মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

গল্প:সতীন লেখা : ফিলিপ সরকার পর্ব : ০৫

 গল্প:সতীন

লেখা : ফিলিপ সরকার

পর্ব : ০৫
-


-
আমি বোরখা পরা আর সাথে হিজাব ছিলো
তাই হয়তো আমাকে চিনতে পারেনি। কিন্তু
আমি তো তাকে চিনেছি।
বহুদিন পরে দেখলাম মানুষটাকে।কিন্তু অনুভব টা আর আগের মত নেই।
তার পাশে তার সেই বউ বসে আছে যার জন্য আমার সংসার নষ্ট হয়ে গেছে।
সে আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। হয়তো চোখ দেখে কিছুটা আন্দাজ করলেও
করতে পেরেছে। কিন্তু সেই আন্দাজ দেখার সময় না দিয়ে বান্ধবী মিরা আমাকে বললো,চল আমরা যাই অনেক দেরি হয়ে গেছে।
মনটাও একটু বিষন্ন হয়ে গেলো। হাজার হলেও একটা সময় সে খুব কাছের মানুষ ছিলো।
কত স্বপ্ন দেখতাম দু'জনে। আজ তার সব কিছুই স্মৃতির পাতায় বিষন্নতার কালিতে লেখা হয়েছে।
এভাবেই আমার দিন মাস সপ্তাহ পেরিয়ে আরও একটা বছর চলে গেলো। প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় বর্ষের পরিক্ষায় আমার ফলাফল খুব ভালোই হয়েছে।
আসলে এই সময়টায় আমি তাকে পুরোপুরি ভুলে গেছি। কোন ভাবেই আমার আর তার কথা মনে পরেনা।
বাবা মা তারাও খুব খুশি আমাকে নিয়ে। বিশেষ করে বাবা। যিনি শুধু বাবাই নন আমার প্রকৃত বন্ধু।
তিনি পাশে থেকে আমাকে সব সময় সাহস যুগিয়ে যাচ্ছেন।
রুমে একদিন বিকেল বেলা শুয়ে আছি বাবা ডাকতে ডাকতে রুমে আসলো আমার অসময়ে শুয়ে থাকা দেখে বললো,কিরে মন খারাপ নাকি তোর?
হাসিমুখে বললাম,যার এমন বন্ধুর মত বাবা থাকে তার কি কখনও মন খারাপ থাকে?
বাবাও হাসলেন আমার কথা শুনে।সামনে আমার ফাইনাল পরিক্ষার সময় চলে আসলো।
নিজেকে এমন ভাবে তৈরি করতেছি যাতে খুব ভালো ভাবে কৃতকার্য হতে পারি।
রাতদিন অভেদ করে পড়াশোনা করতেছি। বাবা তিনিও আমায় সব সনয় এটা সেটা দেখিয়ে যাচ্ছেন।
মুলত তারই অনুপ্রেরণায় আমি আজ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি।
আমার পরিক্ষা শুরু হয়ে গেলো। আজ প্রথম পরিক্ষা বাবা আমার সাথে যাবেন। পরিক্ষা শুরু হবে ১:৩০ মিনিটে বাবা আমার সাথে রওনা দিয়েছেন।
বাবাকে দেখে মনে হলো, সেদিন তিনি যে ভাবে আমাকে ফেরৎ পাঠালেন তাতে মনে হলো আমি তাদের কেউ নয়। আর আজ মনে হচ্ছে।
পৃথিবীতে কোন বাবা মা-ই চায় না তার সন্তানের খারাপ হোক।
তখনকার সব অভিমান আজ বাবাকে দেখে তুচ্ছ মনে হচ্ছে।
বাবা আমার পাশে বসে আছে আমার সব কাগজপত্র তার হাতে মনে হচ্ছে আমি সেই ছোট শিশুটিই আছি।
সবগুলো পরিক্ষাতেই বাবা আমাকে নিয়ে গেলেন।
পরিক্ষা শেষের দিন বাপ মেয়ে মিলে আমরা বিকেল বেলা একটা রেষ্টুরেন্টে খেতে গেলাম।
খেতেই আমার নজর বাইরে চলে গেলো।
খেতেই আমার নজর বাহিরে চলে গেলো আজ অনেকদিন পর প্রায় দু'বছর পরে আমি আমার প্রাক্তন শাশুড়ীকে তার ছেলের সাথে দেখলাম।
মহিলাকে তার ছেলে হাত ধরে রিকশা থেকে নামাচ্ছে।
আমি খাওয়া বাদ দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছি। বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
কিরে মা খাচ্ছিস না কেন?
বললাম,বাবা একটা বার বাহিরে তাকিয়ে দেখো।
বাবাও সেদিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হয়ে গেলো। কারণ তিনিও অনেক দিন পর তাদের
দেখলেন।
বাবা বললেন,তোর ভয়ংকর অতিত ওদিকে না দেখলেও তাকালে চলবে।
দেখলাম তারা কোথায় যেনো চলে গেলো।আজ পরিক্ষা শেষ হয়ে গেলো।
আপাতত চিন্তা শেষ। খাওয়া শেষে বাহিরে বের হলাম। বাবা আমাকে নিয়ে একটা
লাইব্রেরীতে গেলো।
গিয়ে একটা Job solution গাইড কিনলেন।
বললেন, তোর আজ থেকে নতুন মিশন শুরু হলো।
বই টা হাতে দিয়ে বললেন,আজ থেকে এটা পড়া শুরু কর।
এবার তোর জীবনটাকে গুছিয়ে নিতে হবে। বাবা আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন,আমি জানি তুই পারবি।
দুই বাপ মেয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম
বাবা আমার সফলতা শুধু দেখতে চাচ্ছে না অন্যদেরও দেখাতে চাচ্ছে।
যাতে বলতে পারে আমার মেয়ে হেরে যাওয়ার মত মেয়ে না।
বাড়িতে আসলাম আগের মত স্বামীকে নিয়ে আর মন খারাপ হয়না।
প্রথমবার যখন ওকে দেখেছিলাম মন টা খুব খারাপ হয়েছিলো। আজ আবার দেখলাম কিন্তু তাকে দেখে আর কিছুই মনে হয়নি।
তার মানে তার জন্য সমস্ত ভালোবাসা আমার ভিতর থেকে ফুরিয়ে গেছে।
হয়তো নতুন করে বাঁচতে শিখলাম। ভাবনার ছেদ ঘটে গেলো মায়ের ডাক শুনে।
মা বললো,কি এতো ভাবছিস বলতো, তারপর মাকে খুলে বললাম। মা বললো,ওসব নিয়ে আর মন খারাপ করিস না।
মাকে বললাম,মা তার জন্য আমার আর মন খারাপ হয়না। এতোদিনে আমি ওকে পুরোপুরি ভুলে গেছি।
মা বললো,এটাই তোর বাবা সব সময় চেয়েছে।
রাত অনেক হয়ে গেলো না আমাকে খাবার নিজের হাতে খাইয়ে দিলো।
রাতে শুয়ে শুধু বইটার কথা চিন্তা করলাম
ভাবলাম কাল থেকেই এটা পড়া শুরু করে দিবো।
জানিনা আল্লাহ কপালে কি লিখে রেখেছে।
পরের দিন থেকে বইটা পুরোদমে পড়া শুরু করলাম।
এদিকে বাবা আমার জন্য বেশ কয়েকটা চাকরির করিয়ে রাখলেন।
এভাবে দুইমাস চলে গেলো আগামী কালে আমার রেজাল্ট বের হবে। আজ খুব টেনশন হচ্ছে।
বেশি করে টেনশন হচ্ছে বাবাকে নিয়ে। কারণ তিনি আমাকে নিয়ে খুব আশাবাদী হয়ে আছেন।
তিনি জানেন আমার রেজাল্ট ভালো হবেই।
আজ আর পড়তেও ইচ্ছে হচ্ছে না

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ