গল্প:সতীন
লেখা : ফিলিপ সরকার
পর্ব : ০৩
আমার মুখ দিয়ে আর কোন কথা বের হচ্ছিল না। শুধু ভাবির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকলাম। আজ আমার কপাল পুড়ে ছাই হয়ে
যাচ্ছে।
অনেক লোক সেই কপাল পোড়ার গন্ধ পেয়ে চলে এসেছে নেভাতে নয় সেটা দেখার জন্য।
মনে মনে ঠিক করলাম বাবার বাড়িতে যাবো না।
আমি অন্য কোথাও চলে যাবো।খুব অভিমান জমা হয়েছে বাবা মায়ের উপর।
আমি কোন অন্যায় করিনি তারপরও মিথ্যা অভিযোগ চাপিয়ে আমাকে বিদায় করা হচ্ছে।
আল্লাহ একদিন এর সঠিক বিচার করবেই।
আর আল্লাহর দুনিয়ায় আমারও থাকার জায়গার অভাব হবে না।
কাজি সাহেবের ডাকে আমার কল্পনা সরে গেলো।
তিনি বললেন, মা তোমার কোন আপত্তি আছে? মাথা নাড়িয়ে বললাম, না আমার আপত্তি কিংবা অভিযোগ কিছুই তাদের উপর নাই।
আমার সকল অভিযোগ আমি খোদাকে জানিয়েছি তিনি এর সঠিক বিচার করবেন।
তিনি যেহেতু এই পৃথিবীর মালিক সেহেতু তিনিই এর সঠিক বিচার নিজ দায়িত্বে করবেন।
আর আমার যে দেনমোহরের টাকা সেটা আপনি নিজ দায়িত্বে আমার জন্মদাতার হাতে
তুলে দিয়ে বলবেন, আপনার মেয়ের বিয়েতে যে খরচ করেছিলেন সেটা আপনার মেয়ে আপনাকে ফেরত দিয়েছে।
কাজি সাহেব আমার দিকে তালাকনামা এগিয়ে দিয়ে বললো,মা এখানে একটা সাইন করে দাও।
মনটা চাচ্ছিলো না সাইনটা করে দিতে। শত কষ্ট হলেও কোন মেয়ে চায় না তার সংসার টা নষ্ট হয়ে যাক।
অতি কষ্ট নিয়ে সাইনটা করে দিয়েই আমি মাথা ঘুরে পরে গেলাম।
কিছুক্ষন পরে দেখি ভাবির কোলে আমার মাথা। ভাবির চোখে পানি।
ভাবি বললো,এখন তোকে চলে যেতে হবে তোর তালাক হয়ে গেছে।
হায়রে দুনিয়া কার স্বামী আর কে দখল করে নিলো।
ভাবি আমাকে তুলে বসালেন, তারপর আমি উঠে আমার সেই ছোট্ট ঘরে গিয়ে আমি কোন কিছু না নিয়ে শুধু আমার পড়াশোনা করার কিছু সার্টিফিকেট ছিলো যেটা এতোদিন অকেজো হয়েছিলো সেগুলো নিয়ে বের হলাম।
ভাবি আমার সাথে ছিলো আর শাশুড়ী তিনিও পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন যদি বেশি কিছু নেই সেই ভয়ে।
ছোট্ট একটা ব্যাগ নিয়ে বাহিরে এলাম।
বাহিরে স্বামী সতীন সবাই দাড়িয়ে আছে তারাও হয়তো আমার বিদায় খুব আনন্দ করে
দেখার জন্য দাড়িয়ে আছে। ভাবি আমার সাথেই আছে। বলছে,সকাল থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি তোর তুই আমার সাথে চল আগে কিছু খেয়ে নে।
বললাম, না ভাবি আজ আর কিছু খাবোনা।
ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করলাম। আগে আসলে ও আমার সাথে আসতো। আজকে কেমন যেনো
সব কিছু এলোমেলো আর ফাঁকা ফাঁকা লাগতেছে। আজ সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
ঘরে ঢুকে মাথাটা ঝিমিয়ে এলো এই বুঝি মাথাটা ঘুরে মেঝেতে পরে যাবো। কোন রকমে
বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলাম। চোখ জোড়া বুঁজে আসছে। নাহ্ এটা শান্তির ঘুম নয় এটা অশান্তির ক্লান্তি। যে ক্লান্তির গ্লানি এখন সারা জীবন বইয়ে বেড়াতে হবে।
আমি হলাম সংসার খাওয়া মহিলা এটা ভাবতেই হুহু করে কেঁদে উঠলাম বাবা মা দৌড়ে আমার রুমে আসলো।
মা আমায় জিগ্যেস করলো কি হয়েছে মা?
বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,চিন্তা করিস না মা জীবন কখনো একজনের জন্য থেমে থাকেনা।
আজ তোর খারাপ লাগবে লাগাটাই স্বাভাবিক
কিন্তু এটাতে তোর একটা দুঃস্বপ্ন ভাবতে হবে।
তুই আজকে যার জন্য আবেগে কান্না করে দিচ্ছিস।
সে কি তোর চলে আসাতে আদৌও একটি বার তোর কথা ভেবেছে? ভাবেনি আর ভাববেও না।
মা আমার তুই তোর বাবা মায়ের কাছে এসেছিস চিন্তা কিসের আমরা তো বেচে আছি নাকি?
বাবা আমায় কাছে টেনে নিলেন বললেন, তোকে দেখাতে হবে তুইও ওকে ছেড়ে জীবনে
উন্নতি করেছিস যেনো ও একদিন তোকে দেখে পস্তায়।
ও যেনো ভাবে যে কেনো তোকে সে ছেড়ে দিলো।
বাবার বলা কথা গুলো শুনে মনে প্রচুর জোর পাচ্ছি। কিন্তু তাতে কি মনের ক্ষতটা কি আর সহজে কমে।
ওকে এতোটা ভালোবেসেছিলাম যে ডিভোর্স হওয়ার পরেও ওকে ভুলতে পারতেছিনা।
শুধু বারবার ওর কথাই মনে হচ্ছে। আমি আবার কেঁদে উঠলাম।
বাবা বললো, মা তুই কার জন্য কাঁদছিস ঐ ছেলেটার জন্য? ভুলে যা ওকে তুই। যে তোকে
ঘরে রেখে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করলো
তার কথা ভেবে কাঁদছিস?
কাদিস না মা তোকে আমি আবার নতুন করে গড়ে তুলবো।
সমাজ জানবে মেয়েরাও মাথা তুলে দাড়াতে পারে।
বাবার কথা শুনে মনটা হালকা হয়ে গেলো। আমি তাদের সাথে কি ভাবে অভিমান করতে পারলাম?
বাবার কাছে ক্ষমা চাইতে ইচ্ছে করতেছে ।
আজ সেই ছোট্ট বেলার মত মনে হলো একপাশে বাবা বসে আছে আর অন্য পাশে মা
বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললাম বাবা আমায় ক্ষমা করে দাও আমি শুধু শুধু তোমার উপর
অভিমান করেছিলাম। বাবা হেসে বললেন
পৃথিবীতে বাবা মায়ের সাথেই অভিমান করা
যায় মনের যত রাগ ঝাড়া যায়। মনের কথা গুলো খুলে বলা যায়। সেটা অন্য কারোর কাছে হয়না
বিকেল গড়িয়ে রাত হয়ে গেলো। আমি আমার রুমেই শুয়ে আছি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন