সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

গল্প রং।। পর্ব ৫১।।

 গল্প রং

পর্বঃ ৫১

লেখক তন্নী তনু 



অতঃপর ইরফাদ সিনথিয়ার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ঝড়ের গতিতে দৌড়াতে থাকে।পেছন থেকে বাকিরাও দৌড়ে আসে।মিনিট দশেক লুকোচুরি খেলতে খেলতে একটা বুলেটে থেমে যায় ইরফাদ। বিকট শব্দে রিভলবারের নল থেকে বের হয় ধাতুর বুলেট,পেছন থেকে  বুলেট ছুটে গিয়ে লাগে ইরফাদের পিঠে, থমকে দাঁড়ায় ইরফাদ। রক্ত চক্ষুতে ছলকে ওঠে গরম জল। থেমে গিয়ে ফিরে তাকায় সিনথিয়া। দূরে দাঁড়ানো মুখোশধারীর রিভলভারের নলের দিকে তাকায় সিনথিয়া আরেকবার ইরফাদের সাদা ধবধবে শার্টের পিছনে।এমন দৃশ‍্যে নিজের শ্বাস আটকে যায় সিনথিয়ার.....


 বন্ধ হয় টর্চের আলো। অতঃপর নিস্তব্ধ,বিদঘুটে পরিবেশে নামে প্রগাঢ় নিরবতা...


অন্ধকারাচ্ছন্ন গোলাকার পৃথিবী চোখের সামনে ঘুরে ওঠে, মাথার উপর ধূসর রঙের আকাশটা অশনী সংকেত বাজিয়ে ঘুরে ওঠে সিনথিয়ার, হঠাৎ থমকে যাওয়া হৃদযন্ত্রটা আর্তচিৎকার দিয়ে দূর্বার কম্পনে চলতে শুরু করে, গলায় দলা পাকা আর্তনাদ তীব্র শব্দে বেড়িয়ে আসে সিনথিয়ার কম্পমান গলায়, র*ক্তা*ক্ত শার্টে চোখ রেখে লৌহশক্ত হাতটা আকড়ে ধরে সিনথিয়া। লৌহশক্ত,বলিষ্ঠ শরীরের অধিকারী বলবান শরীরটা ধীরে ধীরে বলহীন হয়ে নুইয়ে পড়ে সিনথিয়ার কাধের উপর। চিৎকার দিয়ে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে ওঠে সিনথিয়া। কম্পমান গলায় বের হয় শব্দ,


--এইইই!!

ঠিক আছেন??


আবারো জ্বলে ওঠে টর্চের আলো, আলোয় উদ্ভাসিত পুরো শালবন। কালো মুখোশধারীরা দলবল নিয়ে সামনে এগিয়ে আসছে ক্রমেই। ঘন আখি পল্লবে উপছে পড়া অশ্রুজলে টুইটম্বুর, ভেতরে জেগে উঠছে বিধ্বংসী রূপ, রক্তশিক্ত চোখ দুটোতে আগুন জ্বলছে সিনথিয়ার। ইরফাদের ঘন মাথাভর্তী চুলের পেছনে কোমল আঙ্গুল চালিয়ে খামছে ধরে সিনথিয়া,  টেনে কপালের কোণে একটা তপ্ত চুমু খায়,নুইয়ে পড়া আস্ত মানুষটাকে আকড়ে ধরে সিনথিয়া, অস্তমীত ঢোলে পড়া রক্তিম সূর্যের মতো তলিয়ে যাওয়া ইরফাদ সিনথিয়ার কাধে মাথা রেখে ধীর গলায় বলে,


-- পালিয়ে যাও সিনথি.....


বিধ্বংসী, অগ্নীমূর্তী ধারণ কারী সিনথিয়া গর্জে উঠে বলে,


-- জান রেখে শরীর নিয়ে পালিয়ে যাওয়া মেয়ে সিনথিয়া ইবনা নয়।


-- ওরা তোমাকে বাঁচতে দিবে না সিনথি!! আমি অনেক বড় ভুল করেছি তোমাকে আমার সাথে জড়িয়ে। একজন এসপি"র জীবন সাধারণ নয়। পদে পদে যুদ্ধ করতে হয় আমাদের। জীবন হাতে নিয়ে খেলতে হয়। আমি তোমার সুন্দর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম।


-- আপনি কিসব বলছেন?


-- ওরা দলে ভারী সিনথি....


-- আমি আছি তো... হাতটা ধরুন। 


মুখোশধারী লোকগুলো শয়তানী ভঙ্গিতে হাসছে। শক্তধারী এসপি"র দূর্বল রূপে তারা যুদ্ধজয়ী হাসিতে মেতে উঠছে। সিনথিয়া চুপচাপ ইরফাদের কানে বলছে,


-- হাত ধরুন, পালাবো...


দূর্বল শরীরে চোখ বন্ধ করে দম নেয় ইরফাদ, বহু সংগ্রাম করেই সে একজন এসপি, ঘুরে দাড়ানোর শক্তি তার মধ‍্যে বিদ‍্যমান।নিজের প‍্যান্ট এর পকেটের নতুন রিভলভার একহাতে বের করে বিধ্বংসী হয়ে ঘুরে দাঁড়ায় ইরফাদ, বলিষ্ঠ হাতে আঙুলের খেলায় সামনের মুখোশধারীর কপালে ছোট্ট ফুটো হয়ে বেড়িয়ে যায় সীসার বুলেট, পেছন থেকে ছিটকে ওঠে র*ক্ত।পরপর আরোও দুটো বুলেট। অতঃপর আলোকদ‍্যুতি ছড়ানো টর্চে তাক করে ট্রিগার চাপে ইরফাদ।  শক্ত মুঠিতে সিনথিয়ার হাত নিয়ে দূর্বল গলায় বলে ইরফাদ,


-- রান ফাস্ট...


হাতের মুঠোয় হাত রেখে দুজন দুজনকে বাঁচানোর লক্ষ্যে পুণরায় প্রাণপণে ছুটে আবার। পেছন থেকে হুংকার দিয়ে দৌড়ায় হায়েনার দল। ইরফাদের র*ক্তা*ক্ত পিঠের যন্ত্রণায় শরীর ছেড়ে দিয়ে আসছে, মনের জোর আর ভালোবাসার মানুষের জীবন বাঁচানোর চেষ্টায় সব যন্ত্রণা গিলে দৌড়াতে থাকে ইরফাদ। মাঝে মাঝে আবছা আলোতে পিছু ফিরে দেখে হায়েনার দল কতো দূরত্বে। দূরত্ব বুঝে দম নেয় ইরফাদ, তারপর পুণরায় আবার ছুটে। শুরু হয় গুলিবর্ষণ, ফাঁকা জায়গায় সাইলেন্সার লাগানো গুলিতে তাল সামলাতে পারে না সিনথিয়া।  জীবন মৃত‍্যুর সন্ধিহানে ভালোবাসা আজ অসহায়। ইরফাদ সিনথিয়াকে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে দেয়, পেছনে ঢাল হয়ে থাকা ইরফাদ ধীর গলায় বলে,


-- রান সিনথি.... রান...


সিনথিয়া হাত ছাড়ে না, আবার পাশাপাশি হয়। ইরফাদ দম নিয়ে বলে,


--তোমার সঙ্গে যদি না ফিরতে পারি, লকারে পেনড্রাইভটা বাবাকে বলবে রুস্থান কবীরের হাতে তুলে দিতে। সকল প্রুফ ঐখানেই আছে।


-- আল্লাহ্ এতোটা কঠিন আমার সাথে হবেন না।  আমরা একসাথেই ফিরবো ইনশাআল্লাহ।


-- ইমোশোনাল হয়ে যেও না সিনথি.... সিচুয়েশন ক্রিটিক‍্যাল,  বি স্ট্রং যাই হয়ে যাক তুমি বাসায় ফিরবে।


-- আমি আপনাকে নিয়েই ফিরবো।


সারি সারি গাছ-পালা পেরিয়ে আরেকটা শালবনের মধ‍্যে দিয়ে ছুটছে ইরফাদ। ক্ষতস্থানের ব‍্যথায় শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে বারংবার, পেছন থেকে ছুঁই ছুঁই হায়েনার দল। এলোপাথাড়ি বুলেট ঝড়ে কখন যেনো ঝাঝড়া হয়ে যায় দু"জনের বুক। তবুও প্রাণপণে ছুটছে তারা। শালবন পেরিয়ে ঝোপঝাড়ের দিকে যায় ইরফাদ সিনথিয়া। ক্রমেই ঘন হয়ে আসছে জঙ্গলের পথ। অন্ধকার ঘন জঙ্গল, বড় বড় আকারের গাছ, তাকে পেঁচিয়ে উঠে গেছে লতা জাতীয় উদ্ভীদ, পোকার তীব্র গুঞ্জন কানে এসে লাগছে। পায়ের দাপটে শুকনো মরমরে পাতা ভাঙছে, ভয়াল অন্ধকার রাজ‍্যে শরীর ছমছম করে উঠছে সিনথিয়ার। ঘন জঙ্গলের সরু পথ পেরিয়ে আকাশছোঁয়া বড় গাছটিকে পেঁচিয়ে ঝুপড়ি করা লতানো স্তুপের পেছনে বসে ইরফাদ, দম নেয়, হাতের মুঠোতে থাকা হাতটিকে টেনে পুরো মানুষটাকে বসায় তার দু'পায়ের মাঝে। দু"হাতে টেনে নেয় তার বুকের কোটরে। শক্ত,কঠিন মানুষের বুকের দাপাদাপিতে কান পেতে থাকা সিনথিয়া বলে,


-- খুব কষ্ট হচ্ছে???

বুকের খাঁচায় মিশিয়ে নিয়ে ইরফাদ বলে,


--নাহ...


-- একটা কল দিন অফিসে!! এভাবে কতোক্ষণ লড়বো। আমার খুব ভয় করছে।


-- একটু আগেও তো কি সাহস দেখালে।


--আপনার কিছু হলে আমার রক্ত গরম হয়ে যায়। জানিনা এতো শক্তি কোথা থেকে  পাই।


-- ভালোবাসো?


অন্ধকারাচ্ছন্ন নিরব, নিস্তব্ধ, ভূতুড়ে পরিবেশে বুকের ওম থেকে নিরবে বেরিয়ে ইরফাদের চোখে চোখ রাখে সিনথিয়া। চোখে চোখে কথা হয় অল্প। অতঃপর লজ্জায় ভেসে যাওয়া সিনথিয়া মুখ লুকিয়ে ফেলে আবার।  ভাজ করা হাঁটুর উপর একহাত রেখে অপর পা টানটান করে মেলে ইরফাদ, পায়ের মাঝে অল্প একটু জায়গায় আদুরে বেড়ালের মতো ইরফাদের উষ্ণ ওমে থাকা সিনথিয়া বলে,

-- হুমম...


-- কি হুম?


সিনথিয়া নিরব হয়ে যায়। ইরফাদ গাছে মাথা ঠেকিয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে বলে,


-- সময়ের অপেক্ষায় থাকতে নেই।পরে বলবো বলে কিছু ফেলে রাখতে নেই। ভালোবাসার অনুভূতি সব সময় উপভোগ করা উচিত। পরে সময় নাও পেতে পারো।


ধীরে ধীরে মাথা তোলে সিনথিয়া, শূন‍্যে তাকানো ইরফাদের চোখের পানে তাকিয়ে মোহনীয় আবেগ জড়ানো গলায় বলে,-- যতোটা ভালোবাসলে আর ভালোবাসার প্রয়োজন হয়না। আমি আপনাকে ততোখানিই ভালোবাসি। আপনি আমার খুব শখের মানুষ। যা আমি স্বপ্ন দেখতাম, কল্পনা করতাম সেই মানুষটা অনন্তকালের জন‍্যে আমার।


-- একবার তুমি ডাকবে?


-- মানে?

বলেই ছিটকে দূরে সরে যায় সিনথিয়া।ইরফাদ চোখ নামায়, চোখাচোখি হয় দুটি চোখের নয়, হৃদয়ের।


-- বেশী কিছু চেয়ে ফেলেছি?


-- নাহ! আমার আনইজি লাগবে... মুখ থেকে আসবেই না।


-- একটা মাত্র বউ! আপনি ডাকলে তো দূরের মনে হয়। তুমি আমাকে এতো দূরে রাখবে...


--কিন্তু...


পাতার মরমর আওয়াজ কানে বাজতেই ওষ্ঠের মাঝে তর্জনী ছোঁয়ায় ইরফাদ। সিনথিয়া শব্দের দিকে তাল দিয়ে চোখ গোল গোল করে ফেলে। চুপচাপ উঠে দাঁড়ায় ইরফাদ,সিনথিয়া। নিজের পিছনে সিনথিয়াকে দাঁড় করায়। চার্জ কমে যাওয়া লাইটের মৃদু আলো এদিকেই আসছে।ইরফাদ দম ধরে থাকে। ইরফাদের পেছেনে দাঁড়িয়ে র!ক্তাক্ত পিঠে হাত বুলায় সিনথিয়া। আবেগে ভেসে গিয়ে যন্ত্রণার যায়গায় গাঢ় চুমু খায় সিনথিয়া। 


-- আমার ইমম‍্যাচিউর বউ। ব‍্যাথার জায়গায় চুমু খেলে ব‍্যাথা বাড়ে। 


ইরফাদের এমন উত্তরে লজ্জায় পিঠেই মুখ লুকায় সিনথিয়া। নিস্তব্ধ, নিরব পরিবেশে আবার শুরু হয় ভয়াল খেলা।মুখোশধারী এক লোক এদিক ঐদিক টর্চ দিয়ে দেখছে। গাছের এপাশ ঘুরতেই ইরফাদ মুখোমুখি। সময় এক দুই সেকেন্ড। রিভলবারের ভারি বাট দিয়ে বারি দেয় ইরফাদ মাঝ বয়সী লোকটির মাথায়,টর্চটা ঝপ করে পড়ে শুকনো পাতার উপর। চোখ বড় বড় হয়ে ধপাস করে পাতার মধ‍্যে পড়ে লোকটি। পা দিয়ে ইরফাদ পিষে ফেলে টর্চ। বলহীন শরীরে ঢুলতে ঢুলতে সরে যায় ইরফাদ, হাতের মুঠোয় এখনো সিনথিয়া।লম্বা মোটা গাছের আড়ালে বাম পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায় ইরফাদ, যন্ত্রণায় মুখ লাল হয়ে আসছে,কান হয়ে উঠছে আগুনের শিখা। ঐ মূহুর্তে  আরও কয়েকজনের উপস্থিতি টের পায় ইরফাদ। সিনথিয়াকে পরিকল্পনা শিখিয়ে পিছিয়ে যায় ইরফাদ। সিনথিয়া পরিকল্পনা  অনুযায়ী শুকনো পাতার উপর হাটে। হায়েনার দল এগিয়ে আসে সেদিকে। পেছন থেকে ঝাপিয়ে পড়ে ইরফাদ, খন্ড যুদ্ধ চলে কিছু মূহুর্ত। ইরফাদ রিভলবভার ঠেকিয়ে তাদের হাতের ধা*রালো ছুরি কেড়ে নেয়। তারপর গমগমে গলায়  বলে,


-- কে পাঠিয়েছে বল। 


-- তোর কাছে যে যে প্রুভ আছে দিয়ে দে। 


-- কার রিভলভারের সামনে দাঁড়িয়ে জানিস!!


-- আমাদের দরকার টাকা। এতো কিছু জানতে চাই নি। প্রুফ গুলো দিয়ে দে। 


মূহুর্ত্তেই  ইরফাদ পর পর তিনবার ট্রিগার চাপে সাইল‍্যান্সার লাগানো রিভলভারে। অন‍্য হাতের ছু*রি*কাঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে দেয় মুখোশধারীর বুক। র*ক্ত তীরের মতো ছুটে এসে লাগে  সিনথিয়ার শরীরে। প্রথম বারের মতো সিনথিয়া কেঁপে ওঠে। সিনেমায় বহু র*ক্তার*ক্তি সে দেখেছে। তবে নিজ চোখের সামনে এমন মৃত‍্যুতে কম্পমান হৃদযন্ত্র দাপিয়ে শব্দ করে ওঠে, ভয়ে কুকরে যায় সে। চোখ বন্ধ করে বলে,


-- স্টপ প্লিজ...


মুখোশধারীর বুকের মধ‍্যে ছুঁ!রি গেথে রেখে পা দিয়ে লাথি মারে ইরফাদ। র!ক্তা!ক্ত ছুরিটা ছেলেটির বুক থেকে খুলে আসে আর নিথর দেহটা ধপাস করে পড়ে শুকনো পাতার মধ‍্যে। একবাহুডোরে টেনে নেয় সিনথিয়াকে ইরফাদ। অতঃপর,


-- ভয় পেয়োনা। 


একবাহুডোরে সিনথিয়া অন‍্যহাতে রিভলভার ছু!রি  নিয়ে ওখান থেকে সরে আসে ইরফাদ। জঙ্গলের ঢোকার কারণ একসাথে সবার সাথে মোকাবেলা করা সম্ভব না। আড়ালে থেকে একজন একজন শেষ করতে হবে তাকে। ধীর পায়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে জঙ্গলের আঁকাবাঁকা পথে হাঁটছে ইরফাদ সিনথিয়া। পেছনের ধেঁয়ে আসা শব্দে চোখ, কান সজাগ করে ইরফাদ। বাহুডোর থেকে এক ধাক্কায় সিনথিয়াকে সরিয়ে দেয় ইরফাদ। পেছনের মুখোশধারী লোকটি তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় শুকনো পাতার মধ‍্যে। পেছন থেকে সটান করে পিঠে গেঁধে দেয় ছুরি। এভাবেই ভয়াল জঙ্গলে বাড়ে লা*শের সংখ‍্যা।


সিনথিয়াকে বাহুডোরে টেনে নিয়ে দূর্বল শরীর টেনে টেনে হাঁটছে ইরফাদ। ঠিক সে সময় নিঃশব্দে, নিরবে ইরফাদের পিঠে ঠেকায় রিভলবারের নল। পেছন থেকে গুটিকয়েক লোকের গমগমে গলা,


-- হ‍্যান্ডস আপ!


ইরফাদ কৌশলে সেকেন্ডেই পিছন ঘোরে,  কৌশলে কেড়ে নেয় রিভলবার। ট্রিগার চেপে দেয় ইরফাদ। এক দুই তিন। এভাবেই বাড়ে লাশের সংখ্যা। সিনথিয়া তার সাধ‍্যমত সাহায‍্য করে।নিরব, নিস্তব্ধ জঙ্গল ক্রমেই হয় উত্তপ্ত।  দূর্বল শরীরের ইরফাদ সর্বোচ্চ দিয়ে লড়ে। তবে কখনো কখনো ভাগ‍্যের কাছে হেরে যেতে হয়। আকস্মিক পেছনের ধারালো ছু!রি!কাঘাতে আবারও থেমে যায় ইরফাদ, ধারালো আঘাতে সাদা শার্ট ভিজে ওঠে রক্তে। চোখ থেকে গরম  দু"ফোটা জল টুপটুপ করে পড়ে। কঠিন, শক্তখোলসের আবরণে ঢাকা বলিষ্ট শরীর নেতিয়ে পড়ে। প্রথমে হাঁটুভেঙে অতঃপর শরীর ছেড়ে দেয়। সিনথিয়া পেছনের দৃশ‍্যে আতঙ্কে থ হয়ে যায়। স্বপ্নবিলাসী চোখ দুটোতে হৃদয়ের রক্তক্ষরণের চিহ্ন ভেসে ওঠে। হাত পা থেমে যায়।  হৃদয়বিদারক করুণ দৃশ‍্যে ছুটে আসে সিনথিয়া। নিজের শরীরে ঝাপটে ধরে বিশাল শরীরটাকে আগলাবার চেষ্টা করে। তবে ভারী শরীর ঠিকই বিছিয়ে যায় মাটিতে।


-- গাড়িতে তোল দু"টোকেই।


নিঃস্তেজ শরীরে প্রিয় প্রাণকে বাঁচানোর আকুল বার্তা প্রেরণ করে ইরফাদ,


-- আমার সাথে যা ইচ্ছে কর। ওকে ছেড়ে দে...


এহেম কথায় সিনথিয়া ইরফাদকে আরও আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে। র!ক্তে ভিজে যাচ্ছে সিনথিয়ার হাত। চোখের অশ্রুধারায় বন‍্যা হবার যোগার। পেছন থেকে হায়েনার দল সিনথিয়ার হাত ধরে টান দেয়। হ‍্যাচকা টানে দু"টি বুক আলাদা যায়। তবে ইরফাদের আধখোলা রক্তশিক্ত চোখ,শক্ত হাতের মুঠোতে সিনথিয়ার কোমল হাত। আধ ভাঙা গলায় ইরফাদ আবারো বলে,


-- ওকে ছেড়ে দে....


আরেকটু শক্ত টানে সিনথিয়া ছাড়িয়ে নিয়ে চায় হায়েনার দলের অধিপতি।তবে দূর্বল শরীরের শক্ত হাতের মুঠো থেকে সিনথিয়াকে আলাদা করতে পারে না। শুকনো মরমরে পাতায় নিস্তেজ ইরফাদকে দেখে সিনথিয়ার ভেতর হু হু করে ওঠে। জ্ঞান হারায় ইরফাদ। ইরফাদের হাতের রিভলভার কেড়ে নেয় সিনথিয়া। বিধ্বংসী সিনথিয়া অগ্নিমূর্তী ধারণ করে তাক করে রিভলভার। মেঘের গর্জনের চেয়েও ভয়াল হুংকার দিয়ে বলে,


--সবাইকে মেরে দিবো..


এমন কথায় হো হো করে হাসে হায়েনার দল। এইটুকু পুচকে মেয়ে রিভলভার দেখে যে নিজেই ভয় পায় সে দেখায় ভয়। রিভলবার তাক করে রেখে পিছিয়ে যায় সিনথিয়া। মাটিতে পড়ে থাকা নিস্তেজ ইরফাদকে একহাত ধরে টেনে ধরে। নিস্তেজ শরীর আরও নেতিয়ে যাচ্ছে। সিনথিয়ার মাথা শূন‍্যে হয়ে যাচ্ছে। ইরফাদের পাশে বসে সে। প‍্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে বলে,


-- এই ফোনে সব আছে আপনারা নিয়ে নিন। আমাদের ছেড়ে দিন।


ইরফাদের হাতের প্রিন্ট নিয়ে বলে,


-- ফোন ওপেন করে দিচ্ছি চেক দিয়ে নিন।


এক সেকেন্ডের মধ‍্যে ডায়েল লিস্টে যায় সিনথিয়া। জাবিরের নম্বরে ভয়েজ কল অন করে। অতঃপর,


-- আপনারা চেক করুন। প্লিজ। সব এর মধ‍্যে আছে।


অপরদিক থেকে তারা উত্তর দেয়,


--ধুরর! ছেমরি... আমাদের প্রুফ ও চাই, এসপির জীবন ও চাই। কোনো ভাবেই সে জীবিত ফিরবে না। কার কলিজায় হাত দিছে এখন বুঝবে।


কৌশলে ফোনের লোকেশন অন করে সিনথিয়া। ভয়েজ মেইল সেন্ড করেই রূপ পাল্টায়। 


--এখনো সময় আছে প্রুফ টা নিয়ে আমাদের ছেড়ে দিন।


-- প‍্যাঁচাল কম!ঐ তোল ওদের।


সিনথিয়া টুক করে ফোনটা নিজের অন্তরবাসে ঢুকিয়ে নেয়। ইরফাদের মাথায় একহাতে হাত বুলায় সিনথিয়া  অন‍্যহাতে শক্ত করে ধরে রিভলবার। তারপর বলে,


-- মেরে দিবো। আল্লাহ্"র কসম।


শয়তানদের মধ‍্যে একজন এগিয়ে আসে। সিনথিয়া মূহুর্ত্তেই হয়ে ওঠে বিধ্বংসী। রিভলবার তাক করে ট্রিগার চেপে দেয়। বাকিরা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অনিশ্চিত, অসম্ভব জিনিসটা চোখের সামনে সম্ভব হতে দেখে থ হয়ে যায় বাকিরা। সিনথিয়া উঠে দাঁড়ায়, ইরফাদের ব‍্যাগ থেকে নতুন রিভলবার বের করে।তারপর বলে,


-- মরতে যদি হয় ই। মেরেই মরবো।


বাকিরা একে অপরের দিকে তাকায়। তারপর বলে,


--মেয়ের দম আছে দেখছি।


আরেকজন বলে,


--এসপির বউ বলে কথা, সাধারণ হবে না এটাই স্বাভাবিক বস। তুলে নেন।


সিনথিয়া রিভলবার টানটান করে ধরে।  মনে মনে ভাবে এই মূহুর্তে উপরওয়ালার সাহায্য ছাড়া তাদের  এইকালের বিচ্ছেদ নিশ্চিত।মন দূর্বল হলেও শক্ত হাতে রুখে দাড়ায় সে। সে জানে সে কেবল সময় নষ্টই করতে পারবে। যেখানে ইরফাদ টিকতে পারেনি। সেখানে সে কয়েক মিনিটও টিকতে পারবে না। তবুও মিরাকল যদি হয়, তবেই ভালোবাসার জন‍্যে আরেকবার পাবে সে ইরফাদকে। তবে জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু থাকাকালীন সে লড়বে। বাকিরা তাকে তুচ্ছ করে এগিয়ে আসে। সিনথিয়ার ভেতরটা কেঁপে কেঁপে ওঠে। তবে নিস্তেজ ইরফাদের পানে চেয়ে সে হয়ে ওঠে অগ্নী। কয়েকজন ধেয়ে এসে ইরফাদকে ধরে। টেনে তুলতে চায় নিস্তেজ ভারী শরীর। সিনথিয়া শক্তি সঞ্চয় করে। দম নিয়ে সাইল‍্যন্সার ছাড়া রিভলভারের ট্রিগার চাপে। তবে লক্ষ্যভ্রস্ট হয়। সাথে সাথে একদল এসে চেপে ধরে সিনথিয়ার চোয়াল, ঠেলতে ঠেলতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মাটিতে। তারপর পৈশাচিক দৃষ্টি ফেলে তাকায় তারা। তাদের লোভী চোখদুটো চকচক করে ওঠে। একে ওপরের সাথে আলোচনা করে,

-- মেয়ে যেমন তেজ তেমন সুন্দর। আমরাও এক ঢিলে দুই পাখি পেলাম। সিরিয়াল দে। আমি কিন্তু প্রথম....


এমন বিশ্রী কথায় গা গুলিয়ে আসে সিনথিয়ার।তেজস্রী মাথায় উঠে যায় রক্তে। পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাঁচতে যে শিক্ষা সে হাতে কলমে পেয়েছে আজ যদি তার প্রতিফলন না ঘটাতে পারে তাহলে তার অর্জন বৃথা। পাগলা ঘোরার মতো লাফিয়ে ওঠে সিনথিয়া। অতঃপর বুলেটের উত্তপ্ত আগুনে ঝাঝরা করে দেয় পিচাশের বুক। বাকি একজন তেড়ে এসে সিনথিয়ার লম্বা চুল খামছে ধরে। ছু!রি!কাঘাতে ক্ষতবিক্ষত কতে দেয় তার হাতের ডানা। তরপাতে থাকা সিনথিয়া একমূহর্তের জন‍্যে কল্পনায় ভাসে," ইরফাদকে ভালোবাসা হলো না মনে হয় এই জনমে।তাকে আগলে রাখা হলোনা। অশুভ শক্তির কাছে শুভ শক্তি হয়তো এভাবেই হেরে যায়। সত‍্য চাপা পড়ে থাকে মিথ‍্যার আড়ালে।"


হাত পা চালিয়েও পেরে ওঠে না সিনথিয়া। শয়তানের অশুভ শক্তির কাছে পরাজিত সিনথিয়া ইরফাদের দিকে তাকায়। তারপর বলে,"আমি কথা দিয়ে আপনাকে আগলে রাখতে পারলাম না , আপনার উষ্ণ বুকের ওমে আমি শেষ বার ঘুমাতে চাই। ওরা বাঁচতে দিবে না আমাকে। "


ছু!রি!কাঘাতে ক্ষত বিক্ষত হাত,পা, বুক। তপ্ত জ্বলা শরীরে নিয়ে অশুভ শক্তির হাত থেকে ছুটে ঝাপিয়ে পড়ে সিনথিয়া ইরফাদের বুকে। চোখ থেকে বের হয় উষ্ণ তপ্ত জল। হাত পা কাঁপে থরথর করে। কম্পমান হৃদয়, হাত পা নিয়ে ইরফাদের নিস্তেজ বুকে মাথা ঘষে সিনথিয়া। তারপর কান্নারত গলায় বলে,


-- আপনার ভালোবাসা মনে হয় আমার কপালে নেই। আমি আপনাকে পেয়েও পেলাম না । ঠিকই বলেছিলেন,পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা অসহনীয়।একবুক হাহাকার নিয়ে, আফসোস নিয়ে যেতে হবে আমি জানতাম না। 


পেছন থেকে হায়েনার দল সিনথিয়ার চুল খামছে ধরে। নিস্তেজ বুকে মাথা ঠেকিয়ে সিনথিয়া সর্বশক্তি দিয়ে আকড়ে ধরে ইরফাদকে। চুল টেনে হিচড়ে সরাতে চায় পিচাশদল। সিনথিয়া একমনে চোখের জলে নিজেকে ভিজিয়ে ফেলে আর ভাঙা গলায় বলে,

-- আমার মৃত‍্যু যদি হয়, তাহলে আপনার বুকেই হোক। পরপারে আপনাকেই যেনো পাই। তার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত ভেবে নিবো আপনার বুকে ঘুমাচ্ছিলাম।


মাথার চুলে টান পড়ে আবার, আরোও শক্ত করে আকড়ে ধরে সিনথিয়া ইরফাদকে। পিচাশদলের একজন বলে,


--আরে মরলো নাকি!


--মরে নাই!তেজি মাইয়ার তেজ থামা। কা!প!ড় খো!ল ওর তাইলে তেজ থামবো।


এতো ভারী কথাটাও মুখ বুঝে সহ‍্য করে সিনথিয়া। পিচাশেরা নিস্তেজ ইরফাদের হাত টেনে ধরে। আরো দু"জন টেনে ধরে সিনথিয়ার চুলের মুঠি। টানতে টানতে ছ‍্যাচড়ে দূরে নিয়ে যায় সিনথিয়াকে। ইরফাদের হাত নির্মম, নির্দয়ভাবে টেনে হিচড়ে নিয়ে যায়।সিনথিয়া চিৎকার দিয়ে ওঠে,

--ওকে ওভাবে ধরো না,ও ব‍্যাথা পাচ্ছে,আমার হৃদয় ছিড়ে যাচ্ছে।

 কি চাও তোমরা। ওকে ব‍্যাথা দিও না প্লিজ।


হৃদয়ের অনুভূতির দাম কি শয়তানের কাছে থাকে। তারা তো কেবল তাদের স্বার্থের দিকেই তাকায়। সিনথিয়া র!ক্তা!ক্ত  যন্ত্রণাময় হাত দাপিয়ে বেড়ায়। পা ছোটাছুটি করে। অতঃপর মাংসাশী বাঘের মতো ক্ষেপে যায় সিনথিয়া। কামড়ে ধরে পিচাশের হাত। র!ক্তা!ক্ত করে দেয় মূহুর্ত্তেই। তাদের দলের একজন গর্জে উঠে বলে,


--মা*** তেজ কমা। জা!মা ছেড়।


সিনথিয়া দু"হাত নিজের শরীরের উপর রেখে জুবুদুবু হয়ে বসে। একজন ইরফাদের বুকে রিভলভার ঠেকায়। অতঃপর পিচাশ দল বলে,


--খোল! 


দুনিয়ার খেলায় মত্ব পিচাশদের দিকে অশ্রুসজল নয়নে তাকায় সিনথিয়া। এই নিরব, নিস্তব্ধ জঙ্গলে তার ভালোবাসার মানুষকে জিম্মি করে তার  শরীর হরণ করার খেলায় মাতোয়ারা জানোয়ারদের উপর    এই মূহুর্তে যদি আকাশ ফেঁড়ে আগুন নিক্ষেপ করা হতো তবেই সিনথিয়ার আত্মা শান্ত হতো। পিচাশদলের একজন সিনথিয়ার পাশ দিয়ে গোল গোল হয়ে ঘুরছে। জুবুথুবু সিনথিয়ার কাঁপছে ওষ্ঠাধর। চোখ হয়ে উঠছে রক্তলাল। তপ্ত জলের পরিবর্তে যেনো গড়িয়ে পড়ছে ক্ষরণকৃত হৃদয়াশ্রু, লাল টকটকে র!ক্ত । দু"জন হায়েনা জানোয়ারের মতো খামছে ছিড়ে নেয় সিনথিয়ার জামার অংশ। ইরফাদের বুকের উপর ঠেকানো রিভলভারের দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে ওঠে সিনথিয়া। পিচাশদলের হাতের ছোবলে ছিড়ে ছিড়ে উঠে যায় পিঠের অংশ। ওড়নাটাও টেনে হিচড়ে নিয়ে উড়িয়ে দেয় একজন। পৈচাশিক হাসিতে এগিয়ে আসে লম্বা, বিশালদেহীর একটা ছেলে। পা দিয়ে লাথি দেয় সিনথিয়ার বুকে। শুকনো পাতার উপর ছুড়ে ফেলে সিনথিয়াকে অতঃপর.....


নিস্তেজ, জ্ঞানহীন ইরফাদ শরীর ছেড়ে দিয়ে আছে মরমরে পাতার বিছানায়। একজন সুপুরুষের কাছে মেয়েরা যেমন নিরাপদ,কাপুরুষের কাছে মেয়েরা ততোটাই হুমকির মুখে। এই মূহুর্তে তার ছায়াতলের মানুষটির জীবন জানোয়ারদের কবলে সে জানতেও পারছে না। সিনথিয়া কাঁপতে কাঁপতে বলে,


-- আমার খুব অসহায় লাগছে ইরফাদ! আমার খুব ভয় করছে। মেয়েরা কেনো এতো অসহায়! কেনো কেনো? ওদের বলো আমাকে মেরে ফেলুক। তবুও এমন কিছু না হোক .....


কিন্তু সে শব্দ কেউ শুনতে পায় না। তেজস্রী মেয়ের দূর্বল রূপে হায়েনার দল মজা পায়। মুখোশধারীর দের একজন খুলে ফেলে মুখের মাস্ক। সিনথিয়ার সমস্ত শরীরের গন্ধ শুকতে থাকে ছেলেটা। সিনথিয়া চোখ বন্ধ করে ফেলে ঘৃণায়। পরিহিত জামার উপরের অংশ টেনে ধরে এক জানোয়ার। সিনথিয়া হাত খামছে ধরতেই বলে,


--গুলি চালাবে নাকি তুই চুপচাপ থাকবি।


অদৃশ‍্য শেকলে বেঁধে যায় সিনথিয়া। দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে জল। জানোয়ারের অশুভ ওষ্ঠ সিনথিয়ার গ্রীবার দিকে যায়। 


ঠিক সে সময়ে শুভ সংকেতের বার্তা নিয়ে বেজে ওঠে সাইরেন। পুলিশের গাড়ির শব্দ ভেসে আসে। উপর থেকে উঠে যায় জানোয়ারটা। সাইরেনের শব্দে কান পেতে থাকে সবাই। এই সুযোগে সেকেন্ডের মধ‍্যে উঠে দাঁড়ায় সিনথিয়া। পাশে থেকে একজনের হাত থেকে রিভলভার কেড়ে নিয়ে সোজা ট্রিগার চাপে। ইরফাদের উপর ধরে থাকা রিভলবার রাখা লোকটির বুক ঝাঝরা করে দেয় সিনথিয়া। অতঃপর আকাশের দিকে তাক করে দু"বার ট্রিগার চাপে সিনথিয়া। তীব্র শব্দে কেঁপে ওঠে আকাশ বাতাশ। ঠিক সে সময়ে মাইকে শোনা যায় পুলিশ ফোর্সের গলা,


-- আমাদের টিম জঙ্গলের দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যতোই পালানোর চেষ্টা করুন, ধরা পড়তেই হবে। না হলে এনকাউন্টারে শেষ হয়ে যাবে অপরাধিরা।বি এলার্ট..


বাকিরা সবাই যে যার মতো ছুটে পালিয়ে যায়। সিনথিয়া সস্তির শ্বাস ফেলে, দুচোখের অশ্রুতে ভিজে ওঠে তার সমস্ত বুক। নিস্তেজ শরীরে পড়ে থাকা আস্ত ভালোবাসা টুকুকে ঝাপটে ধরে সিনথিয়া। হৃদয়ের ব‍্যাথায় জরাজীর্ণ সিনথিয়া নিস্তেজ ইরফাদের বুকে কান পেতে থাকে।হৃদয়ের অল্প একটু স্পন্দন শোনার তীব্র আশায় দু"চোখের জল বাঁধ ভেঙ্গে পড়ে, কোলে তুলে নেয় ইরফাদের ঘন চুল ভর্তী মাথা। রক্তাক্ত ব‍্যাথারত শরীরে কান্নারত সিনথিয়া লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে বলে,


-- কথা বলো। ঠিক আছো তুমি।

এইই!!! কথা বলোনা।

 তুমি না থাকলে বেঁচে থাকা হবে না আমার। কথা বলো। জীবনে হৃদয় ভাঙতে ভাঙতে আমি শেষ প্রান্তে এসে তোমাকে পেয়েছি।ভাঙা হৃদয়টা কেবল জুড়ে যাচ্ছিলো।  তোমার কিছু হলে তো আমার মেরুদন্ডে ভেঙ্গে যাবে। আমি আর উঠে দাঁড়াতে পারবো না। কথা বলো....


পাগলের মতো সিনথিয়া তরপাতে থাকে। চোখের জলে ভিজতে ভিজতে সিনথিয়া নিস্তেজ মুখে অজস্র চুমু খায়। হাত পা দাপাতে দাপাতে বলে,


-- আল্লাহ্! এতো কঠিন আমার সাথে হতে পারেনা। আমাকে এতো কষ্ট দিতে পারে না। তোমার কিছু হওয়ার আগে আমি পৃথিবী ছাড়তে চাই। এতো কঠিন যন্ত্রণা আমার ছোট্ট হৃদয় বয়ে বেড়াতে পারবে না। কথা বলো। তোমার স্বর শোনার তৃষ্ণায় আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। 


ইরফাদের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় ঘষতে থাকে। ঠান্ডা হয়ে আসা হাতটা বুকে ঠেকিয়ে বলে,


--হাতটা কেনো ঠান্ডা হয়ে আসছে। কথা বলো। আমি আর সহ‍্য করতে পারছি না ইরফাদ। একটু তাকাও। তাকাও না। 


ভারী শরীরটাকে টেনে নিজের উপর নেয় সিনথিয়া।   ঠান্ডা হয়ে আসা চোখ মুখে এলোমেলো ভাবে চুমু খায়। বুকে চেপে রেখে বলে,


-- অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার,  ভিষণ অসহায় লাগছে ভিষণ....


অশুভ উপাখ‍্যানের দরজা ঠেলে শুভশক্তিরা এগিয়ে আসে। পুলিশ ফোর্স আলো নিয়ে আসে সেখানে। সিনথিয়ার আধছেড়া জামা, র!ক্তা!ক্ত শরীর, অশ্রুশিক্ত চোখে তাকায় ফোর্সের দিকে। চরচড়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে নেয়। ইরফাদকে কোলে রেখে হাতটা বুকে চেপে ধরে সিনথিয়া। পুলিশ ফোর্স এর একজন হাত বাড়িয়ে দিয়ে  বলেন,


-- স‍্যারের সেন্স নেই? আপনারও তো বিধ্বস্ত  অবস্থা ম‍্যাডাম। কোথায় কোথায় লেগেছে। উঠে আসুন।


সিনথিয়া ইরফাদের ঠান্ডা বলিষ্ঠ হাতের উল্টো পিঠে চুমু খায়,চোখ ফেটে গড়িয়ে পড়ে জল, জড়িয়ে আসা স্বরে বলে,


-- আমাকে না আগে ওকে তুলুন। ওর ব‍্যথার যন্ত্রণায় আমার হৃদয় জ্বলে যাচ্ছে। 


চলবে??

৫০তম পর্ব পড়ার জন্য এইখানে ক্লিক করুন।

৪টি মন্তব্য:

পৃষ্ঠাসমূহ