মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

আমার_প্রেয়সী পর্ব_১৮ লেখনীতে- জান্নাত_সুলতানা

আমার_প্রেয়সী

পর্ব_১৮
লেখনীতে- জান্নাত_সুলতানা



-"এটা খেয়ে নাও।
আমি ঔষধ নিয়ে এসছি।প্লিজ।"
সাঈদ এর দিকে আষাঢ় রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করলো।তবে ব্যাথার তোপে কঠিন মুখখানা মলিন হয়।পেট এক হাতে চেপে ধরে আরেক হাতে পাশ থেকে একটা বালিশ তুলে সাঈদ এর দিকে ছুঁড়ে ফেলে। সাঈদ কোনো রকম সেটা ধরে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে।আয়াত এবার মুখ খুলে,
-"অসভ্য পুরুষ।
একটা কথা বলবেন না।"
সাঈদ বালিশ রাখে।কি কপাল বউ কে একটু আদর করেছে। এতেই বউয়ের অবস্থা কাহিল। আজ সারা দিন এই পেট ব্যাথা সহ্য করেছে মেয়ে টা।ঔষধ ও খাচ্ছে না।সাঈদ এর কি দোষ সে খুঁজে পাচ্ছে না। বউ কে ভালোবাসেছে।এতে বউ যে এভাবে মূর্ছা যাবে কে জানতো!
সাঈদ কণ্ঠে আদুরে করে ডাকলো আয়াত কে।আয়াত তাকাতেই সাঈদ সাহস সঞ্চয় করে আষাঢ়'র পাশে গিয়ে বসলো।
গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,
-"বিয়ের আগে অনেকবার বলেছিলাম শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে। এখন কষ্ট কে পাচ্ছে?"
আয়াত মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। সে তো পর্যাপ্ত খাবার খায়।কিন্তু তাও কেনো স্বাস্থ্য বাড়ে না?আয়াত বুঝতে পারে না।
আয়াত এর ভাবনার মাঝেই সাঈদ চিন্তিত স্বরে আবার বলে উঠলো,
-"আল্লাহ ভালো জানে তোমার বোনের যে কি হবে।
এই ব্যাটা আর্শিয়ান তো আস্ত একটা হাতি।বাচ্চা একটা মেয়ে ভালোবাসার সাগরে ডুবিয়ে না মেরে ফ,,,
-"সাঈদ ভাই?
স্টপ।"
আয়াত চোখ বন্ধ করে কান চেপে ধরে দুই হাতের তালুর সাহায্যে।ছোট বোন আষাঢ় তার।বোন আর বোনের হাসবেন্ড নিয়ে এসব কথা যেমন লজ্জা পাচ্ছে তেমন রাগ হচ্ছে। সাঈদ নামক পুরুষ টা বড্ড নির্লজ্জ সেটা আয়াত জানে।বড়ো ভাই কে ছোট বোনের স্বামী রূপে এসব কথা বড়ই বেমানান।
সাঈদ একদম চুপ করে গেলো।
তবে কথা সে সত্যি বলেছে।
যদি একটু দয়ামায়া করে মেয়ে টাকে রেহাই দেয়।নয়তো কাল কেনো এক সাপ্তাহ আষাঢ় বিছানা ছেড়ে উঠা দুষ্কর হবে।
------
তাসরিফ বেশ কয়েকবার কল দিয়েছে। কিন্তু তাসফিয়া রিসিভ করছে না।অভিমানে মন টইটম্বুর।
কথা বলবে না। কিন্তু মন তো।শুনলো না।মন টা মানুষ টার কণ্ঠ শোনার জন্য অস্থির হয়ে আছে।
কল রিসিভ করে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে শান্ত কণ্ঠে তাসরিফ ডাকলো,
-"তাসফি জান?"
তাসফিয়ার বুকের ভেতর হু হু করে উঠে। কণ্ঠনালী দিয়ে কোনো শব্দ বেড় করতে পারে না। চুপ করে থাকে।ঘনঘন নিঃশ্বাস শব্দ শুনতে পাচ্ছে তাসরিফ। মেয়ে টা কান্না করছে কি? হ্যাঁ। তাসরিফ অবাক হয় নাহ।এটা নতুন নয়।মেয়ে টা ওকে এক দুপুর না দেখলে পাগল হয়ে যায়। সেখানে আজ চব্বিশ ঘন্টার বেশি সময় মেয়ে টা তাকে দেখা তো দূর কথা পর্যন্ত বলতে পারে নি।
তাসরিফ মৃদু হেঁসে বলে উঠলো,
-"কথা বলবি না পাখি?"
তাসফিয়া শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
তাসরিফ একটু ঘাবড়াল না।বরং প্রাপ্তির হাসি বদন জুড়ে। ভালোবাসার মানুষ টার চোখে তার জন্য পানি। এরচেয়ে ভালো লাগা আর কি হতে পারে! সব ভালোবাসার মানুষ চায় সে যাকে ভালোবাসে তাকেও তার ভালোবাসার মানুষ ভালোবাসে।তাকে প্রায়োরিটি দিবে। ভালো খারাপ সব তারজন্য বরাদ্দ থাকবে।
তাসফিয়া কোনো রকম কান্না থামিয়ে জানালো,
-"আমার কষ্ট হচ্ছে তাসরিফ ভাই।"
তাসরিফ কথা টা সম্পূর্ণ এভয়ড করে গেলো।এখন কিছু বললেই তাসফিয়া আরো আহ্লাদী হবে।
আর তাসরিফ ইমোশনাল হয়ে যাবে। যা হয় সেটা তাসরিফ চাইছে না।
বেশ উৎফুল্লতা নিয়ে জানালো,
-"সিলেক্ট করেছে আমায়।"
-"এক মাস থাকতে হবে! ওমাই গড।"
তাসফিয়া আবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করে দিলো।
তাসরিফ হাসি পেলো।তবে অন্তর জ্বলে উঠলো। রমণীর কান্না মাখা মুখ অশ্রুসিক্ত নয়ন জোড়া দেখার জন্য লোভ হলো।কিন্তু সম্ভব নয়।কথা বলে শান্তনা দিলো তাসফিয়া কে।তাসফিয়া শুনলো।কিন্তু মন মানলো না।কান্না করতে করতে কথা বলতে বলতে এক সময় ঘুমিয়ে গেলো।তাসরিফ তাসফিয়ার সাড়াশব্দ না পেয়ে বুঝতে পারে তাসফিয়া ঘুমিয়ে গিয়েছে। কল কাটে না সে। প্রেয়সীর ভারী ঘনঘন নিঃশ্বাস এর শব্দ শুনতে শুনতে সে নিজেও ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।
----------
আষাঢ় তখন থেকে চুপটি করে আর্শিয়ান এর বুকে দুই হাত ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আর্শিয়ান ওর কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিতেই আষাঢ় তড়িৎ মাথা তুলে তাকালো পুরুষ টার মুখপানে।
কি ভয়ংকর সেই দৃষ্টি। আষাঢ় অবুঝ নয়।সতেরো বছরের কিশোরী আষাঢ় ঠিক বুঝতে পারছে এই দৃষ্টি তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।
-"আর্শিয়ান ভ,,
-"হুঁশ।"
আষাঢ়'র ঠোঁটের উপর তর্জনী আঙ্গুল রেখে চুপ করিয়ে দিলো আর্শিয়ান।

আর্শিয়ান আষাঢ় কে কিছু বলার সুযোগ দিচ্ছে না। সেই কখন থেকে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
আর্শিয়ান এর গভীর দৃষ্টি আষাঢ়'র শরীরে কাঁটার ন্যায় বিঁধছে যেনো।পেটে মুচড় দিচ্ছে।

আষাঢ় ডাগর ডাগর আঁখি জোড়া মেলে তাকিয়ে আছে আর্শিয়ান এর দিকে।

আর্শিয়ান তাকিয়ে আছে আষাঢ়'র দিকে।মুখে নয়।লাল টকটকে লিপস্টিক রাঙানো ঠোঁটের দিকে।

রাত এখন এগারো টা। আর্শিয়ান বউয়ের মুখপানে তাকিয়ে আছে।

মেয়ে টা সামন্য ছোঁয়া নিতে পারছে না। গভীর স্পর্শ কিভাবে নিবে?তার ভালোবাসার ভার সইতে পারবে কি?না-কি মূর্ছা যাবে?কষ্ট পাবে?কিন্তু সে তো কষ্ট দিতে চায় না বউ কে।আদর করতে চায়।মন ভরে ভালোবাসতে।অন্তরে থাকা ভালোবাসা সব উজাড় করে ভালোবাসতে।মেয়েটা কে গভীর ভাবে ছুঁতে চায়।পুরুষ সত্তাও প্রেয়সী কে চাইছে। কিন্তু আষাঢ়? ফিরে আসতে চায়।সময় দিতে চায় মেয়ে টাকে।

তবে মন যেন মানতে চায় না।তার এক্ষুণি চাই আষাঢ় কে। সবরকম প্রস্তুতি সে আগে থেকে নিয়ে রেখেছে।

আষাঢ়'র শরীর কেমন করছে।নারীর শরীর পুরুষের ছোয়া পেলে গলে যায়।সবদিক ভুলতে বসে। আর যদি থাকে ভালোবাসা তাহলে তো কোনো কথা নেই।নারী শরীর বুঝতে পারে কোন টা ভালোবাসার স্পর্শ কোন টা কামনার স্পর্শ।

তবে সামনে দাঁড়ানো পুরুষ টা যে নিজে থেকে একধাপ ও এগিয়ে আসবে না সেটাও জানা আছে আষাঢ়'র।

ভয় লজ্জা দূরে ঠেলে অনেক সাহস সঞ্চয় করে আষাঢ় আর্শিয়ান এর অধর আলতো করে স্পর্শ করে। আর্শিয়ান বুঝি এই হালকা স্পর্শে আশকারা পেলো!না-কি অপেক্ষায় ছিলো বউয়ের অনুমতির?

কে জানে।আষাঢ় কে সরে আসতেই দিলো না। চুলের ভাঁজে শক্ত করে হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে একদম হামলে পড়ে আষাঢ়'র ঠোঁটে।গম্ভীর আর্শিয়ান পাগলের ন্যায় স্পর্শ করে বউকে।এলোমেলো হাতের স্পর্শ আষাঢ় কাবু হলো।অনুভব করতে চায় সামনে উন্মাদ মানুষ টাকে।

এভাবে থেকেই কখন বিছানায় চলে এলো আষাঢ় টের ও পেলো না।ঠোঁটের অসহ্য যন্ত্রণা আর বক্ষদেশ শক্ত দানবীয় হাতের স্পর্শ তাকে এতোটাই কাবু করেছে আর কোনো দিকে ধ্যান নেই মেয়ে টার।শুধু মনে হলো সামনের এই পরিচিত অতিপরিচিত পুরুষ টার তার অচেনা বড্ড অচেনা আগে কখনো পুরুষ টার এমন ভয়ংকর রূপ সে দেখে নি।অবশ্য দেখবে কি করে আগে তো আর স্বামী ছিলো না।

আর্শিয়ান আষাঢ়'র বয়সের কথা মাথায় রেখেই নিজে আগে থেকে সচেতন। তবুও আষাঢ়'র কষ্ট কম হলো না।বলিষ্ঠ শরীর টা ছোট দেহখানার উপর পাথর মনে হলো।তবে সর্বাঙ্গে আর্শিয়ান ভাইয়ের ভালোবাসার উষ্ণ ছোঁয়া কষ্ট গুলো গিলে নিয়ে আষাঢ়।শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে পুরুষ টার ভালোবাসার প্রখরতা অনুভব করতে লাগলো।
আর্শিয়ান উন্মাদ। আষাঢ় জড়িয়ে রেখেই স্বল্প আওয়াজে জানালো,
-"আপনি শান্ত হোন।

আমি আপনারই। ভালবাসি তো।"
-"জানি।"
আর কি বলবে আষাঢ় ভেবে পেলো না। মানুষ টা এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে এমন কিছু বলবে আষাঢ়'র ধারণা ছিলো না। তবে ভালো কিছু আশাও সে করে নি।তবে মনে মনে চাইছিল যেন জবাব টা এমন হয় যে, "আমিও ভালবাসি" কিন্তু আর্শিয়ান ভাই তো তেমন কিছু বললোই না। আর্শিয়ান আষাঢ়'র কপালে চুমু খেয়ে আবার নিজের কাজে মনোযোগী হলো।

আষাঢ় চোখ বন্ধ করলো। মেনে নিলো নীরব ভালোবাসার চিহ্ন। মানুষ টা তাকে ভালবাসে।এটাই চিরন্তন সত্য। মানুষ টা মুখে না বলে কিন্তু আষাঢ়'র মন জানে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ