গল্প:সতীন
লেখা : ফিলিপ সরকার
পর্ব : ০৬
খুব চিন্তা হচ্ছিল। বাবা মা আমার বিষন্নতার ছাপ দেখে বললো,কোন চিন্তার দরকার নাই।
যেটা হওয়ার হবে তারজন্য চিন্তা করে যেনে অসুস্থ হয়ে না পড়ি।
এদিকে ছোট ভাই মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছে।
সময় ২:৩০ মিনিট এখন হয়তো অনলাইনে রেজাল্ট এসে গেছে।
ভাই আমার রেজিষ্ট্রেশন নম্বর নিয়ে রেজাল্ট মিলিয়ে দেখতেছে।
ভাইয়ের মুখে খুশির আভা দেখলাম বললো,আপু তুই ৩.২০ পেয়েছিস জিপিএ ৪ এর মধ্যে।
মূহুর্তের মধ্যে আমার বাবার দিকে দেখলাম তিনি আমার কাছে এসে খুশি মুখে বলতেছে,মা আমি জানতাম তুই ভালো কিছু করবি।
আমার মা আমার পাশে বসে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, এটা আমারো বিশ্বাস ছিলো
আমাদের মেয়ে ভালো কিছু করবে।
বলে তিনি আমার কপালে চুমু খেলেন।
বাড়ির পাশের কিছু মহিলা আসলো আমাদের বাড়িতে।
হঠাৎই তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো,
সংসার খেয়ে এসে বসে আছে কি হবে এতো পড়াশোনা করে।
মূহুর্তের মধ্যে আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো।
বাবা তাকে বলেই বসলেন, আমার মেয়ে সংসার হজম করুক তাতে তোমার কি?
মহিলা বির বির করতে করতে চলে গেলো।
বাবা কাছে আসলো বললো,খবরদার মা
এই সমস্ত ভাইরাসের কথা শুনে তুই কখনো মন খারাপ করবি না।
এরা কখনো অন্যের ভালো সহ্য করতে পারে না।
এরা অন্যে দুঃখ খুশি হয়।জানিস মা তোকে নিয়ে আজ আমার খুব গর্ব হচ্ছে।
বাবার কথা শুনে সাহস পাচ্ছি। খুব করে পড়াশোনা করতেছি কিছু দিন পার
আমার একটা চাকরির পরিক্ষার কার্ড অনলাইনে চলে আসলো।
রাত দিন অভেদ করে পড়াশোনা করতেছি জানিনা বরাতে কি আছে কিন্তু আমি হাল ছাড়ছি না।
খুবই মনোভাব দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি
আমার জীবনের ভালো দিন আসলেও আসতে পারে।
বাবা ভাইকে দিয়ে পরিক্ষার প্রবেশ পত্র আনিয়েছেন।
আর মাত্র একদিন পর আমার রিটার্ন পরিক্ষা।
বাবা বলতেছে, মা তুই আজকে আর কোন পড়া পড়িস না। পরিক্ষার আগের দিন বেশি পড়লে সব ভুলে যাবি।
বাবার কথা শুনে আর বেশি পড়লাম না।
ঘুমিয়ে গেলাম। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাবার সাথে চলে গেলাম আমার পরিক্ষা কেন্দ্রে।
সেখানে অনেক পরিক্ষার্থী দেখে প্রচন্ড ভয় হলো। এতো জনের মধ্যে আমার সুযোগ হবে তো?
আমি পারবো তো?বাবা আমার প্রশ্নবিদ্ধ মনোভাব বুঝে গেলেন বললেন,
চিন্তার কোন কারণ নেই মা তোর প্রশ্ন কমন পরলেই
তুই পেয়ে যাবি।
বাবা বললো,প্রশ্ন কমন পরলেই তুই পেয়ে যাবি।
তারপরও চিন্তা হচ্ছে। কিছুক্ষন পরে বেল বাজানো হলো। আমরা কেন্দ্রের মধ্যে প্রবেশ করলাম। কক্ষে প্রবেশ করে নিজের আসনে বসে খোদাকে স্বরণ করলাম।
পরিক্ষা শুরু হলো মোটামুটি ভালো দিলাম
কয়েকটা অংক নিয়ে সমস্যা হলেও অন্য গুলো ভালোই দিলাম।
পরিক্ষা শেষ আমি বাহিরে বেরিয়ে এলাম। বাবা দাঁড়িয়ে আছে। বাবা আমাকে দেখে পরিক্ষা কেমন দিলাম সেটা জিগ্যেস করলো।
তারপর তিনি হিসেব করলেন মোটামুটি সত্তুর নম্বেরর মত আমার সঠিক হয়েছে।
বাবা বললেন চিন্তা নেই মা তুই টিকতে পারবি।
আমরা বাড়িতে ফিরতেই কোনো এক মহিলা বললো,কত ঢং দেখবো তালাকি মেয়েকে নিয়ে বাপে কেমন শুরু করে দিয়েছে বাবা আমাকে বললেন,শক্ত হয়ে থাক মা।
এর যোগ্য জবাব একদিন আমরা দেবোই।
বাবার চোখে দেখলাম খুশির রেখা। বাবা মহিলাকে কিছুই বললেন না।
বাবা আর আমি আসলাম। বাড়িতে এসে শুয়ে আছি মাথাটা ঝিম ঝিম করতেছে।
ভাই আমার পাশে বসে পরিক্ষার খবর নিচ্ছে।
মা ভাইকে বললো পরে শুনিস এখন যা।ও একটু আরাম করুক।
আমার ডিভোর্সের পর থেকেই বাবা মা আমার প্রতি বেশি খেয়াল রাখছেন বাবা আরও বেশি
একমাস পর রেজাল্ট হলো বাবা আমার রোল নিয়ে বাজারে কম্পিউটারের দোকানে গেলেন গিয়ে দেখলেন আমি রিটার্ন পরিক্ষায়
টিকে গেছি। ভাইবা পরিক্ষার কার্ড পেয়েছি।
বাবা বাড়িতে এসে আমাকে বললেন,মারে তোর ফলাফল ভালো তুই ভাইবা পরিক্ষার সুযোগ পেয়েছিস।
বাবার মুখে কথাটা শুনে মা পাশে থেকে দুই হাত তুলে খোদার কাছে প্রার্থনা করলেন বললেন,আল্লাহ আমার ডিভোর্সি মেয়েটার পাশে তুমি নিজেই থেকো মাবুদ সে যেনো
চাকরিটা পেয়ে যায় বলে হুহু করে কেদে দিলেন।
বাবা মাকে বললো, কেঁদোনা সকল কান্নার সমাধান করার চেষ্টাই করতেছি আল্লাহ চাহে তো আমার মেয়ে সফল হবেই।
সমাজকে দেখাবো আমার মেয়ে একজন যোগ্য মেয়ে।
অন্য দের মত ভেঙে পরার মানুষ আমার মেয়ে নয়।
সবাই জানবে বাবা মা পাশে থাকলে ছেলে মেয়ের জীবন কখনো নষ্ট হয় না।
বাবা আমার কাঁধে হাত রেখে বললো,
তুই আমার সম্মান রক্ষা কর মা।
কয়েকদিন পর আমার ভাইবা পরিক্ষার তারিখ মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হলো।
ভাইবার জন্য খুব ভালো করে প্রস্তুতি নিচ্ছি যেনো ভালো ভাবে দিতে পারি।
একদিন ভাইয়ের সাথে বাজারে গিয়েছি হঠাৎ সে আমার সামনে আসলো।
বুঝতেছিনা বার বার কেনো এই মানুষটা আমার সামনে পরে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন