গল্প:সতীন
লেখা : ফিলিপ সরকার
পর্ব : ৪
হালকা হয়ে গেছে বুকের পাথরটা সরলেও
যন্ত্রণা এখনো কমে নি। কি থেকে কি হয়ে গেলো এটাই ভাবতেছি।
ছোট ভাই রুমে আসলো বললো,আপু একটা কথা বলবো।বললাম, বল কি বলতে চাস।
সে বললো,আপু আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে ওকে মারার প্লান করেছি।
বললাম,ভাই তার দরকার নাই ঘরে ওর নতুন বউ আছে একটা মা আছে ওর কিছু হলে ওদের কি হবে।
ভাই বললো,তুই এখনো ওদের নিয়ে এতো কিছু ভাবতেছিস? যারা তোর এতো বড় সর্বনাশ করলো।
বললাম ঐ উপরে একজন থাকে তিনি এর বিচার সঠিক সময়েই করবে।
ভাই তুই ঐ পাপ কাজটা করিস না। হাজার হলেও সে তোর বয়সে বড় হয়। তাকে মারপিট
করলে তোর ভবিষ্যৎ খারাপ হয়ে যাবে।
ভাই শুধু আমার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ কথা
শুনে যাচ্ছে।
ভাই আমার কাছে বসে বললো,তুই মানুষ না কি অন্য কিছু রে।কেমনে ওরা এই কাজ করতে পারলো?
বললাম, সে সুন্দরী বউ পেয়েছে আমি তো আর অত সুন্দরী নই তাই সে আমাকে ছেড়ে দিলো।
মা খাবার নিয়ে আসলো। ভাই আর আমি খেয়ে নিলাম। ভাই বললো, আয় টিভি দেখি।
বললাম, না ভাই তুই দেখ আমার কিছু ভালো লাগতেছে না।
ভাই চলে গেলো।আমি শুয়ে পরলাম। বিছানায় শুয়ে শুধু তার কথাই বার বার মনে
হতে লাগলো চোখ দিয়ে অঝোড়ে পানি পরা শুরু হলো।
পাশের রুমে বাবা মা আমাকে নিয়ে কথা বলতেছে।
সারা রাত পার হয়ে গেলো চোখের পাতা আর এক করতে পারিনি।
সকালে ঘুম থেকে মা উঠে এসে আমার রুমে আসলো। আমার চোখ ফোলা দেখে মা বুঝে গেলো আমি সারা রাত ঘুমায়নি।
মা রেগে গিয়ে বললো,ঐ বেয়াদব ছেলেটার কথা ভেবে সারা রাত কেদেছিস তাই না? তোরা আজকালকার ছেলেমেয়েরা পারিসও বটে।
বাবা আসলো বললো,কি হয়েছে? মা বললো, তোমার পাগলী মেয়ে সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে
কেদে কেদে চোখ ফুলিয়েছে।
বাবা বললো,তুই ওকে ভুলে যা মা। ভেবে নে
ওটা তোর দুঃস্বপ্ন ছিলো।
মাকে বললো,তুমি আজ থেকে ওর সাথে ঘুমাবে।মেয়ে কষ্ট পাবো সেটা আমি চাই না।
বাবা বললো, মা তোর কলেজের কাগজপত্র গুলো দে আমি আজকে কলেজে গিয়ে তোর ভর্তির ব্যাপার আলাপ করবে। আমি তোকে এবার আলাদা ভাবে গড়ে তুলবো। তোর একটা চাকরির ব্যবস্থা করবো দেখবি
হাজারো ছেলে তোর জন্য লাইন দিয়ে থাকবে
বলে বাবা হো হো করে হাসলেন। বুঝলাম বাবা আমাকে হাসাতে চাইছে।
চুপ করে থাকলাম মা আমার পাশে আছে।
আমার পাশে মা বসে আছে। বাবা বাইরে গেলো। মা আমাকে বললো,দেখ মা তোর বাবা যখন চাইছে তুই বাকি পড়া টুকু শেষ কর তাহলে সেটাই কর তুই।
নাহলে তোর বাবা মন খারাপ করবে।
মাকে বললাম,মনটা তো আর কিছুই করতে চায়না মা তারপরও বাবা যখন চাইছে বাকি পড়া শেষ করতে আমি চেষ্টা করবো।
এদিকে খাবার রেডি মা গিয়ে বাবাকে ডেকে
আমাকে সাথে করে খাবার দিলেন। আমি খাওয়া ছেড়ে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,কিরে মা খাচ্ছিস না কেন? আর ঐ সব বাজে চিন্তা বাদ দে নতুন দিনের সুচনা করতে হবে।
মনের মধ্যে আবার উদ্যমতা সৃষ্টি কর। আমি পাশে আছি।
আবার নতুন আলোয় আলোকিত হোক তোর জীবন।
বাবা খাওয়া শেষে বেড়িয়ে গেলেন আমার ভর্তির উদ্দেশ্য।
এদিকে বাহিরে কিছু মহিলার উপস্থিতি অনুভব করলাম। খাওয়া শেষে বাহিরে বের হয়ে দেখি বেশ কিছু মহিলা
আমাদের প্রতিবেশী তারা দাড়িয়ে আছি। যেইনা ঘর থেকে বের হলাম অমনি তারা নানান কথা জিগ্যেস করা শুরু করলো।
কেউ বললো, আমি স্বামীকে খুশি করাতে পারিনি আবার কেউ বললো,পুরুষ মানুষের
কথা মেনে চলতে হয় না হলে এরকম বাপের বাড়িতে পচে মরতে হবে।
তাদের কথা শুনে আমার চোখ চিকচিক করে উঠলো।
মা আমার দিকে তাকিয়ে তাদের কে বললো,দেখো তোমরা এসব কেন বলো। আমার মেয়েটা সদ্য একটা পরিস্থিতির স্বীকার হলো আর তোমরা এসব বলার জন্য এসেছো?
ছিঃ তোমরা মানুষ নাকি অন্য কিছু। লজ্জা করেনা তোমাদের এসব বলতে?
আজ আমার মেয়ের এমন হলো কাল যদি তোমাদের মেয়ের একই রকমের অবস্থা হয় তখন কি হবে?
মায়ের কথা শুনে মহিলা গুলো চলে গেলো।
আমি রুমে গিয়ে শুয়ে আছি। মা পাশে বসলো।
মাকে বললাম,মা তুমি বাবাকে বলো আমি আর কলেজে ভর্তি হবো না।
মা রেগে গিয়ে বললেন, খবরদার এসব বলবিনা। তোর বাবা শুনলে মন করবে।
কয়েকজন মহিলার কথা শুনে তুই জীবনের গতি থামিয়ে দিবি এটা হতে পারে না
আমি কেদে দিয়ে বললাম,তাহলে আমি কি করবো মা?
সবাই আমার দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলছে
আমার জন্য তোমাদের সম্মানে আঘাত লাগছে
আমি অপয়া মা। মা আমার মুখ চেপে ধরে বললো, এসব বলিস না মা তুই আমাদের আদরের মেয়ে। এসব বলিস না বুকটা ফেটে যায়
মা আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,
বাবার কথা মত চল দেখবি এরাই তোকে একদিন প্রশংসায় ভাসিয়ে দিবে
বেলা গড়িয়ে দুপুর হলো।মা বললো,গোসল করে নামাজ পর।এখন থেকে নামাজ পড়বি
কিছুক্ষন পরে বাবা আসলো
কিছুক্ষণ পরে বাবা আসলেন। মা বাবা কাছে গেলো
মা বাবাকে জিগ্যেস করলো, সব ঠিক আছো
তো? বাবা বললেন সব ঠিকই আছে।
যদি আমার মেয়ে এখন পড়াশোনায় একটু মনযোগী হয় তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
বাবা আমার রুমে আসলেন পাশে বসে বললেন,মা তোর ভর্তির ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
বাবাকে বললাম, আমার আর কি হবে পড়াশোনা করে বাবা আমি তো অপয়া যার স্বামী তাকে ডিভোর্স দেয় সেকি কখনো ভালো
হয়?
বাবা বললেন,কেউ কিছু বলেছে? মা পাশে থেকে বললো,পাশের বাড়ি মহিলারা এসেছিলো তারাই বলেছে।
বাবা বললেন, আচ্ছা যে যাই খুশি বলুক সমস্যা নাই। একদিন ওরাই এসে প্রশংসা করবে।
বাবাকে বললাম, ভর্তির কি হলো বাবা? তিনি বললেন, সব গেছে।
তোকে অনার্সে নেয়নি তবে ডিগ্রিতে নিয়েছে।
কিছু বললাম না শুধু বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
বাবা চলে গেলো হয়তো এভাবেই আমার নতুন জীবনের সুচনা হলো।
বাবা বিশ্রাম নিতে তাদের রুমে চলে গেলো।
আমি একা একা রুমে শুয়ে আছি। ভাই রুমে আসলো বললো,আপু বাবা নাকি তোকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে?
মাথা নাড়িয়ে হুম বললাম।সেও খুশি হলো বললো,তোর কলেজ আর আমার স্কুল তো পাশাপাশি একসাথে যাবো কেমন?
বললাম আমি যে ক্লাসে পড়বো সেখানে বেশি না গেলেও চলে রে ভাই।
ভাই শুধু বললো,যাই হোক তুই আবার আগের মত হয়ে যা তো আপু। মন খারাপ করে থাকিস ভালো লাগেনা।
যদি হাসিখুশি থাকিস দেখিস ওকে একদিন মারতে মারতে হাত পা ভেঙে দেবো।
ভাইয়ের এমন কথা শুনে মনে হলো তার উঠতি বয়স যদি কিছু করে ফেলে।
তাই হালকা হেসে বললাম,আমার ভাই দেখি
অনেক বড় হয়ে গেছে রে। হুম?
ভাই চলে গেলো। বাবা আসলো বললেন,মা কালকে একবার কলেজে গিয়ে ঘুরে আয় ভালো লাগবে।
জীবন কখনো একজনের জন্য থামেনা।
তুই ওকে দেখিয়ে দে। ও বুঝুক ও তোর যোগ্য নয়।
বাবা চলে গেলো বাহিরে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে আসলো।
আমার ডিভোর্সের মাত্র একদিন হয়ে গেলো তাতেই বাবা আমাকে নিয়ে এতকিছু করতে চাচ্ছে।
জানিনা আমি তার আশা পুরন করতে পারবো কি না।
রাতের বেলা বাবা বাড়িতে এসে আমার রুমে আসলেন। তার হাতে কিছু টাকা দেখলাম।
বাবা বললো,মা ওরা এই টাকাটা তোর দেনমোহর বাবদ ফিরে দিয়েছে।টাকাটা দেখে হাউমাউ করে কেদে উঠলাম আমি। তারপর বাবা পাশে বসে বললেন, মারে কি করবি বল!
ওরা যে এতোটাই খারাপ সেটা কি আর জানতাম। তারপর টাকা গুলে আমার হাতে দিলেন
বললাম,বাবা তুমিও আমাকে পর করে দিলে?
বাবা টাকা গুলো আমার হাতে দিলো। বললাম,বাবা তুমিও আমাকে পর করে দিলে?
বাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বললেন,কেন রে মা তুই পর হতে যাবি কেন?
বললাম,তাহলে তুমি টাকা গুলো আমার হাতে দিতে গেলে কেন। বাবা তুমি এগুলো তোমার কাছে রেখে দিয়ে যা খুশি করো।
বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,পাগলী মেয়ে একটা। বাবা টাকা গুলো মাকে দিয়ে বললেন,টাকা গুলো আলমারিতে রেখে দাও।
বাবা বললেন,তুই এখন কাল থেকে কলেজে
যেতে পারবি।
সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
এভাবে বেশ কিছু দিন প্রায় এক বছর চলে গেলো। অনেক লোকে অনেক কথা বললেও
আমি আর আগের মত তার কথা ভাবি না।
মোটামুটি পড়াকশোনা নিয়েই নিজেকে ব্যস্তা যতটা পারি ব্যস্ত রাখি।
আস্তে আস্তে তাকেও ভুলে যাচ্ছি। আমার বন্ধুর মত বাবার কারণ এটা সম্ভব হয়েছে।
বাবা বাহিরে থেকে আমাকে ডাকতেছে আর আমি এদিকে মোবাইলে ফেসবুকিং করতেছি।
ঘর থেকে বের হয়ে দেখি বাবা বাজার থেকে মাংস কিনে এনেছেন। বলতেছেন,মা তুই রান্না কর তো অনেক দিন হলো তোর হাতের রান্না খাই না।
মসকারা করে বাবা কে বললাম, তোমার বউ থাকতে আমাকে রান্না করতে হবে কেন?
বাবা বললো, মা থাকতে আমি বউয়ের রান্না খাবো কেন?
বাবার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে রান্না ঘরে গেলাম। বাবা আমার সাথে সাথে এসে রান্না ঘরের পাশে দাড়িয়ে থাকলেন।
আমি রান্না করতেছি। এমন সময় মা আসলো বাবা মাকে বললো,দেখো আমার মা আজকে এক বছর পর রান্না করতে বসলো।
আমি বাবার কথা শুনে হেসে দিলাম। বাবা বললো, মায়ের মুখে কতদিন পর হাসি দেখলাম। তুই এরকমই থাকবি তো মা।
বাবার চোখে পানি কিন্তু মুখে হাসি। ভাবলাম
আমার জন্য লোকটা এতোদিন আমার মতোই কষ্ট পেয়েছে।
রান্না শেষ সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করলাম। বিকেল বেলা আমি আর আমার বান্ধবী মিরা একসাথে ইংরেজি প্রাইভেট পড়তে কলেজের দিকে যাচ্ছি।
মিরা খুব হাসিখুশি মেয়ে। খুব হাসাতে পারে
সে বলতেছে তাকে নাকি কেউ প্রপোজ করার জন্য গোলাপ ফুলের চেয়ে ফুলকপি দিতে চায়।
এটা নিয়েই দুজনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছি। এমন সময় আমাদের সামনে একটা রিকশা আসলো।
আমি এক বছর পর ফের চমকে উঠলাম।
হঠাৎ এতোদিন পরে সে আমার সামনে আসবে চিন্তাও করতে পারিনি।
কতদিন পরে দেখলাম তাকে কিন্তু একা নয় সাথে তার বউও বসে আছে।
কিন্তু দু'জনের মুখে বিষন্নতার ছাপ। আমি বোরকা পরা সাথে হিজাব তাই হয়তে আমাকে চিনতে পারে নি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন