মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

গল্প:সতীন লেখা : ফিলিপ সরকার পর্ব : ০২

 গল্প:সতীন

লেখা : ফিলিপ সরকার

পর্ব : ২


বাবা বলেই দিলেন আমি নাকি জেদের জন্যই
সংসার হারালাম তারপর তাদেরও মান সম্মান নষ্ট করতে নাকি তাদের বাড়ীতে এসেছি।
বাবার কথা শুনে মনে হলো সত্যিই মেয়েদের নিজের কোন বাড়ী থাকেনা।
মায়ের দিকে তাকালাম মা ও বললো,তুই স্বামীর বাড়ীতে ফিরে যা তুই কি আমাদের কথাটা একবারও ভাববি না?
তোর বাবা তোকে আর কতবার বিয়ে দিবে তুই বল?
তাদের কথা শুনে বাধ্য হলাম স্বামীর বাড়ীতে ফিরতে।
স্বামীর বাড়ীতে ফেরার পর শাশুড়ী তেলে বেগুনে জ্বলে গিয়ে বললো,খুব তো বড় বড় কথা বলে চলে গেলে সেই তো স্বামীর বাড়ীতেই ফিরতে হলো।
শাশুড়ী মায়ের কথা শুনে আমার স্বামী আসলো আর বললো,খুব তো ঢং দেখিয়ে চলে গেলি দেখলি তোর বাবা মা ও তোকে
তাদের কাছে রাখতে চাইলো না।
ভেবে দেখেছিস তোকে তোর বাবা মা কত ঘৃণা করে।
আমার দু চোখ বেয়ে পানি পরতেছে। আমার স্বামী তো ঠিকই বললো আমি বাবা মায়ের কাছেও অবহেলার পাত্র। খুব অভিমান হলো তাদের উপর।
মনে মনে ঠিক করলাম মরে গেলেও আর কোন দিন বাবার বাড়ীতে যাবো না।
রাতে সবাই খাবার খাচ্ছে আমাকে এক বারের জন্যও কেউ ডাকেনি।এদিকে খিদেয় আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা ।
ওরা খেয়েদেয়ে চলে গেলো আমি নির্লজ্জের মত রান্না ঘরে গিয়ে খাবার বেড়ে নিয়ে খেলাম।
তারপর আমার জন্য থাকার ব্যবস্থা হলো শাশুড়ী মায়ের ঘরের পাশে ছোট্ট একটা ঘরে।
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনতে পেলাম আমার সতীন আমার স্বামীকে ফিসফিস করে বলছে।
কালকে তো ও খুব বড় কথা বলে চলে গেলো ভেবেছিলাম ঝামেলা টা বোধ হয় চলে গেলো সেই তো আবার চলে আসলো।
আমার স্বামী বললো,আমিও তো ভেবেছিলাম সে আর আসবে না। দুদিন পরে গিয়ে সব ঝামেলা মিটে দিয়ে আসবো।
আমার সতীন বলছে ওকে তাড়ানোর ব্যবস্থা না করলে আমি থাকবো না। তারপর সে মায়া কান্না শুরু করলো। আমার স্বামী ওকে জড়িয়ে ধরে বলছে,চিন্তা করোনা ওকে
খুব তাড়াতাড়িই বিদেয় করে দিবো। স্বামীর
মুখে এই কথা শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না।
ভেবেছিলাম আমি যত কষ্টই হোক এ বাড়িতে থাকবো কিন্তু না সেটা ওরা নিজেরা কখনো চায় না। দুপুরে আমার স্বামী দুটো পাতিল আর একটা কড়াই আমার দিকে ছুড়ে দিয়ে বললো, আজ থেকে তুমি আলাদা খাবে আমি
তোমাকে আলাদা করে বাজার করে দিবো
ভেবেছিলাম আপদ বিদায় হলো কিন্তু না সেই আবার ফিরে আসলে
আমি কিছুই বললাম না শুধু অপলক তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। সংসারটা তছনছ হয়ে গেলো আমার আর কিছুই থাকলো না
বাড়িতে চেয়ারম্যান আসলো লোকজন তো আছেই। আমি মাথা নিচু করে সবার মাঝে বসে আছি।
আমার সতীন আর শাশুড়ী একসাথে দাঁড়িয়ে আছে। থেকে থেকে আমার শাশুড়ী আমার নামে একটা করে বদনাম দিচ্ছে।
চেয়ারম্যান সাহেব তিনি আমাকে খুব পরোক্ষ ভাবে দেখতেছেন।
তিনি বলতেছেন,আচ্ছা মা তোমার স্বামীর বিয়ে তুমি মেনে নিতে পারোনি সেটা ঠিক আছে। কোন মেয়েই তার স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দিতে চায় না।
সেটা আমরা সবাই জানি কিন্তু তুমি এই অনৈতিক কাজটা কেন করতে গেলে মা?
আমি চেয়ারম্যান সাহেবের কথার উত্তর না দিতেই আমার স্বামী তেরে এসে আমার গালে
সজোরে থাপ্পড় দিয়ে বললো, এই কলঙ্কিনি আর কি বলবে কোন কিছু বলার আছে কি ওর।
আমি তবুও বললাম, আমি কোন দোষ করিনি
আমি চরিত্রহীন নই।
শাশুড়ী বললেন,ওও তার মানে আমি সব মিথ্যা গল্প সাজিয়েছি। তাইনা।
আমার স্বামি চেয়ারম্যান সাহেব কে বললো, ওকে আমি আর এই সংসারে রাখবো না।
চেয়ারম্যান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,মা তোমার স্বামী তোমাকে রাখতে চায় না। তোমার কিছু বলার আছে কি?
আমি তখন চেয়ারম্যানের সামনেই স্বামীর জড়িয়ে কান্না শুরু করলাম।
আমার এমন সর্বনাশ করোনা তুমি। আমি তোমার বাড়িতে চাকরানী হয়ে থাকবো তবুও তুমি আমাকে এতো বড় শাস্তি দিও না।
আমার স্বামী তারপরও চেয়ারম্যান সাহেব কে বললো, আমি একে সংসারে আর রাখবোনা।
চেয়ারম্যান সাহেব সবার মাঝে দাড়িয়ে বললেন, যখন সে নিজেই তার বউকে রাখতে
চাচ্ছে না তাহলে এখানে করার কিছুই নেই কারণ হিতে বিপরীত হতে পারে।
আমি এটাই চাই যে মেয়েটাকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় করে দেওয়া হোক।
আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো
আমি পারলামনা আমার সংসার বাঁচাতে।
চেয়ারম্যান সাহেব কাজি সাহেবের কাছে ফোন দিলেন। কাজি সাহেব প্রয়োজনীয় সব
কিছু নিয়ে আসলেন।
আমার বাবা মা কে ডাকতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমি তাদের কে আসতে দিতে চাই নি জন্য তারা আসে নি।
উৎসুক জনতা আমার দিকে তাকিয়ে অনেকের চোখেই পানি। তারাও হয়তো চায়নি আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাই।
কাজি সাহেব সব কাগজপত্র তৈরি করে নিচ্ছেন।
আমার পাশে সেই ভাবি এসে বসলেন যিনি সেদিন আমার পিঠে তেল লাগিয়ে দিয়েছিলেন
তার বসা দেখে আমার শাশুড়ী তার সাথে রেগে গিয়ে বললেন, অত কিসের ভাব গো তোমার ওর সাথে?
ভাবি বললেন, চাচি মেয়েটা আজকে চলেই যাবে আর কোন দিন ওর দেখা পাবো কি না।
বলে ভাবি কেঁদে উঠলেন।
চলবে,,,,?
কেমন লাগলো?
অবশ্যই আপনার মূল্যবান লাইক ও কমেন্ট দিয়ে জানাবেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ