মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

গল্প:সতীন লেখা : ফিলিপ সরকার পর্ব : ০৯

 গল্প:সতীন

লেখা : ফিলিপ সরকার

পর্ব : ০৯



মা খাবার নিয়ে আসলো আমরা খেলাম। আজ সারাটাদিন খুব ধকল গেছে আমার উপর দিয়ে। বাবাও খুব ক্লান্ত।
আমি আমার রুমে গিয়ে শুয়ে আছি চোখ জোড়া বুঁজে আসছে একটু ঘুমিয়ে গেলাম।
একটু ঘুমানোর পর বিছানা থেকে উঠে মাগরিবের নামাজ পড়ে নিলাম।
বাবার রুমে গিয়ে দেখি বাবা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আসলে মানুষ টা আজকে খুব ক্লান্ত।
তাই আর কিছু বললাম না। ভাই আমার রুমে আসলো বললো,আপু একটা দারুণ খবর আছে রে! বললাম, কি খবর ভাই?
সে বললো আপু জানিস তোর স্বামীর বউ
নাকি কখনো মা হতে পারবে না।
কিছুটা অবাক হয়ে বললাম, তোকে এ কথা কে বললো ভাই?
সে বললো,আমি আজ ওদের বাড়ির ঐদিকে কোন একটা কারণে গিয়েছিলাম সেখানেই শুনেছি।
তোর শাশুড়ী কি বলে জানিস! বলে তোর অভিশাপের কারণেই নাকি এমনটা হয়েছে।
এমন সময় মা রুমে আসলো তিনিও সব শুনলেন।
আমি বলে উঠলাম এমনটা তো হওয়ার কথা নয় অপরাধ করলো একজন আর সাজা পাবে আরেকজন।
মা বললো,তার কারণে তো সংসার নষ্ট হয়ে গেছে ওর এমনটা হওয়া স্বাভাবিক।
বললাম,ও ভাবে বলোনা মা।
মা আমাকে ধমক দিয়ে বললো, চুপ কর যার জন্য তোর সব শেষ হয়েছে তার জন্য অত দরদ কিসের।
মা বিরবির করতে করতে চলে গেলো। মাকে কিভাবে বুঝাই। লোকটা আমাকে একটা সময় খুব ভালোবাসতো।
চোখজোড়া ভিজে গেছে পুরনো দিনের কথা ভেবে।
বাহিরে মা আর বাবা কথা বলতেছে। তাদের কথা আমি কিছু টা শুনলাম যা শুনলাম তাতে মনে হলো, আজকে যে ঘটক সাহেব আসছিলো মা তার কথাই বাবাকে বলতেছে।
মা বাবাকে বলতেছে, ছেলের বংশ ভালো। ছেলে প্রফেসর। বউ নাকি অন্য ছেলের সাথে চলে গেছে।
বাচ্চা কাচ্চা কিছু নাই আর বয়সও নাকি বেশি নয়।
বাবা বলতেছে, দেখি ওর চাকরির কি হয়।
মা বলতেছে, চাকরি হয় হবে না হলে নাই।
ওর মুখের দিকে তাকালে আমি থাকতে পারিনা। হাসিখুশি মেয়ে টা কেমন মনমরা হয়ে থাকে একথা বলে মা হুহু করে কেঁদে উঠলো।
ঘর থেকে মায়ের কথা শুনে আমারও চোখ চিকচিক করে উঠলো।
বাবা কিছু বললো না। শুধু বললো,আমিও আমার মেয়ের কষ্ট বুঝি এই বয়সে সে এতো বড় দুঃখ মনের মধ্যে রেখেও এগিয়ে যাচ্ছে ওকে এগোতে দাও।
বাবার কথা শুনলে মনের মধ্যে সাহস পাই।
রাতটা কোন রকম কাটিয়ে গেলো। সকালে বাবা আমায় ডাকলেন
কাছে গেলাম বাবা বললো,মা কালকে তোর মায়ের কথা শুনেছিস তুই! বললাম হ্যাঁ বাবা সব শুনেছি
বাবা তুমি যা বলবে সেটাই হবে। আমি চাই আমার জীবন টা তুমি আবার নতুন করে গুছিয়ে দাও
বাবা আমি চাই তুমি আমার জীবনটা নতুন করে গুছিয়ে দাও।
বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন বললাম,বাবা আমি তোমার ডিভোর্সি মেয়ে কিন্তু সমাজে তুমি যেনো মাথা উঁচু করে বলতে পারো তোমার মেয়ে বিপথে যায়নি।
বাবা আমার কথা শুনে আমার মাথাটা তার বুকের সাথে লাগিয়ে নিয়ে বললেন,তোর পরিশ্রম আমার জন্য সম্মানের মা। তুই পারবি এটা আমি জানি।
বাবা আমাকে বললো,তুই সামনে এগিয়ে যা আমি পিছনে আছি।
বাবার কথায় আমি বার বার প্রাণ ফিরে পাই।
বেশ কিছু দিন চলে গেলো।বাবা যেনো আমার বন্ধুর মত হয়ে গেছে।ভুলেও আমার প্রাক্তন স্বামীর কথা মনে পরেনা।
এখন উদ্দেশ্য শুধু ভালো কিছু করার।আজ আমার ডিগ্রি পরিক্ষার রেজাল্ট বের হবে। এর পরে আমার চাকরির রেজাল্ট হবে।
বাবা মা সকাল থেকেই আমার জন্য চিন্তিত। আমারও খুব চিন্তা হচ্ছে জানিনা কি হবে।
বেলা যতই গড়িয়ে যাচ্ছে ভয়ের মাত্রা আরও বেড়ে যাচ্ছে।
মা এক গ্লাস শরবত এনে বলছে এটা খেয়ে নে মা। মুখ শুঁখে গেছে তোর।
দুপুর হয়ে গেলো এখন রেজাল্ট দিবে।বাবা কলেজে দপ্তরিকে ফোন দিলেন রেজাল্ট শিট দেখার জন্য। দেখলাম বাবা হাসতেছে সাথে চোখ দিয়ে জল পরতেছে।
বাবার পাশে আমিও বসলাম। বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,মারে তুই ভালো রেজাল্ট করেছিস।
বাড়ি শুদ্ধ হইচই পরে গেলো। একদিন যারা বলেছিলো কেমন মেয়ে যে সংসার টিকাতে পারলোনা তারাই আজকে এসে প্রসংশা করতেছে। মা কিছু বলতে চাইলেও বাবা মা কে থামিয়ে দিলেন।
বাবা ভাইকে বাজারে পাঠিয়ে মিষ্টি আনিয়েছেন এখন তিনি নিজ হাতে সেগুলো বিতরন করতেছেন।
তাদের মুখে হাসি দেখে মনে হলো যদি আমি চাকরিটা পেতাম তাহলে বাবা মা হয়তো আরও বেশি খুশি হতো।
আশেপাশের মানুষ গুলোও কত পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেদিন যখন স্বামী তালাক দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলো সেদিন সবাই বলেছিলো এই মেয়ের সাথে আমাদের মেয়েরা
মিশলে নাকি তারাও খারাপ হবে অথচ আজ বলছে তাকে দেখে অন্য মেয়েদের শিক্ষা নিতে হবে।
শুধু বললাম,আমার বাবা মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা মা। শিক্ষা নিতে হলে আমার বাবা মায়ের কাছে নিন।
বাবা মাকে যদি বন্ধু বানানো যায় তাহলে পৃথিবীতে এর চেয়ে ভালো কিছু হয়না।
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বাবা মায়ের চোখে পানি।
বাবা আমার পাশে বসলেন বললেন, মারে তুই আমার সেরা মেয়ে।
বললাম বাবা তোমরা আমার জীবনে বয়ে যাওয়া ঝড়ের কথা ভুলিয়ে দিয়ে নতুন করে পথ চলতে শিখিয়েছো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ