শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১২

স্বামী বিবেকানন্দের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য জায়গা দেবে বসুন্ধরা

স্বামী বিবেকানন্দের নামে বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি দেবে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। গত বৃহস্পতিবার রাতে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান পশ্চিমবঙ্গে 'বিবেকানন্দ মেমোরিয়াল অডিটরিয়াম ও সেমিনার হল'-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, গোঁড়ামি, কুসংস্কার ও অশিক্ষামুক্ত জাতি গঠনে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এবং তাঁর যোগ্য শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দের দেখানো পথে মানবসমাজের কল্যাণ আসবে। বিবেকানন্দের 'যত মত তত পথ' বাণী এ পথই দেখিয়েছে।
কলকাতার অদূরে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাকপুর রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ মিশনের পানিহাটি ক্যাম্পাসে স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধশততম জন্মবর্ষ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মানের মেমোরিয়াল অডিটরিয়াম ও সেমিনার হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।
স্বামীজির সার্ধশততম জন্মবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটির চেয়ারম্যান ও ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জিও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। 
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, সর্বকালের শ্রদ্ধাভাজন মহাপুরুষ রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ও তাঁর ভাবশিষ্য স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা ও আদর্শ সব সমাজে সব সময় প্রাসঙ্গিক। তাঁর প্রচারিত বাণী ও আদর্শের মাধ্যমে তিনি ধর্মীয় কুসংস্কার, ভেদাভেদ ও গোঁড়ামি থেকে মানুষকে মুক্ত করে জাগতিক শান্তির সুষম পথ দেখিয়ে গেছেন। দুই মহাপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, 'যত মত তত পথ- এই সার্বজনীন বাণী প্রচারে তাঁরা উভয়েই ছিলেন একনিষ্ঠ। বিশ্ব শান্তি অন্বেষণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁদের অক্লান্ত সাধনা, শিক্ষা ও আদর্শ তাই আজও আমাদের পথ প্রদর্শন করে এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও পথ দেখাবে।'
আহমেদ আকবর সোবহান আরো বলেন, ধর্ম মানুষের সার্বিক কল্যাণের জন্যই নিবেদিত। কিন্তু কখনো কখনো ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং সুদীর্ঘকালের পরিক্রমায় চলে আসা অন্ধত্ব, কুসংস্কারের উপাদানগুলো মানুষকে হিংসা ও বিদ্বেষের বেড়াজালে আবদ্ধ করে ফেলে। আর তখনই সমাজ ও রাষ্ট্রে সৃষ্টি হয় অশান্তি, অসন্তোষ ও অকল্যাণ।
স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধশততম জন্মবর্ষে এ ধরনের একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়ে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান। বিশ্ব মানবকল্যাণে স্বামীজির অনুসরণীয় কয়েকটি বাণী স্মরণ করিয়ে দেন আহমেদ আকবর সোবহান।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে বলতে গিয়ে দুই দেশের মধ্যে আরো যোগাযোগ বাড়ানোর আহবান জানান। তিনি বলেন, 'রাজনৈতিকভাবে দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হলেও দৃঢ় আত্মিক সম্পর্কের মধ্যে জড়িয়ে আছি আমরা। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কিছু সাধারণ সমস্যা উভয় দেশের মানুষই মোকাবিলা করছি। আর তাই আমাদের মধ্যে এই সম্পর্ক আরো নিবিড় হয়েছে।' মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করতে গিয়ে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান এই শিল্পপতি।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান দুই দেশের বাণিজ্য সম্বন্ধে বলেন, 'আমি বাংলাদেশের একজন সামান্য শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে বলছি, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে, এর সুযোগ নিন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।'
এখানেও আহমেদ আকবর সোবহান স্বামী বিবেকানন্দের বাণী চয়ন করে বলেন, স্বামীজি তাঁর লেখা একটি বইয়ে বলেছিলেন, 'তোদের এই পোড়া দেশে উদ্যোগপতি ব্যবসায়ীদের কোনো সম্মান নেই। আর এখানে, আমেরিকায় এসে দেখে যা, এখানে খোদ পার্লামেন্টে প্রথম সারিতেও উদ্যোগপতিদের স্থান।'
বসুন্ধরার চেয়ারম্যান বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জন্য ভারতবর্ষে সম্ভাবনাময় বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ মেলে ধরার আহবান জানান।
ভারতে বাংলাদেশের ব্যবসা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলে উল্লেখ করে এই শিল্পোদ্যোক্তা আরো বলেন, 'উভয় দেশেই বিনিয়োগে আগ্রহী অনেক শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী রয়েছেন। কিন্তু বিদ্যমান কিছু প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতার কারণে এই বিনিয়োগ সুযোগের সুফল আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। আমার বিশ্বাস, এই প্রতিবন্ধকতাগুলো অপসারণ করা একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ব্যাপারমাত্র। দ্রুত এর উত্তরণ ঘটানো গেলে উভয় দেশই লাভবান হবে এবং সরাসরি উপকৃত হবেন দুই দেশের শিল্পোদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষ।'
আহমেদ আকবর সোবহান আরো বলেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে সফরে উভয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে অগ্রগতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ভারত বাংলাদেশি ৬১টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে। এটা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৈষম্য কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে।
বাংলাদেশে স্বামীজির নামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করতে চাইলে সেখানে জমি ও অর্থ দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে আসবে বলে ঘোষণা দেন আহমেদ আকবর সোবহান। জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সুধীজন ও সন্ন্যাসী থেকে শুরু করে সবাই করতালি দিয়ে এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। মঞ্চে উপবিষ্ট রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশনের সম্পাদক স্বামী নিত্যানন্দও এ প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বক্তব্য দেওয়ার আগে স্বামী নিত্যানন্দ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, 'আমি সমপ্রতি বাংলাদেশে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে সোবহান সাহেব আমাকে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে অত্যাধুনিক একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করান এবং যাবতীয় ব্যয় বহন করেন। এটা একজন মহৎ মানুষের পক্ষেই সম্ভব।' বসুন্ধরা দেশ ও মানুষের কল্যাণে এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন স্বামী নিত্যানন্দ। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম রহমত উল্লাহ।
অনুষ্ঠান শেষে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত কলকাতার সাংবাদিকদের সঙ্গেও খোলামেলা কথা বলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ গণমাধ্যম হাউস ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের একটি অফিস শিগগিরই কলকাতায় খোলার ঘোষণা করেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি ডেইলি সানের কার্যনির্বাহী সম্পাদক এস এন এম আদবিকে দায়িত্ব দিয়েছেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সুব্রত আচার্য্য, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক দীপক দেবনাথ ও বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরডটকমের ব্যুরো প্রধান রক্তিম দাশ।
১২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধশততম জন্মবর্ষ শুরু হয়েছে। এক বছর ধরে নানা আয়োজন চলবে ভারতজুড়ে। ভারতের বাইরেও নানাভাবে স্বামীজির বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় তিন তলার অত্যাধুনিক সেমিনার হল ও অডিটরিয়ামের জন্যও কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় দেড় কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ