সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

ভালোবাসার বয়স নেই

 - একি! তুমি! এখানে?

- এই দিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। দেখলাম তোমার স্কুলের ছাত্র - ছাত্রীরা বেরোচ্ছে, ভাবলাম ম্যাডাম ও নিশ্চয় বেরোবেন, তাই দাঁড়িয়ে গেলাম ।

- বুঝলাম । কিন্তু এইভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়েছো? 


- কেন ভুল কি দেখলে? 

- টেম্পারেচার দেখেছো আজ? এতো ঠান্ডায় না গায়ে সোয়েটার আছে, না গলায় মাফলার! ঠান্ডা লেগে জ্বর না বাঁধিয়ে ছাড়বে না দেখছি!

- স্টুডেন্টদের বকতে বকতে ম্যাডাম দেখেছি সবাইকেই আজকাল শাসন করছেন।

- হেসো না তো! এই বয়সে জ্বর বাঁধলে কে দেখবে শুনি?

- কেনো তুমি! দেখবে না?

- দেখতেই তো চেয়েছিলাম সে সুযোগ আর দিলে কোথায়?

- সুমি তুমি তো …......

- হ্যাঁ , জানতাম যে তোমার মা আমাকে কখনোই মেনে নেবেন না। উনি উনার ছেলের সাথে তার ছেলের চেয়ে বেশি বয়সী কোন মেয়ের বিয়ে দিতে চান না। আমি সবটাই জানি অনি।

- কিন্তু....

- কিন্তু কি অনি? আমি জানি তুমি আমাকে নিয়ে আলাদা থাকতে চেয়েছিলে। তুমি আমাকে বলো! উনিও তো তোমার মা। উনারও তো ছেলের প্রতি, ছেলের ভবিষ্যতের প্রতি কিছু প্রত্যাশা থাকতেই পারে। আর আমি তো কখনও আলাদা থাকতে চাই নি। তোমার মায়ের চোখের জলের বিনিময়ে কখনও আমাদের সুখের সংসার চাই নি আমি।

- জানি তো আমি। কিন্তু তোমায় তো বলেছিলাম বিয়ে করে নিতে। একটা নতুন সংসার করতে। বলো বলি নি? কেনো শুধু শুধু জীবনটা এভাবে নষ্ট করছো! 

- শুধু শুধু?

- তা নয় তো কি!

- বিয়েটা তো সামাজিক বন্ধন, নাই বা সেই বন্ধনে বাঁধা পড়লাম আমরা, তাই বলে কি মনের বন্ধনে বাঁধা পড়ি নি বলছো!

- তোমার সাথে তর্কে পারবো না আমি। যদিও কোনোদিনই পারতাম না।

- এমনি এমনি তো আর স্কুল টিচার হই নি! 

- তাও ঠিক।

- চাদর টা গলা দিয়ে জড়াও। একটু পরেই তো কাশবে আবার!

- জো হুকুম ম্যাডাম। 

- এই ঠান্ডায় কিছু না নিয়ে বেরিয়েছে কোনো আক্কেল নেই। বয়সটাই বেড়েছে একটুও বদলাও নি।

- সে তো তুমিও বদলাও নি। আগেও দিদিমণির মত শাসন করতে আজকেও করছো।

- তাড়াতাড়ি চলো বাজে না বকে, একটু পরই আবার কুয়াশা পড়বে। তাড়াতাড়ি চলো।

- হম, চলো। তবে আমাদের বাড়ি।

- তোমার বাড়ি? কিন্তু কেন? আর কাকিমা?

- সারাজীবন যাতে এভাবেই শাসন করতে পারো সেই জন্যই ডাক পড়েছে ।

- মানে? 

- মানে আবার কি? সামনের অগ্রহায়ণেই শুভ কাজ মা সম্পন্ন করতে চান।

- কি বলছো কি! সত্যি?

- হম। 


সুমি অর্থাৎ মৌসুমির অক্ষি যুগল অশ্রুধারায় পরিপূর্ণ হয়ে আসে। অনির্বাণ ও নিজের বক্ষে টেনে নেয় তার সুমিকে। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরে। আর কোন মতেই সে হারাতে চায় না তার সুমিকে। বহু বছরের অপেক্ষার পর আজকে ওরা এক হতে চলেছে । সুমি ব্যাগ থেকে একটা মাফলার বার করে জড়িয়ে দেয় তার অনির গলায়। তারপর একে অপরের হাতে হাত রেখে এগিয়ে যায়, সুদূর ভবিষ্যতের দিকে। যেখানে আর কেউ তাদের আলাদা করতে পারবে না। ভাঙতে পারবে না তাদের সেই অটুট বন্ধন।

.

.

কলমে - কবিতা

.

.

ছবি :- সংগৃহীত

.

.

#swapnadaria 

#bengaliquote 

#reelschallenge

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ