আমার_প্রেয়সী
-"আষাঢ়।
উঠে পড়ো।"
ভোরের আলো সেই কখন ফুটেছে। সারারাত সুন্দর মূহুর্ত শেষ আর্শিয়ান বউ কে নিয়ে শাওয়ার শেষ তাহাজ্জুদ পড়ে ফরজ পড়ে তবেই ঘুমিয়েছে। আষাঢ় এতোটাই শকট যে পুরো টা সময় শুধু আর্শিয়ান ভাই এর দিকে তাকিয়ে অপলক দেখে গিয়েছে পুরুষ টাকে।মানুষ টা এতো টা যত্নবান হবে আষাঢ়'র ধারণাতীত ছিলো। আষাঢ়'র তেমন প্রবলেম হয় নি।
আর্শিয়ান অবশ্য ভয় ছিলো।বয়স কম বাই এনি চান্স যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে সে নিজে পাগল হয়ে যেতো আর পরিবার তো আছেই।নিশ্চয়ই তারা ইচ্ছে মতো আর্শিয়ান কে ধুয়ে দিতো।আচ্ছা আর্শিয়ান ভাই তখন কি বলতো? নিশ্চয়ই বলতো আমার বউ আমি আদর করেছি। তোমরা সেটা নিয়ে কথা বলার কে?
আষাঢ় গুটিশুটি মেরে আরো কম্বলের তলায় ঢুকছে। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। সেইজন্য আরাম পেয়ে আরো ঘুমতে চাইছে। আর্শিয়ান পাশে বসে বউয়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কি অদ্ভুত এক মায়া এই সতেরো বছর বয়সের কিশোরীর জন্য। কেমন কিছু সময় না দেখলে নিজে কে পাগল লাগে। আর্শিয়ান আজো ভেবে পায় না কিভাবে এই ছোট একটা মেয়ের প্রেমে পড়লো ভালোবাসল সে।
আর্শিয়ান নিজের অজান্তেই আষাঢ়'র চুল গুলো ঠিকঠাক করে দিতে দিতে মুচকি হাসছে।যে পুরুষ বোম ফাটালেও হাসার পাত্র নয়।আর সে কি না এই মেয়ের প্রেমে পড়ে কল্পনা করতো নিজের অজান্তেই হেঁসে ফেলতো।তখন নিশ্চয়ই আষাঢ় দেখলে বেহুঁশ হতো।জ্ঞান ফিরলে জিগ্যেস করতো, আর্শিয়ান ভাই আপনি হাসতে পারেন?" আষাঢ় আর্শিয়ান এর হাত টেনে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরতেই আর্শিয়ান নড়েচড়ে বসলো। দৃষ্টি এলোমেলো ঘুরিয়ে গম্ভীর স্বরে ডাকলো,
-"আষাঢ় মাস?"
আষাঢ় জবাব দিলো না।সে গভীর ঘুমে।কোনো নড়চড় নেই। আর্শিয়ান গায়ের কম্বল সরায়।গায়ে একটা আর্শিয়ান এর শার্ট। মাত্র একদিন পড়েছে আর্শিয়ান ওটা।আষাঢ়'র পছন্দ ছিলো শার্ট টা।তাই তো যত্ন করে রেখে দিয়েছিলো।আর নামজ শেষ সুন্দর গায়ে থ্রি-পিস ছাড়িয়ে এটা পড়িয়ে দিয়েছে। ধবধবে সাদা সুন্দর শরীরে কালো শার্ট কি দারুণ মানিয়েছে।আর্শিয়ান নিজেই আস্তে শুঁকনো ঢুক গিলে। আবার ডাকলো,
-"ন'টা বাজে উঠো আষাঢ়।"
-"উঁহু।"
আষাঢ় ঘুমঘুম কণ্ঠে চোখ বন্ধ করে উঠবে না জানায়।আর্শিয়ান আষাঢ় কে টেনে তুলে শোয়া থেকে। চুল ঠিক করে দিতে দিতে গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,
-"কোনো বাহানা নয়।
উঠতে বলেছি।"
আষাঢ় পিটপিট করে তাকায়।সামনে বসা তামাটে বর্ণের পুরুষ টা একান্তই আষাঢ়'র। মনে পড়তেই শিহরণ বয়ে যায় শরীরে।একবার ছুঁতে ইচ্ছে করছে। মনের কথাই শুনলো আষাঢ়। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে আর্শিয়ান এর ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে সরে আসতে নিলেই আর্শিয়ান আঁটকে দেয়।ওর ঘাড়ে হাত রেখে চোখের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত চাহনিতে। আষাঢ়'র শরীর মৃদু কেঁপে উঠে।আর্শিয়ান বললো,
-"ভেবেছিলাম বাচ্চা মেয়ে বিয়ে করলে আদর করা যাবে না।কিংবা লজ্জায় সে নিজেই দূরে দূরে থাকবে।ভাবি নি আমার বউ আমার চেয়ে দিগুণ রোমান্টিক আর নির্লজ্জ হবে।কিন্তু কাল রাতে বুঝতে পারলাম আমার বউ আমার গভীর স্পর্শ সহ্য করার ক্ষমতা রাখে।"
আষাঢ় লজ্জা পেলো।তবে বারবার আর্শিয়ান এর মুখে বউ ডাকটা শুনে ভালো লাগায় মন দুলিয়ে উঠলো।
আর্শিয়ান ওকে ফ্রেশ করতে পাঠিয়ে বেডশিট চেঞ্জ করে নতুন করে বিছিয়ে নিলো।রুম গুছিয়ে নিচে থাকা এলোমেলো নিজেদের কাপড় তুলে ওয়াশ রুমের সামনে রাখা বিনে রাখলো।
আষাঢ় ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখলো আর্শিয়ান ফর্মাল গেটআপে অফিসের জন্য রেডি হয়ে গিয়েছে।
আষাঢ় কে আসতে দেখে গায়ে পারফিউম স্প্রে করতে করতে জিগ্যেস করলো,
-"শরীর খারাপ লাগছে?"
-"না তো।"
টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে ভ্রু কুঁচকে জবাব দিলো আষাঢ়।আর্শিয়ান হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলে,
-"ওকে।
রেডি হয়ে নিচে এসো।কলেজ ছেড়ে দেব আমি।"
-"কিন্তু?"
-"কি?
-"সাড়ে ন'টা বেজে গেছে।
ক্লাস তো সাড়ে ন'টায় শুরু।"
-"আচ্ছা।
যেতে হবে না।"
আর্শিয়ান চলে গেলো।আষাঢ়'র মন টা খারাপ হলো।লোক টা এমন কেনো?যাওয়ার সময় একটু আদর করে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো?
-------
-"তোর লজ্জা করে না?শ্লা!"
আর্শিয়ান চোখ কটমট করে তাকালো সাঈদ এর দিকে।সাঈদ হাঁটতে হাঁটতে আবার বললো,
-"কিভাবে পারছি এতো ছোট একটা মেয়ের সাথে বাসর করে সবার সামনে বীরপুরুষ এর মতো হাঁটতে?"
আর্শিয়ান সিঁড়ি তে পা রাখার আগে ফিরে তাকালো সাঈদ এর দিকে।
আর্শিয়ান বাঁকা হেঁসে বললো,
-"কি বলতো?আমার বউ তো তাই আমার মতোই স্ট্রং।তোর এতো এতো প্রশ্ন না হয় আমার বউ এলে তাকে দেখে জবাব পেয়ে যাবি।"
বলে আর্শিয়ান হাঁটা ধরে। সাঈদ ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।কত সময় এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো জানা নেই ওর।আয়াত এসে ডাকতেই হুঁশ এলো।
অপ্রস্তুত হয়ে বলে উঠলো,
-"চলো,চলো তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।"
সাঈদ আয়াত এর হাত ধরে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
কিন্তু আয়াত দাঁড়িয়ে আছে। আষাঢ় আসছে। আয়াত নিজের হাত ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলো বোনের কাছে।
সাঈদ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো আষাঢ়'র দিকে।
-------
তাসফিয়া আগের মতো আর মনমরা হয়ে থাকে না।সবার সাথে মিলেমিশে থাকছে।তাসরিফ আজ পনেরো দিনের ও বেশি সময় হয়েছে বাড়ি নেই।মেয়ে টা নিজে কে কেমন শক্ত করেছে। আগে এক বেলা না দেখলে অস্থির অস্থির লাগত।এখন নিজে কে সামলেছে।
তাসরিফ বুঝিয়েছে। মেনে নিয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে সামলাতে হবে নিজে কে।ভেঙ্গে পড়লে হবে না।
তাসফিয়া ব্যালকনিতে বসে আছে। বাড়িতে কেমন একটা পিনপতন নীরবতা। কোনো সাড়াশব্দ নেই।ঝড় আসার পূর্বে যেমন আকাশ থম মেরে যায়। বাড়ি টাও আজ এমন থম মেরে আছে।
তাসফিয়া বোঝে পায় না সবাই এমন নিশ্চুপ কেনো।সন্ধ্যায় লিভিং রুমে এসে তাসফিয়া সোফায় বসে আছে। তায়েফ তায়ুশ কার্টুন দেখছে।ওদের জন্য টেবিলে একটু আগে নাস্তা দিয়েছে বুয়া।তাই ওরা দু'জন চলে গেলো।
তাসফিয়া রান্না ঘরের দিকে তাকালো সবাই মিলে কি এতো রান্না করছে মাথায় এলো না।রিমোট হাতে চ্যালেন চেঞ্জ করে নিলো।মিনিট দুই এক পেরুনোর পর সদর দরজায় কলিং বেল বাজলো।বুয়া গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে চলে এলো।তাসফিয়া ভেবেছে হয়তো বাবা চাচার কেউ এসছে তাই সেদিকে নজর না দিয়ে টিভির স্ক্রিনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ কানে চিরপরিচিত কণ্ঠ শুনতে পেলো।মনের ভুল কি?তাসফিয়া এদিকে না তাকিয়ে বিস্ময় নিয়ে বসে আছে। তাসরিফ ভ্রু কুঁচকে ফের শুধালো,
-"আমার জন্য একটা কফি নিয়ে আয়।"
তাসফিয়া ত্বরিত ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো তাসরিফ ভাই উলটো ঘুরে উপ-রে চলে যাচ্ছে।
তাসফিয়া থম মেরে বসে রইলো। চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। মনের ভুল ভেবে বসে রইলো। এরমধ্যে বুয়া কফি হাতে নিয়ে এলো।তাসফিয়া কে বলে ওর হাতে ট্রে দিয়ে আবার নিজের কাজে চলে গেলো।
তাসফিয়া আশেপাশে তাকিয়ে মিনি ট্রে টা হাতে নিয়ে উপরে এলো।দোতলায় এসে হৃৎস্পন্দন দিগুণ হলো।অনেক সাহস সঞ্চয় করে তাসরিফ এর রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আর অমনি ভেতর থেকে এক জোড়া পুরুষালী হাত তাসফিয়া কে টেনে নিলো।ট্রে শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলো মেয়ে টা।তাসরিফ ওর হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে স্টাডি টেবিলের উপর রাখলো।দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরে সোজা করে মাথার উপর তুলে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলো। তাসফিয়া চুল খোঁপা বেঁধে রেখেছিলো একদম ঢিল করে।যেটা তাসরিফ এর ধাক্কায় খুলে গেলো।তাসরিফ নেশাময় দৃষ্টিতে তাসফিয়ার অধরপানে তাকিয়ে আছে। তাসফিয়া ভয়ে চোখ তখন পিটপিট করে তাকাচ্ছে। আগে অনেকবার তাসরিফ ভাই তাসফিয়া কে ছুঁয়েছে। শুধু ছুঁয়েছে বললে ভুল হবে।অধর স্পর্শও করেছে। কিন্তু আজ কে মানুষ টাকে একটু আলাদা লাগছে। মনে হচ্ছে বহুদিন এর তৃষ্ণার্ত চাতক পাখির মতো সেও কিছু পাওয়ার ছুঁয়ে দেওয়ার তৃষ্ণায় মরছে।
তাসরিফ অনেক সময় তাসফিয়ার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে করে দুই জোড়া অধর একত্রিত করে দিলো।সময় নিয়ে অধরসুধা পান করে তবেই ছাড়লো প্রেয়সী কে।
------
রাতে খাবার খেয়ে আষাঢ় তায়েফ তায়ুশ এর সাথে বসে আছে। আর্শিয়ান বারকয়েক দোতলায় করিডরে ঘুরঘুর করছে। কিন্তু আষাঢ় পাত্তা দিচ্ছে না।
আজ এতোদিনে বিয়ের অথচ মানুষ টা ওকে কোনো গিফট দিলো না। ভেবেই আষাঢ়'র মন খারাপ হয়।
তবে নিচে আর কতক্ষণ বসে থাকবে।রাত বাড়ছে। রুমে তো যেতেই হবে। তায়েফ তায়ুশ ও চলে গিয়েছে।লিভিং রুমে কেউ নেই। আষাঢ় অল্পস্বল্প ভয় পেয়ে দ্রুত উপরে চলে এলো।রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ফিরতেই আর্শিয়ান ওকে নিজের সাথে চেপে ধরলো। আষাঢ় চোখ পিটপিট করে। আর্শিয়ান নিজের হাতে থাকা একটা সুন্দর চেইন ঝুঁকে আষাঢ়'র গলায় পড়িয়ে দিলো।
শান্ত কণ্ঠে জানালো,
-"এটা অর্ডার করেছিলাম একটা অনলাইন শপ থেকে। কিন্তু দেশের বাহিরে থেকে আনাতে একটু সময় লেগেছে। কিন্তু কুরিয়ার অফিসে এসছে আজ তিন দিন। আমি যাওয়ার সময় পাই নি।আর কাবাড একটা শপিং ব্যাগ আছে দেখতে বলেছিলাম সেদিন। দেখেছিস?"
চলবে.....
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন