রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

গল্প- রং। লেখনীতে তন্নী তনু। পর্বঃ৪৮

  #রং

লেখনীতে- তন্নী তনু
--------------------------------

-
একই পৃথিবীতে পরিচিত অপরিচিত সকলের জন্য ভিন্নতা নিয়ে সকালের শুরু। একরাশ দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত্রি কেটে গেছে সুভার। সুমন এখনো বাসায় ফেরেনি, ফোন বন্ধ এখনো। পাহাড়সম ভারী চিন্তার বোঝা তে মাথা যখন ঝিম ধরে আসছে, শরীর, ক্লান্ত চোখ চাইছে বিশ্রাম। তবে বিরামহীন যুদ্ধের নামই যে জীবন। ঘড়ির ঘন্টা তাকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাতে সময় নেই। এইবার তাকে বাইরে যেতেই হবে। প্রথমত টাকার সন্ধানে, দ্বিতীয়ত কর্মক্ষেত্রে যেতেই হবে, বাবার ঔষধের ব্যবস্থা করতে হবে, বাসার বাজারের ব্যবস্থাও করতে হবে। অশান্ত মনের দাবানল বুকের ভেতরেই জ্বলে, বাইরে সে তো বড্ড বেমানান। দরজা খুলে বেরিয়ে যায় সুভা। পেছন থেকে সুভার মা ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। তার নির্লিপ্ত অভিব্যক্তি যেনো অনেক কথা বলতে চায়। সুভা পিছু ফিরে এক পলক দেখে নেয় মায়ের দুটো ছলছল চোখ। অতঃপর বেরিয়ে যায়।
ঝুলন্ত ব্যাগে উচ্চ স্বরে বেজে ওঠা ফোনের রিংটোন সুভার ছোট্ট হৃদয়কে নাড়িয়ে তোলে।
হৃদয় নামক অদৃশ্য অস্তিত্বের সাথে মূহুর্তেই অনেক হিসেব কষা হয়।
কে কল দিতে পারে? সুমন?
সুমন কল দিয়েছ?
তাকে কিছু বলার সুযোগ দিবে নাকি সুমন কথা বলার আগেই সে নিজেই হাজারটা কথা শোনাবে।
কোথায় ছিলো কাল রাতে?
কেনো ফোন বন্ধ ছিলো?
কেনো বাবার ঔষধ আনেনি?
কেনো বাজার করেনি?
কেনো মিথ্যা বলে ফ্রেন্ডের থেকে টাকা নিয়েছিলো?
মায়ের আলমারীতে গোছানো টাকা গুলো কোথায় গেলো?
গহনা গুলো কোথায় গেলো?
কতশত প্রশ্ন তার মনে জমে আছে।
দীর্ঘ তপ্তশ্বাস ফেলে সুভা।
্যাগের জিপার খুলে ফোন হাতে নেয়। তপ্ত রোদে স্ক্রিনের সব ঝাপসা। আন্দাজে ফোন ধরে সুভা।
তারপর,
--কে?
-- আপু আমি সুমনের বন্ধু বলছিলাম।
-- কোনো প্রবলেম?
--আপু আপনি যদি একটু হসপিটালে আসতেন?
-- কেনো ভাই!!
-- না মানে.... কাল রাতে সুমন আমাদের সাথে ছিলো। সকালের দিকে ও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায়। ঐ জন্য হসপিটালে নিয়ে এসেছি।
-- মানে?? কি হয়েছে ওর?
-- আপনি আসুন প্লিজ ইমারজেন্সি...লোকেশন মেসেজ করেছি আপু।
প্লিজ চেক....
সুভা হাত উঁচিয়ে রিক্সা ডাকে। বুকের মধ্যে ধুক ধুক ধুক করে বাড়ছে শব্দ গুলো একের পর এক। কি হলো সুমনের? এই মূহুর্তে হাত পুরো টাই শূন্য।
দুঃচিন্তার পাহাড় যেনো ধসে ধসে পড়ছে মাথার উপরে।ফোনটা আবারও বাজছে। ফোন ধরে সুভা,
-- সুভা...
-- আম্মা বলো...
-- তুই শুনছিস!! ওরা কি বলছে এইগুলা?
--কি হইছে আম্মা। এতো হাইপার হচ্ছো ক্যানো?
-- সুমন! আমার সুমন নাকি বি*ষ খাইছে।
পুরো পৃথিবী চোখের সামনে ঘুরে ওঠে সুভার। কি শুনছে সে? সব সত্যি নাকি দুঃস্বপ্ন........
_______
রিমার জীবনে এক একইরকম সকাল শুরু হয় আজকাল। সকাল থেকে মায়ের তিক্ত কথায় হৃদয় পুড়তে থাকে রাত অবধি। আবার রাত ফুরিয়ে যায় চোখের জলে ভিজতে ভিজতে। জীবনের কিছু ভুল আজীবন জ্বালাবে, আজীবনের জন্য পোড়াবে। আগুনের লেলিহান শিখায় জলজ্যান্ত মানুষটা সারাজীবন জ্বলবে কিন্তু কিছুই করার থাকবে না।সে রকম-ই একটা তিক্ত সকালের শুরু রিমার। আজকার শরীরের সাথে মানষিক যন্ত্রণা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তার উপর মায়ের অত্যাচারে জান বেরিয়ে যাবার উপক্রম।
জীবনের অল্প একটু ভুল আপনার জীবনের মোর এমন এঙ্গেলে ঘুরে যাবে নিজের চেনা জায়গা, চেনা মানুষ, চেনা সবকিছু অচেনা হয়ে যাবে।
ভোর বেলা চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গে রিমার। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। এতোগুলো দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও কেনো যে তার মা একটু কোমল একটু নরম হয় না এটাই বুঝতে পারে না সে।
আজকাল ডায়েরি আর চোখের জল সবচেয়ে আপন।
মায়ের চিৎকার চেঁচামেচিতে কানে হেডফোন গুঁজে দেয় রিমা। অতঃপর ডায়েরির নতুন পাতায় লেখা হয় আরেকটি দীর্ঘশ্বাস,
-- যদি সম্ভব হতো তাহলে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা,বিশ্বাস, ভরসা, মায়া সকল অনুভূতি গুলোসহ এই আস্ত আমিটাকে প্রকাশ্যে গলায় রসি ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড দিয়ে দিতাম শুভ্র। যাতে এই পৃথিবী ভুল করার আগে আমার মৃত্যুর করুণ পরিণতির কথা মনে করতো। তবে আ*ত্ম*হ*ত্যা মহাপাপ বলে পারলাম না....
_____
দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ের দুটি মানুষের একটি দীর্ঘ রাত হোটেলের কেবিনলুমে কেটে গেছে। সকালের প্রজ্বলিত সূর্যের স্বর্ণালী ঝলমলে আলো পড়ছে তিথির চোখে মুখে। চোখ কুচকে ফেলছে তিথি। বুকের আলিঙ্গনে সে রোদের আলো থেকে তিথির সোনামুখ ঢেকে রাখছে শিশির। তিথি ধীর গলায় বলছে,
--রাগ কমেনি?
শিশির চুপচাপ, নিরব, নিস্তব্ধ। তিথির গলা আরেকটু ধীর,
--চলো বাসায় যাই....
--কেনো?
-- এভাবে চলে আসা কি ঠিক হলো?
-- ঠিক না হলেও ভুল তো হয় নি। বাসায় থাকলে কখনোই তোর শূন্যতা মা বুঝতো না। কিছু সময় দূরত্ব ভালো....
--আর যদি না বুঝে?
-- না বুঝলে নাই। তুই আমার কাছে থাকবি। পৃথিবীর সবার ভালোবাসা আমি একাই তোকে দিবো।
-- আমার না হয় কেউ নেই তাই তুমি আমাকে সবার ভালোবাসার চেয়েও বেশী ভালোবাসতে পারবে। কিন্তু তোমাকে ভালোবাসার অনেক মানুষ আছে। তাদের ছাড়া তুমিও ভালো থাকবে না। আমি চাই না মামি আর তোমাকে আলাদা করতে। তুমি প্লিজ ফিরে যাও....
-- আমি সেদিন ই ফিরবো যেদিন আমার মা নিজের ভুল বুঝতে পারবে। হোয়াটএভার, আই নিড টু গো..
--কোথায় যাবে তুমি?
-- কাজ আছে... পুলিশ হেডকোয়ার্টারস।
--আর আমি?
-- তুই এখানেই থাকবি। আজকের মধ্যে অন্য জায়গায় শিফট হবো নো প্রবলেম।
-- তুমি কখন ফিরবে?
-- রাতে।
--আমি এখানে একা থাকবো?
-- আজকের মতো কষ্ট কর প্লিজ....
আর শোন,অনেক ব্যড নিউজের মধ্যে একটা গুড নিউজ দেই তোকে। তোর ফ্রেন্ড সিনথিয়া...
-- ওর কোনো নিউজ জানো? তুমিও তো আইনের লোক। ওর কোনো নিউজ দিতে পারবে তুমি?
-- তোর ফ্রেন্ড এই মূহুর্তে সেইফ জোনে আছে। তোর সিনথিয়া এখন এসপি"র মিসেস।
অবাকের উঁচু সীমায় পৌঁছে চোখ গোলগোল করে ফেলে তিথি।
তারপর লাফিয়ে উঠে বলে,
-- সত্যি???
শিশির তিথিকে থামিয়ে বলে,
-- আরে আরে... নিজের বিয়েতেও এতো খুশি হোস নি। যতোটা অন্যের বিয়ের খবর শুনে হচ্ছিস!
-- সিনথিয়া স্যারকে পছন্দ করতো, ভালোবাসতো ..
--আর তুই যে ওর বরের সাথে ফ্লার্টিং করে বেড়াস এ কথা জানে তোর বান্ধবী??
-- আমি তখন জানতাম না। তাহলে এমন করতাম না....
-- তুই আমার বোন এই কথাটা সেদিন স্যার জানতেন। তা না হলে সেদিন গুলি মেরে তোকে উড়িয়ে দিতেন।
-- আচ্ছা স্যার কি সিনথিয়াকে সব বলে দেবেন?
-- একজন এসপি মোটেও তোর মতো বাচ্চামী করবে না। তিনি একজন বিচক্ষণ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ।
আচ্ছা তিথি তুই কিন্তু অনেকটাই শান্ত হয়ে গেছিস।
তিথি এগিয়ে আসে শিশিরকে দুহাতে আকড়ে ধরে বলে,
--শান্তির একটু জায়গা পেয়ে গেছি তো। তাই সব ই ভালো লাগে। আমার কোনো দুঃখ নেই.....
--------
বৃষ্টি শেষে একটা ঝলমলে ঝকঝকে পরিষ্কার সকাল। মিষ্টি, মধু মো মো করা ঘ্রাণে শ্বাস টেনে টেনে নিচ্ছে সিনথিয়া, গভীর ঘুম ক্রমেই পাতলা হচ্ছে, এরপর কয়েক সেকেন্ডের জন্যে মস্তিষ্কশূন্য হয়ে যায়। সব কি স্বপ্ন ছিলো!
ইরফাদ তাকে ভালোবাসি বলছিলো! সব কি স্বপ্ন।
তড়াক করে খোলে ঘন আঁখি পল্লব।
উপরে আধুনিক ইন্টেরিয়র সিলিং, ফ্যান ঘুরছে ভো ভো করে।
পাশ ফিরে তাকায় সিনথিয়া পাশের মানুষটা কই? লাফিয়ে উঠে বসে।
চারপাশে চোখ বুলিয়ে খুঁজে বেড়ায়।
মিষ্টি স্নিগ্ধ ঘ্রাণ হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে। বেড সাইড টেবিলে বেতের ঝুড়িতে শুভ্র সাদা সাদা ফুল গুলো যেনো হাসছে। মধুর ঘ্রাণে অন্তর ছেঁয়ে যাচ্ছে। সাদা ছোট ছোট ফুলের মধ্যে একটা ভাজ করা কাগজ। সিনথিয়া মেলে ধরে সেই কাগজ,
সিন্ড্রেলা,
তোমার স্পর্শে অন্ধকারাচ্ছন্ন,জরাজীর্ণ, রক্তাক্ত হৃদয়ের বিষণ্নতাগুলো আজ আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত। তুমি ছুঁয়েই শুষে নিও আমার সারাদিনের ক্লান্তি আর আমি বাকিটা ফিরে এসেই না হয় দিবো!!!
এখন যাচ্ছি....সারাদিন ভিষণ মিস করবো বউ.....
অতঃপর সিনথিয়ার হৃদয়ে বসন্তের বাতাসের মতো অনুভূতিরা ঠান্ডা আবহে বইতে শুরু করলো, হৃদয় নামক ছোট্ট অংশটা তোলপাড় শুরু করলো "বউ" নামক শব্দটুকু দেখেই, ভালোবাসার চাদরে সে নিজেই মুড়িয়ে রাখতে চেয়েছিলো ইরফাদকে।
তবে অমায়িক চিন্তাধারী কঠিন হৃদয়ের মানুষটি প্রেমের সেতু বন্ধন তৈরী করে তাকে হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকছে নিজেই,প্রেম-প্রীতির পূর্ণ বাঁধনে তাকে বেঁধে ফেলছে আষ্টেপৃষ্ঠে।
অপূর্ব চিন্তাশীল মানুষকে কি?
প্রেমের জোয়ারে ভাসানো সম্ভব!!!
অনুপম চিন্তাধারী পুরুষকে কখনো নারী তার প্রেমের জোয়ারে ভাসাতে পারে না, সেই পুরুষ তার অমোঘ প্রণয়, ভালোবাসার জোয়ারে তার প্রিয়তমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় যেমন চিরকুটের মধুর শব্দ সিনথিয়াকে প্রেমের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে....
দরজায় টোকা পড়ে। কল্পনার জগতের ছেদ ঘটিয়ে দরজায় তাকায় সিনথিয়া। মিষ্টি গলায় ভেসে আসে,
-- গুড মর্ণিং বউ...
মিষ্টি গলা শুনে সিনথিয়া বুঝতে পারে টুম্পা ডাকছে। বিছানা থেকে ছুটে যায় দরজার দিকে। ভেজিয়ে রাখা দরজা খুলে দেয় সিনথিয়া।দরজার অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে ইভা, তার কোলে টুম্পা।
সিনথিয়া বলে,
-- গুড মর্ণিং সোনা!!
ইভা বলে,
-- আর ইউ ওকে ?
--হুম আপু। ভাইয়া কিন্তু নেই। নামাজ পড়েই বাইরে গিয়েছে। ফিরতে লেইট হবে।
-- আমাকে ডাকেনি একবারো।
-- ভাইয়া এমন-ই। তুমি এসো ফ্রেশ হয়ে এসো।
বলেই মিষ্টি করে ঠোঁট ছড়ায় ইভা।
ইভার চোখ জোড়া টানা টানা, ফর্সা পাতলা মুখ, নিটোল গড়নের শরীর মেয়েটার। একপলক দেখে চোখ সরানোর উপায় নেই। ইরফাদের জেরক্স কপি। শুধু ফিমেল ভার্সন।
যে মেয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরানো যায় না তাকেই নির্মমভাবে ঠকিয়ে গেছে তার রক্তের ভাই।
এতো কঠিন, নির্মম, নির্দয় কি করে হলো তার ভাই। অজান্তেই একরাশ মায়া তার হৃদয় ছড়িয়ে গেলো।
এই যে পিচ্চিটা কি মিষ্টি দেখতে।
একবার দেখলেই হৃদয় ঠান্ডা হয়ে যায়।
গতরাতে অনেকবার টুম্পাকে চুমু খেয়েছে সিনথিয়া।
এখনো অদৃশ্য মায়া তাকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ইভার কোল থেকে টুম্পাকে নিজের কোলে নেয় সিনথিয়া। টুপ টুপ করে পুরো মুখে চুমু খায়।
যদি পারতো নিজের ভাইয়ের অবিচার বাচ্চাটার শরীর থেকে চুমুতে শুষে নিতো এই মূহুর্তে।
তবে সব যন্ত্রণা, সব ব্যাথা শুষে নেয়া যায় না। ইভা সবটা স্বাভাবিক ভাবেই নেয়। ইভা মৃদু হেসে বলে,
--পরে আদর কোরো যতো খুশি। নিচে আসো খাবারটা খেয়ে নাও। বাবা ওয়েট করছে...
সিনথিয়ার টনক নড়ে। ঘুমটা বেশীই হয়ে গেলো না। কয়টা বাজে? পেছন ঘুরে দেয়ালে ঘড়ি খুঁজে বেড়ায় সিনথিয়ার চোখজোড়া। ইভা হেসে বলে,
-- ঘড়ি দেখতে হবে না, নয়টা বাজে...।
তোমাদের উপর দিয়ে অনেক স্ট্রেস গিয়েছে ঐটা বাবা জানে, তোমাদের প্রপার রেস্ট এর প্রয়োজন।
সো ডোন্ট প্যানিক.....তুমি নিচে এসো.......
সিনথিয়ার হঠাৎ মাথায় একটা চিন্তা টোকা দিয়ে যায়? কোন স্ট্রেসের কথা জানে বাসায়? সব টা জেনে তাঁরা তাকে মেনে নিচ্ছে?
না কি সবটাই অজানা তাদের। আচ্ছা! রাফসান যে তার ভাই এটা জানতে পারলে সবাই তাকে মেনে নিবে তো?
------
আবছা টিমটিমে আলোর লোহার সেলের কক্ষে বসে আছে ইরফাদ।
অপহরণের শিকার ছেলেগুলোর জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।
বাকি কাজ চলছে নিয়ম মাফিক। খুব শিঘ্রই উন্মোচন করা হবে আসল কালপ্রিটের মুখোশ....
_____
বিকেল বেলা কিচেনে কাজ করছে ইভা। সিনথিয়া দাঁড়িয়ে আছে পাশেই।একটা লম্বা ট্রে-তে কফি, আর স্ন্যাকস সাজিয়ে হাতে ধরিয়ে দেয় ইভা। তারপর বলে,
--চলো..
-- কোথায় আপু?
--গেস্ট এসেছে। ড্রয়িং রুমে চলো...
সিনথিয়া বাধ্য মেয়ের মতো ইভার দেখানো রাস্তা দিয়ে যায়। ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করেই থমকে দাঁড়ায় সিনথিয়া।
একপলক সামনে একপলক পেছনে ফিরে তাকায় সে।
ইভার মিষ্টি চোখের ভাষা বলে,
-- যাও...
সিনথিয়া দ্রুত পা চালিয়ে যেনো ছুটে যায়। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে তার বাবা,মা আর মুগ্ধ। সিনথিয়া টেবিলে ট্রে রেখে বাবার বুকে ছোট্ট বাচ্চার মতো ঝাপিয়ে পড়ে, অপর হাতে আগলে ধরে মায়ের গলা।
রিদুয়ানুর রহমান সিঙ্গেল সোফায় বসে এক পরিবারের সবার কান্নায় ভাসতে থাকা অনুভূতির সাক্ষী হন।
সিনথিয়া কান্না করে ফেলে। কতো গুলো দিন পেরিয়ে গেছে, কতগুলো দিন দূরে ছিলো। দীর্ঘদিন পর মেয়েকে চোখে দেখতে পেয়ে কেঁদে ফেলেন সানজিদা বেগম। মুগ্ধ"র চোখে জল টুপটুপ করে।
সানজিদা বেগম মেয়ের মাথায় চুমু খান।
সিনথিয়া কান্না ভেজা গলায় বলে,
-- বাবা! বাবা তুমি কেমন আছো? মা তুমি কেমন আছো।
কান্না"র তোড়ে সানজিদা বেগম উত্তর দিতে পারেন না। মেয়েকে টেনে বুকে জড়িয়ে গত দিনগুলোর অপেক্ষার যন্ত্রণা ভুলতে চান।
-
সিনথিয়া মায়ের বুকে পড়ে থাকে অনেকটা সময়।
সিনথিয়ার বাবা রিদুয়ানুর রহমানের দিকে তাকিয়ে ভেজা গলায় বলেন,
-- আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার মেয়েটা একটার পর একটা ট্র্যাপে পড়েছে। এসপি সাহেব না থাকলে হয়তো আমার মেয়েটা এই জাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারতো না।
রিদুয়ানুর রহমান বলেন,
-- আইন সকলের জন্যে সমান। এটা একজন পুলিশ অফিসারের রেসপনসিবিলিটির মধ্যে পড়ে।তবে এইবার একজন মানুষ হিসেবে যে দায়িত্ব ইরফাদ পালন করেছে আই'ম প্রাউড অফ হিম।
-- স্যার! আজকেই সিনথিয়াকে আমাদের সাথে পাঠানো যায় না?
আমরা সিনথিয়াকে চোখে চোখে রাখবো। রুম থেকে বের হতে দিবো না।
-- অফিসিয়াল রুলস এর বাইরে কিছুই পসিবল নয়। আর আনঅফিসিয়াল রুলস হলেও আপনার মেয়ে আমার বাসায়-ই থাকবে শফিউল সাহেব।
আমি আপনার মেয়েকে আমার ছেলের বউ করে আনতে চাই।
আশা রাখছি আপনার সম্মতি থাকবে...
হঠাৎ এমন কথায় ভেতর থেকে কেঁপে ওঠেন শফিউল আলম।
কর্ণেল রিদুয়ানুর রহমান আর সম্রাট শাহজাহানের মধ্যে যে যুদ্ধ ছিলো সে তো ভালোভাবেই জানেন। ঐ কারণে সিনথিয়ার আসল পরিচয় কখনো কাউকে তিনি দেননি। বাবার ছায়াতলে মেয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিজের পরিচয়েই বড় করেছেন তিনি। এই মূহুর্তে কি করবেন তিনি।
সবটা জানিয়ে দিবেন?
নাকি গোপন করবেন মেয়ের আসল পরিচয়। লুকিয়ে কতোক্ষণ রাখবে এই সত্য!! কি অপেক্ষা করছে মেয়েটির কপালে?
-
চলবে?
-
লেখিকা তন্নী এখনো পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারে নাই।। আপনার সকলে তার জন্য জন্য দোয়া করবেন। শরীরের অসুস্থতার জন্য ঠিক মতো বসতে পারে না।। অনেকটাই কষ্ট হচ্ছে তার নিয়মিত ভাবে লেখা চালিয়ে যেতে।। আপনাদের ভালোবাসার টানে নিয়মিত ভাবে লিখে চলছে।। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
-
প্রতিটি পর্বের সাথে পরের পর্ব এর লিংক যুক্ত করা হয়ে থাকে যাতে আপনারা সহজেই পরের পর্বটি খুঁজে পেতে পারেন।
-
-
ছবিতে- নিল পরী নিলাঞ্জনা Nilpori Nilanjona


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ