মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

আমার_প্রেয়সী পর্ব_১৭ লেখনীতে- জান্নাত_সুলতানা

 আমার_প্রেয়সী

পর্ব_১৭
লেখনীতে- জান্নাত_সুলতানা



-"আর্শিয়ান ভাই?"
আষাঢ় নিচু স্বরে ডাকলো।আর্শিয়ান ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে সোফায়। গায়ে একটা নীল রঙের টি-শার্ট আর ট্রাউজার। খুব সিরিয়াস মুডে ছিলো সে। কিন্তু আষাঢ় এর কণ্ঠ ভাই ডাক শোনে ভ্রু কুঁচকে এলো।

বিয়ে করেছে সে। এটা কি সত্যি? মনে হচ্ছে না। বউ কেনো তাকে ভাই ডাকবে? বউ হচ্ছে আদরের জিনিস। ভালোবাসার জিনিস। বউ তো স্বামী কে আদরে করবে। কত কিছু বলে আদরে করে ডাকবে।তা না করে বউ কেনো তাকে ভাই ডাকবে?হোয়াই? আর্শিয়ান ভ্রু জোড়া কুঁচকে রেখেই ল্যাপটপ এর দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে গম্ভীর স্বরে জবাব দিলো,
-"হুঁ।"
আষাঢ় বিছানা ছাড়ে। গতকাল দুপুরেও হয়তো ভাবে নি গতকালের সময় সময়ে আজ আর্শিয়ান ভাই এর বউ হবে সে। ভালবাসার মানুষ টাকে নিজের করে পাওয়ার মতো সুন্দর অনুভূতি আর কি হতে পারে? পা জোড়া টেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো। দাঁড়ালো আর্শিয়ান এর ঠিক বরাবর।

আর্শিয়ান বউয়ের উপস্থিতি টের পেয়ে একপলক তাকালো বউয়ের মুখের দিকে। গায়ে এখনো বিয়ের সেই শাড়ী। চুল গুলো হাত খোঁপা করা। ওষ্ঠে এখনো সেই লাল টকটকে লিপস্টিক। কিছু চুল এলোমেলো। চোয়াল বেয়ে সামনে গলা পর্যন্ত এসেছে।

আষাঢ় আর্শিয়ান এর দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে ছিলো। তবে আর্শিয়ান কে এভাবে তাকাতে দেখে লজ্জা পেলো সামন্য। কিন্তু দৃষ্টি ঘোরালো না। নিজেও তাকিয়ে রইলো তামাটে বর্ণে পুরুষ আর্শিয়ান ভাই এর দিকে।আহ,আষাঢ়'র মনে হচ্ছে সব কল্পনা। সব স্বপ্ন। ভালোবাসা কি বোঝার পর থেকে স্বপ্ন দেখে আসছে সে আর্শিয়ান ভাই এর বউ হবে। যে ঘরে আর্শিয়ান ভাই তাকে ঢুকতে নিষেধ করেছে সেই মানুষ টার ঘর সহ মানুষ টার উপর খবরদারি করবে। অধিকার ফলাবে।

আষাঢ় অস্থির হলো হঠাৎ। মনে হলো এই অস্থিরতা সে যা ভেবেছে তা না করতে পারলে ঠিক হওয়ার নয়।তাই কালবিলম্ব করে না।

মাথা নিচু মিনমিন করে আবদার করলো,

-"একটু জড়িয়ে ধরবো আর্শিয়ান ভাই!"

কি বলে এই মেয়ে? কিছু সময় আগেও কোলে উঠেছে। আর এখন কি-না ভয় পাচ্ছে! অনুমতি চাচ্ছে? আর্শিয়ান গম্ভীর।

মতিগতি বোঝার উপায় নেই। আষাঢ় ভাবলো আর্শিয়ান ভাই তাহলে সত্যি তাকে ভালোবাসে না!ভালোবাসলে বুঝি এভাবে বসে থাকতে পারতো?আষাঢ়'র মনঃক্ষুণ্ন হলো।মানুষ টা বড্ড আনরোমান্টিক।এমন হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম কি করে ডাউনলোড হবে?

আষাঢ়'র আঙ্গুলে শাড়ির কোণ পেঁচাতে পেঁচাতে কথা গুলো ভাবছিল। ঠিক তক্ষুণি হাতে শক্ত পোক্ত একটা হাতের আভাস পেলো। কিছু বোঝে উঠার আগেই আর্শিয়ান হেঁচকা টানে আষাঢ় কে নিজের একটা উরুর উপর বসিয়ে নিলো। আষাঢ় চমকাল। শরীর জুড়ে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো। নিজে কে সামলে আর্শিয়ান এর গলায় জড়িয়ে ধরলো।অধর কোণে লাজুক হাসি ফুটলো। ভয় লজ্জা সংকোচ সব ঠেলে আর্শিয়ান কে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুঁজে দিলো।

আর্শিয়ান শক্ত হাতে বউয়ের পেট চেপে ধরে। নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।

একদম তুলার বস্তা একটা। নরম তুলতুলে দেহটা এই শক্ত পোক্ত, বলিষ্ঠ তাগড়া পুরুষ টাকে কি করে সামলাতে পারবে?

আষাঢ় আর্শিয়ান এর মাঝে বয়সের গ্যাপ টা গুণে গুণে এগারো বছরের। আর্শিয়ান এর তুলনায় আষাঢ় বাচ্চা একটা মেয়ে। আর এই বাচ্চা মেয়ে টা কি করে এতো বড়ো একটা মানুষের মন টা ছিনিয়ে নিলো! আর্শিয়ান টের ও পেলো না। আর্শিয়ান লম্বা নিঃশ্বাস টানে।মাতাল করা এক ঘ্রাণ নাসারন্ধ্রে পৌঁছালো গিয়ে।

আর্শিয়ান মানুষ টা গম্ভীর। আর এই গম্ভীর পুরুষ টার প্রেমে আষাঢ় পড়লো। অবশ্য আষাঢ় বাদেও তো অনেকে আর্শিয়ান ভাই এর প্রেমে পড়েছে। কিন্তু পুরুষ টার গম্ভীর স্বভাবের আর রাগের জন্য কেউ সেটা সামনে দাঁড়িয়ে প্রকাশ করার সাহস পায় নি।

এখন বিকেল। বিয়ের পরপরই আষাঢ় জ্ঞান হারানোর পর আর্শিয়ান ওকে নিজের রুমেই এনেছে।

এরপর আর কেউ বের হয় নি রুম থেকে। আষাঢ় এর জ্ঞান ফিরেছিলো আধঘন্টা হতেই। শর্মিলা বেগম খবর পাওয়া মাত্র ছেলে আর ছেলের বউয়ের খাবার রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে।
যদিও এরপর এসে দু'বার আষাঢ় কে দেখে গিয়েছে। সবাই দেখে গিয়েছে। শুধু শিউলি বেগম আসে নি। আষাঢ়'র মন এতে অনেক টা খারাপ হয়েছে। মা কেনো একটু এলো না?

-"ছাড়।"

হঠাৎ আর্শিয়ান এর কণ্ঠ কানে পৌঁছাতেই আষাঢ় ভাবনা ছেদ ঘটে। অবস্থান কোথায় বুঝতে কিঞ্চিৎ সময় লাগলো। তবে বুঝতে পেরে আর অপেক্ষা করে না। দ্রুত আর্শিয়ান কে ছেড়ে উঠতে গেলেই আর্শিয়ান বাঁধা দিলো।দুই হাত কোমরে রেখে চাপ প্রয়োগ করে। আষাঢ় কেঁপে উঠে।

আর্শিয়ান বললো,

-"এখন রুমে যাবি।

আমি বাহিরে যাচ্ছি। ফিরে এসে নিয়ে আসবো।"

আষাঢ় টুঁশব্দ করলো না। আর্শিয়ান ভাই মানে তার কোনো প্রশ্ন নেই। কোনো চিন্তা নেই। তাই বিনাবাক্যে রুম ত্যাগ করে।

-----
রাতের খাবার খেতে যাওয়ার জন্য তাসফিয়া এসে আষাঢ় কে নিয়ে গেলো।আষাঢ় ডাইনিং টেবিলে এসে আর্শিয়ান এর দেখা পেলো।বসে আছে খাবার নিয়ে।আষাঢ় বুঝতে পারছে না এখন এক সাথে বসা কি ঠিক হবে? কি মনে করবে সবাই? নতুন বউ সে।তারউপর বাড়ির বড়ো বউ।

আষাঢ় দাঁড়িয়ে ছিলো এক পাশে শিউলি বেগম সাঈদ কে তখন খাবার দিচ্ছে। শর্মিলা বেগম আষাঢ় কে দাঁড়িয়ে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। পরক্ষণেই বুঝতে পারলো মেয়ে টা দ্বিধায় ভুগছে।তিনি নিজে থেকে এগিয়ে এলো।আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে বললো,

-"দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

বোস।"

-"আমি পর,,,

-"নাহ এক্ষুণি বোস।"

জোর করে বসালো আষাঢ় কে।আষাঢ় আর বাড়াবাড়ি করে না।

বসে পড়ে আর্শিয়ান এর পাশের চেয়ার টায়।

আর্শিয়ান আঁড়চোখে তাকালো একবার।

আপন মানুষ। পরিচিত মুখ। জন্মের পর থেকে তাদের সাথে বাস। বুঝ হওয়ার পর থেকে সব সময় এক সাথে খাবার খাওয়া। খেলাধুলা, হাঁটাচলা। সব কিছু এই সামনে পেছনে আশেপাশে থাকা মানুষ গুলো কে ঘিরে। অথচ আজ তাদের সাথে একই টেবিলে খাবার খেতে বসে কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। আষাঢ় মাথা নিচু করে খাবার মুখে নিচ্ছে। বাম হাত টা কোলের উপর রাখা।

তবে হঠাৎ অনুভব করলো সেটা একটা দানবীয় হাত মুঠোয় পুরে নিয়েছে।

আষাঢ় চমকালো। অবাক হলো। পাশে আর্শিয়ান এর দিকে তাকাতেই দেখলো আর্শিয়ান খাবার খাচ্ছে। দৃষ্টি তার প্লেটের দিকে। আর সেভাবে থেকেই আদেশের স্বরে বললো,

-"ফিনিশ।

একটা ভাত প্লেটে থাকলে সারা রাত বারান্দায় দাঁড় করিয়ে রাখবো।"

চাপা স্বরে হুমকি আষাঢ়'র অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে। মানুষ টা বড্ড খারাপ। একটু দয়ামায়া নেই মনে। এভাবে কেনো বলছে? লোক টা কি বুঝতে পারছে না আষাঢ় খেতে পারছে না। আষাঢ় মুখ ভোঁতা করে খাবার খেতে লাগলো বাধ্য হয়ে।

------
খাবার শেষ লিভিং রুমে বসেছে সবাই। আষাঢ় নেই।

আয়াত তাসফিয়া ওকে নিয়ে অনেক আগেই উপরে চলে গিয়েছে।

এখন বড়রা বসে আছে। আকরাম তালুকদার ছেলের মতিগতি অবলোকন করেছে। ছেলের পাগলামো না মেয়ে টার জীবনে এখানে থমকে থাকে।হঠাৎ তিনি আর্শিয়ান কে উদ্দেশ্য করে বললো,

-"দেখো আর্শিয়ান কথা টা বলা আমার কত টা ঠিক হবে আমি জানি না। তবে এটা বলা জরুরি। আষাঢ় বাচ্চা মেয়ে। আঠারো বছর হয় নি এখনো। ওর রুমে থাক,,,

-"ওহ বাবা প্লিজ।

আমার বউ? আমার তো তবে আমাকে বুঝতে দাও। আষাঢ় আমার রুমে থাকবে।"

আকরাম তালুকদার নিজেই লজ্জা চোখ নিচু করে নিলো। কি বলবে? শুধু শুধু এতো মানুষের ভীড়ে সম্মান হারানোর মানে হয় না।

আর্শিয়ান বসে না আর সেখানে। ফোন পকেটে পুরে লম্বা লম্বা কদম ফেলে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চলে এলো। বউ নিশ্চয়ই তারজন্য অপেক্ষা করছে।

আষাঢ় এখনো বিয়ের শাড়ী পড়া। মাথায় দোপাট্টা টা আবার দিয়েছে। সাজিয়েছে ওকে তাসফিয়া আয়াত।

বুকে টিপটিপ করছে। কাঙ্খিত মানুষ টা কখন আসবে সেই অপেক্ষার প্রহর গুনছে। আষাঢ় এর বিয়ে নিয়ে কত কল্পনা জল্পনা ছিলো। কিন্তু সে-সব কিচ্ছু হলো না। মন টা খারাপ হতে গিয়েও হয় না। যাকে স্বামী রূপে চেয়ে এসছে তাকেই পেয়েছে এই আনন্দের নিকট সব খারাপ লাগা তুচ্ছ।

দরজা খোলার কোনো শব্দ হলো না। আর্শিয়ান দক্ষ হাতে দরজা খুলে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে। দরজা বন্ধ করে গম্ভীর মানুষ টা গম্ভীর ভাব নিয়ে এগিয়ে গেলো বিছানার সামনে। গিয়ে দাঁড়াতেই আষাঢ়'র টনক নড়ে। দ্রুত পায়ে বিছানা ছেড়ে সংকোচ নিয়ে সালাম দিলো আর্শিয়ান কে। তাসফিয়া বলেছে আর্শিয়ান রুমে এলেই যেন সালাম দেয়। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করবে। সেটা সম্পূর্ণ ভালোবাসা দিয়ে যেনো শুরু করে।

আর্শিয়ান সালাম এর উত্তর করলো।

আষাঢ় দাঁড়িয়ে রইলো।

আর্শিয়ান টেনে নিলো আষাঢ় কে। নিজের সাথে একদম মিশিয়ে নিলো এক ইঞ্চি ফারাক রাখলো না।আষাঢ় সমস্ত শরীর কেঁপে উঠে। সাপের ন্যায় মোচড়ামুচড়ি করলো।

ভালোবাসার মানুষ টার গভীর স্পর্শ। এতো টা কাছ থেকে আষাঢ় ভেতর থেকে এলোমেলো হলো।

আর্শিয়ান দেখলো।সবটাই সে পর্যবেক্ষণ করলো।

নেশাময় দৃষ্টি পুরুষ টার।আষাঢ় আস্তে করে ঢুক গিলে। আর্শিয়ান বউয়ের অধরের উপর বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দিলো।আষাঢ় আবারও নড়েচড়ে উঠতেই আর্শিয়ান অধর বাঁকিয়ে হাসলো।বললো,

-"ব্যাস! এটুকু এতেই সহ্য হচ্ছে না।

পুরো আমি টা কে কি করে সহ্য করবি?"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ