বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

#কিছু_ইশারাতে #পর্ব ০৩ #ইপ্সিতা_আনন

 কিছু ইশারাতে
পর্ব ০৩
ইপ্সিতা_আনন



বাস থেকে বাসস্ট্যান্ডে নামতেই সামনে প্রিয় বন্ধু আহিরকে দেখে অবাকই হলো মেহজাবীন।

আহিরেরও একই অবস্থা হলো জাবীনকে তার বাবার সাথে দেখে।

জাবীনের তো গতকালই বিয়ে হয়ে গেছে। তবে আজ বাবাকে নিয়ে এই ঢাকায় কেন?

তার তো শ্বশুরবাড়ি থাকার কথা ছিলো!

আহির আর জাবীন একই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে। একমাত্র এই আহিরের সাথেই জাবীনের সবচেয়ে ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে। অবশ্য মেয়ে একজন আছে যার নাম রিয়া। তবে আহির কিছুদিনের জন্য কুমিল্লা গিয়েছিলো। সে নাকি এখনও ফেরে নি বাড়িতে। তাহলে এই ছেলে এত সকালে এখানে কি করছে? ভাবলো জাবীন।

‘ তুই এখানে?তুই না কুমিল্লা ছিলি? ’

আহিরও উত্তর করলো,

‘ ছিলাম। গতকালই এসেছি। এখন যাত্রাবাড়ি যাব দোস্ত। ’

মইনুল ইসলাম কিছু বুঝলেন না। আহির মইনুল ইসলামকে সালাম জানালো। আর নিজের পরিচয় দিলো,

‘ আঙ্কেল আমি শেখ আহির। আমি জাবীনের ভালো বন্ধু। ’

মইনুল ইসলাম সন্তোষে বললেন,

‘ ওহ আচ্ছা। তোমার ব্যাপারে জাবীন আমাকে একদিন বলেছে। ’

ফিচেল হাসলো আহির। বাস আসতেই বাসে উঠতে উঠতে জাবীন আর মইনুল ইসলাম দুজনকেই বলল,

‘ আঙ্কেল আমি আসি। অন্য একদিন আবারও দেখা হবে। আর জাবীন আঙ্কেলকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে যাস। ’

আহির বাসে উঠতেই বাসটা চলে গেলো। মইনুল ইসলাম কাউকে একটা কল করলেন। অপরপ্রান্ত হতে কল রিসিভ হতেই মইনুল ইসলাম বললেন,

‘ আমরা পৌঁছে গেছি হামিদ। ’

ওপাশ হতে হামিদ নামক ব্যক্তিটি কি বলল বোঝা গেলো না তবে মইনুল ইসলাম বললেন,

‘ তুই কাউকে পাঠিয়ে দে। ’

বলেই ঠিকানাটা দিয়ে কল কেটে দিলেন।

বাস স্ট্যান্ডের সামনেই একটি হোটেল ছিলো। বাবা মেয়ে সেখানে সকালের নাশতা সেড়ে ফেলেন। তখনই মইনুল ইসলামের ফোনে অপরিচিত এক নাম্বার থেকে কল আসে।

মইনুল ইসলাম কল রিসিভ করতেই অপরপ্রান্ত হতে কোনো এক ছেলে প্রথমেই সালাম দিয়ে ওঠে,

‘ আসসালামু ওয়ালাইকুম আঙ্কেল। ’

মইনুল ইসলামও সালামের উত্তর করেন। এরপর ছেলেটি বলে,

‘ আঙ্কেল আমি হামিদ মাহমুদের ছেলে হাসান মাহমুদ বলছি। আমি আপনাদের দেওয়া ঠিকানায় দাঁড়িয়ে আছি। আপনারা কোথায়? ’

মইনুল ইসলাম মেয়েকে নিয়ে হোটেল থেকে বের হতেই সেই বাস স্ট্যান্ডের সামনে কিছু মানুষ দেখা গেলো। এরমধ্যে জাবীনের চোখ গিয়ে পড়লো এক যুবকের ওপর। যে কানে ফোন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যুবক মুখটা উপরে তুলতেই জাবীন চিনে ফেললো। আর চমকে গেলো। এ তো সকালে তাদের এক্সিডেন্ট করা সেই ছেলেটা। এদিকে মইনুল ইসলাম হোটেলের নাম বলছেন ছেলেটাকে।

এদিকে হাসানও সামনের হোটেলের দিকে তাকাতেই জাবীন আর মইনুল ইসলামকে চমকে গেলো। বুঝতে আর বাকি রইলো না এই সেই মইনুল ইসলাম যার কথা বাবা সবসময়ই বলেন তাদের। সকালের ঘটনা নিয়ে লজ্জা আর অস্বস্তি নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো হাসান।

‘ আঙ্কেল আমিই হাসান মাহমুদ। হামিদ মাহমুদের বড় ছেলে। ’

বাক্যটা শুনে মইনুল ইসলাম বাম পাশে ফিরে তাকালেন। তিনি নিজেও চমকে গেলেন সকালের সেই ছেলেটাকে দেখে। চমকে গিয়ে বললেন,

‘ বাবা তুমি? ’

হাসান একবার মইনুল ইসলাম তো একবার জাবীনের দিকে তাকিয়ে মেকি হাসার চেষ্টা করে বলল,

‘ আসলে তখন অপরিচিত ছিলাম। আমিও চিনতে পারি নি, আপনারাও চেনেন নি। আমি আশেপাশেই ছিলাম। বাবা ফোন করে আপনাদের কথা বললো, তাই চলে এলাম। তবে আমার জন্য এমন সারপ্রাইজ আছে ভাবতে পারি নি। ’

‘ আচ্ছা সমস্যা নেই চলো যাওয়া যাক। ’ মইনুল ইসলাম হেসে বললেন কথাটা।

হাসানের সাথে হাঁটা আরম্ভ করলেন। রাস্তার অপজিট সাইডে গিয়ে একটি সিএনজি ঠিক করলো হাসান। সিএনজিতে উঠে পড়লো তিনজন। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে তারা পৌঁছে গেলো ছয়তলা ভবনের এক বিল্ডিং এর সামনে।

এদিকে চারপাশে সব জায়গাতেই উঁচু উঁচু দালানকোঠা। মুগ্ধকর হলেও জাবীনের মন টিকছে না। বিশেষ করে এই হাসানকে দেখার পর থেকে তো আরও না। তবুও কিছু করার নেই।

হাসান মইনুল ইসলামের থেকে ব্যাগটা নিয়ে হাঁটতে আরম্ভ করলো। মইনুল ইসলাম আর জাবীনও পিছু পিছু গেল। লিফটে উঠতেই মইনুল ইসলাম জিজ্ঞাসা করলেন,

‘ এই বিল্ডিংটা তোমাদের? ’

‘ হ্যা আঙ্কেল। আমরা তৃতীয় এবং চতুর্থতলা মিলিয়ে থাকি। ’

বোঝা গেলো তৃতীয় এবং চতুর্থতলা মিলে ডুপ্লেক্স বাসা বানানো হয়েছে।

তিনতলায় আসতেই তিনজনে নেমে গেলো।

হাসান বাসার কলিংবেল বাজাতেই খুব ভদ্র এবং সুন্দর দেখতে একজন মহিলা দরজা খুলে দিলেন। সামনের মানুষদেরকে দেখতেই মিষ্টি হাসি দিয়ে মইনুল ইসলামকে সালাম দিয়ে বললেন,

‘ অনেক বছর পর ভাইজান। ’

মইনুল ইসলামের সাথে কথা বলা শুরু হলো সেখানে দাঁড়িয়েই। এদিকে হাসান ফাকফোকর পেতেই জাবীনের দিকে তাকালো। জাবীন বাসাটা এদিক ওদিক দেখতেই চোখে চোখ পড়ে গেলো হাসানের সাথে। হাসান বিব্রতবোধ করলো। তড়িৎ বেগে চোখ সড়িয়ে নিলো।

এদিকে মইনুল ইসলাম আর হাসানের মা লামিয়া বেগমের কথা বলার সময় হামিদ মাহমুদ আসলেন আর মইনুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরলেন।

‘ অনেক বছর পর বন্ধু। ’

কথাটা বলে জাবীনের দিকে তাকালেন। আর জাবীনের মাথায় হাত রেখে বললেন,

‘ মাশা-আল্লাহ মেয়ে বড় হয়ে গেছে। ’

জাবীন সালাম দিলো। লামিয়া বেগম উনাদের রুম দেখিয়ে দিলেন। বললেন,

‘ আজকের রাত এই বাসায় থাকেন। আগামীকাল ওপরে পাঁচতলায় উঠতে পারবেন। ’

মইনুল ইসলামের জন্য আলাদা রুম আর জাবীনের জন্য আলাদা রুম ঠিক করা হলো।

বাড়িটা খালি ছিলো মইনুল ইসলাম জিজ্ঞাসা করলে জানা যায় গতকাল নাকি বাড়ির সবাই কোথাও ভ্রমণে গিয়েছে।

মইনুল ইসলামকে রুম দেখিয়ে দেওয়ার পর জাবীনকে একটি রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। রুমটি ভীষণ সুন্দর ছিলো। লামিয়া বেগম জাবীনকে জিজ্ঞাসা করলেন,

‘ আম্মু হিজাব খোলো এখন। আর তোমার নামটা? ’

জাবীন হিজাব তুলে হেসে জবাব দিলো,

‘ ফারিহা মেহজাবীন। ’

জাবীনকে দেখে মুচকি হেসে লামিয়া বেগম বললেন,

‘ নামের মতোই দেখতেও তুমি মাশা-আল্লাহ। কারও নজর না লাগুক মেয়ে। ’

কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলেন লামিয়া বেগম। খাবারের ব্যবস্থাও তো করতে হবে। দুপুর হয়ে এলো।

সারাদিন কাটলো খুবই গম্ভীরভাবে।

জাবীন দুপুরে খাবার খেয়ে নিজের রুমে এসে ঘুম দিয়েছে। বাবার কথা সে জানে না। হয়তোবা বন্ধুর সাথে আড্ডা দিয়েছে নতুবা তিনিও ঘুমে। নির্জন এই বাসাটাই জাবীনের খুব একটা ভালো না লাগলেও চলনসই ছিলো হাসানের অনুপস্থিতিতে।

এদিকে বিকেলের দিকে জাবীনের ফোনে কেউ ফোন করে জানালো জাবীনের বান্ধবী রিয়া নাকি এক্সিডেন্ট করেছে।

জাবীন প্রিয় বান্ধবীর চিন্তায় বাবাকে বলে সেসময়ই জাবীন রওনা হয় হাসপাতালে।

ঠিকানা অনুযায়ী হাসপাতালে গিয়ে দেখে রিয়ার বেশ বড়সড় এক্সিডেন্ট হয়েছে। বন্ধুমহলের বাকি দুজন বন্ধুও এসেছে। সবার চোখেই জল।

জাবীনের ফোনে বাবার কল আসতেই হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় শক্তপোক্ত কোনো ব্যক্তির সাথে ধাক্কা লেগে যায় তার।

শাহীর হাসপাতালে ঢুকতে যাবে সেসময় কেউ এসে তার বুকে ধাক্কা খায়।

শাহীর বিরক্তি নিয়ে তাকালেই দেখতে পেলো সামনে দাঁড়ানো এলোমেলো চুলে এক কন্যাকে।

শাহীরের হৃদয়ে ভায়োলিনের নরম সিক্ত আওয়াজ সুর তুললো যেন।

শাহীর কিয়ৎপল একদৃষ্টে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।

জাবীন বারবার সরি বলে শেষবারের মতো সরি বলতে যাবে, তার আগেই শাহীর তাকে থামিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

‘ এমন ভুল তুমি সারাজীবন করতে পারো মেয়ে। এই শাহীর অনুমতি দিলো তোমায়। ’

জাবীন শুনলো না সে কথা। এদিকে শাহীর নিজেও অবাক হলো নিজের কথায়। প্রথম দেখাতেই এমন আজব কথাবার্তা মোটেও তার পার্সোনালিটির সাথে মানানসই নয়। তাই গম্ভীর হয়ে কিছুটা রুষ্ট আওয়াজে বলল,

‘ চোখ কোথায় দিয়ে হাঁটছিলেন? ’

জাবীন কানে ফোন রেখেই বলল,

‘ আ'ম এক্সট্রিমলি সরি। ’

বলে চলে যেতে নিতেই শাহীর বলে,

‘ এই দাঁড়ান দাঁড়ান। এত বড় ধাক্কা দিয়েছেন যে এখন আমার বুকে ব্যথা করছে। এমন কাজের জন্য সরি বললেও ক্ষমা পাওয়া যায় না। ’

জাবীন রেগে গেলো,

‘ শুধুমাত্র একটু ব্যথাই তো পেয়েছেন, মরে তো আর যান নি।’

চলবে.


(গতপর্বে হাসান আর আহিরের নাম নিয়ে কিছুটা ভুল হয়েছিলো। আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমার বাবা অসুস্থ। সবাই দোয়া করবেন আমার বাবা জন্য।)

1 টি মন্তব্য:

পৃষ্ঠাসমূহ