিক কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন -- তারা প্রচুর মিথ্যা বলে গল্প বানায়। আর অন্যের থেকে ধার টাকা নেয়, কিন্তু সঠিক সময়ে ব্যাক দিতে পারেনা। আবার অন্যের থেকে গল্প বানিয়ে টাকা নেয়। এভাবেই চলতে থাকে প্রক্রিয়া। লাষ্ট যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন এরা হয় নিজের প্রাণ নেয় নয়তো অন্যের। অহরহ কেস আসে এসব নিয়ে ... জু!য়া!র টাকা জোগার করতে কিডন্যাপিং করে মুক্তিপণ চায়। এদের মস্তিষ্ক পঁচে যায়। এমন কোনো জঘন্যতম পথ নেই এরা যেতে পারে না।
--আমার ভাই এমন একটা কাজ করলো...ওকে কোনো অভাব দেই নি আমি।
--ডোন্ট প্যানিক!
সুমন কি থেকে কি করেছে আমরা কেউ জানিনা। তবে বেঁচে আছে সত্যি একদিন জানা যাবেই। এটা আসলেই একটা মরণ খেলা, একটা অভ্যাসে পরিণত হয়। এটা একটা জাল। একবার জড়িয়ে গেলে এই শেকল থেকে মানুষ বের হতে পারে না। হয় মৃতু নয় ধ্বংস......
-- এতোকিছু হয়ে গেলো আমরা কেউ কিছুই জানলাম না?
-- হাতের মুঠোয় ডিভাইস, অন্ধকার রাতের আড়ালে কতো জীবন আধারে তলিয়ে যাচ্ছে আমরা কেউ জানিনা।
সুভার চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। এতো কষ্ট করে যে পরিবার বেঁধে রেখেছে, যে স্বপ্ন বুনেছে তা যে গুড়োবালির মতো ঝুরঝুর করে পড়ছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো। সুভা নিরবে চোখের চোখ ফেলে বলে,
--আইন ব্যবস্থা থাকতে এসব এখনো চলে?
-- দেশীয় নতুন একটা এপস রিসেন্টলি বন্ধ করা হয়েছে। তবে অহরহ বিদেশী এপস এখনো আছে। সব গোড়া থেকে উপড়ে ফেলা কি সম্ভব। চোখে পড়ে এমন একটা দুইটা এপস বন্ধ করা যেতেই পারে। চোখের অন্তরালে আরও কতো ক্রাইম হচ্ছে, কতো এপস সৃষ্টি হচ্ছে সব বন্ধ করা সম্ভব নয়।
-- তাহলে এই তরুণ সমাজ কি করে সঠিক পথ দেখবে,কি করে ধ্বংসের পথ থেকে দূরে থাকবে। আমার ভাই খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিলো। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ইরফাদ। একটা ছোট্ট প্রাণ এভাবে ঝড়ে যাচ্ছে।
-- নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। এছাড়া কোনো ওয়ে নেই.....হোয়াট এভার! বি স্ট্রং....
বাঁধ ভাঙা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সুভা। ইরফাদ চোখের ইশারা দেয়। সিনথিয়া পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর বলে,
-- কেঁদোনা আপু... সব ঠিক হয়ে যাবে।
সুভা চেয়ারে বসে। ইরফাদ বলে,
-- আন্টি কোথায়?
-- বাসায়, বাবা একা তাই।
এরপরেই সিনথিয়াকে পাশে বসায় সুভা। সিনথিয়ার হাত মুঠোয় নিয়ে বলে,
-- তোমার নাম কি?
-- সিনথিয়া ইবনা।
-- ভারী মিষ্টি মেয়ে তো তুমি। তোমার ছোঁয়ায় কান্নারা আমাকে রেখে পালিয়ে গেলো। এমন একটা মেয়েই আমার ফ্রেন্ডের জন্য প্রয়োজন ছিলো। যার ছোঁয়া তে সব সুন্দর হয়ে যায়। বিয়ে করবি কবে ইরফাদ।
-- ও আমার ওয়াইফ..
-- বিয়ে করেছিস। একবার জানালিও না।
-- বিয়েটা ঐভাবে হয়নি।
--বাদ দে, এখন বাসায় যা। নতুন বউ নিয়ে ফ্রেন্ডের দূর্দিনে কেউ ছুটে আসে। তুই বন্ধু হিসেবেও বেষ্ট। সত্যিই তুই মাস্টার পিছ।
-- বেশী বেশী বলে ফেলছিস। তুই বাসায় যা। ফ্রেশ হয়ে আয়। ততোক্ষণ এখানে আছি।
-- আরে না। যা করেছিস আমি ঐ ঋণ ই তো শোধ করতে পারবো না। এখন আবার নতুন বউ নিয়ে এসে আমার জন্যে এমন কিছু করিস না যাতে তোর বউ এর কাছেও ঋণি হয়ে যাই।
--ধুরর! কি সব কথা। খেয়েছিস?
-- খেয়ে নিবো। তোরা যা..
-- বাইরে চল।
-- তোরা বাসায় যা তো।
-- বেশী বুঝিস! চলতো
________
সুভাকে জোর করে খাবার খাইয়ে, সুভার ভাইকে দেখে ফেরার পথ ধরে ইরফাদ। সিনথিয়াকে গাড়িতে বসিয়ে পিছন দিকে ফিরে যায় ইরফাদ। ইরফাদ অনুভব করে সিনথিয়াকে এইখানে আনা ঠিক হয়নি। সুভার মনে আঘাত লেগেছে।ঠিক একারণে সিনথিয়াকে আনতেও চায়নি সে। তবে বোনের জোড়াজুড়িতে আনতে বাধ্য হয়েছে। ইরফাদ সুভার দিকে ফিরে বলে,
-- আ"ম সরি! পারলে ক্ষমা করে দিস।
অনেকটা সময় পর ফোন মৃদু কম্পনে কেঁপে ওঠে। ইরফাদ চোখ বুলায় মেসেজটিতে,
-- তোমাকে ভালোবেসেছিলাম, একসময় খুব করে পেতেও চেয়েছি। তবে তুমি বন্ধুত্বের বাইরে কখনো আমাকে চিন্তাও করোনি। তুমি বন্ধু হিসেবে আমার জন্যে সে সময় থেকে আজ অবধি যা করেছো তা পৃথিবীর রক্তের সম্পর্কের কেউ ই করবে না। আমি তোমার কাছে চির কৃতজ্ঞ। আমি ভালোবেসেছি এর পরেও তুমি ভালোবাসোনি এই নিয়ে কখনো কিছু ভেবোনা।ভালোবাসতে হলে ঐ মানুষটাকে অনুভব করতে হয়। তুমি কখনো আমাকে অনুভব করোনি। তাই আমাকে করুণা না করে দূরে ঠেলে দিয়ে তুমি সঠিক কাজ করেছো। তোমাকে আজ একটা সত্যি কথা বলি। ভালোবাসতাম, ভালোবেসে একাকিত্বকে বেঁছে নিয়েছি। তোমাকে ভালোবাসতে যেমন ভালো লাগে, ঠিক তেমন তোমার সাথে পাগলামি করতেও ভালো লাগে। আমি জানি তুমি আমাকে কখনো গ্রহণ করবে না। তবুও কেনো যেনো দুষ্টুমি করতে ভালোলাগতো। তুমি সরি বললে-- তাই সত্যিটা আজ বলেই দেই।
তুমি তো জানো সবটা। সে সময়ে তুমি টাকা না দিলে পড়াশুনাটুকু করতে পারতাম না। তুমি টাকা না দিলে আমার জীবনটা আরও কঠিন হতো। তবে তুমি জানো না আমার একটা প্রবলেম আছে। যেটা শুরু হয়েছে অনেক বছর আগেই। ক্লিয়ার করে বললাম না। তুমি বুঝে নিও। আমাকে ডক্টর দেশের বাইরে থেকে ট্রিটমেন্ট করতে বলেছিলো। টাকার অভাবে পারিনি। তুমি আমার জন্যে অনেক করেছো তাই বিবেক বোধ থেকে বলা হয়নি। অতঃপর এই মাসে আমি দেশের বাইরে ডক্টর দেখিয়েছি। তারা বলেছেন আমি অনেক লেইট করে ফেলেছি। আমি কখনোই মা হতে পারবো না ইরফাদ। তুমি যে দায়বদ্ধতা থেকে সরি বললে। ঐটা মনে রেখোনা। তুমি চাইলেও এই জীবনে তোমাকে আমার আর পাওয়া হতোনা। তুমি মুক্ত...
পৃথিবীর সবাই যদি তোমাকে ভালোবাসে তাই বলে সবাইকে তো আর গ্রহণ করা পসিবল নয়। তুমি যা করেছো। একদম ঠিক করেছো। আমাকে নিয়ে চিন্তা করোনা। আল্লাহ্ উত্তম-পরিকল্পনাকারী। তিনি একদিন এতোই দিবেন যা আমরা হয়তো কল্পনাও করিনি। সবশেষে বলবো, তুমি সুখি হও। তুমি ভালো থাকলে আমার অন্তর প্রশান্তিতে থাকবে।
মেসেজ পড়েই লুকিং গ্লাসে চোখ দেয় ইরফাদ। কালো রঙের একটা প্রাইভেট কার তার গাড়ির পেছনে। ইরফাদ গাড়ির স্পিড বাড়ায়। পেছনের গাড়ি যেনো ধেয়ে আসে। ইরফাদ স্পিড কমিয়ে দেয় পেছনের গাড়ির স্পিড কমে। ইরফাদ আবার স্পিড বাড়ায়। পেছনের গাড়ি ঝড়ের গতিতে এগিয়ে আসে। ইরফাদ ঝড়ে গতিতে দাপিয়ে গাড়ি চালায়। সিনথিয়া ইরফাদের দিকে একবার আরেকবার পেছনে তাকায়। ভয়াল অশনী সংকেত পেয়ে সিনথিয়া ইরফাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
-- আমাদের ফলো করছে!!
ইরফাদ আড় চোখে তাকায়। সাপের মতো আঁকাবাকা করে গাড়ি চালাচ্ছে ইরফাদ গাড়ির মধ্যে যেনো ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ইরফাদ ধীর গলায় বলে,
--ভয় পাচ্ছো?
সিনথিয়া মাথা দু"দিকে নাড়ায়। ইরফাদ রিভলভার বাড়িয়ে দেয় সিনথিয়ার দিকে। তারপর বলে,
--সিটের উপর দিয়ে পেছনে যাবে। আমি গাড়ি সাইড করবো। পেছনের দরজা খুলে পেছনের গাড়ির টায়ারের দিকে তাক করে ট্রিগার চাপবে।
সিনথিয়া হাতে তুলে নেয় রিভলভার। সিট পেরিয়ে পেছনে চলে যায়। দরজা হালকা ফাকা করে। ইরফাদ গাড়ি সাইড করে ব্রেক চেপে দেয়। পেছনের গাড়ি মাঝামাঝিতে আসতেই ইরফাদ ডিরেকশন দেয়,
-- শ্যুট নাউ।
সিনথিয়া ট্রিগার চেপে দেয়। জীবনের প্রথম বুলেট টা লক্ষ্য মিস করে যায়। ইরফাদ বলে,
--আরেকবার সিনথি হারি আপ।
সিনথিয়া ট্রিগার চাপে। টায়ারে গুলি লেগে থেমে যায় গাড়ি। ইরফাদ দরজা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসে। পেছনের কালো রঙের গাড়িতে ড্রাইভার সিটে বসা মানুষের মুখ কালো কাপড়ে বাঁধা।পেছনে পরপর পাঁচটা বড় গাড়ি। আশঙ্ক বিপদ সংকেত পেয়ে পুনরায় গাড়িতে বসে ইরফাদ। বসেই ঝড়ের গতিয়ে স্ট্রিয়ারিং ঘুড়ায়, গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দেয়। নিরব, নিস্তব্ধ রাস্তায় শিরদাড়া টানটান করে দাপিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে ইরফাদ। আশেপাশের গাছপালা ছুটে ছুটে পেছনে চলে যাচ্ছে। ইরফাদ তাড়া দেয় সিনথিয়াকে,
-- এখানে আসো!
সিনথিয়া উঠে আসে। নিজের সিটে বসে। ইরফাদের চোখে কিছু খেলা করছে। সে কি চিন্তিত। সিনথিয়া বলে,
-- কিছু হয়েছে?
-- তোমাকে আজ নিয়ে আসা ঠিক হয়নি।
--কেনো? গাড়ি তো থেমেই গেলো...
-- পেছনে আরও পাঁচটা আছে...
সিনথিয়া পেছন দিকে তাকায়। তারপর বলে,
-- আজ আমি তো সুস্থ আছি। দূর্বলও নই।আমাকে নিয়ে ভয় পাবেন না।
-- ওরা দলে ভারী। রিস্ক আছে সিনথি। কতোক্ষণ টিকতে জানিনা। যদি কিছু হয়ে যায় তুমি পালিয়ে যাবে।
-- আমি আপনাকে রেখে কোথাও যাবো না।
সাথে সাথেই থেমে যায় ইরফাদের গাড়ি। ইরফাদ পেছন ফেরে। পেছন থেকে ছুড়ছে বুলেট। এই মূহুর্তে মুখোমুখি এতোগুলো মানুষের সাথে লড়া সম্ভব না। ইরফাদ গাড়ির লাইট অফ করে দেয়।সিনথিয়ার দিকের দরজা খুলে ওপাশ দিয়েই বেরিয়ে যায় ইরফাদ। হাতের মুঠোয় সিনথিয়ার হাত নিয়ে ঝড়ের গতিতে দৌঁড়ায় ইরফাদ। পেছন থেকে মুখোশধারী দলবল পেছন থেকে তেড়ে আসে। নিস্তব্ধ, নিরব পাকা রাস্তা থেকে নেমে যায় ইরফাদ সিনথিয়া। ভয়াল অশুভ ছায়া তাদের ধাওয়া করে আসছে। রাস্তার নিচে সারিসারি শালবন অতিক্রম করে দৌড়ে যায় ইরফাদ। একে একে অশুভ মুখোশধারী শয়তান নেমে আসে। একের পর এক গাছ পেড়িয়ে ছুটতে থাকে ইরফাদ, হাতের মুঠিতে সিনথিয়ার হাত আরও শক্ত করে ধরে। সারি সারি আলো আধারির মাঝে শেষ প্রান্তে ঠেকে তারা। শয়তানের দলে হাতের টর্চ লাইটের আলোয় গাছের বাগানে আলো খাঁ খাঁ করে ওঠে। ইরফাদ দাঁড়ায়। পেছন থেকে একদল মুখোশধারী এগিয়ে আসে। সিনথিয়াও দাঁড়িয়ে যায়। গাছের ছোট মোটা ডাল ভেঙ্গে ইরফাদ সিনথিয়ার হাতে দেয় । অতঃপর শুরু হয় হার জিতের খেলা। ইরফাদের হাতে রিভলবার। পরপর ছয় বার ট্রিগার চাপে ইরফাদ। সামনের ছয় জন ধপাস করে পড়ে মাটিতে। এবাবেই এগিয়ে যায় ইরফাদ। অতঃপর রাস্তা থেকে কালো মুখোশ বাঁধা আরেকটি মুখোশধারী দল নামে। এতোগুলো মানুষের সাথে একা পেরে ওঠা সম্ভব না।ইরফাদ সিনথিয়ার হাত ধরে। তারপর পিছিয়ে যায়। সিনথিয়াকে বলে,
-- তুমি যাও...
-- নাহ
-- প্লিজ যাও
-- কিছুতেই যাবো না..
অতঃপর ইরফাদ সিনথিয়ার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ঝড়ের গতিতে দৌড়াতে থাকে।পেছন থেকে বাকিরাও দৌড়ে আসে।মিনিট দশেক লুকোচুরি খেলতে খেলতে একটা বুলেটে থেমে যায় ইরফাদ। বিকট শব্দে রিভলবারের নল থেকে বের হয় ধাতুর বুলেট,পেছন থেকে বুলেট ছুটে গিয়ে লাগে ইরফাদের পিঠে, থমকে দাঁড়ায় ইরফাদ। রক্ত চক্ষুতে ছলকে ওঠে গরম জল। থেমে গিয়ে ফিরে তাকায় সিনথিয়া। দূরে দাঁড়ানো মুখোশধারীর রিভলভারের নলের দিকে তাকায় সিনথিয়া আরেকবার ইরফাদের সাদা ধবধবে শার্টের পিছনে।এমন দৃশ্যে নিজের শ্বাস আটকে যায় সিনথিয়ার.....
বন্ধ হয় টর্চের আলো। অতঃপর নিস্তব্ধ,বিদঘুটে পরিবেশে নামে প্রগাঢ় নিরবতা...
চলবে??
#নোটবার্তাঃ চেক দিতে পারিনি। সবাই রেসপন্স করবেন।
গা ছমছম কি হয় কি হয়?....পাঠকদের এত ভয় দিতে নেই ম্যাডাম.....
উত্তরমুছুন