পর্ব ৪৭
লেখিকা তন্নী তনু।
আগের পর্ব পড়ার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে দেখুন
।
।
বাইরে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। সুভা জানালার গ্রীল ধরে শূন্যে দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছে। সুমন এখনো ফেরেনি। বাবার ঔষধ খাওয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। হাত শূন্য। একরাতের ঔষধের যতোটুকু খরচ ততোটুকু টাকা হাতে থাকলে এই ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সে বেরিয়ে যেতো। কিন্তু তারও উপায় নেই। দীর্ঘশ্বাস জমে আছে বুকে। সুমনের অপেক্ষা করা বৃথা মনে হচ্ছে। নিজেই মায়ের কাছে যায় সুভা।
--মা.... আমি মেডিসিনের টাকা অনেক আগেই সুমনকে দিয়েছি। কাজের প্রেশারে আমি খবর নিতে পারিনি। তাছাড়া টাকা দিলে ঠিক সময়েই মেডিসিন এনে দেয়। এইবার কেনো এমন করলো....
-- বাজার টাও আনেনি। প্রতিমাসে তো সময় মতোই বাজার আনে।
-- তুমি আমাকে দিনের বেলায় বলবে না? একটা ব্যবস্থা করা যেতো..... শেষ বেলায় কেউ বলে?
-- সুমনকে বল আজকের ঔষধটা অন্তত আনতে। কাল না হয় পুরো মাসের ঔষধ আনা যাবে।
-- এই বৃষ্টির রাতে কোথায় থেকে মেডিসিন আনবো এখন?
-- সুমনকে কল দে....
-- ওর ফোন বন্ধ....!
--তাহলে এখন কি হবে সুভা। ঔষধ না খেলে যে....
সুভার মনটা অশান্তির ছোঁয়ায় কানায় কানায় ভরে ওঠে। আর কতো সহ্য করবে? কতো সহ্য করা যায়? তারা কি কখনো বুঝবে না-- নিজের কাছে একটা কড়ি সে রাখে না। কখনো না। সুভা নীরব গলায় বলে,
--আমার কাছে সত্যিই টাকা নেই। থাকলে আমি ঠিকই চলে যেতাম মা।
সুভার মা আশ্বস্ত করে বলেন,
-- আলমারিতে দুই চার টাকা রাখতে রাখতে হাজার পাঁচেক টাকা জমতে পারে। দেখি গুণে কতো আছে।
--তোমাদের সম্বলস্বরুপ দু-চার টাকা থাকলেও আমার হাত সত্যিই শূন্য। পৃথিবীতে আমার জন্য সত্যিই অবশিষ্ট কিছুই নেই।
মনের কথাগুলো চুপচাপ নিঃশব্দে বলে গেলো সুভা। তবে তা কেউ জানলো না। কেউ শুনলো না।
*
*
*
আলমারি খুলে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুভার মা। খুঁচরো পয়সা জমানো মাটির ব্যাংকটা ভাঙা। তালা দেয়ার ড্রয়ারে সোনার অলংকার গুলো নেই। তিনি চিৎকার দিয়ে বলেন,
-- আল্লাহ্! আমার টাকা গয়না কই গেলো?
সুভা দৌড়ে আসে। ড্রয়ার টেনে দেখে শূন্য ড্রয়ার। মাটির ব্যাংকটাও ভাঙা। অশনী সংকেত যেনো ধরনী কাঁপিয়ে হুংকার দিচ্ছে। কিসের সংকেত দিচ্ছে এসব?
সুভা নিস্তব্ধ, নিশ্চল। হিসাব যেনো মিলছেই না। ঠিক সে সময় কলিংবেল বেজে ওঠে। সুভা মলিন মুখটা নিয়ে সেদিকে এগিয়ে যায়। দরজা খুলে দেয়। এতো রাতে সুমন ছাড়া কেউ আসার কথা নয়। তবে দরজা খুলে সুমনের বন্ধুকে দেখতে পায়। সুভা বলে,
-- তাপস তুমি এতো রাতে? সুমন কই?
--ওকেই তো ডাকতে এলাম। ফোন বন্ধ তাই বাসায় এলাম।
-- ও তো এখনো ফেরেনি।
-- এতো রাতে কোথায় গেছে?
--ও আজ বাসায় ই আসেনি। ফোন ও অফ....
-- কিন্তু ওকে তো খুব দরকার...না হলে চলবেই না আপু...
--আমাকে বলতে পারো। ও চলে এলেই আমি বলবো...
-- আসলে কিভাবে যে বলি!!!
--নো প্রবলেম! ইউ ক্যান সে...
-- একচুয়েলি ও সেদিন বললো -- আংকেল নাকি খুব অসুস্থ। টাকা লাগবে সাত দিনের জন্য। এর পরে সুভা আপু ম্যানেজ করে দিয়ে দিবে। আমার কাছে সেমিস্টার ফি ছিলো। খুব রিকুয়েস্ট করলো যেনো টাকাটা ওকে দেই। আমি ভাবলাম যেহেতু বিপদ। আর ভার্সিটিতে টাকা সাত দিন পরে দিলেও তেমন কিছু হবে না। পরে দিয়ে দিলাম। প্রায় দশ দিন হয়ে গেছে। এখনো টাকাটা দেয় নি। যদি আমার টাকা হতো এটা কোনো ম্যাটার ছিলো না। ভার্সিটি থেকে বাবা কে কল দিলে ট্রাস্ট মি আপু বাবা উল্টাপাল্টা ভেবে নিবে। সন্দেহ করবে। টাকাটা যদি কালকের মধ্যে একটু ম্যানেজ করে সুমন দিত।
কথাগুলো তীরের মতো গেথে গেথে পড়ছে সুভার। তবে দগ্ধ হওয়া ক্ষত ঢেকে মুখে সুন্দর হাসি ঝুলিয়ে সুভা বললো-- আমি তো জানতাম না ভাই! সুমন পরিবারের জন্য এতো চিন্তা করে জানা ছিলো না। কালকের মধ্যে আমি টাকা পাঠিয়ে দিবো। ভেতরে এসে বসো।
-- আজকে না আপু। আরেকদিন আসবো। আজ যাই। কিছু মনে করবেন না আপু প্লিজ...
-- আরে নাহ....
তাপস চলে যায়। দরজা লাগায় সুভা। পেছনে তার মা দাঁড়িয়ে। দু"জনের চোখে চোখে কথা হয়। অশুভ কিছুর আঁচ দুজনের হৃদয়েই উঁকি দিচ্ছে। সুভা নিস্তব্ধ,নিরব। বুকটা ভারী হচ্ছে ক্রমেই.........
______________________
মার্জিয়া বেগম অপ্রত্যাশিত ঘটনা স্বচক্ষে অবলোকন করে নিজের মনকে সামাল দিতে পারছেন না। জ্ঞান হারানোর পর সাফিন আহমেদ আর শিশির মার্জিয়া বেগমকে বিছানায় নিয়ে আসেন।একটা লাল রঙের মগের ছোট হাতল ধরে মামির মাথায় পানি ঢেলে চলেছে তিথি।তবে জ্ঞান ফেরার মামির রাক্ষুসে দৃষ্টি দেখে দূরে সরে গেছে সে। কুটুস মাথা মুছে দিচ্ছে। মার্জিয়া বেগম অনর্গল উল্টাপাল্টা বলেই চলেছেন। শিশির দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিরবে সবটা সয়ে যাচ্ছে। সয়ে এসেছে এতকাল। তিথির পক্ষ নিয়ে কিছু বলতে গেলেই বাসায় ছোট খাটো যুদ্ধ বেঁধে যেতো। শান্তির জন্য তাকে চুপ থাকতে হতো। শিশির বা সাফিন আহমেদ এর সামনে মার্জিয়া বেগম তিথির গায়ে হাত তুলতেন না। তবে কুটুস ঠিকই খবর দিতো শিশিরকে। তবে মাকে বোঝানোর সাধ্য তার ছিলো না। তবে আজ সব সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে। মার্জিয়া বেগম রাক্ষুসে হুংকার দিয়ে বলে ওঠেন,
--ওকে আমার সামনে থেকে যেতে বল। র*ক্তে*র দোষ এসব। আমি আগেই বলেছিলাম এই মেয়েকে আমি রাখবো না। আবার দয়ার শরীর ফেলেও দিতে পারিনি। তাই এই দিন দেখতে হলো। দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পুষছি এতো দিন।
এককোণে নিরবে তিক্ত চোখের জল চোখ ফেটে বের হচ্ছে তিথির, হৃদয় টা ছিড়ে যাচ্ছে। এই দিনের ই ভয় পেয়েছিলো সে। আজ সেই ঘটনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এই মূহুর্তে কি হতে চলেছে? বিচ্ছেদ? চির জীবনের জন্য শিশির কে হারাতে হবে। আচ্ছা জীবনের কোন দুঃখটা বেশী? পরিবার হারানো? জীবনের সাথে যুদ্ধ করে বড় হয়ে ওঠা? নাকি ভালবাসার মানুষটাকে হারানো। এক জীবনে সব হারিয়ে ফেলবে সে? একটা মানুষের সব হারিয়ে যায়?? কিছুই কি অবশিষ্ট থাকে না! গভীর ভাবনার ছেদ ঘটে মার্জিয়া বেগমের হুংকারে,
-- এক সপ্তাহের মধ্যেই ঐ মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করবে। ওকে আমি আর এখানে রাখবো না। আর এক সপ্তাহের মধ্যে আমি আমার ছেলেকেও বিয়ে করাবো।
বুলেটের গতিতে বুক ছিদ্র হয়ে যায় তিথির। চোখ ফেটে উপচে ওঠে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ। শরীরের ভার রাখতে না পেরে দেয়ালে পিঠ ঠেকায় তিথি। শিশির তখনও নিস্তব্ধ, নিরব। ধৈর্যের পরীক্ষা চলছে তার। সাফিন আহমেদ বলেন,
--শিশিরের আম্মা। খুব বেশী-ই হয়ে যাচ্ছে না এখন? তুমি কি কখনো নিজের জেদের বাইরে যেতে পারো না।
হুরমুরিয়ে উঠে বসেন মার্জিয়া বেগম। শরীর ওড়না জড়িয়ে চেঁচিয়ে বলে,-- শোনো তোমার জন্য, তোমার বোনের জন্যে আমার ভাই জীবনে এতটুকু শান্তি পায়নি। তোমাদের র*ক্ত খারাপ।তোমার বোন এক সময়ে র*ঙ্গ*লীলা করে আমার পুরো পরিবারের সম্মান নষ্ট করেছে। আবার একটা জন্ম দিয়ে গেছে সেইটা আমার জীবন ধ্বংস করছে। কখনো কিচ্ছু বলতে পারিনি আমি.... এদের জন্য আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেছে.....
সাফিন আহমেদ হুংকার দিয়ে বলে,
-- স্টপ ইট। অনেক হয়েছে। বাচ্চা শুধু আমার বোনের নাকি তোমার ভাইয়েরও ছিলো। ভাগ্যিস আমার বোনের মতো হয়েছে তিথি,তোমার ভাইয়ের মতো হলে তো ক্রিমিনাল হতো।
-- এতো বড় কথা তুমি বলতে পারলে? আমার ভাইয়ের জীবন তুমি আর তোমার বোন মিলে নষ্ট করেও শান্ত হলে না। ভাই টা আমার ধুকে ধুকে বিদেশে পড়ে আছে।
শিশির এইবার কথা ছাড়ে,
--তোমার ভাই রঙ্গমঞ্চ করে বসে ছিলো। তপন চৌধুরী একটা বড় মাপের ক্রিমিনাল। শীঘ্রই সব সত্য উন্মোচন হবে। টিভির হেড লাইনে তপন চৌধুরী ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না।
-- সরে যা চোখের সামনে থেকে। তোরা বাপ ছেলে মিলে এখন নিজেদের দোষ ঢাকতে উল্টাপাল্টা কথা বলবি।
--এই কয়দিন নিউজ চেক করো। তোমার ভাই কি জিনিস তুমি নিজেই দেখতে পাবে......
-- আমি কিচ্ছু জানতে চাই না। আমি শুধু আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে পারবো না। তিথির মা আমার ভাইয়ের জীবন নষ্ট করে দিছে। এখন তোর জীবনটাও তিথি খেয়ে দিবে। এসব কবে থেকে চলছে কে জানে?নতুন পাপের জন্ম হলো কি না উপরওয়ালা জানেন।
-- এনাফ ইজ এনাফ মা।লিমিট ক্রস করে ফেলছো তুমি।বার বার ওকে দোষারোপ করছো। ও আমার রুমে এসেছে। আমার পারমিশন ছাড়া ঢুকতে পেরেছে কি? ও দোষী হলে আমিও দোষী। তার চেয়ে বড় কথা আমি কোনো পাপ করিনি। আমি বাবার অনুমতি নিয়ে ওকে বিয়ে করেছি।
অতঃপর কিছু সময়ের জন্যে নিরব পরিবেশ। আকাশ থেকে একখন্ড ভারী বরফ যেনো মার্জিয়া বেগমের মাথায় এসে পড়ে। থেমে যায় তিথির হৃদয়ের স্পন্দন। এই মূহুর্তে যে কি হবে?
অতঃপর তিথির হৃদয়ের কাঁপনে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে। শক্তিহীন অসাড় শরীর নিয়ে নিয়ে দেয়াল ঘেঁষে বসে পড়ে। মার্জিয়া বেগম চিৎকার দিয়ে বলে,
-- আল্লাহ্!তলে তলে এতো কিছু।
বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। হাত পা বাচ্চাদের মতো ছুড়তে থাকে। মূহুর্তেই তান্ডব শুরু দেয় মার্জিয়া বেগম। বালিস ছুড়ে ফেলে দেয়। বিছানার চাদর খামছে জড় করে ফেলে। রুষ্ট, ক্রুদ্ধ হয়ে মার্জিয়া বেগম ফোঁস ফোঁস করতে থাকেন। সাফিন আহমেদ পাশে বসে বুঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাতেও শান্ত হয় না মার্জিয়া বেগম। অশান্ত হয়ে হাতের কাছের টিভির রিমোর্ট সজোরে ছুড়ে দেয় তিথির দিকে। চোখ নিবদ্ধ রাখা তিথি অপ্রত্যাশিত তীব্র আঘাতে চোখ বন্ধ করে ফেলে। সাথে সাথে গোল বলের মতো ফুলে ওঠে চোখের পাশ। বহু আঘাত সহ্য করেছে চোখের পানি মরা নদীর মতো শুকিয়ে গেছিলো তবে প্রকাশ্য সবার সামনে আজ অপমানিত হয়ে হৃদয়ের দহনের উত্তাপে চোখ দিয়ে গরম জল অঝোর ধারায় ঝড়ছে।
মার্জিয়া বেগমের বিগড়ে যাওয়া হিংস্ররূপের কৃতকর্ম নিজের চোখে দেখে শিশিরের নিজের হৃদয়টাও কেঁপে ওঠে। এভাবেই অত্যাচারিত হতো মেয়েটা। পৃথিবীর সকল নিয়ম বাঁধা-বিপত্তি লাজ লজ্জা সব ভুলে যায় শিশির। বাবা-মা কুটুসের উপস্থিতিতে জীর্ণ হৃদয়ের আঘাতে আঘাতে ক্ষয়ে যাওয়া মেয়েটিকে বলিষ্ঠ হাতে টেনে তুলে বুকের মধ্যে নেয়। তার মা যে এতো নির্মম-নির্দয় তা সত্যিই তার জানা ছিলো না। গত দিনেও কি মিষ্টি ভাষায় বলেছিলো যাকে অনুভব করিস তাকেই বিয়ে করবি। অথচ সেখানে তিথিকে সে সহ্য-ই করতে পারছে না। পারছে না তো ভালো কথা তাই বলে এভাবে মারবে। শিশির সুরক্ষার চাদরে ঢেকে বুকে আগলে রাখে তিথিকে। এরপর বলে,
-- এভাবেই মারতে তাই না? কি জন্য? ওর মা তোমার ভাইকে ঠকিয়েছে বলে? তোমার বাবার বাসার মানুষের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে বলে?? মান সম্মান নষ্ট হয়েছে বলে?
এসব যখন হয়েছে তিথি একটা ছোট্ট বাচ্চা। ওর কি দোষ?
-- ওকে আমি অকারণে কোনোদিন মারিনি। ওর মাকে ভালোবেসে মাথায় তুলেছিলাম। সুশিক্ষা দিতে পারিনি, শাসন করিনি বলেই মাথায় উঠেছিলো। তাই ওকে শাসন করেছি। যখন তর্ক করেছে তখন মেরেছি।
-- আজ কোন অন্যায়ে ওকে মারলে?
-- এতো শাসনে রেখেও ও আমার ভাতে ছাঁই ঢেলে দিলো।
-- ও কিচ্ছু করেনি। অন্যায় করলে করেছি আমি। ওকে আমি জোর করে বিয়ে করেছি। তাহলে ওকে মারলে আমাকে মারছো না কেনো। আমি ছেলে বলে?
মার্জিয়া বেগম তেড়ে আসেন,
-- লজ্জার মাথা খেয়েছিস নাকি। ছেড়ে দে ওকে। নির্লজ্জ, বেহায়া হয়েছিস?ওদের বংশধরের নেইচার ই এমন। যাকে ধরে পাগল বানিয়ে ছাড়ে।
-- ও আমাদের না মা। তোমাদের বংশধর। আমার ফুপি যতেষ্ঠ ভালো মেয়ে ছিলো।
রাগের তোড়ে কাঁপতে থাকা মার্জিয়া বেগম শক্ত হাতে কষে থাপ্পড় দেয় শিশিরের গালে। তীব্র শব্দে চোখ তুলে তাকায় তিথি। হৃদপিন্ড থেমে যায়। তারপর সচল হয়। এর পরেই চোখের পানি আর কষ্টের দহনে তিথি কাঁপতে থাকে। এই জন্যেই বিয়ে করতে চায়নি সে। এই দিন দেখতে হবে তার জানা ছিলো। শিশির চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে। অতঃপর দুই সেকেন্ডে নেয়া সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়,
-- যেদিন নিজের ভুল বুঝতে পারবে।সেদিন আমাকে ডেকো মা। আমি আসবো......
তিথিকে বুক থেকে সরিয়ে কোমল হাত শক্ত হাতের বন্ধনে আকড়ে ধরের শিশির। ধীর শান্ত গলায় বলে,
-- চল!
তিথি থেমে যায়। বিস্মিত নয়নে শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
-- কোথায়??
-- তোর সুখের সন্ধানে।
--কোথাও যাবো না আমি। তুমি মামির কথা মেনে নাও। মায়ের বিপক্ষে যেও না। রিকুয়েস্ট। পায়ে ধরছি তোমার।
-- ন্যায়ের পক্ষে আমি। তাই অন্যায় যেই করুক আমি তার অপজিটেই থাকবো। কথা বাড়াস না চল।
মার্জিয়া বেগম ছেলের এহেম কান্ডে হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে। তার চোখের সামনে হাত ধরে টেনে তিথিকে নিয়ে যাচ্ছে শিশির। মার্জিয়া বেগম শূন্যে চোখে তাকিয়ে আছে।
___________
নির্জন, নিভৃতে, নিরালায় বৃষ্টিমুখর রাতে ফাঁকা, শূন্য কক্ষে ভালোবাসার আলোচনায় মশগুল দুটো শূন্য হৃদয়ের মানুষ বসে আছে।সেখানে লৌহকঠিন বুকে মিশে আছে কোমলমতি নারীর এলোকেশী মাথা,বলিষ্ট গুরুগম্বীর পুরুষের লৌহশক্ত বুকের খাঁচার অন্তরালে হৃদয় নামক যন্ত্রটি দূর্বার গতিতে কাঁপছে,সেই মধুর শব্দ কান পেতে শুনে হদয়ের কথা বোঝার বৃথা চেষ্টা করছে সিনথিয়া। লৌহকঠিন, পাথুরে হৃদয়ের ভাষা বোঝা কি এতই সহজ? কি বলতে চাচ্ছে-- ঐ ইস্পাত কঠিন হৃদয়? কিসের কাঁপন চলছে? সে ভাষা বোঝার সাধ্য কোমল হৃদয়ের নারীর নেই। তবে সে আবছা আলোর কক্ষে ঘন আখিপল্লব বুঝে ঘন শ্বাস টেনে টেনে অনুভব করছে আর লৌহকঠিন কম্পমান হৃদয়ের সাথে তার হৃদয়ের কম্পন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। উত্তপ্ত বুকে কান পেতে নিজের শান্ত হৃদয় ক্রমেই তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে তার,কম্পমান হৃদয়ের উপর থেকে অশান্ত সিনথিয়া নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চায় তবে তার আগেই বলিষ্ঠ হাতের বাধনে ইস্পাত কঠিন পাজরে মিশিয়ে নেয় তাকে ইরফাদ। তারপর বরফ ভেজা ঠান্ডা আবেশে ঘন জড়ানো গলায় বলে,
-- কি শুনলে??
সিনথিয়া ইরফাদের বুকের উষ্ণ ওমে মাথা ঠেকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে,
-- আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না তাহলে হৃদয় কেনো কাঁপছে আমার ছোঁয়ায়?
-- তোমার প্রশ্নেই তো উত্তর রয়েছে। হৃদয় ছুঁতে পারে কয় জন? তুমি তো হৃদয় ছুঁয়েছো।
সহসাই বুক থেকে ছুটে যায় সিনথিয়া। বিস্মিত নয়য়ে চোখ গোল গোল করে ইরফাদের চোখের দিকে তাকায়। প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,
--কবে? কখন? কিভাবে?
-- তুমি আমাকে কখন, কবে, কোন মূহুর্ত থেকে ভালোবেসেছো বলতে পারবে?
সিনথিয়া কোমল করে মাথা দোলায়। যার অর্থ না। ইরফাদ ধীর গলায় বলে,
-- তোমার কখন মনে হয়েছে তুমি আমার প্রতি দূর্বল?
-- জানিনা! তবে ঐ ডায়েরিটা পড়ে-- আমি নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারিনি। আমার কষ্ট হয়েছে,যন্ত্রণা ভোলাতে ইচ্ছে করেছে, আগলে রাখতে ইচ্ছে করেছে।
-- ঐটুকু বুকে আমাকে আগলে রাখতে পারবে?
সিনথিয়া দম নেয়। তারপর বলে,
-- হৃদয়ের ভালোবাসার পরিধি বিশাল। কেনো পারবো না। আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট কনফিডেন্ট।
--ভালোবাসা যদি ঐ ডায়েরি পড়ার পর হয়ে থাকে তাহলে ঐটা ভালোবাসা না ঐটা "করুণা"। তবে তুমি সত্যিই ভালোবেসেছো!কিন্তু সে ভালোবাসা অনেক আগেই জন্মেছে সিনথি ?
-- সত্যি!!!
-- হুম....
-- তাই কি হয়? আপনি তো সবটা জানেন। একজনের কাছে ঠকে গিয়ে এতো দ্রুত আরেকজনকে ভালোবাসা যায়?
-- ভালোবাসার রঙ বদলায়। ভুল মানুষকে ভালোবেসে যখন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়, সব হারিয়ে যখন শূন্য লাগে তখন যত্ন পেলে, শেলটার পেলে সে ক্ষত সেরে যায়, সেখানে নতুন করে ফুল ফোটে।
-- আপনি কি আমাকে শেলটার দিয়েছেন? যত্ন করেছেন?
-- নাহ! দেখো সবার জীবনের গল্প সেইম নয়। তোমার গল্পে তুমি নির্মম ভাবে ঠকেছো,সব হারিয়ে যখন তুমি শূন্য হয়েছো,তোমার পাশে পৃথিবীর কেউ ছিলো না শুধু আমি ছাড়া। ঐকারণেই তুমি নিজেই ভরসার জায়গায় আমাকে রেখেছো, আমাকে আকড়ে ধরেছো।
-- আপনার যায়গায় অন্যকেউ যদি থাকতো। আমি কি সেইম কাজ টাই করতাম? আবার ভুল হতো?
-- হয়তো? হয়তো না! কারণ ভালোবাসা সবার জন্য আসে না। সবাই হৃদয় স্পর্শ করতে পারে না। এই উত্তর তো একমাত্র তুমিই দিতে পারো। কেনো ভালোবেসেছিলে আমাকে?
সিনথিয়া কিছুক্ষণ নিরবে ভাবে! উত্তর খুঁজে বেড়ায়। কোমল গলায় বলে,
-- আমি না আপনার মতো কাউকে কখনো দেখিনি। আপনি ইউনিক, ওয়ান পিছ। আপনার সততা, মেয়েদের প্রতি সম্মান, দায়িত্ববোধ, ন্যায়, নিষ্ঠা, কঠিন হৃদয়ের আড়ালের বন্ধুসুলভ একটা সুন্দর কোমল মন, তীক্ষ্ণ মগজধারী আপনি।সব দিক থেকেই তো আপনি বেষ্ট। সব মেয়েদের ড্রিম তো এমন একজন লাইফ-পার্টনার চায়। যে মানুষটা চোখ দেখেই হৃদয় পড়তে পারে এমন ক্ষমতাধারী মানুষকে যে কেউ ই চাইবে। আপনি অসাধারণ....হয়তো এই কারণেই ভুল থেকে বের হওয়ার আগেই আমি নতুন করে ভালোবাসতে পেরেছি। এছাড়া সম্ভব ছিলো না। তবে সত্যিই জানিনা কবে, কখন একটা সফট কর্ণার তৈরী হয়েছে।
-- কিন্তু আমি তো জানি। তুমি প্রথম থেকেই আমাকে খুঁজেছো, আমার বুকের ওম চেয়েছো সিনথি.....
সিনথিয়ার ভেতরটা কেঁপে কেঁপে ওঠে,
-- মানে???
-- তোমার মনে আছে সিনথি? গারদে থাকাকালীন কেউ তোমার রুমে গিয়েছিলো?তুমি ভয় পেয়ে পরেরদিন আমাকে কল দিয়েছিলে!
-- হুম! তবে ভয়টা পরে কেটে গিয়েছিলো।
--কিভাবে?
--সেদিন রাতে একটা স্নিগ্ধ ভেজা ভেজা স্মেল পেয়েছিলাম। নেক্সট একই স্মেল আমি আপনার শরীর থেকে পেয়েছি। মিলে গেলো.... সেদিন আমার ঐখানে আপনিই গিয়েছিলেন।
-- যে স্মেল তুমি আমার শরীর থেকে পেয়েছিলে সেদিন একই স্মেল তোমার শরীরে পাওনি?
সিনথিয়া ক্রমেই অপ্রস্তুত হয়ে যায়। কি হয়েছিলো সে রাতে? কি বলতে চাচ্ছে ইরফাদ!! ইরফাদের গলা আরেকটু শীতল,
-- সেদিন রাতেও তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে সিনথি.....
দূর্বার হৃদপিন্ড ঝনঝন করে শব্দ করে উঠছে সিনথিয়ার, পেটের মধ্যে অনুভূতিরা ছলকে ছলকে উঠছে!! অপ্রত্যাশিত ঘটনা শুনে নিজেই থ হয়ে গেছে সিনথিয়া। ইরফাদের চাহুনি নরম কোমল। ভিষণ আলাদা লাগছে আজ। ইরফাদ ঘন শ্বাস ফেলে বলে,
-- ঐদিন আমি জানতে পারি একটা চিঠি আছে তোমার কাছে। আর যেহেতু দেখার চাঞ্চ একবার। তাই আমি ই গিয়েছিলাম। তুমি তখন গভীর ঘুমে। বালিসটা যেহেতু ওয়াল ঘেঁষে অন্যেপাশ দিয়ে চেক করার ওয়ে ছিলো না। বাধ্য হয়ে তোমার উপর ঝুকে চেক করতে হয়েছে।ঐসময়ে ঘুমের ঘোরে অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছো সিনথি। তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে।আমি জোর করে ছাড়াতে গেলে তোমার ঘুম ভেঙ্গে যেতো।এতো রাতে এভাবে আমাকে দেখলে তুমি ভুল বুঝতে।একবার ঠকে গেছো, আরেকবার এমন ভাবে দেখলে পুরো পুরুষ জাতীর উপর তোমার অবিশ্বাস জন্মাতো। তোমার হাত নরম হয়ে আসা অবধি আমি অপেক্ষা করেছি।
-- কিন্ত আমি যে পায়ের শব্দ পেলাম। মনে হলো এই মাত্র কেউ আসলো....
--নাহ সিনথি.... অনেকটা সময় পর তোমাকে বাধ্য হয়ে ছাড়াতে হয়েছে। আর তখন তোমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
-- আপনার কি তখন থেকে আমার প্রতি সফট কর্ণার সৃষ্টি হয়েছে?
-- তখন পর্যন্তও ছিলো না। তবে পরের বারও সেইম ঘটনা ঘটেছে।তোমার মনে আছে!! আমার উপর এট্যাক হয়েছিলো সে রাতের কথা?
-- হুম হুম.... অনেকদিন জানতেও চেয়েছি আপনি বলেননি!
--সেদিন তুমি তো ঘুমিয়ে গেছিলে। প্রথমে এটা ভাবলেও পরে আমি বুঝতে পারি তুমি ঘুমাওনি। ততোক্ষণে আমার একটা কল এসে যায়।ঐ রাতে একটা ক্রাইম হয়। আমি ঐরাস্তায়-ই ছিলাম। আমাকে কল করেন জাবির। আমার যেতেই হতো।তোমাকে নেয়া তো পসিবল না। গাড়িতে ক্লোরোফর্মের একটা স্প্রে করা হয়। ঐজন্যে সে রাতে তোমার জ্ঞান ছিলো না। আমি গাড়ি পার্ক করে বেরিয়ে যাই। আমার কিছু বিষয় তদন্ত করার। কাজ শেষ করে আমি ফিরছিলাম। কিন্তু কেউ একজন এই বিষয়টা টের পায়। আমাকে দেখে যদিও বোঝার উপায় ছিলো না আমি কে? তবে তারা আমার পিছু নেয়। এট দ্যা মিডটাইম-- আমি যখন গাড়িতে উঠি তারা এট্যাক করে। ফাইটিং চলে। যেহেতু আমি মাস্ক পড়া তাই তাদের কিছু লোক তোমার মুখ দেখতে চায়। ওদের একাংশ গাড়িতে উঠে আসে। অপর সাইডের ডোর খুলে তোমার মুখটা আমি আমার বুকের মধ্যে ঢেকে ফেলি। ওখানেই বিপত্তি। ধারালো ছু*রিকাঘাতে আমার পিঠ তখন বিধ্বস্ত। রক্তে রঞ্জিত শার্ট। একহাতে তুমি আর অন্যহাতে স্ট্রিয়ারিং ঘুড়িয়ে সেইভজোনে আসি। তোমার তখন ঘুম ছাড়া ছাড়া ভাব। আমার শরীর অসাড় হয়ে যাচ্ছিলো।গাড়ির দরজায় ক্রমেই শরীর ছেড়ে দিচ্ছিলাম আমি। সেদিন রাতেও আমাকে একটা সেকেন্ডের জন্য ছাড়োনি তুমি। দুহাতে খামছে ধরে পড়ে ছিলে বুকের মধ্যে।সেদিন থেকে আলাদা একটা অনুভূতি ছিলো তোমার প্রতি। তবে আমি তলিয়ে ভেবে দেখিনি। মাথায় নেইনি বিষয়টা.....
সিনথিয়ার ভেতরটা থরথর করে কাঁপছে। এতোকিছু হয়ে গেছে। সে তো কিচ্ছু জানতো না। হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো ইরফাদের কথায় গলে যাচ্ছে সিনথিয়া। দুটো বুকের মাঝে একহাত সমপরিমাণ দূরত্ব কমিয়ে গলা ইরফাদের জড়িয়ে ধরে সিনথিয়া। দুটো হৃদয় একসাথে মিশেগিয়ে একই গতিয়ে দাপিয়ে কাঁপিয়ে চলছে। ঠান্ডা ভেজা আবেশে বুজে আসছে সিনথিয়ার গলা। আবছা গলায় বলে,
-- তাহলে এতো টা দূরত্ব কেনো বাড়ালেন? কেনো দূরে রাখলেন আমাকে?
ইরফাদের গলায় পরিপক্ব জ্ঞানের আভাস,
-- আমি তো বাচ্চা নই। তুমি ভুল করলেও কি আমি ভুল করতে পারি? আমি সত্যেই চাইনি এমন কিছু হোক। আমি এড়িয়ে চলেছি শেষ পর্যন্ত। আমি শেষ অবধি চেয়েছি তোমার মন থেকে ইরফাদ নামক অস্তিত্ব মুছে যাক।
--আমি কি এতোই অযোগ্য??
-- সিনথি! আমার লাইফে একটা এক্সিডেন্ট আছে।তুমি ভুল সিদ্ধান্ত নিবে কেনো? তুমি ভুল করলে ভুলটা সংশোধন করার চেষ্টা আমাকে করতেই হবে....
-- আমি ভুল করিনি। আমি কনফিডেন্ট ছিলাম। এইবার আমি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেই নি। একটুও না একটুও না। অনুভব যখন করেছিলেন-ই আমাকে এতোটা দূরে নাই রাখতেন।
-- স্বর্ণ পুড়ে পুড়েই খাঁটি হয় সিনথি। একটু কষ্ট করে সুখটা ভালোভাবে অনুভব করা যায়।
--সব জেনেও একটুও মায়া হলো না আমার জন্য? শুধু দূরে ঠেলে দিলেন? একটু ভালোবাসলে কি হতো?
-- অনুভব তো করেছি সিনথি। আবেগে নিজেকে ঠেলে না দিয়ে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছি। ভালোবাসা হয়তো আগে জন্ম নেয়নি। তবে তুমি হৃদয় ছুঁয়েছো সেদিন-ই যেদিন অজান্তেই আমার আমার বুকে পড়েছিলে গুণে গুণে আটত্রিশটা মিনিট। হৃদয়টা সেদিনও এভাবেই কাঁপছিলো। এভাবেই.....
সিনথিয়া নিরব গলায় সুধায়,
--কবে ভালোবাসবেন আমাকে?
কম্পমান উষ্ণ বুকের আলিঙ্গন থেকে সিনথিয়াকে ছাড়িয়ে নেয় ইরফাদ। এলোকেশী চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে দিয়ে ঠান্ডা ভেজা ভেজা নরম নরম দুটো চুমু খায় সিনথিয়ার কপালে, চোখের পাতায়। অতঃপর গলার স্বর হয় হীমশীতল,
-- ভালোবাসি তো..... ভয়াল খেলাঘরের অশুভ ছায়া থেকে যেই মূহুর্তে তোমাকে বুকে আগলে নিয়েছি, যখন আল্লাহ্ কে সাক্ষী রেখে "কবুল" বলেছি। আমি তখন থেকেই তোমাকে ভালোবাসি সিনথি। আর ভালোবাসবো অনন্ত কাল।
চলবে???
(বিশাল বিশাল কমেন্ট চাই পাঠক। লিখতে অনেক সরম পেয়েছি সত্যি বলছি। কিন্তু আমার পাঠকেরা খুব জ্বালায়। রাতে এগুলো নিয়ে একঘন্টা হাসাহাসি করেছি আমি আর জেরিন আপু। )
-
-
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন